ইসলাম

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য |স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য

Share this

স্ত্রীর হক বা স্বামীর কর্তব্য

স্ত্রীর উপর যেমন স্বামীর কতকগুলো হক আছে, তেমনি স্বামীর উপরও স্ত্রীর কতকগুলো হক আছে। আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে ফরমান-

وَعَاشِرُو

بِالْمَ

উচ্চারণ : ওয়া আশিরূহুন্না বিলমা’রূফি ।

অর্থ : হে মুসলমান পুরুষগণ! তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদাচার সদ্ব্যবহার করে জীবন যাপন কর ।

হাদীসে আছে, হযরত (সাঃ) ফরমান, যখন তুমি খাবে তখন তোমার স্ত্রীকেও খাওয়াবে। যখন তুমি পোশাক পরবে তাকেও পরাবে। আর কখনও তার মুখের উপর প্রহার করবে না,

তাকে গালি দিবে না এবং নিজের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে শোয়াবে না । অন্যায়ভাবে মারামারি, গালাগালি করবে না। নিজে যেরূপ খাবে, পরিধান করবে, সেরূপ খাওয়াতে ও পরিধান করাতে হবে। কোনরূপ কম করতে পারবে না।

মতবিরোধ বা ঘৃণা করে তাকে অন্যস্থানে শোয়াবে না। বরং যেথায় যেরূপ শোবে তাকেও সেথায় সেরূপ শুতে দিতে হবে। এটা তোমার কর্তব্য । (আবু দাউদ )

২। স্বামীর উপর স্ত্রীর খোরপোষ দেয়া ওয়াজিব এবং যখন স্ত্রী নিজেকে ও আত্মাকে স্বামীর নিকট সমর্পণ করে তখন স্বামীর উপর তার খোরাক-পোশাক এবং বাসগৃহ প্রদান করা ওয়াজিব হয়ে যায় ।

৩। হেদায়া কিতাবে আছে, স্বামীর উপর স্ত্রীর খোরপোষ ফরয করা হয়েছে যদি ধনবান হয় তবে স্ত্রীর চাকরের খোরপোষও তার উপর ওয়াজিব। আফসোস! যেসব অশিক্ষিত এমনকি শিক্ষিত লোকও স্ত্রীদের হক রীতিমত আদায় করে না, তাদের সাথে মিলমিশ রেখে চলে না এবং যখন তখন গালাগালি, মারপিট করতে থাকে কিন্তু হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন-

“তোমাদের কেউ যেন স্ত্রীকে ক্রীতদাসীর ন্যায় প্রহার না করে, অথচ দিবসের শেষভাগে (অর্থাৎ যে কোন সময়) তার সাথে সঙ্গম করবে। (বাখারী, মুসলিম)

৪। ফতোয়ায়ে কাযীখানে আছে, “স্বামী স্ত্রীকে চার কারণে প্রহার করতে পারে।

( ১) স্বামী যদি স্ত্রীকে সাজসজ্জা করে তার নিকট উপস্থিত হতে বলে আর সে যদি তা অমান্য করে ।

(২) স্বামী মিলনের উদ্দেশ্যে ডাকলে শরীয়তসম্মত ওযর ব্যতীত যদি সে উপস্থিত না হয়।

(৩) যদি স্ত্রী নাপাকীর গোসল ও নামায ত্যাগ করে।

(৪) যদি সে স্বামীর বিনা হুকুমে অন্যত্র যায় ।

৫। অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে ঐ সকল লোক উত্তম যারা স্ত্রীদের সাথে খুশীর জীবন যাপন করে থাকে ।

৬। হযরত (সাঃ) আরও বলেছেন, “তোমাদের স্ত্রীদেরকে সর্বদা সদুপদেশ দিতে থাক, নিশ্চয়ই তাদেরকে বাম পার্শ্বের বাঁকা হাড্ডি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।

যদি তোমরা তা সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে যাবে; আর যদি ঐভাবে রেখে দাও তা হলে বাঁকাই থেকে যাবে। আতএব, মিষ্টি সূরে সদুপদেশ দানে যা করতে পার তা উত্তম মনে করবে।

৭। স্ত্রীলোক উচ্চশিক্ষিত হলেও মানবমণ্ডলীর শাশ্বত জীবনধারার জ্ঞানবোধে তার ত্রুটি জন্মগতভাবেই রয়ে যায়। কেননা, পুরুষের মগজের তুলনায় স্ত্রীদের মগজের পরিমাণ প্রকৃতিগতভাবেই অত্যন্ত কম। এক হাদীসে আছে, “স্ত্রীলোকের ঈমান ও জ্ঞানবুদ্ধি পুরুষের অর্ধেক মাত্র।

ধরতে গেলে কথায় কথায় কাজে কাজে বহু ত্রুটি ধরা যায়, কিন্তু তা ধরে বুদ্ধিহীনা অথবা নারী জাতির উপর নির্যাতন না করে ক্ষমা করাই উচিত। তাদের একশ, দোষের নিরানব্বইটি ক্ষমা করে একটি মাত্র ধরেও তাদের হক আদায় করা বাঞ্ছনীয় ।

আর তবেই তোমরা হযরত আইউব (আঃ) হযরত নূহ (আঃ)-এর সাথে বেহেশতে যেতে পারবে। কেননা, তাঁরা স্ত্রীর যন্ত্রনা সহ্য করতঃ ক্ষমা করেছেন এবং রীতিমত তাদের হক আদায় করে মিলে মিশে থেকে খুশীর জীবন অতিবাহিত করেছিলেন

স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার

১। স্ত্রীকে অত্যাবশ্যকীয় কিছু কিছু বিদ্যা শিখাতে হবে। এবং তাদেরকে সর্বদা পর্দায় রাখতে হবে। কোরআন হাদীসের বিরোধিতা করবে না। তাদেরকে শরীয়ত সম্বন্ধীয় সমস্ত দরকারী মাসআলা যথা ঈমান, নামায ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মোস্তাহাব, হালাল, হারাম, মাকরূহ ইত্যাদি শিক্ষা দিতে হবে

২। খোদা না করুন যদি স্ত্রীর সাথে কোন প্রকারে মিলমিশ না হয় তবে তালাক দিয়ে দিবে। কেননা, তিন কারণে স্ত্রীকে তালাক দেয়া দুরস্ত আছে। প্রথমতঃযদি স্ত্রীর দ্বার নিজের প্রাণের ভয় থাকে।

দ্বিতীয়তঃ যদি স্ত্রী সর্বদা যেনা করতে থাকে । তৃতীয়তঃ যদি কোন প্রকারেই স্ত্রীর সাথে মিলমিশ না হয় ও স্বামীর আদেশ অমান্যকারী হয়

৩। এমন অনেক পুরুষ রয়েছে যার, স্ত্রী পুত্র ও পরিজনদের উপর নিজ অন্যায় জেদ বজায় রাখতে গিয়ে অমানুষিক অত্যাচার করে তারা নিঃসন্দেহে মহাপাপী। স্ত্রী তার বাপের বাড়ী হতে যদি সামান্য কোন জিনিস আনে তথাপি তার প্রতি কোনরূপ ঘৃণা প্রকাশ করবে না বরং সাদরে গ্রহণ করবে, তজ্জন্য তাকে কোনরূপ খোটা দিবেনা। কেননা, যৌতুক লাভের মানসিকতা জঘন্য পাপের জন্ম দেয় ।

৪। একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের সাথে সর্বদা সমান নজর রাখবে । খাওয়া-পরায় কাজে-কর্মে, আচার-ব্যবহারে কারও প্রাপ্যে কমবেশী করবে না ।

আল্লাহ পাক কোরআন শরীফের সূরা নেসায় ফরমান, “তোমরা স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার কর । স্ত্রীদের সাথে সমান ব্যবহার করতে পারবে না যদি এরূপ ধারণা হয়, তা হলে কেবল একজন স্ত্রীলোককে পত্নীত্বে গ্রহণ কর।” বুঝা যায়, কারো একাধিক পত্নী থাকলে তাদের সকলের প্রতি সমান ব্যবহার করা ওয়াজিব ।

না করলে পরকালে দায়ী হতে হবে । ৫। স্ত্রীদেরকে হালাল রুজি ও হালাল জিনিস খেতে দিবে; আর সর্বদা তাকে সওয়াবের কথাবার্তা শুনাতে থাকবে। সর্বদাই নেক কাজের জন্য স্ত্রীকে ওয়ায-নসীহত ও শাসন করতে থাকবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা কোরআন শরীফে ফরমান-

الِذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا يايها الذين

উচ্চারণ ঃ ইয়াআইয়্যুহাল্লাযীনা আমানু কূ-আনফুসাকুম ওয়া আহলীকুম নারা । হতে বাচাও । অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে দোযখের অগ্নি

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ফরমান, তোমরা নিজেরা নেক কাজ কর এবং তোমাদের পরিবারবর্গকেও নেক কাজের আদেশ এবং পাপ কার্য ছেড়ে দিতে বল ।

৬। স্ত্রীকে কখনও গালি দিবে না। যদি কোন সময় কোন অপরাধ করে থাকে তবে ন্যায়ভাবে মারতে পারবে, কিন্তু মুখের উপর নয়। তাদের পিতা-মাতার সাথে কোন কাজে বা কথায় কোনরূপ বেআদবী করবে না । এবং গালি দিবে না ।

৭। বিদেশে থেকে বাড়ী আসার কালে স্ত্রীর জন্য কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে আসবে । কেননা, এটা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর তরীকা বা সুন্নত। কখনও বিদেশে অন্যায় ভাবে যাপন করবে না। হযরত ওমর (রাঃ) হযরত হাফসা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছেন, “হে মা! বল দেখি স্বামীর বিরহজালা সতী নারী কতদিন সহ্য করতে সক্ষম হয়?

হাফসা উত্তর করলেন, অতিরিক্ত হলে চার মাস, তার উর্ধ্বে নয়। তখন হযরত ওমর (রাঃ) যুদ্ধের মাঠেই ঘোষণাপত্র জারি করে দিলেন যে, কোন বিবাহিত সৈন্য চার মাসের অধিক কাল যুদ্ধ ময়দানে (পত্নী ছাড়া) অবস্থান করতে পারবে না,

করলে এটা নিশ্চয়ই শরীয়ত বিরোধী কাজ হবে। অনেক এমন লোক আছে যারা চাকুরীর লোভে বা নিজের স্বভাব দোষে বৎসরের পর বৎসর বিদেশে কাটিয়ে দেয়। এটা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অবিচার বৈ-কিছুই নয়, সুতরাং এজন্য আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে

আরো পড়ুন:- নারীর পর্দা সম্পর্কে ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *