তাকদির অর্থ কি তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস
Share this
তাকদীরের উপর বিশ্বাস
তাকদীরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ হচ্ছে, মানুষের সকল কর্মের ফলাফল ভালো হউক, খারাপ হউক অর্থাৎ যখন সে যে অবস্থায় থাকে মহান আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী থাকে এবং এ বিধানসমূহ মহান আল্লাহ্ পাক কর্তৃক নির্ধারিত এ কথা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন—“মহান আল্লাহ্ পাক এ বিশ্ব ভুবন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত সৃষ্ট জীবের ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।”
মহান আল্লাহ্র ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। কারণ পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহই সর্বময় শক্তির একচ্ছত্র অধিকারী। তাই তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সকল ভালো-মন্দ হয়ে থাকে। তিনি যাকে ইচ্ছা কোনকিছুর অধিপতি করেন, আবার যাকে খুশি পথের ভিখারী করে দেন।
মহান আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে হিদায়াতের রাস্তা দান করেন আর যাকে ইচ্ছা করেন না কেউই তাকে হিদায়াত করতে পারে না। এসব বিষয়ের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই তাদেরকে মৃদু ধমক দিয়ে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন—“মহান আল্লাহ্র নির্ধারিত বিধানের উপর যারা বিশ্বাসী নয়, তাদের উচিত তারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য খোঁজ করা।”
উল্লিখিত আলোচনা হতে, বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ্র বিধানসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা সকলের উপর অবশ্য কর্তব্য। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কালামে ঘোষণা করেন—“যত প্রকার বালা-মুসীবাত তোমাদের উপর এসে থাকে, তা দুনিয়ার কোন অংশে কিংবা তোমাদের নিজেদের উপর হউক তা প্রকাশ পাবার পূর্বেই আমার নিকট লিপিবদ্ধ আছে।”
অর্থাৎ কখন, কোথায়, কার উপর কি ধরনের বিপদ বা বালা-মুসীবাত কিভাবে আসবে এ সবকিছু আগে হতেই মহান আল্লাহ তা’আলা নির্ধারণ করে রেখেছেন।
মানুষ যেহেতু আশরাফুল মাখলুকাত, সুতরাং তারা ভালো-মন্দ বিচার- বিভেদ করার ক্ষমতা রাখে। সে যখন ভালো কাজ করে ভালো ফলাফল পাবে তখন তাকে বুঝতে হবে যে, এটি আমার প্রভুর পক্ষ হতে হয়েছে।
আর যখন খারাপ কাজ করে খারাপ ফলাফল পাবে তখনও তাকে একথা বিশ্বাস করতে হবে যে, খারাপ কাজের ফলাফল খারাপ হয়েছে, তাও মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতেই হয়েছে।
আর যদি চেষ্টাতে বিফল হয়ে যায় তাও ধারণা করতে হবে যে, এ কাজের ফলাফল আমার তাকদীরে নেই। তাই চুপচাপ অলস হয়ে বসে না থেকে বিবেক-বিবেচনা করে ভাল কাজ করার জন্য সবসময় মন-মানসিকতাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও বাধ্য করতে হবে।
আর খারাপ, অন্যায়, গর্হিত কাজসমূহ হতে বিরত থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করতে হবে। আর তাকদীরের এ সবের উপর ঈমানের পরিচায়ক হিসেবে বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয ।
আরো পড়ুন:-ঈমান কাকে বলে
পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস
মানব জীবনের শেষ পরিণতি মৃত্যু। এ মৃত্যুর হাত থেকে কোন লোকই রক্ষা পাবে না। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা হয়েছে—“প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।”
দেখা যায় জগতের শুরুতে যারা ছিল তাদের কেউই বেঁচে নেই। আজ যারা জীবিত ভবিষ্যতে তারাও থাকবে না। এমনিভাবে মহান আল্লাহ্র নির্দেশে হযরত ইস্রাফিল (আঃ) প্রথমবারে সিঙ্গায় ফুঁক দিলে সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে, দ্বিতীয়বারে ফুঁক দিলে হাশরের মাঠ তৈরি হবে, এরপর তৃতীয়বারে ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে সকল প্রাণীসমূহ কবর হতে উঠে (বিভিন্নভাবে যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে) স্বীয় জীবনের কাজ-কর্মের হিসাব দেয়ার জন্য মহান প্রভু আল্লাহ্র সম্মুখে হাশরের মাঠে জীবিতাবস্থায় উঠতে থাকবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা হয়েছে-
অতঃপর যখন (তৃতীবার) সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে তখন সকলকেই স্বীয় কবরসমূহ হতে (হাশরের মাঠে) তাদের প্রভুর সম্মুখে দলে দলে উপস্থিত হতে হবে।” সেদিনের অবস্থা হবে খুবই ভয়ঙ্কর। সূর্য হবে মাথার উপর অতি নিকটবর্তী, জমিন হবে তামার ।
সূর্যের তাপে তামার জমিন উত্তপ্ত হয়ে মানুষ স্বীয় কর্মানুপাতে ঘর্মাক্ত হয়ে কারও পায়ের গিরা পর্যন্ত, কারও হাঁটু পর্যন্ত, কারও উরু পর্যন্ত এভাবে বুক, গলা এমনকি কোন কোন লোক ঘামের পানিতে সাঁতরাতে থাকবে ।
হাশরের মাঠে উপস্থিতির সময় হতেই মূলত মানুষের সত্যিকারের জীবন আরম্ভ হবে। দুনিয়ার এ জিন্দেগী মুসাফির লোকদের মত সামান্য সময়ের জন্য বিশ্রামের জায়গা মাত্র। এ মুসাফিরখানাতে এসে পরকালীন জীবনের জন্য কিছু পাথেয় তৈরি করার জন্যই মানুষের সৃষ্টি।
এভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় কেটে যাওয়ার পর মৃত্যুর মাধ্যমে মুসাফেরী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। এরপর সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) হতে ইস্রাফীল (আঃ)-এর সিঙ্গা ফুঁক দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে শিশুটির জন্ম হবে সে শিশুটিও ধ্বংস হয়ে যাবে এবং শেষ বিচারের তথা হাশরের মাঠে উপস্থিত হয়ে দুনিয়ার জিন্দেগীর সকল কর্মের হিসাব দেয়ার জন্য মহান প্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হতে হবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ঘোষণা হয়েছে—“এ মাটি হতেই তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পুনরায় এ মাটিতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব এবং আবার এ মাটির ভেতর হতেই তোমাদেরকে বের করে আনা হবে।”
সুতরাং বুঝা গেল যে, প্রতিটি প্রাণীকেই জীবন-মৃত্যুর পর হাশরের মাঠে একত্রিত হতে হবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন মজিদের অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে—“যেদিন তোমাদেরকে মহান আল্লাহ্ তা’আলা একত্রিত করবেন, অবশ্যই সে দিনটির আগমন সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।”
কারও অন্তরে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মৃত্যুর পর এ জড়দেহ কোন পশু-পাখি খেয়ে ফেলেছে, সাগরের পানিতে মাছের পেটে চলে গেছে। আগুনে পুড়ে গেছে বা পোড়ানো হয়ে ছাই-ভস্ম করা হয়েছে। কবরের মাটির সাথে মিশে গেছে, এসব ক্ষতবিক্ষত বা নিশ্চিহ্ন দেহ আবার কিরূপে একত্রীভূত করা হবে ?
এ প্রশ্নের একটি উত্তরই যথেষ্ট যে, যখন কিছুই ছিল না মহান আল্লাহ্ অস্তিত্বহীনতা হতে অস্তিত্ব দান করলেন সে অস্তিত্ব যতই বিনষ্ট হউক না কেন তাকে পুনরুত্থান করা মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ্ পক্ষে অবশ্যই সম্ভব।
ময়দানে হাশর : মহান আল্লাহ্র নির্দেশে ইস্রাফীল (আঃ)-এর সিঙ্গার ফুঁকে মানুষ কবর হতে দলে দলে উঠে হাশরের মাঠে জমা হবে। এ হাশরের মাঠের অবস্থান দুনিয়ার হিসেব অনুযায়ী ৫০ হাজার বছরের সমান হবে এবং এ সময়ের মধ্যে হাশর মাঠের বিভীষিকাময় অবস্থার ইঙ্গিত পূর্বে কিছুটা দেয়া হয়েছিল।
এ মাঠের জমিন হবে তামার, সূর্য মানুষের মাথার আধা হাত উপরে থেকে স্বীয় বুক দিয়ে তাপ দেবে। মানুষ ক্ষুৎপিপাসার তাড়নায় অস্থির হয়ে পড়বে। সেদিন মানুষের মাথার মগজ রোদের তাপে গরম হয়ে টগবগ করতে থাকবে।
এসব ছাড়াও অসংখ্য কষ্ট হবে যা কোন ভাষা, লেখনী বা কল্পনায়ও আনা সম্ভব নয়। এহেন কঠিন হাশরের মাঠে মাত্র সাত শ্রেণীর লোক মহান আল্লাহ্র আরশের নিচে স্থান পাবে এবং নেককার লোকেরা হাউজে কাউসারের অমীয় সুধা পানে সক্ষম হবে। আর খাদ্য হিসেবে এক টুকরা রুটি পাবে, যেটি খাওয়ার ফলে তাদের আর ক্ষুধা-পিপাসা লাগবে না ।