ইসলাম

ইমাম হওয়ার শর্ত

Share this

সর্বাধিক উপযুক্ত এবং অধিক গুণশালী ব্যক্তিকেই ইমাম নিযুক্ত করা মুসল্লিদের কর্তব্য । সর্বাধিক যোগ্যতাসম্পন্ন লোককে বাদ দিয়ে অন্যকে ইমাম নিযুক্ত করা সুন্নতের পরিপন্থী । যদি সমগুণবিশিষ্ট দুই বা ততোধিক লোক দলের মধ্যে থাকে, তবে অধিক সংখ্যক মুসল্লি যাঁকে মনোনীত করবে, তিনিই ইমাম পদে নিযুক্ত হবেন। শরীয়তের হুকুম এটাই। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম হল নিম্নরূপ-

১। আলেম যদি ফাসেক না হন, কুরআন ভুল না পড়েন এবং সুন্নত পরিমাণ কুরআন তাঁর মুখস্থ থাকে, তবে আলেমই সর্বাগ্রগণ্য ।

২। তারপর যার কিরাত ভাল (গলার সুর নয়), তাজবিদের নিয়ম অনুযায়ী যে কুরআন পড়ে, সে-ই অধিক যোগ্য ।

৩। তারপর যার তাকওয়া বেশি সে-ই অধিক যোগ্য ।

৪ । তারপর বয়সে যে বড় সে-ই অধিক যোগ্য ।

৫। তারপর যার আচার-ব্যবহার ভদ্র এবং কথাবার্তা মিষ্ট সে-ই অধিক যোগ্য।

৬। তারপর যে অধিক সুন্দর পুরুষ।

৭। তারপর যে সবচেয়ে বেশি শরীফ বা ভদ্র । ৮। তারপর যার আওয়াজ সব চেয়ে ভাল । ৯। যার পোশাক ভাল ।

১০। তারপর যার মাথা মানানসই বড় ।

১১। তারপর মুসাফিরের তুলনায় মুকিম অগ্রগণ্য । ১২। যে বংশানুক্রমে আযাদ ।

১৩। তারপর ওযুর তায়াম্মুমকারী গোসলের তায়াম্মুমকারীর চেয়ে যোগ্য।

১৪। তারপর যার মধ্যে একাধিক গুণ থাকবে সে এক গুণের অধিকারী অপেক্ষা অগ্রগণ্য হবে । যেমন- যদি একজন আলেম হয় এবং কারীও হয়, আবার অন্যজন শুধু | আলেম বা শুধু কারী হয় তবে যে আলেম সে-ই অগ্রগণ্য হবে। -দুররুল মুখতার

ইমামের করণীয়

একা নামাজ পড়ার সময় কিরাত, রুকু বা সিজ্দা যত ইচ্ছা লম্বা করবে; কিন্তু জামাতের নামাজে কিরাত, রুকু, সিজ্দা সুন্নত পরিমাণ অপেক্ষা অধিক লম্বা করা ইমামের জন্য মাকরুহ্ তাহরিমি। মুক্তাদিদের মধ্যে রোগী, বৃদ্ধ ইত্যাদি সব রকমের লোকই থাকে, কাজেই তাদের সকলের প্রতি লক্ষ্য রাখা ইমামের কর্তব্য । দলের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দুর্বল তার যেন কষ্ট না হয় তদনুযায়ী কাজ করবে। বেশি জরুরত হলে কিরাত সুন্নত পরিমাণ অপেক্ষাও কম করা যেতে পারে- তবুও যেন লোকের কষ্ট না হয় এবং জামাত ছোট হবার কারণ না হয় ।

যে কয়েকটি বিশেষ অবস্থায় ইমামতের বিধান

কারো বাড়িতে জামাত হলে বাড়ি ওয়ালাই ইমামতের জন্য অগ্রগণ্য। তারপর বাড়িওয়ালা যাকে হুকুম করে, সেই অগ্রগণ্য। অবশ্য বাড়িওয়ালা যদি একেবারে অযোগ্য হয়, তবে অন্য যোগ্য ব্যক্তি অগ্রগণ্য হবে ।

মাসয়ালা : কোন মসজিদে কোন যোগ্য ইমাম নিযুক্ত থাকলে সে মসজিদে অন্য কারো ইমামতের অধিকার নেই। অবশ্য নিযুক্ত ইমাম যদি অন্য কোন যোগ্য লোককে ইমামত করতে বলে, তবে ক্ষতি নেই (যোগ্যতা থাকলে বলাই ভাল – দুররুল মুখতার মাসয়ালা : মুসল্লিদেরকে নারায করে তাদের অমতে ইমামতি করা মাকরূহ্ তাহরিমি। অবশ্য ইমাম যদি আলেম মোত্তাকী এবং ইমামতের যোগ্য লোক হন এবং । যোগ্যতা অন্যের মধ্যে পাওয়া যায়, তবে মাকরূহ্ হবে না; বরং নারায ব্যক্তিই রূপ অন্যায়কারী হবে।

ইমামের অনুসরণ

নামাজের সমস্ত ফরজ এবং ওয়াজিবের মধ্যে ইমামের অনুসরণ করা মোক্তাদিগণের উপর ওয়াজিব । সুন্নত মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে অনুসরণ ওয়াজিব নয়। (প্রত্যেকে নিজের জিম্মাদার নিঝে) যদি হানাফি মুক্তাদি এবং অন্য মাযহাবের ইমাম হয় যেমন,

যদি শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম হয়, তবে আমাদের ইমামের মত অনুযায়ী সুন্নত ও মুস্তাহাবের আমল করবে। অর্থাৎ যদি শাফেয়ী ইমাম রুকুতে যাবার সময় এবং রুকু হতে উঠার সময় রফে ইয়াদায়েন করেন বা ফজরের নামাজে দুয়া কুনূত পড়েন, (যেহেতু এই কয়টি কাজ তাঁর মাযহাব অনুযায়ী করা সুন্নত, আর আমাদের মাযহাব অনুযায়ী রফে ইয়াদায়েন না করা এবং ফজরের দুয়া কুনূত না পড়া সুন্নত; কাজেই)

আমরা চুপ করে দাড়িয়ে থাকব, এই কাজে তাঁর অনুসরণ করব না । কিন্তু বিতর নামাজে যদি শাফেয়ী মাযহাবপন্থী ইমাম হন এবং রুকুর পর দুয়া কুনূত পড়ে তবে আমরাও রুকুর পরই পড়ব, কারণ বিতরের মধ্যে কুনূত পড়া ওয়াজিব । আর আমাদের হানাফী মাযহাবে রুকুর আগে পড়া সুন্নত, তাঁদের মাযহাবে রুকুর পরে পড়া সুন্নত ।

ইমামের সঙ্গে সঙ্গেই নামাজের সমস্ত রোকন আদায় করা মুক্তাদিদের জন্য সুন্নত, দেরি করা উচিত নয় । তারিমা, রুকু, ক্বওমা, সিজদা ইত্যাদি সব রোকন ইমামের সঙ্গে সঙ্গেই আদায় করবে; দেরি করবে না। (আগে তো করবেই না) ক্কা’দায়ে উলা অর্থাৎ প্রথম বৈঠকে যদি মুক্তাদির আত্তাহিয়্যাতু পড়া শেষ হবার পূর্বেই ইমাম দাঁড়িয়ে যায়, তবে মুক্তাদি আত্তাহিয়্যাতু না শেষ করে দাঁড়াবে না, পড়া শেষ করে তারপর দাঁড়াবে।

এভাবে ক্বাদায়ে আখিরাহ অর্থাৎ শেষ বৈঠকে যদি (ঘটনাক্রমে) মুক্তাদি আত্তাহিয়্যাতু অর্থাৎ আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু’ পর্যন্ত পুরা করার পূর্বেই ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেলে, তবে মুক্তাদি সালাম ফিরাবে না, আত্তাহিয়্যাতু পুরা করে তারপর সালাম ফিরাবে। কিন্তু যদি রুকু বা সিজদায় মুক্তাদির তবিহ্ পূর্ণ করার পূর্বেই ইমাম উঠে যায়, তবে ইমামের সঙ্গে সঙ্গেই উঠবে, এতে বিলম্ব করা যাবেনা।

আরো পড়ুন:- ওসিয়ত নামা | অসিয়ত করার নিয়ম

যাদের ইমামতিতে নামাজ পড়া সহীহ্ হয় না

মুক্তাদি যদি ইমাম থেকে মর্যাদায় বেশি হয়, চাই মর্যাদা ইয়াকিনী হোক কিংবা ইহতেমালী ( সম্ভাব্য) হোক, উভয় ক্ষেত্রেই ইক্তেদা জায়েয নয়

১। বালেগ পুরুষ বা স্ত্রীর ইক্তেদা নাবালেগের পেছনে দুরুস্ত নয় ।

২। বালেগ বা নাবালেগ পুরুষের ইক্তেদা স্ত্রীলোকের পেছনে দুরুস্ত নয় ৷

৩। নপুংসকের ইক্তেদা নপুংসকের পেছনে দুরুস্ত নেই। নপুংসক তাকেই বলে, যাকে স্ত্রী বা পুরুষ সঠিকভাবে কোনোটাই বলা যায় না। এধরনের লোক খুব কম।

৪। যে স্ত্রীলোকের হায়েযের নির্দিষ্ট সময়ের কথা মনে নেই, তার ইক্তেদা অনুরূপ স্ত্রীলোকের পেছনে দুরুস্ত নেই । এই দুই অবস্থায় ইমাম হতে মুক্তাদির মান বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং ইক্তেদা জায়েয নেই। কেননা, প্রথম অবস্থায় যে নপুংসক ইমাম হয়ত সে স্ত্রীলোক এবং যে মুক্তাদি নপুংসক হয়ত সে পুরুষ। অনুরূপভাবে যে স্ত্রীলোক ইমাম হয়ত এটা তার হায়েযের সময় আর যে মুক্তাদি হয়ত এটা তার পবিত্রতার সময়। তাই ইক্তেদা সহীহ্ হয় না ।

৫। স্ত্রীলোকের পেছনে নপুংসকের ইক্তেদা দুরুস্ত নেই। কেননা, সেও নপুংসক পুরুষ হতে পারে ।

৬। উম্মাদ, বেহুঁশ বা বে-আকলের পেছনে স্বজ্ঞান লোকের ইক্তেদা দুরুস্ত নেই। ৭। পাক বা ওযরহীন ব্যক্তির ইক্তেদা মায়ুর যেমন বহুমূত্র রোগীর পেছনে দুরুস্ত নেই ।

৮ । এক ওযরওয়ালার ইক্তেদা দুই ওযরওয়ালার পেছনে দুরুস্ত নেই। যেমন কারোর বায়ু নির্গত হওয়ার আগে রোগ আছে এমন লোকের ইক্তেদা করা, যার বায়ু নির্গত ও বহুমূত্র রোগ আছে। রোগীর নাক্সীর রোগীর ইক্তেদা করা ।

৯। এক প্রকারের মাথুরের অন্য প্রকার মাথুরের ইক্তেদা দুরুস্ত নেই । যেমন বহুমূত্র

১০। কারীর ইক্তেদা উম্মির পেছনে দুরুস্ত নেই। কারী তাকেই বলে, যে এতটুকু কুরআন সহীহ্ করে পড়তে পারে, যাতে নামাজ হয়ে যায়। উম্মি তাকে বলে, যার এতটুকু ইয়াদ নেই ।

১১। উম্মির ইক্তেদা উম্মির পেছনে জায়েয নেই । যদি মুক্তাদির মধ্যে কোনো ক্বারী উপস্থিত থাকে। কারণ, এই অবস্থায় ঐ উম্মি ইমামের নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে। কেননা ঐ ক্বারীকে ইমাম বানানো সম্ভব ছিল এবং তার কিরাত মুক্তাদির পক্ষ হতে যথেষ্ট হত । যখন ইমামের নামাজ ফাসেদ হয়, তখন উম্মি মুক্তাদিসহ সকল মুক্তাদির নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে ।

১২। উম্মির ইক্তেদা বোবার পেছনে দুরুস্ত নেই। কেননা, উম্মি যদিও উপস্থিত কিরাত পড়তে পারে না, কিন্তু আসলে সে পড়তে তো সক্ষম। কারণ, সে কিরাত শিখতে পারে, আর বোবার মধ্যে এই ক্ষমতাটুকুও নেই ।

১৩। ফরজ পরিমাণ শরীর ঢাকা ব্যক্তির ইক্তেদা উলঙ্গ ব্যক্তির পেছনে দুরুস্ত নেই ।

১৪। রুকু সিজদা করতে সক্ষম ব্যক্তির ইক্তেদা রুকু সিজদা করতে অক্ষমের পেছনে দুরুস্ত নেই । অন্যদিকে যদি কোনো ব্যক্তি শুধু সিজদা করতে অক্ষম হয়, তার পেছনেও ইক্তেদা দুরুস্ত নেই। স

১৫। ফরজ পাঠকারীর ইক্তেদা নফল পাঠকারীর পেছনে দুরুস্ত নেই ।

১৬। মান্নতের নামাজ পাঠকারীর ইক্তেদা নফল নামাজ পাঠকারীর পেছনে দুরুস্ত নেই। কেননা, মান্নতের নামাজ ওয়াজিব।

১৭। মান্নতের নামাজ পাঠকারীর ইক্তেদা কসমের নামাজ পাঠকারীর পেছনে জায়েয নেই। যেমন, যদি কেউ কসম খায় যে, আজ আমি ৪ রাকাত নামাজ পড়ব, আর _একজনে মান্নত করল, আমি নামাজ পড়ব। তখন ঐ মান্নতকারীর নামাজ কসমকারীর পেছনে দুরুস্ত হবে না। কারণ হচ্ছে মান্নতের নামাজ ওয়াজিব আর কসমের নামাজ নফল। কেননা, কসম পুরা করা ওয়াজিব হলেও এতে নামাজ না পড়ে কাফ্ফারা দিলেও চলে।

১৮ । যে ব্যক্তি কুরআনের সাধারণ হরফগুলো সহীহ্ করে আদায় করতে পারে না, এক হরফের জায়গায় অন্য হরফ পড়ে যেমন, স্কুলে পড়ে, এর স্থানে এ পড়ে এরূপ ব্যক্তির পেছনে সহীহ পাঠকারীর ইক্তেদা দুরুস্ত হবে না। অবশ্য সমস্ত কিরাতের মধ্যে যদি এক আধটা অক্ষর অসতর্কতার কারণে ভুল হয়ে যায়, তবে নামাজ হয়ে যাবে।

ইমামের অযোগ্য ব্যক্তি কারা

মাসয়ালা ঃ ফাসেক ব্যক্তি বা বেদআতীকে ইমাম নিযুক্ত করা মাকরূহ্ তাহরিমী অবশ্য খোদা না করুন, যদি ঐ লোক ছাড়া উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ উপযুক্ত না থাকে, তবে মাকরূহ্ হবে না। যদি কোনো প্রভাবশালী ফাসেক বা বেদআতী জোর

জবরদস্তি করে ইমাম হয়ে বসে এবং তাকে বরখাস্ত করলে মুসলমান সমাজে শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা হয় বা বরখাস্ত করার ক্ষমতা না থাকে, তবে মুসল্লিগণ গুনাগার হবে না।- দুররুল মুখতার

মাসয়ালা : পাক-নাপাকের প্রতি লক্ষ্য রাখে না এমন অন্ধ বা রাতকানা লোককে ইমাম নিযুক্ত করা মাকরুহ্ তাযিহি। অবশ্য যোগ্য ব্যক্তি হলে পাক-নাপাকের প্রতি রীতিমত খেয়াল রাখলে এবং তার ইমামতে যদি কারোর আপত্তি না থাকে, তবে মাকরুহ্ হবে না । —শামী

মাসয়ালা ঃ ওলাদুনিাকে (জারজ সন্তান) ইমাম বানানো মাকরুহ্ তাযিহি অবশ্য যদি সে ইল্‌ম ও তাকওয়া অর্জন করে যোগ্যতা সম্পন্ন এবং মুসল্লিগণ তাকে ইমাম নিযুক্ত করতে দ্বিমত না করে, তবে মাকরূহ্ হবে না । -দুররুল মুখতার

মাকরুহ্ । মাসয়ালা : যে সুশ্রী নব্য যুবকের এখনও দাড়ি ভাল উঠে নি, তাকে ইমাম বানানো

মাসয়ালা : যে স্থানে অন্য পুরুষ বা ইমামের মা, ভগ্নী বা স্ত্রী ইত্যাদি কোনো তাহরিমি। মাহ্রাম স্ত্রীলোক না থাকে, সেখানে পুরুষের পক্ষে শুধু স্ত্রীলোকের ইমামত করা মাকরূহ্

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *