আয়েশা রাঃ এর জীবনী
Share this
হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)- এর সর্বকনিষ্ঠ স্ত্রী। তিনি ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আব বকর (রা.)- এর কন্যা। তাঁর মায়ের নাম উম্মে বুম্মান। তাঁর উপাধি ছিল সিদ্দিকা ও হুমায়রা। আর তাঁর উপনাম হলো-উম্মুল মমিনিন ও উম্ম আব্দুল্লাহ।
তিনি হিজরতের পূর্বে ৬১৩/৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। কুরাইশ বংশের নিয়মানুযায়ী জন্মের পর তাঁর লালন-পালনের ভার দেওয়া হয় ওয়ায়েল নামে এক লোকের স্ত্রীর উপর।
শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন প্রখর মেধার অধিকারিণী । শিশু কাল থেকে তাঁর শিক্ষাগ্রহণ শুরু হয়। শৈশবকালেই তাঁর আচার-আচরণ, চাল-চলন, কথাবার্তা ও মেধাশক্তি সকলকে মুগ্ধ করেছিল।
তাঁর মধ্যে সর্বদা শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্য বিদ্যামান ছিল। তিনি অন্য শিশুরের মতো লেখাধুলা, আমোদফূর্তি ও দৌড়াদৌড়ি করতে ভালোবাসতেন।
হযরত খাদিদজা (রা.)-এর মৃত্যুর পর নবুয়তের দশম সনে মহানবি (স.)- এর সাথে হযরত আয়েশা (রা.)-এর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। হযরত খাওলা বিনতে হাকিম ছিলেন এ বিবাহের ঘটক।
এ বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারিত হয় ৪৮০ দিরহাম। বিবাহের তিন বছর পর রাসূল (স.) – এর সাথে হযরত আয়েশা (রা.)-এর দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। হযরত আবু বকর (রা.)- বিবাহের কাজির দায়িত্ব পালন করেন।
আয়েশা রাঃ এর শিক্ষাজীবন
তৎকালীন আরব সমাজে লেখা-পড়ার তেমন সুযোগ-সুবিধা ছিল না। হযরত আয়েশা (রা.)- পিতার কাছ থেকেই মূলত লেখাপড়া শুরু করেন। তিনি কাব্য, সাহিত্য ও ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন।
যা একবার শুনতেন সাথে সাথে মুখন্থ করে ফেলতেন। পুথিঁগত বিদ্যা অর্জন ছাড়াও তিনি গৃহস্থালী বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন।
ইফকের ঘটনা।
ষষ্ঠ হিজরি সনে বনু মুস্তালিক যুদ্ধে রাসুল (স.)- এর সাথে হযরত আয়েশা (রা.)-ও ছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাঁর গলার হার হায়িয়ে যায়। হারানো হার খুঁজতে গিয়ে তিনি কাফেলা থেকে পিছনে পড়ে যান।
ফিরতে দেরি হয়ে যায়। এ সুযোগে মুনাফিকরা তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা করল। এতে তিনি চরম মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। তাঁর জীবন একেবারে বিষণ্ন হয়ে ওঠে। কিন্তু তিনি ধৈর্য হারান নি। আল্লাহর উপর আস্থা রেখে অটল ছিলেন।
এ সময়ে রাসুল (স.) কোন সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারেন নি। তিনি চিন্তিত হলেন। হযরত আয়েশা (রা.)-এর পিতামাতাও চরম উৎকন্ঠা, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের মধ্যে কালাতিপাত করছিলেন।
অবশেষে আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতা বর্ণনা করে সূরা নুরে ১১-২১ নম্বর আয়াত নাজিল হলো। মুনাফিকদের য়ড়যন্ত্র ব্যর্থ হলো। রাসুল (স.) চিন্তামুক্ত হলেন। হযরত আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতা ও চারিত্রিক মাধুর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
শিক্ষায় অবদান
হযরত আয়েশা (রা.)-ছিলেন বিচক্ষণ, বুদ্ধিমতী অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারিণী। তিনি জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অসাধারণ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। বিশেষ করে তাফসির, হাদিস, ফিকাহ ও আরবদের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ছিল।
শরিয়তের বিভিন্ন মাসয়ালা মাসায়েল ও নীতিগত বিষয়ে তাঁর পরামর্শ দেওয়া হতো।
মর্যাদা
হযরত আয়েশা (রা.)-রাসুল (স.)-এর অতি আদরের সহধর্মিণী ছিলেন। তিনি মহানবি (স.)- এর অন্য স্ত্রীদের থেকে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। রাসুল (স.) বলেন “নারী জাতির উপর আয়েশা (রা.)-এর মর্যাদা তেমন, যেমন খাদ্যসামগ্রীর উপর সারিদের মর্যাদা।” (বুখারি ও ইবনে মাজাহ)
সারিদ হলো আরবের শ্রেষ্ট খাদ্য, যা রুটি, গোশত ও ঝোলের সমন্বয়ে তৈরি হয়। রাসূল (স.) আরও বলেন “আয়েশা(রা.)-হলেন-মহিলাদের সাহায্যকারিনী।” (কানযুল উম্মাল)
একবার নবি করিম (স.) আয়েশা (রা.)- কে লক্ষ্য করে বলেন-“হে আয়েশা! ইনি জিব্রাইল, তোমাকে সালাম দিচ্ছে।” (বুখারি)
হযরত আয়েশা (রা.) নিজ বুদ্ধিমত্তা, কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা ভিত্তিতে বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছিলেন।
আয়েশা রাঃ এর ইন্তিকাল
উম্মল মুমেনিন হয়রত আয়েশা (রা.)- ৫৮ হিজরির ১৭ রমযান ৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৬৪ বছর। রাসুল (স.) এর ইন্তিকালের পর আরও ৪০ বছর জীবিত ছিলেন। তাকেঁ জান্নতুল বাকি নামক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
হযরত আয়েশা (রা.)-এর ধৈর্য, জ্ঞানসাধনা, পাণ্ডিত্য, স্বামীভক্তি ও চারিত্রিক মাধুর্য আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।
আরো পড়ুন