যোহরের নামাজ কয় রাকাত
Share this
যোহরের নামাজ হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের দ্বিতীয় নামাজ। এটি দিনের বেলায়, সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার পর থেকে আসরের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আদায় করা হয়। যোহরের নামাজ মোট ১২ রাকাত নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, ৪ রাকাত ফরজ, অতঃপর ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং ২ রাকাত নফল নামাজ। নফল নামাজ বাদ দিলে যোহরের নামাজ ১০ রাকত হয়।
যোহরের নামাজের সময়
🔹 যোহরের নামাজের সময় শুরু: সূর্য যখন মধ্য আকাশ থেকে পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে, তখন থেকে যোহরের নামাজের সময় শুরু হয়।
🔹 যোহরের নামাজের সময় শেষ: যোহরের নামাজের শেষ সময় আসরের নামাজের সময় শুরুর আগ পর্যন্ত।
আরো পড়ুন: নামাজের রুকন
যোহরের নামাজের নিয়ম
যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজ একা অথবা জামাতে আদায় করা যায়। জামাতে পড়লে ইমামের অনুসরণ করতে হয়, আর একা পড়লে নিজেই কিরাত (সুরা) তেলাওয়াত করতে হয়। নিচে একা পড়ার নিয়ম দেওয়া হলো—
১ম রাকাত:
নিয়ত করুন: যোহরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য নিয়ত করুন।
তাকবির: “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বাঁধুন।
সানা পড়ুন: “সুবহানাকাল্লাহুম্মা..
আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ুন।
সুরা ফাতিহা পড়ুন।
সুরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পড়ুন।
রুকু করুন: “সুবহানা রব্বিয়াল আজিম” (৩ বার)।
সোজা হয়ে দাঁড়ান: “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রব্বানা লাকাল হাম্দ”।
প্রথম সেজদা করুন: “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা” (৩ বার)।
বসে থেকে দ্বিতীয় সেজদা করুন।
সেজদা শেষ করে দাঁড়িয়ে যান।
২য় রাকাত:
সুরা ফাতিহা পড়ুন।
এরপর অন্য একটি সূরা পড়ুন।
রুকু করুন, সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং সেজদা করুন।
দ্বিতীয় সেজদার পর বসে তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ুন।
তারপর দাঁড়িয়ে যান তৃতীয় রাকাতের জন্য।
৩য় রাকাত:
শুধু সুরা ফাতিহা পড়ুন (সুরা মিলাতে হবে না)।
রুকু করুন, সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং সেজদা করুন।
দ্বিতীয় সেজদার পর উঠে দাঁড়ান চতুর্থ রাকাতের জন্য।
৪র্থ রাকাত:শুধু সুরা ফাতিহা পড়ুন (সুরা মিলাতে হবে না)।
রুকু করুন, সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং সেজদা করুন।
দ্বিতীয় সেজদার পর বসে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া পড়ুন।
ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম দিন: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ”।
আরো পড়ুন: নামাজের ফরজ কয়টি
যোহরের নামাজের পর আমল
যোহরের নামাজ আদায় করার পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়া রয়েছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এখানে কিছু আমল ও দোয়ার বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
অতিরিক্ত নফল নামাজ (মুস্তাহাব আমল)
যোহরের ফরজ নামাজের পর ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়া সুন্নত। এরপর ২ রাকাত নফল নামাজ পড়াও বিশেষ ফজিলতপূর্ণ।
সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস: এগুলো তিনবার করে পাঠ করা উত্তম, যেমনটি রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক নামাজের পর করতেন।
তাসবিহ-জিকির: নামাজের পর নিচের তাসবিহ ও জিকিরগুলি পাঠ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ:
- ৩৩ বার – সুবহানাল্লাহ
- ৩৩ বার – আলহামদুলিল্লাহ
- ৩৪ বার – আল্লাহু আকবার
এরপর ১ বার:
- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু…
পড়াটা মুস্তাহাব।
মাগফিরাত ও রহমতের দোয়া
- আস্তাগফিরুল্লাহ – ৩ বার পড়ুন।
- আল্লাহুম্মা আনতা সালাম ওয়া মিনকাস সালাম… এটি জান্নাতে প্রবেশের দোয়া হিসেবে পড়া যায়।
এই আমলগুলি নিয়মিতভাবে পালন করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় এবং বিপুল সওয়াব পাওয়া যায়।
যোহরের নামাজের ফজিলত
কুরআন ও হাদিসে যোহরের নামাজের অনেক মর্যাদা ও সওয়াব বর্ণিত হয়েছে। এই নামাজ ইসলামের পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাদিসে যোহরের নামাজের গুরুত্ব ও তার সওয়াব সম্পর্কে বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা করেছেন। নিচে যোহরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিস দ্বারা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জান্নাতে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঠাণ্ডা সময় (ফজর ও যোহর) এর নামাজ আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
এখানে “ঠাণ্ডা সময়” বলতে ফজর ও যোহর নামাজের সময়কে বোঝানো হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এই দুটি নামাজ ঠিকমতো আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এক নামাজ থেকে আরেক নামাজ পর্যন্ত ও জুমার নামাজ থেকে আরেক জুমার নামাজ পর্যন্ত মাঝে সংঘটিত গুনাহসমূহের কাফফারা (মোচনকারী) হয়, যদি কবিরা গুনাহ (বড় গুনাহ) না করা হয়।“
(সহিহ মুসলিম: ২৩৩)
এই হাদিসে বলা হচ্ছে যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এক নামাজ থেকে অন্য নামাজ পর্যন্ত এবং প্রতি সপ্তাহে জুমার নামাজের মধ্যে গুনাহ মাফ হয়ে যায়, যদি কেউ বড় গুনাহ না করে থাকে।
দোজখের আগুন হারাম হওয়া
হাদিসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি ফজর ও আসরের নামাজের পাশাপাশি যোহর নামাজ ঠিকমতো আদায় করবে, সে জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপদ থাকবে।“
(সহিহ মুসলিম: ৬৩৪)
এই হাদিসে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, যারা যোহরের নামাজ সহ ফজর ও আসরের নামাজ নিয়মিত পড়েন, তারা আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পান।
আল্লাহর রহমত ও দয়ার মাধ্যমে, নিয়মিত যোহরের নামাজ আদায় করে আমরা বিপুল সওয়াব অর্জন করতে পারি এবং জান্নাতের পথে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারি। তাই, যোহরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত উপলব্ধি করে নিয়মিত এটি আদায় করা উচিত।
আরো পড়ুন: তাশাহুদ দুরুদ শরীফ দোয়া মাসুরা