বার চান্দের ফযিলত ও আমল
Share this
মহরম মাসের ফযিলত
হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দী বর্ণনা করেন, আরবী মহররম মাসের প্রথম তারিখ চাদ দেখার পর রাতে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করবে।
উক্ত নামাযের প্রতি রাকাতে এগার বার করে সূরা এখলাস পড়বে । নামায শেষে নিম্নের দোআটি তিন বার পাঠ করবে-
قُدُّوسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ المَلائِكَةِ وَالرُّوحُ . سبوح قدوس
উচ্চারণ : ছুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ারূহ্ ।
সফর মাসের ফজিলত
সফর মাসের চাঁদ দেখার পরে রাতে এশার নামাযের পর চার রাকাত নফল নামায আদায় করার বহু ফায়দা রয়েছে। উক্ত নামাযের প্রথম রাকাতে আলহামদু সূরার পর সূরা কাফিরূন পনের বার এবং
দ্বিতীয় রাকাতে পনের বার সূরা এখলাস, তৃতীয় রাকাতে সূরা ফালাক পনের বার এবং চতুর্থ রাকাতে সূরা নাছ পনের বার পড়তে হয় । নামায শেষে কয়েকবার পাঠ করবে-
اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَستَعِينُ .
উচ্চারণ ঃ ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাছতাঈন
যে লোক এ নামায আদায় করবে আল্লাহ্ পাক তাকে সকল প্রকার গোনাহ থেকে রক্ষা করবেন এবং অগণিত নেকী প্রদান করবেন ।
এ নামায সম্পর্কে “রাহাতুল কুলুব” কিতাবে লিখা রয়েছে, প্রতি বছর দশ লাখ আশি হাজার মসীবত নাযিল হয়।
এর মধ্যে সফর মাসেই নয় লাখ বিশ হাজার নাযিল হয় । উক্ত নামাযী এ মুসীবত হতে মুক্ত থাকবে।
রবিউল আউয়ালের ফজিলত
উক্ত মাসের প্রথম তারিখ হতে বার তারিখ পর্যন্ত প্রত্যহ বিশ রাকাত করে নফল নামায আদায় করা বহু নেকী লাভের কাজ । এই নামাযের প্রতি রাকাতে একুশ বার করে সূরা এখলাছ পাঠ করতে হয়।
নামাজান্তে কয়েকবার দরুদ শরীফ পাঠ করে হযরত নবী করিম (সাঃ)-এর রুহের প্রতি ছওয়াব রেছানী করতে হয়। উক্ত নামাযীকে নবী করীম (সাঃ) জান্নাতের সু সংবাদ দিবেন।
এই নামায প্রত্যহ আদায় করতে অক্ষম হলে দুই তারিখ অথবা বারই তারিখ আদায় করবে। কোন ব্যক্তি যদি নিম্নের দরূদ শরীফ এই মাসের মধ্যে এশার নামাযের পর এক হাজার এক শত পঁচিশ বার পড়বে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি স্বপ্নের মধ্যে নবী করীম (সাঃ)-কে দেখতে পাবে ইনশাআল্লাহ্ ।
محمد اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَعَلى الي
إبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ
كَمَا صليت على
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ছাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অপর এক বর্ণনায় আছে, কোন ব্যক্তি যদি নিম্নের দরুদ শরীফ রবিউল আউয়াল মাসের মধ্যে এক লাখ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করে এবং পাঠ করার মধ্যে কোন দিন বাদ না দেয় তবে আল্লাহ্র রহমতে সে ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ)-কে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাবে।
আর অন্তরে ঈমানের নূর প্রকাশ পাবে এবং আল্লাহর ভালবাসা বেড়ে যাবে।
اَلصَّلوةُ وَالسّلامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ .
উচ্চারণ : আসসালাতু ওয়াস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ।
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে উক্ত মাসের বার তারিখ কোন কোন বিশিষ্ট তাবেয়ীগণ নবী করীম (সাঃ)-এর পবিত্র আত্মার প্রতি ছওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে বিশ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন।
উক্ত নামাযে সূরা ফাতিহার পর এগার বার করে সূরা এখলাছ পড়তেন। এই নামাযের উছিলায় তারা নবী করীম (সাঃ)-এর দীদার লাভ করতেন। সুতরাং আমরা যদি উক্ত আমল করি তাহলে আমরাও নবী করীম (সাঃ)-এর দীদার লাভ করতে পারব । এবং দোজাহানের কামিয়াবী লাভ করতে পারব ইনশাআল্লাহ্।
রবিউল আখের মাসের ফযিলত
জাওহারে গায়বী নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, এই মাসের প্রথম তারিখ হতে চার রাকআত নফল নামায আদায় করা যায়। এই নামাযের প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার পর এগার বার করে সূরা এখলাছ পাঠ করবে।
উক্ত নামাযীর আমলে নব্বই হাজার বছরের নেকী লেখা হয় । এবং নব্বই হাজার বছরের বদী বাদ দেয়া হয়।
এই মাসের যে কোন এক বৃহস্পতিবার রাতে এশার নামায আদায়ের পর কোন এক নির্জন জায়গায় বসে “সূরা মূলক” একশত বার পাঠ করে দুই রাকয়াত নফল নামায আদায় করবে।
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর এগার বার করে সূরা এখলাছ পাঠ করবে। অতপর আল্লাহ্ পাকের দরবারে যে কোন নেক দোয়া করলে ইনশাআল্লাহ্ তা কবুল করবেন এবং কেয়ামতের মাঠে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।
তিনি আর এক বর্ণনায় রয়েছে, এই মাসের শেষ রাতে দুই রাকাতের নিয়্যতে মোট চার রাকাত নফল নামায আদায় করবে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর তিনবার করে সূরা ইখলাছ পড়বে।
আল্লাহ্র রহমতে উক্ত নামাযীর কবর আযাব ক্ষমা হবে এবং দুনিয়ায় যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন সূখে-শান্তিতে থাকবে ।
জমাদিউল আউয়াল মাসের ফজিলত
বর্ণিত আছে, মহানবী (সাঃ)-এর সাহাবীগণ এই মাসের প্রথম তারিখ দুই দুই রাকআতের নিয়্যতে মোট বিশ রাকাত নফল নামায।
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একবার সূরা এখলাস পাঠ করতেন এবং নামায শেষে নিচের দরূদ শরীফ একশ’ বার পাঠ করতেন ।
بل وقت
صَلِّ عَلى مُحَمَّد وع اللهم صل على
كَمَا صَلَّيْتَ عَلى
مَّجِيدٌ . إبْرَاهِيمَ وَعَلى اِل اِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حميد مجيد .
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
এই নামায আদায়কারীর আমলনামায় অগণিত নেকী লেখা হবে এবং তার সকল প্রকার নেক আশা পূর্ণ হবে ।
আরও বর্ণিত আছে, কোন ব্যক্তি যদি এই মাসের প্রথম তারিখ দিনে দুই দুই রাকআতের নিয়্যতে মোট আট রাকআত নামায আদায় করে এবং প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর এগার বার করে সূরা এখলাস পড়ে, তাহলে উক্ত নামাযীকে আল্লাহ্ পাক অগণিত নেকী দান করবেন এবং তার হৃদয়ের বাসনাসমূহ পূর্ণ করে দিবেন।
যদি কোন ব্যক্তির পারিবারিক জীবনে অশান্তি দেখা দেয় তবে সে এই মাসে প্রত্যহ ফজর ও মাগরিব নামাযের পর নীচের তসবীহ দুইটি একশ’ বার করে পাঠ করবে । ইনশাআল্লাহ্ তার অশান্তি দূর হয়ে যাবে এবং রহমত নাযিল হবে ।
তসবীহ দুইটি হলো-
(হুওয়ার হাইয়্যুল কাইয়্যুম)
(হুওয়াল গানিয়্যুল মাতীন)
এই মাসের তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখ রাতে চার রাকাত নফল নামায প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সাত বার করে আয়াতুল কুরসী ও পাঁচ বার সূরা এখলাস পাঠ করলে উক্ত নামাযীর আমল নামায় অগণিত নেকী দান করা হয় ।
রজব মাসের ফজিলত
গুনিয়াতুত তালিবীন কিভাবে বর্ণিত আছে, রজব মাসের প্রতি শুক্রবার জুমআর নামায ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে এক নিয়্যতে চার রাকআত নফল নামায আদায় করবে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সাতবার আয়াতুল কুরসী ও পাঁচ বার সূরা এখলাস পড়বে । নামায় শেষ করে নিচের দোয়া পঁচিশ বার পড়বে।
উচ্চারণ : লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম অতঃপর একশ’ বার নিম্নের ইস্তেগফার পড়বে :
اسْتَغْفِرُ اللهِ الَّذِي لَا إِله إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ غَفَّارُ الذُّنوبِ
وَاتُوبُ اليه .
উচ্চারণ ঃ আসতাগফিরুল্লাহাল্লাযী লা-ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, গাফফারুয যুনূবি ওয়া আতূবু ইলাইহি ।
তারপর একশ’ বার যে কোন দরূদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহ্ পাকের দরবারে নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দোআ করবে ইনশাআল্লাহ্ দোআ কবুল হবে । রজব মাসের প্রথম রাতে দুই দুই রাকআতের নিয়্যতে দশ রাকাত নামায আদায় করবে এবং প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর তিনবার সূরা কাফেরুন এবং তিনবার সূরা এখলাস পড়বে নামায শেষে নিচের দোয়া তিন বার পড়বে।
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহ্য়ী ওয়া ইয়ামীতু ওয়া হুওয়া হাইয়্যুল লা-ইয়ামৃতু বিয়াদিহিল খাইর ওয়া হওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা-মানিয়া লিমা আ’ত্বাইতা ওয়ালা মু’ত্বিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফাউ যালজ্বাদ্দি মিনকাল জাদ্দু ।
তারপর মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে যে উদ্দেশ্যে দোআ করবে, ইনশাআল্লাহ্ তিনি তা কবুল করবেন এবং নামাযী ব্যক্তির আমল নামায় অনেক নেকী লেখা হয় ।
শাবান মাসের ফজিলত
ফাজায়েলে শুহুর কিতাবে আছে, শাবান মাসের প্রথম তারিখ রাতে দুই রাকাতের নিয়্যতে মোট বার রাকাত নফল নামায পড়বে । প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর পনের বার করে সূরা ইখলাছ পড়বে। এই নামায রাতের যে কোন অংশে আদায় করতে পারেন। এই নামায আদায়কারীর আমল নামায় অগণিত নেকী লেখা হয় । হযরত আবুল
কাসেম সাফফার (রা) বর্ণনা করেন, শাবান মাসের যে কোন নামায আদায় করবে। সূরা ফাতিহার পর প্রতি রাকাতে এগার বার করে সূরা ইখলাছ পড়বে। নামায শেষ করে হযরত ফাতিমা (রা) এর রূহের উপর বখশিশ করবে।
রমজান মাসের ফজিলত
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রমজান মাসের রোজা রাখা ফরয। আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন-
উচ্চারণ ঃ ইয়া আইয়্যুহাল্লাজীনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুছ ছিয়ামু কামা কুতিবা আলল্লাজীনা মিন ক্বাবলিকুম লায়াল্লাকুম তাত্তাকুন ।
অর্থ : হে মুমীনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরয করা হয়েছে যেমনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল । যাতে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।”
মহানবী (সঃ) বলেন, যে লোক পূর্ণ বিশ্বাস ও আল্লাহ্ পাকের নৈকট্য লাভ করার আশায় রমজানের রোজা রাখবে সে ব্যক্তি এমনভাবে নিষ্পাপ হয়ে যায়, যেমনিভাবে মায়ের পেট হতে জন্ম লাভের পর বে-গুণাগার ছিল ।
মহানবী (সঃ) আরো বলেন, যখন রমজান মাস উপস্থিত হয় তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং বিতাড়িত শয়তানকে বেঁধে রাখা হয় ।
রোযার মাসের খাবার-দাবারের কোন হিসাব হবে না। অবশ্য হালাল খাদ্য হতে হবে। রোযা মানুষকে গুনাহ হতে বিরত রাখে এবং আল্লাহ্ পাকের সন্তুষ্টি লাভ হয়। রোজাদার ব্যক্তির রুজি-রোজগার বাড়িয়ে দেন এবং ধন-সম্পদ বাড়িয়ে দেয়া হয় ৷ রোযাদার ব্যক্তির আহার-বিহার, কাজ-কর্ম সমস্তই এবাদতের মধ্যে গণ্য হয়। এবাদত-বন্দেগীর ও নেক কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয় । রোযাদারের উপর আল্লাহ্ পাকের রহমত ও বরকতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয় এবং আসমান ও জমীনের সকল ফেরেস্তারা মাগফিরাত কামনা করতে থাকে ।
রমজান মাসের এবাদত অন্য মাসের অপেক্ষা সত্তরগুণ বেশি প্রদান করা হয় । রোযাদার ব্যক্তির শরীর সব রকম পাপ হতে মুক্ত থাকে বিধায় কোন পাপের কাজ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। এই মাসে ইবলিছ শয়তানকে এবং তার সঙ্গীদেরকে বন্দী রাখা হয় । মানুষের কু-মন্ত্রণাদাতা নফসকে শক্তিহীন করা হয় । রোযাদারের জন্য প্রত্যহ নতুন করে বেহেশত সাজানো হয়। রোযার মাসের শুক্রবার রাতে উনচল্লিশ লাখ জাহান্নামী মুক্ত হয় এবং তাহাজ্জুদের সময় রোযাদার ব্যক্তির পাপসমূহ ক্ষমা করা হয় ।
শাওয়াল মাসের ফজিলত
শাওয়াল মাসের প্রথম রাতে অথবা ঈদের নামাযের পর বাসায় বসে চার রাকাত নফল নামায আদায় করবে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একশত বার করে সূরা
ইখলাছ পড়বে। উক্ত নামাযী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্ পাক জান্নাতের সকল দরজা খুলে দিবেন এবং জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দিবেন। উক্ত নামাযী ব্যক্তি বেহেশতের
মধ্যে নিজের জায়গা না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করবে না ।
ইখলাছ
অপর এক রেওয়ায়েতে আছে, উক্ত মাসের যে কোন দিন কিংবা রাতে আট রাকাত নামায আদায় করবে। প্রতি রাকাতে সূরা আলহামদুর পর পঁচিশ বার করে সূরা পড়বে। নামায শেষ করে সূবহানাল্লাহ্ সত্তর বার পড়বে। তারপর নিচের দরুদ শরীফ সত্তর বার পড়বে ।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যিল ওয়া আলা আলিহী ওয়া আছবিহী ওয়া বারিক ওয়া ছাল্লিম ।”
এই নামাযীর হৃদয়ে আল্লাহ্ পাক রহমত ও হেকমতের দরজা খুলে দিবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একখানা বিশাল ঘর তৈরি করে দিবেন। পৃথিবীতে তার সত্তরটি নেক আশা পূর্ণ করে দিবেন ।
হাদীস শরীফে আছে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যক্তি এই মাসে মারা যাবে, সে ব্যক্তি শহীদগণের মর্যাদা পাবেন ।
অপর এক হাদীসে আছে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এই মাসে নিজেকে পাপ কাজ হতে দূরে রাখতে পারবে আল্লাহ পাক বেহেশত তার জন্য নির্দিষ্ট করে দিবেন ।
যিলক্বদ মাসের ফজিলত
যে ব্যক্তি যিলকদ মাসের যে কোন শুক্রবার দুই রাকাতের নিয়্যতে চার রাকাত নফল নামায আদায় করে এবং প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর দশ বার সূরা এখলাস পড়বে, তাকে একটি মকবুল হজ্জ ও ওমরার নেকী প্রদান করা হয় ।
উচ্চারণ ঃ আকরিমূ যিল কা’দাতি ফাইন্নাহু আউয়ালু মিন শুহূরিল হারাম ।
অর্থ : মহানবী (সাঃ) বলেন, তোমরা যিলকদ মাসকে সম্মান করবে। যেহেতু এ মাস সম্মানিত মাসসমূহের মধ্যে প্রথম।
যে লোক যিলকাদ মাসে একদিন রোযা রাখবে, তার আমলনামায় আল্লাহ্ পাক একটি মকবুল হজ্জের সওয়াব দান করবেন এবং তার রোযার বরকতে তাঁর প্রতি নিশ্বাসের বদলে একটি গোলাম আযাদ করার নেকী পাওয়া যাবে।
মহানবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এই মাসে একটি রোযা রাখে তার আমল নামায় এক হাজার বছরেরও বেশি নফল ইবাদতের নেকী প্রদান করা হয়। যে ব্যক্তি এই মাসের বৃহস্পতিবার দুই দুই রাকাতের নিয়্যতে একশত রাকাত নফল নামায এমনভাবে
আদায় করে যে, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর দশবার সূরা ইখলাছ পড়ে, তাহলে আল্লাহ্ পাক তার আমলনামায় অসংখ্য নেকী লিখে দিবেন এবং তার সকল প্রকার মনের আশা পূর্ণ করে দিবেন
এই মাসে ঝগড়া-বিবাদ, মারা মারি, কাটা কাটি যুদ্ধবিগ্রহ হারাম। এ মাসের অন্য কাজ হতে বিরত থেকে এবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া একান্ত জরুরী। এ মাসে এক দিনের এবাদত এক হাজার বছরের নফল এবাদাত হতেও উত্তম।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, এই মাসে প্রতি রাতে যে ব্যক্তি দুই রাকাত নফল নামায সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাছ তিনবার পাঠ করে আদায় করে, আল্লাহ পাক তাকে একজন হাজী ও একজন শহীদের সমান নেকী দান করেন এবং কেয়ামতের দিন সে আরশের নিচে ছায়া পাবে। হাদীস শরীফে আরও আছে, যে ব্যক্তি এই মাসের প্রথম রাতে দুই দুই রাকাতের নিয়্যতে চার রাকাত নফল নামায প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর তেইশবার সূরা ইখলাছ পাঠ করে, সে ব্যক্তির জন্য জান্নাতে চার হাজার মনোমুগ্ধকর ভবন নির্মাণ করে রাখা হয়। প্রত্যেক ভবন লোহিত বর্ণের ইয়াকুত পাথরদ্বারা নির্মিত বহু মূল্যবান মণি মুক্তা খচিত সিংহাসন পাতা থাকবে। প্রত্যেক সিংহাসনে একজন করে হুর উপবিষ্ট থাকবে। এই হুরগণের কপাল সূর্যের আলো হতেও বেশি দীপ্তিময় হবে ।
যিলহজ্জ মাসের ফজিলত
যিলহজ্জ আরবী বছরের সর্বশেষ মাস। এ মাসের ফযীলত বর্ণনার অতীত । এ মাসে রয়েছে পবিত্র হজ্জ । মহানবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করতে সক্ষম অথচ হজ্জ করল না, সে ইয়াহুদী বা নাসারা হয়ে মরুক। যাদেরকে আল্লাহ্ পাক হজ্জ করার ক্ষমতা দিয়েছেন তারা হজ্জ না করে মারা গেলে জাহান্নামের ভীষণ আগুণে নিক্ষিপ্ত হবে।-(মেশকাত)
হুযূরে আকরাম (সাঃ) বলেন-
উচ্চারণ : সাইয়্যিদুশ শুহুরি শাহরু রামদ্বান। ওয়া আ’যামুহা কুরমাতান যিলহাজ্জাহ্ । অর্থ ঃ মাসসমূহের সর্দার হল রমযান মাস। তন্মধ্যে যিলহজ্জ মাসের সম্মান মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। অতএব সম্মানের হিসেবে যিলহজ্জ মাস শ্রেষ্ঠ স্থানের অধিকারী।
যে ব্যক্তি ঝগড়া-ফাসাদ, পাপের কাজ এবং দাম্পত্য প্রণয় সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ ও বাক্য হতে বিরত হয়ে হজ্ব সমাপ্ত করে, সে ব্যক্তি সদ্য প্রসূত শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। -(বোখারী ও মুসলিম শরীফ।)
একদা হযরত আয়শা সীদ্দিকা (রাঃ) জেহাদে যাবার জন্য নবী করীম (সাঃ)-এর অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি (সাঃ) বলেন, হজ্জই তোমাদের জেহাদ। (বোখারী ও মুসলিম)
যে আমার মৃত্যুর পর হজ্জ করল এবং আমার রওজা দর্শন করল, সে যেন আমার
জীবদ্দশায় আমাকে দর্শন করল। (তিরমিযী, নাসায়ী শরীফ)
আল্লাহ্ পাকের প্রতিনিধি হল তিন দল-মুজাহিদ, হাজী ও ওমরা পালনকারীগণ (নাসারী ও মেশকাত শরীফ)।
অপর এক হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের জুমআর দিন দুই দুই রাকাতের নিয়াতে মোট ছয় রাকাত নফল নামায যার প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর পনের বার সূরা এখলাছ পড়বে এবং নামায শেষে নিচের দোআটি পনের বার পাঠ করার পর পরের দরূদ শরীফ পড়ে দোয়া করলে আল্লাহ্ পাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং আখেরাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন।
দোয়া :
উচ্চারণ : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মালিকুল হাক্কুল মুবীন ।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা ছাইয়্যদিনা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহী ওয়া আছহাবিহী ওয়া বারিক ওয়া ছাল্লিম ।
আরো পড়ুন:- নামাজ কি এবং কেন পড়বেন