লোভের পরিণতি বা শাস্তি
Share this
লোভের পরিণাম ধ্বংস
১। হাদীস শরীফে আছে- “যদি আদম সন্তানের দুই প্রান্তর সম্পদ থাকত তবে অবশ্য সে তৃতীয় প্রান্তরের আকাঙ্খা করত, মাটি ব্যতীত মানুষের তৃপ্তি সাধিত হবে
২। আবার এক হাদীসে আছে, আমার রব আমার জন্য মক্কা মুকাররমার প্রস্তরময় স্থান স্বর্ণ করে দিতে চাইলে তাতে আমি বলি, না হে আমার রব! বরং
আমি একদিন ক্ষুধা নিবারণ করব এবং অন্য দিন ক্ষুধা সহ্য করব। যে সময় ক্ষুধার্ত থাকব আপনার নিকট অনুনয়-বিনয় এবং আপনার যিকির করব আর যে সময় উদর পূর্ণ করব আপনার প্রশংসা করব ।
৩। আল্লাহ তা’আলা যার জন্য যে জীবিকা নির্ধারণ করে রেখেছেন তা সে নিশ্চয়ই পাবে। কাজেই হারাম পথে উপার্জন করার কোন কারণ থাকতে পারে না বরং তাতে ধ্বংসই আসে ।
নেয়ামতের শোকর আদায়
ইবনে হাব্বান কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, “যে নেয়ামাত সম্পর্কে কেয়ামতের দিন প্রশ্ন করা হবে না ।
অল্পে তুষ্টিতে পুরস্কার
আবু দাউদে আছে, হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা আনসারগণের কতক লোক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট কিছু আবেদন করলে তিনি তাদেরকে দান করলেন ।
তারা পুনরায় আবেদন করলে তিনি তাদেরকে পুনরায় প্রদান করলেন । অতঃপর যা কিছু ছিল সবই শেষ হয়ে গেল । পুনঃ তাদের আবেদন শুনে তিনি (সাঃ) এরশাদ করলেন, “শোন, আমার নিকট যে সম্পদই থাকবে অথবা কোথাও হতে আসবে আমি তা তোমাদেরকে না দিয়ে সঞ্চিত করে রাখব না, বরং তোমাদের দিয়ে দিব।
কিন্তু অনুধাবন করে লও এরূপে চেয়ে চেয়ে অর্জন করলে তোমরা তৃপ্তি হবে না । আল্লাহ তা’আলার বিধান হল যে লোক অন্যের কাছে হাত পাতা হতে নিজেকে সংরক্ষণ করতে চায়,
আল্লাহ তা’আলা তাকে সাহায্য করেন এবং নিজের অভাভগ্রস্ত পকাশ করে না, মানুষের মুখাপেক্ষী হয় না, আল্লাহ তা’আলা তাকে অমুখাপেক্ষী করে দেন।
যে সংকটময় মুহূর্তে অন্তরকে শক্ত করে সবল করতে চায় আল্লাহ তা’আলা তাকে তার তাওফীক দান করেন । মানসিক সবল অপেক্ষা অধিক প্রশান্তি কোন নেয়ামত কাউকে দান করা হয় না ।
দানশীলতার পুরস্কার
বোখারী ও মুসলিম শরীফে আছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল- ল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদেরকে বলেন, তোমরা অপরের জন্যে ব্যয় করতে থাক, আমি তোমাদের জন্যে ব্যয় করতে থাকব ।
ক্রোধ ও নিষ্ঠুরতা ত্যাগ করার পুরস্কার
১। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “জান্নাত তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে যারা সুখে দুঃখে সমভাবে দান করে, রাগ সংবরণ করে ও লোকের অপরাধ মার্জনা করে দেয় ।
২। তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফে আছে- “কোন ব্যক্তির প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্রোধ সংবরণ করলে আল্লাহ তা’আলা বিচার দিনে তাকে হাশরবাসীর সম্মুখে বলবেন, “তুমি যে হুরটি পছন্দ কর তা গ্রহণ কর ।”
৩। সহীহ বোখারী ও মুসলিম শরীফে আছে, “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তা’আলাও তার প্রতি দয়া করেন না।” বিদ্রুপ তোষামোদ অন্যকে অসম্মান করার ক্ষতি
১। কোরআন মজীদে আছে, “একদল লোক যেন অপর দল লোককে বিদ্রুপ না করে, কারণ তারা তাদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতেও পারে। একদল স্ত্রীলোক অপর দল স্ত্রীলোককে যেন বিদ্রুপ না করে,
কারণ তারা তাদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে । আমি তোমাদেরকে শ্রেণী ও গোত্রে বিভক্ত এজন্য করে দিয়েছি, যাতে তোমরা পরস্পরের পরিচয় লাভ করতে পার। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলার কাছে যে বেশি ধার্মিক সে অধিক সম্মানিত ।
২। বোখারী শরীফে আছে, ইমাম মালেক ও আহমদ (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যখন কোন ফাসেকের প্রশংসা করা হয়, তখন আল্লাহ তা’আলা ক্রোধান্বিত হন এবং তাঁর আরশ প্রকম্পিত হতে থাকে
৩। বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাক্ষাতে অন্যের প্রশংসা করছিল। তৎশ্রবণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন,
“তুমি তোমার ভ্রাতার বিনাশ সাধন করলে। অগত্যা যদি তোমরা কোন লোকের প্রশংসা করতে চাও তবে এরূপ বল যে, “আমি এরূপ ধারণা করি, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা প্রকৃত অবস্থা ভাল জানেন ।”
জিহ্বার অসংযমে জাহান্নাম
বোখারী শরীফে আছে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই মানুষ (বিনা চিন্তায়) এমন কথা বলে যা আল্লাহ তা’আলার নিকট সন্তোষজনক হয়ে যায়। এর বিনিময়ে তিনি তাকে উচ্চ পদ প্রদান করেন। পক্ষান্তরে মানুষ এমন কথাও বলে থাকে যার কারণে আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট হন ফলে তিনি তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করে দেন।”
১। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ইসলামের মধ্যে সৌন্দর্য হল কোন ব্যক্তির অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা ।
২। বায়হাকী শরীফের হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, অসৎ চরিত্রের লোক (কেয়ামতে) আমাদের হতে দূরে থাকবে ও আমার চরম শত্রু হয়ে যাবে যারা অতিরিক্ত কথা বলে, লোকের প্রতি বিদ্রূপ ও অহঙ্কার করে, তারাই অসৎ চরিত্রের লোক ।
৩। তিরমিযী শরীফের হাদীছে আছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, “তোমরা আল্লাহ তা’আলার যিকির ব্যতীত অতিরিক্ত কথা বলো না কেননা অধিক কথা বললে হৃদয় কঠিন হয়ে যায় এবং কঠিন হৃদয় ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে দূরে থাকে।
৪। মুসলিম শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার সামনে সে ব্যক্তি নিম্নস্তরের হবে যার অশ্লীল কথার্বাতা ও কটূক্তির ভয়ে লোকেরা তাকে বর্জন করেছিল।
অভিসম্পাত বর্ষণকারীর প্রতি তার অভিসম্পাত ফিরে আসে
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যখন কেউ কারো প্রতি অভিসম্পাত করে তখন সেই অভিসম্পাত আকাশের দিকে যায় আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডানে বামে ঘুরাফেরা করে ।
যখন কোথাও স্থান না পায় তখন অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির কাছে যায় যার প্রতি তা করা হয়েছিল। যদি সে যোগ্য হয় তবে অভিসম্পাত তার উপর পতিত হয় । নতুবা সে ব্যক্তির উপর গিয়ে পতিত হয় যে অভিসম্পাত করেছে।
আরো পড়ুন:- মুনাজাতে মাকবুল বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ