প্রেমের কবিতা
Share this
প্রেমের কবিতা যেমন স্নিগ্ধ এবং কোমল, তেমনি এর মধ্যে রয়েছে এক অদৃশ্য শক্তি, যা হৃদয়ের গভীরে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রেমের অনুভূতি কখনো এক মিষ্টি বৃষ্টির মতো, কখনো আবার এক তীব্র ঝড়ের মতো—যার প্রভাব শুধু বাহ্যিক নয়, অন্তর্গতভাবে প্রগাঢ়।
এই কবিতাগুলো শুধুমাত্র একটি ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তের কথা নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা, যা মানুষের মন ও আত্মাকে ছুঁয়ে যায়। প্রেমের কবিতা দুই হৃদয়ের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, এক অনন্য অভিজ্ঞতা যা সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে চিরকাল স্থায়ী হয়।
এ ধরনের কবিতায় একদিকে যেমন প্রেমের মিলন ফুটে ওঠে, তেমনি রয়েছে অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষার গভীর অনুভূতি। এই কবিতাগুলো শুধু রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প নয়, বরং তা প্রেমের জটিলতা এবং তার অসীম প্রকৃতির দৃষ্টান্তও হয়ে ওঠে।
প্রেমের কবিতা বিষাদ, দুঃখ, বিরহ বা নির্জনতার অনুভূতিও তুলে ধরে, যা প্রেমের স্বভাবের অনন্য দিক—তথা তার অন্তর্গত কষ্ট এবং তীব্রতা—প্রকাশ করে। এই অনুভূতিগুলি একে অপরের মধ্যে মিশে গিয়ে প্রেমের প্রকৃত রূপ তৈরি করে, যা শুধু বাহ্যিক নয়, অন্তর্গতভাবে গভীর এবং অসীম।
রোমান্টিক প্রেমের কবিতা
রোমান্টিক প্রেমের কবিতা এমন এক ধরনের সাহিত্যকর্ম, যা প্রেমের গভীরতা, সৌন্দর্য, কোমলতা এবং আবেগের সূক্ষ্মতা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে। এই কবিতাগুলিতে প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের স্নেহময়তা, একে অপরের প্রতি অদৃশ্য আকর্ষণ এবং অন্তরঙ্গতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
রোমান্টিক প্রেমের কবিতাগুলি সব সময় হৃদয়ের গভীর অনুভূতি থেকে উদ্ভূত হয়, এবং তা এক অগাধ ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে চলে আসে। এখানে প্রেমের এমন এক অনুভূতি উঠে আসে, যা একমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকা নিজেই অনুভব করতে পারে—যা কোনো বাহ্যিক দৃষ্টিতে দৃশ্যমান হয় না।
এ ধরনের কবিতায় সৃষ্টি হয় এক জাদুকরী জগত, যেখানে প্রেমিকার চোখে ভালোবাসার মাধুর্য, তার হাসির অমিয়তা, তার উপস্থিতিতে এক শান্তির অনুভূতি এবং এক ধরনের অদ্ভুত মায়া ভর করে। প্রেমের প্রতি এই অনুভূতি গুলো হৃদয়ের গহীনে গভীরভাবে বসবাস করে এবং এই কবিতাগুলি প্রেমের সৌন্দর্য, কোমলতা, এবং তার মধুর অনুভূতিগুলিকে এক অপূর্ব রূপে উদ্ভাসিত করে।
প্রেমিক
সে একদিন গাছ হয়েছিল..
শহরের অশ্রুত শব্দের মত
মস্ত মস্ত কুঠোর এসে তার হাত পা শিকল ভেঙে দিল-
তাই তার সমস্ত নীড় ভেঙে গেল।
সে একদিন পাখি হয়েছিল..
উড়তে উড়তে সে দেখেছিল
তার প্রেমাস্পন্দনের চোখে অন্য কারো ঠোট, ঠোঁটে অন্য কারো গাল-
তারপর তার সব পালক ঝরে পড়ে গেল।
সে একদিন বাঘ হয়েছিল,
মস্ত বড় এক হিংস্র বাঘ।
বহু সন্তর্পণে নজর রাখার শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পরেই..
সে তার চোখে দেখেছিল আতঙ্ক
রোদের কানে কানে ফিসফিসিয়ে কথা
দূরত্ব তোমার আমার মাঝখানে হাজারো
আর নয়ন ভরা অশ্রু।
তাই তার সমস্ত থাবার নখ এখন খসে গেছে।
প্রিয়জনের জন্য তার হৃদয় হয়েছে এখন ক্ষতবিক্ষত
যে হৃদয়ে রয়েছে এখন কান্না ভরা হিংস্রতা।
নিষ্পাপ ভালবাসা
পাহাড় থেকে নেমে এসে দাঁড়ালে, পর্বতের পাশে
মেঘ লেগে সারা গায়ে, ঠোঁটে।
হিমালয়ের নীল আকাশ মনের সাথে কথা বলে।
এসব সবই আমাদের মনের খেলা,
ঠিক যেমনই ভালোবাসার মানুষ নিত্যদিন প্রতিটি মানুষের সাথে খেলা করে!
যার স্বাভাবিক শুনলেও, আমাদের মন কাঁদিয়ে দেয়।।
তোমার অগোছালো দৃষ্টি,
আমায় নয় স্বর্গিক। ভালবাসার দিকে নিয়ে যায়।
ভোর হয়েছে স্বর্গ বিদীর্ণ করে দেয় সুদীর্ঘ সকাল।।
সাদা পারিজাত হতো না মনে হয়।
তোমাকে দেখার পর মনে হল এরপর থেকে ফুটবে।
মনে হওয়াও নয়| নয় অবভাস।
নিশ্চিত প্রত্যয় জানি
ফুটে থাকবে পর্বতে পর্বতে।
মানুষের থেকে দূরে,কচ্চিত দেখা মিলবে অনেক আরোহনে।
এসব না শুনেও তুমি হাসছো, স্কাফটা দুলছে। আমার হলো না ফেরা ।
আপাতত এক বুক ভরা সাহস নিয়ে সাঁতার কাটছে রাজহাঁস।
শুধু তুমি
ওই আকাশটা নীলচে দেখো
ওই সাগরের সাথে কত মিল।
তোমার কেন? জানো ভালোবাসার জন্য।
অল্প অল্প মেঘ, হালকা হালকা বৃষ্টি হয়
ছোট্ট ছোট্ট গল্প থেকে, হাজারো ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
মাঝে মাঝে ক্ষমা করলে, সম্পর্কটাও মিষ্টি হয়।
এক ফোটা জল যদি কখনো আমার চোখ দিয়ে পড়ে,
সেই জলের ফোঁটা শুধু তোমার কথাই বলে।
মনের কথা কেন বোঝনা তুমি?
তাইতো আমি শত আঘাতের পরেও ভালবেসে যাই।
শীতের দিনে চাদর জড়িয়ে,যখন কুয়াশার মাঝে দাঁড়াও
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে, শিশিরের শীতল স্পর্শে
যদি , শিহরিত হয় মন’
বুঝে নিও আমি আছি তোমার পাশে সারাটি জীবন।
চোখে আছে রাঙ্গা কাজল কানে আছেরকম বাহার দুল,
ঠোঁট যেন রক্তে রাঙা ফুল,
মুখে তার মিষ্টি রাঙানো হাসি,
এমন একজন মেয়েকে সত্যিই আমি ভালোবাসি।
কথা কম মুখে আলতো হাসি মন সারাক্ষণ চায় তোমার কাছেই আছি,
মেঘ চাই বৃষ্টি, চাঁদ চাই নিশি,
মন বলি আমি চাই তোমায় ভালোবাসি।
যত দূরে যায় না কেন আমি তোমার পাশেই আছি,
তাকিয়ে দেখো আকাশ পানে ঘুম না আসে চোখে,
কাছে আমায় পাবে তুমি হাত বাড়ালেই.
যদি না পাও জানবে তুমি সেদিন আমি আর নাই।
আমার দু চোখের স্বপ্ন তুমি,
রিমঝিম সুরে বৃষ্টির ধারা তুমি,
আমার হৃদয়ের ক্যানভাস তুমি,
তুমি আমার অপূর্ব সৃষ্টির আঁধার।
নতুন আলো, নতুন স্বপ্ন, নতুন ভালোবাসা,
মনে রেখো সারাটি জীবন তুমিই আমার আশা।
মায়ার বন্ধন
জীবনে যদি মরে কাছে ডাকিতে নাহি পারো
মরনে আমারে তুমি তোমার করিয়া নিও
যতদিন আছি আমি তোমারি হয়ে আছি
বোঝো না তাও, তুমি আমার কত প্রিয়।
হৃদয়ে দিয়েছিস স্থান তোমারি চিরতরে
দিলে না তুমি ওগো তারে যে কোন মান
অসহায় হয়ে আমি আছি, তব মুখ চেয়ে
পারো যদি ভালবেসে দিও ওগো তার দাম|
হঠাৎ যদি আমি হারিয়ে যাই চিরতরে,
ভাঙ্গে যদি ভুল তব বেদনার সুর ধরে-
ডাকিও আমারে তুমি তব মুখে নাম লয়ে-
সার্থক হবে নাম তোমার মুখে প্রিয়।
অশ্রু আসে যদি তোমার আঁখিতে ওগো কখনো,
ঝরিও আচ্ছাঅঝোরে তুমি আমার স্মৃতি লাগে-
থাকিবো না হয়তো আমি সেদিন তোমার কাছে
বোঝো না তাও ,তুমি আমার কত প্রিয়।
আরো পড়ুন:- পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে
আবেগি প্রেমের কবিতা
আবেগি প্রেমের কবিতা এমন একটি সাহিত্যরূপ, যেখানে প্রেমের অনুভূতি গভীর আবেগের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এটি প্রেমিক বা প্রেমিকার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উদ্ভূত এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা, ব্যাকুলতা এবং অনুভূতির গভীরতা তুলে ধরে।এই ধরনের কবিতাগুলিতে কখনো প্রেমিকের এক নিরন্তর অপেক্ষা, কখনো প্রেমিকার প্রতি অবিশ্বাস্য আকর্ষণ, আবার কখনো বিচ্ছেদের কষ্ট বা প্রেমের অভাব ফুটে ওঠে।
আবেগি প্রেমের কবিতা শুধু প্রেমের মাধুর্যই নয়, প্রেমের জটিলতা, বিষাদ এবং দুঃখকেও নিখুঁতভাবে ব্যক্ত করে। এই কবিতাগুলির মাধ্যমে পাঠক এক অদ্ভুত যাত্রায় প্রবাহিত হয়, যেখানে ভালোবাসার সাথে সাথে রয়েছে বেদনার এক অমোঘ দিক, যা হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতিকে ছুঁয়ে যায়।
বিচলিত হৃদয়
আকাশে বহমান এ ধূমকেতু যে আগুনের
যে আগুন তীব্র প্রেমাস্ফিতের ফল|
আকাশের হৃদয়ে চলেছে ধেয়ে
পৃথিবীর বুকে জল হয়ে আছড়ে পড়বে
এতে তার বিরহ বেদনার বিগলিত অশ্রু জল|
চির বিচলিত হৃদয় শান্ত হবে
প্রেমের অনুভূতি জাগবে চিরতরে হৃদয়|
হৃদয়ের ভালোবাসা
অন্তরে আলো জ্বেলে রেখো-দৃষ্টিকে গেছ শুধু আঁধারে তে ঢেকে
নিজেকে প্রশ্ন করে দেখনা, যার নাম তুমি আর লেখ না।
কেন তাকে ধরে আছো হৃদয়ে বিদায়ের পথ কেন ছাড়োনি?
কি তার জবাব দেবে যদি বলি আমি কি হেরেছি?
তুমিও কি একটুও হারোনি-
তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছ আমি দিতে পারিনি|
যে পথে আর কোনদিনও ফেরা হবেনা
সেই পথ ধরে আর হাঁটতে যেও না।
সেখানে পাবে শুধু হৃদয় বিদির্ণ করা ক্ষত
রয়ে যাবে এই ব্যথা চিরত|
তোকে ছাড়াই
জানি, তোকে ছাড়াই আমার কেটে যাবে কয়েকটা বছর, কয়েকটা যুগ
তোকে ছাড়াই-.
শুনতে পাব ভোরের আকাশে উড়ন্ত পাখির কলরব-
দেখতে পাবো ধুধু করা মাঠের পাশে বয়ে চলা যৌবনা নদী
তবুও,
আমি হারিয়ে যাব তোকে খোঁজার ছলে,
নিরুদ্দেশের দেশে।
জানি,
এক টুকরো ভালোবাসা খুঁজে পাব দূর আকাশের নিচে-
তারার মাঝে গাংচিলেরা এসে নিয়ে যেতে চাইবে,
দিগন্তের ওপারে !
শুভ্র বরফের মাঝে কোন এক এক্সিমোরা আমাকে নিয়ে গান লিখবে।
তবুও,
তোকে ভুলবো না কোনদিন, শুধু একটিবার তোকে ছুঁয়ে দেখার আশায়।
তোর অপেক্ষায় চাতক হয়ে মরতে চাই আমি-
তোর জন্য আমার চির বসন্তের দেশে যাওয়ার স্বপ্ন ঘুচে যাবে।
তোর জন্য হয়তো বা কষ্ট আর বেদনারা হবে আমার প্রতিবেশী।
তবুও,
স্বপ্নে বিভোর হয়ে উদ্ভ্রান্ত মেঘের সাথে দল দেব না আর,
শুধুই তোকে চাইবো,আর বলব একবার বেড়াতে-
এসো সুখ ! আমার ঘরে।
আরো পড়ুন: নারীর পর্দা সম্পর্কে ইসলাম
তীব্র প্রেমের কবিতা
তীব্র প্রেমের কবিতা এমন এক ধরনের সাহিত্যকর্ম, যেখানে প্রেমের অনুভূতি একেবারে শক্তিশালী, গভীর এবং আবেগপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়। এই কবিতাগুলিতে প্রেমের প্রতি এক অবর্ণনীয় আকর্ষণ, হৃদয়ের স্পন্দন এবং ভালোবাসার অগাধ তীব্রতা ফুটে ওঠে।
এ ধরনের কবিতায় প্রেম শুধু একটা অনুভূতি নয়, বরং তা এক অবিরাম আগুনের মতো জ্বলতে থাকে, যা কখনো শান্ত হতে জানে না।তীব্র প্রেমের কবিতা কখনো বেদনাদায়ক হতে পারে, যেমন বিচ্ছেদের বা বিরহের কষ্ট, আবার কখনো অমলিন আনন্দে ভরা থাকে, যেখানে দুই হৃদয়ের মিলনে এক অদ্বিতীয় সুখের বর্ণনা পাওয়া যায়।
অন্ধ প্রেম
অতীতের নেপথ্য হইতে
অযাচিত করুণার মতো,
এসেছিল হাসিতে হাসিতে।
ভুলাইতে পথক্লেশ যত|
কি জানি কি রহস্য জড়িত?
এই অন্ধ মানব জীবন!
কোন দিব্য প্রেমে নিয়ন্ত্রিত
পর কেন হয় গো আপন?
অযাচিত অতিথির কাছে
মুক্ত করি হৃদয় ভান্ডার
সুখ দুঃখ সঞ্চিত যা আছে
সমাদরে দিল উপহার|
নিরাশায় হয়ে প্রতি হত
তব পাশে আসিনো যখন,
মায়াময়ী জননীর মতো
স্নেহাঞ্চলে করিলে ব্যঞ্জন|
যদি এই আশ্রিতে তোমার
হারিয়েছো স্নেহের নয়নে,
তবে এরে ভুলিও না আর
আর জন্মান্তরে যুগ আবর্তনে|
গোপনে ভালোবাসা
আমার দেওয়া ফুলে ধুলো যদি লাগে ভুলে
আমার কথার কুসুম ম্লান হবে না কোনো কালে,
জীবনের যত অভিমান ভুলায়ে তুমি-
ছুঁয়ে দিও আমারে তোমার কোমল হাতের ডালে|
তোমাকে না দেখে আমি তোমার ছবি আঁকতে পারি,
তোমার সাথে না দেখা করে আমি তোমার ব্যথা অনুভব করতে পারি,
আমি তোমায় এতটাই ভালবাসি যে!
তোমার মন খারাপে আমি আমার চোখে জল দেখাতে পারি|
চোখের ভাষা
এত কথা কি গো কহিতে জানে
চঞ্চল ওই আঁখি-
নিরব ভাষায় কি যে কয়ে যায়
ও সে মনের বনের পাখি|
বুঝতে পারি না ঐ আঁখির ভাষা !
জলে ডুবে তবু মেটে না পিপাসা,
আদর সোহাগ প্রেম ভালোবাসা
অভিমানে মাখামাখি|
মুদিত কমলে ভ্রমরের প্রায়
বন্দী হইয়া কাঁদিয়া বেড়ায়।
চাহিয়া চাইয়া মিনতি জানায়-
সুনীল আকাশে ডাকি|
গভীর প্রেমের কবিতা
গভীর প্রেমে থাকে এক ধরনের অদৃশ্য এবং অমলিন সংযোগ, যা শুধুমাত্র শারীরিক বা বাহ্যিক সম্পর্কের সীমায় আবদ্ধ থাকে না। এটি প্রেমিক এবং প্রেমিকার মধ্যে মানসিক, আত্মিক এবং কখনো কখনো আধ্যাত্মিক স্তরে গড়ে ওঠে, যেখানে তাদের সম্পর্ক এক অগাধ বিশ্বাস, আন্তরিকতা এবং পরস্পরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় পূর্ণ।
গভীর প্রেম কোনো বাহ্যিক চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষার ওপর নির্ভর করে না। এটি একটি নিরবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক, যা একে অপরকে জানার, বোঝার এবং একটি অভ্যন্তরীণ সংযোগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়।
গভীর প্রেমের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস ও আন্তরিকতা। যখন দুটি হৃদয় একে অপরকে এক অন্তরের মতো অনুভব করতে পারে, তখনই সত্যিকারের গভীর প্রেমের সৃষ্টি হয়।
অপেক্ষা
জানিনা তোমায় পাবো কিনা প্রিয় আমি
আমার এ জীবনে হয়তো আর
ভাগ্যে আমার কোনদিনই ছিলে না তুমি
তবু কেন দেখা কুহেলির মত
ক্ষণিকের দেখা দিয়ে কেন মোরে বাঁধিলে তুমি আমায় প্রনয়ের ডোরে,
আশায় তোমার আজও আছি একা-
যদি আসো ফিরে এ অভাগীর নীড়ে।
নিষিদ্ধ চুমু
ফাইয়াজ ইসলাম ফাহিম
নিষিদ্ধ চুমু দিবো তোমার ঠোঁটে
চুমুর চুম্বক লাগাবো,
তোমায় বারংবার রাগাবো
আন্দোলিত করবে তোমার তনু- মন।
একটি নিষিদ্ধ চুমু দিতে চাই হে প্রিয়সী
ভালবাসার রঙ্গ আছে সেই চুমুতে,
একটি নিষিদ্ধ চুমুর পরশে
দিনমান চাইবে মম কোলে ঘুমাতে।
দিব কি তোমার ঠোঁটে নিষিদ্ধ একটি চুমু
নিষিদ্ধ চুমুর স্বাদ নিতে দাও
তোমার নাসিকা কে,
বুঝতে দাও একটি নিষিদ্ধ চুমুর স্বাদ কত
হে প্রিয়সী নিষিদ্ধ একটি চুমুতে তুমি মাতোয়ারা হবে
ভালবাসার নীল ঘুড়ি উড়াবে নীলিমার বুকে,
দিবো কি একটি নিষিদ্ধ চুমু
তুমি কি রাজি নিষিদ্ধ চুমুর পরশ পেতে?
পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা
উত্তর
শামসুর রাহমান
তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে
বলতেই পারো
‘এই আকাশ আমার’
কিন্তু নীল আকাশ কোনো উত্তর দেবেনা।
সন্ধ্যেবেলা ক্যামেলিয়া হাতে নিয়ে বলতেই পারো,
‘ফুল তুই আমার’
তবু ফুল থাকবে নীরব
নিজের সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে।
জ্যোত্স্না লুটিয়ে পড়লে তোমার ঘরে,
তোমার বলার অধিকার আছে, ‘এ জ্যোত্স্না আমার’
কিন্তু চাঁদিনী থাকবে নিরুত্তর।
মানুষ আমি, আমার চোখে চোখ রেখে
যদি বলো, ‘তুমি একান্ত আমার’, কী করে থাকবো নির্বাক ?
তারায় তারায় রটিয়ে দেবো, ‘আমি তোমার, তুমি আমার’।
অনন্ত প্রেম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার,
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার-
কত রূপ ধ’রে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতিপুরাতন বিরহমিলন-কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমির রজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রবতারকার বেশে।
আমরা দু’জনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয় উৎস হতে।
আমরা দু’জনে করিয়া খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধূর নয়নসলিলে
মিলনমধুর লাজে।
পুরাতন প্রেম নিত্যনতুন সাজে।
আজি সেই চিরদিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিলপ্রাণের প্রীতি
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে-
সকল প্রেমের স্মৃতি,
সকল কালের সকল কবির গীতি।
নজরুলের প্রেমের কবিতা
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন, যিনি তাঁর কবিতার মাধ্যমে প্রেম, বিপ্লব, মানবতা এবং বিদ্রোহের কথা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং গভীরভাবে ব্যক্ত করেছেন। তাঁর প্রেমের কবিতাগুলো যেমন কখনো শান্ত, কোমল এবং স্নিগ্ধ, তেমনি কখনো তা উত্তাল, তীব্র এবং বিপ্লবী আবেগে ভরা।
নজরুলের প্রেমের কবিতায় কখনো থাকে এক অবিশ্বাস্য তীব্রতা, যা প্রেমিকের আত্মদান, একে অপরের প্রতি চিরকালীন শ্রদ্ধা এবং একতার শক্তি প্রকাশ করে। তাঁর কবিতায় প্রেম কখনো সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, বৈষম্য, বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে, আবার কখনো ব্যক্তিগত প্রেমের অবিরাম তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও আবেগের প্রকাশ।
নজরুল প্রেমের মাধ্যমে পৃথিবীকে নতুনভাবে দেখতে শেখান, যেখানে মানুষ তার অন্তর্নিহিত মানবিকতা ও মূল্যবোধকে খুঁজে পায় এবং সমাজের অন্ধকারকে একসঙ্গে দূর করতে পারে। নজরুলের প্রেমের কবিতাগুলি চিরকালীন এবং অনুপ্রেরণাদায়ক, কারণ তাতে প্রেমের শক্তি, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং মানবিক সৌন্দর্য একত্রিত হয়ে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
অনেক ছিল বলার
কাজি নজরুল ইসলাম
অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে।
পথ ছিল গো চলার, যদি দু’দিন আগে আসতে।
আজকে মহাসাগর-স্রোতে
চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা পাতা হারায় যথা সেই আঁধারে ভাসতে।
গহন রাতি ডাকে আমায় এলে তুমি আজকে।
কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে।
আসতে যদি হে অতিথি
ছিল যখন শুকা তিথি
ফুটত চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।
অনামিকা
কাজী নজরুল ইসলাম
কোন নামে ডাকব তোমায়
নাম-না-জানা- অনামিকা
জলে স্থলে গগনে-তলে
তোমার মধুর না যে লিখা।
গীষ্মে কনক-চাঁপার ফুলে
তোমার নামের আভাস দুলে
ছড়িয়ে আছে বকুল মূলে
তোমার নাম হে নিকা।
বর্ষা বলে অশ্রুজলের মানিনী সে বিরহিনী।
আকাশ বলে, তরিতে লতা, ধরিত্রী কয় চাতকিনী।
আষাঢ় মেঘে রাখলো ঢাকি
নাম যে তোমার কাজল আঁখি
শ্রাবণ বলে, যুঁই বেলা কি?
কেকা বলে মালবিকা।
শারদ-প্রাতে কমল বনে তোমার নামে মধু পিয়ে
বানীদেবীর বীণার সুরে ভ্রমর বেড়ায় গুনগুনিয়ে!
আরো পড়ুন: ইসলামে বিয়ের নিয়ম