স্বামীর হক বা অধিকার
Share this
স্বামীর সেবা
স্বামীদের দেহ হতে স্বামীদের জন্যই স্ত্রীদের সৃষ্টি করা হয়েছে। কেননা, আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করে তাঁরই দেহ হতে আদি মা হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন দু’জনের সুখের জন্য ।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
اَلرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلى
উচ্চারণ : আররিজালু কাওয়ামুনা আ’লা নিসাই বিমা ফাদ্দালাল্লাহু বা’দাহুম আ’লা বা’দিন ।
অর্থ : পুরুষগণ স্ত্রীদের উপর কর্তৃত্বকারী, কেননা আল্লাহ পাক একের উপরে অন্যকে মর্যাদা দান করেছেন ।
পবিত্র কোরআন পাকের এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় নারী পুরুষ তথা স্বামীয় অধীনস্থ এবং পুরুষগণ নারীদের নিকট সম্মানের পাত্র। পুরুষের জন্য নারীদের কতকগুলো কর্তব্য রয়েছে।
তন্মধ্যে সর্বপ্রধান হল, নারীগণ সকল কাজকর্মে, কথাবার্তায় পুরুষদের সন্তোষ বিধান করে চলবে। স্ত্রীগণ স্বামীর সঙ্গে কখনও এমন ব্যবহার করবে না যাতে স্বামীর মনে সামান্য আঘাত লাগতে পারে।
আর স্বামীর উপস্থিতিতে অনুপস্থিতিতে স্ত্রীগণ সর্বদা তাদের মূল্যবান সম্পদ আবরু তথা সতিত্ব রক্ষা করে চলবে। আল্লাহকে ভয় করে প্রতি মুহূর্তের জন্য স্বরণ রাখতে হবে,
তাদের কাছে দেয়া সুখকর অমূল্য নেয়ামত আল্লাহ পাক শুধুমাত্র স্বামীর জন্যই দান করেছেন, স্বাধীনভাবে যেখানে- সেখানে তার অপচয় করাতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
স্বামীর মর্যাদা স্ত্রীদের উপর এত অধিক দান করা হয়েছে যে, স্বামীকে খুশী রাখার জন্য যদি স্ত্রী তার নফল এবাদত ত্যাগ করতে হয় তবে তা করে স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে।
হাদীস শরীফে আছে, কোন স্ত্রী স্বামী তার উপর নারাজ থাকলে সে যতই আবাদত- বন্দেগী করুক না কেন তা কবুল হবে না। হাদীছে আরও আছে, স্বামীর সন্তুষ্টি নিয়ে কোন স্ত্রীর মৃত্যু হলে সে অবশ্যই বেহেশত লাভ করবে ।
স্বামীর হক বা স্ত্রীর কর্তব্য
বিবাহের পরে নববধু যখন স্বামীগৃহে পদার্পণ করে তখন হতেই তার উপর কয়েকটি গুরুতর কর্তব্য দাঁড়ায়। যেমন- ১। সর্বপ্রথম এবং সর্বপ্রধান কর্তব্য হল স্বামীর খেদমত ও তার সন্তোষ । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ।
خَيْرُكُمْ لِنِسَائِكُمْ وَأَنَا خَيْرٌ لِنِسَائِ
উচ্চারণ ঃ খাইরুকুম লিনিসাইকুম ওয়া আনা খাইরুন লিনিসায়ী ।
অর্থ : তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করে । আর আমি আমার স্ত্রীগণের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করি
শরীয়ত অনুযায়ী স্বামীগণ স্ত্রীর সদাচরণ সদ্ব্যবহারের অধিক হকদার। স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে তার হুকুম পালন করে চলতে থাকা। তা হলে মৃতুর পরই সে
বেহেশতে যেতে পারবে ।
২। হাদীসে আছে, যে স্ত্রীলোক তার স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখতে পারবে এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হবে । সে নিশ্চয়ই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না ।
৩। হাদীসে আছে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যে স্ত্রীলোক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, রমযানের রোযা রাখবে ও নিজের আবরু-ইজ্জত বজায় রাখবে এবং স্বামীর খেদমত করবে, নিশ্চয়ই সে যেকোন দরজা দিয়ে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে।
৪। স্ত্রীর শত কাজ থাকলেও স্বামী তাকে ডাক দেয়া মাত্র হাজির হয়ে তাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। বর্ণিত আছে, কোন স্ত্রীলোক এক ঘণ্টা স্বামীর কাছে বসে রসালাপ করলে এক বৎসর একাগ্রচিত্তে এবাদত করার সওয়াব লাভ করবে ।
এতএব, যাতে স্বামীর মনে সন্তুষ্টি আনতে পারা যায় স্ত্রীর সে ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া উচিত। স্বামীর বিনা হুকুমে নফল এবাদত করলে স্ত্রীকে গোনাহগার হতে হবে।
স্বামী যদি বলে, আমার বিনা হুকুমে কোন স্থানে এমনকি তোমার বাপের বাড়ীও যেতে পারবে না। স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য তার এ হুকুম পালন করতে হবে।
৫। স্বামী যদি অল্প মূল্যে একখানা কাপড় এনে দেয় খুশী মনে তা গ্রহণ করবে। রাগ করে স্বামীর মনে আঘাত দিবে না।
স্ত্রীর উপর স্বামীর এ পরিমাণ হক যে কারও স্বামীর শরীর হতে যদি রক্ত-পুঁজ বের হতে থাকে এবং তা স্ত্রী জিহ্বা দ্বারা চাটিয়া সাফ করে তবু স্বামীর হক আদায় হয়েছে বলে স্ত্রী দাবী করতে পারবে না ।
৬। স্বামীর সঙ্গে কখনও মেজাজ দেখিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলবে না । স্বামীকে এ কথা বলবে না যে, তোমার দেয়া কোন জিনিসই আমার পছন্দ হয় না ।
খবরদার! এতে সারা জীবনের বন্দেগী বরবাদ হয়ে যাবে। অসন্তুষ্ট হয়ে স্বামীকে খোঁটা দিবে না। স্বামী
রাজি না থাকলে তার বিছানা ত্যাগ করবে না। স্বামীকে একা ঘরে রেখে মা, বোন, খালা, চাচা, ননদ, জার সঙ্গে মেতে থাকবে না। অবশ্য শরীয়তের বরখেলাপ কোন কাজ না হলে স্বামীকে রাজি করে নিলে তাতে কোন দোষ হবে না ।
৭। হাদীসে আছে, একদিন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাহাবাগণসহ কোন এক জঙ্গলের নিকট বেড়াতে যান, তখন কতগুলো উট ও হরিণ এসে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে সেজদা করে । তা দেখে সাহাবাগণ বিনীতভাবে আরজ করলেন, হুযুর!
এ সমস্ত পশু আপনাকে সেজদা করে ভাগ্যবান হচ্ছে আর আমরা মানুষ হয়ে-তা হতে বঞ্চিত হচ্ছি। তখন হুজুর (সাঃ) ফরমান-
আমি যদি কাকেও সেজদা করতে হুকুম করতাম তবে নিশ্চয়ই স্ত্রীদেরকে হুকুম করতাম যে, তোমরা তোমাদের স্বামীগণকে সেজদা কর ।
৮। হুযুর (সাঃ) আরও বলেছেন, “তিন ব্যক্তির এবাদত-বন্দেগী, নামায কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। প্রথমতঃ যে গোলাম মনিবের নিকট হতে পালিয়ে গেছে সে মনিবের নিকট হাজির না হওয়া পর্যন্ত,
দ্বিতীয়তঃ যে স্ত্রীর স্বামী তার উপর নারাজ আছে তার স্বামী রাজি না হওয়া পর্যন্ত। তৃতীয়তঃ নেশাখোর নেশা ছেড়ে না দেয়া পর্যন্ত । অর্থাৎ এরা শরীয়ত নির্দেশিত সরল পথে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাদের উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন এবং তাদের বন্দেগী কবুল হবে না ।
স্বামীর মর্যাদার কারণ
কারও মনে এ প্রশ্ন উদয় হতে পারে যে, স্ত্রীদের উপর স্বামীদের এত মর্যাদা হওয়ার করাণ কি? উত্তরে বলা যায়, স্বামীদেরকে স্ত্রীদের উপর এরূপ মর্যাদা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (সাঃ) চিন্তাশীলগণ এর উত্তর খুঁজে পান । যেমন, একজন স্ত্রী যে সময় (দশ মাসে) একটি মাত্র সন্তানের জন্ম দিতে পারে, সেই একই সময়ে একজন স্বামী একাধিক সন্তানের জনক হতে সক্ষম ।
অতঃপর মা-বোনেরা! সময় থাকতে স্বামীর খেদমত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চেষ্টা করুন এবং আখেরাতে যেন বিপদে পড়তে না হয় সেদিকে খেয়াল করুন।
আরো পড়ুন:- কুফরি কাকে বলে