ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ
Share this
ইফতারের কি: ইফতার” শব্দটি আরবি ভাষার “ফাতারা” মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “ভাঙ্গা” বা “শেষ করা”। ইসলামী পরিভাষায়, ইফতার হলো সারাদিনের সাওম ভঙ্গ করার প্রক্রিয়া, যা সূর্যাস্তের পর করা হয়। অর্থাৎ, ইফতারের আক্ষরিক অর্থ হলো “উপবাস বা রোজা ভঙ্গ করা”। ইফতার সময় ইফতারের দোয়া পড়তে হয়।
ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, রোজা রাখার নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার পর সূর্য ডোবার পর যে খাবার গ্রহণ করে রোজা ভাঙ্গা হয়, তাকে ইফতার বলে।
ইফতারের দোয়া
ইফতারের দোয়া হলো রমজান মাসে রোজা ভাঙার সময় পাঠ করা বিশেষ প্রার্থনা। নবী মুহাম্মদ এর সুন্নত অনুযায়ী কিছু দোয়া ও জিকির এই সময়ে পড়া হয়। রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া কবুল হয়। নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময় ফেরত দেওয়া হয় না” (ইবনে মাজাহ)। ইফতার করার সময় হাদিসে উল্লেখিত একটি দোয়া রয়েছে, যা নিচে আরবি বাংলা এবং অর্থসহ আলোচনা করা হলো-
ইফতারের পর বা ইফতার করাকালীন সময় হযরত মোহাম্মদ (স.) নিচের দোয়াটি পড়তেন-
ইফতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও ইফতার ফরজ নয়, তবে নির্ধারিত সময়ে ইফতার করা সুন্নাত ও ওয়াজিবের কাছাকাছি। কারণ, রোজা রাখার পর দেরি না করে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা।
আরো পড়ুন: রোজার নিয়ত | Rojar Niyot
কি দিয়ে ইফতার করবেন:- রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা হয়। এটি মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত, যখন উপবাস ভেঙে খাবার গ্রহণ করা হয়। তবে ইফতার শুধু শরীরের ক্ষুধা মেটানোর জন্য নয়, এটি পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির প্রতীকও।
পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব এবং সমাজের নানা স্তরের মানুষ একত্রে ইফতার করলে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও গভীর হয় এবং একতা বৃদ্ধি পায়। ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়া উচিত, যাতে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় এবং অতিরিক্ত ভাজাপোড়া এড়িয়ে সুস্থ থাকা যায়। নিচে ইফতারের জন্য আদর্শ কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো-
খেজুর | খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত (৩টি খেজুর + ১ গ্লাস পানি) । এতে শর্করা থাকে যা দ্রুত শক্তি জোগায়। |
পানি বা শরবত | পানির ঘাটতি পূরণ করে ও হাইড্রেটেড রাখে। |
দুধ | রাসুল (সা.) দুধ খেতে পছন্দ করতেন, যা হজমে সহায়ক এবং পুষ্টিকর। |
ফল | ফলে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী। |
ছোলা ও চানা | ছোলা প্রোটিন, ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেটের একটি চমৎকার উৎস। |
ইফতারের সময় করণীয়
- ধীরে ধীরে খাওয়া: একবারে বেশি খাবার খাওয়া উচিত নয়। ধীরে ধীরে খেতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: ইফতারের খাবারে স্বাস্থ্যকর উপাদান থাকা জরুরি।
- তেলাভাজা খাবার এড়ানো: তেলাভাজা খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- পানি বেশি করে পান করা: সারাদিনের পানির ঘাটতি পূরণ করার জন্য পানি বেশি করে
পান করতে হবে।
- মিষ্টি খাবার পরিমাণে খাওয়া: মিষ্টি খাবারে চিনি থাকে যা শরীরে চর্বি জমাতে পারে।
ইফতার শুধু রোজা ভাঙার মাধ্যম নয়, এটি সুন্নাত অনুসারে করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। তাই খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করা সর্বোত্তম। এছাড়া পুষ্টিকর খাবার খেলে সুস্থ থাকা যায় এবং রমজানের ইবাদত আরও ভালোভাবে করা সম্ভব।
ইফতারের ফজিলত ও গুরুত্ব
ইফতার আমাদেরকে আল্লাহর কাছে আরও নিকটবর্তী করে এবং আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে। ইফতারের মাধ্যমে আমরা শিখি যে, দান করা এবং অন্যকে সাহায্য করা । কুরআন ও হাদিসে ইফতারের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:-
কুরআনে আলোকে ইফতারের ফজিলত
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়। এরপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত।“
— (সুরা আল–বাকারা, ২:১৮৭)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ইফতার ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানের অংশ, যা সূর্যাস্তের পর বৈধ এবং আবশ্যকীয়।
হাদিসের আলোকে ইফতারের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ বলেন,
“রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে: এক. ইফতারের সময়, দুই. আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।“
— (বুখারি, হাদিস: ১৯০৪)
নবীজি আরোও বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হবে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে—অথচ রোজাদারের সওয়াব কমবে না।“
— (তিরমিজি, হাদিস: ৮০৭)
সামাজিক ও নৈতিক ফজিলত
দরিদ্রদের প্রতি সহমর্মিতা: ইফতার পার্টি বা মসজিদে সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন সমাজের অসহায় মানুষদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ। এটি সাদাকাহ ও দানশীলতার অংশ।
সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি: ইফতারের সময় পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও গরিব-দুঃখীদের একত্রে খাওয়ানো ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। এটি সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সাহায্য
আত্মসংযম ও ধৈর্যের শিক্ষা: সারাদিনের ক্ষুধা-তৃষ্ণার পর ইফতার ধৈর্য ও সংযমের শিক্ষা দেয়, যা একজন মুমিনের চরিত্র গঠনে সহায়ক।
আধ্যাত্মিক ফজিলত
রহমতের দ্বার উন্মুক্ত হওয়া: রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সময়। ইফতারের মাধ্যমে আল্লাহর অশেষ রহমত লাভের সুযোগ তৈরি হয়।
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন: ইফতার হলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ, যেখানে বান্দা তাঁর নির্দেশ মান্য করে এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে।
গুনাহ মোচনের সুযোগ: হাদিসে এসেছে,
“রোজা ও কুরআন কিয়ামত দিবসে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে… রোজা বলবে: ‘হে রব! আমি তাকে দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছি; আমার কারণে তার জন্য সুপারিশ কবুল করুন।’”
— (মুসনাদে আহমাদ)
স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
শরীরের পুনরুজ্জীবন: সারাদিনের উপবাসের পর ইফতার শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে ও শক্তি পুনরুদ্ধার করে।
মানসিক প্রশান্তি: ইফতারের সময় আল্লাহর জিকির ও দোয়া মানসিক চাপ কমায় এবং আত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়।
হজমশক্তি উন্নয়ন: সুন্নত অনুসারে খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার শুরু করলে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম সক্রিয় হয়।
ইফতার শুধুমাত্র রোজা ভাঙার একটি সময় নয়; এটি আল্লাহর আনুগত্য, সামাজিক দায়িত্ব ও আত্মশুদ্ধির সমন্বিত একটি ইবাদত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইফতারের প্রকৃত ফজিলত অনুধাবন করে সঠিকভাবে তা পালনের তাওফিক দান করুন।