প্রশ্ন-উত্তর

অজু ভঙ্গের কারণ

Share this

নামাজ হলো বেহেস্তের চাবি। আর নামাজ পড়ার জন্য প্রয়েজন হয় অজু। অজু ছাড়া নামাজ আদায় করা যায় না। অযু করার পর বিভিন্ন কারণে আমাদের অজু ভেঙ্গে যেতে পারে। তখন আমাদের নামাজ আদায় করলে তা সঠিক হবে না। যে সকল কারণে অজু ভঙ্গ হয় তা নিচে উপস্থাপন করা হলো।

যে সকল কারণে অজু ভঙ্গ হয়

  • বাহ্য প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে মলমূত্র, বায়ু, বীর্য, কৃমি ইত্যাদি কোন কিছু বের হওয়া।
  • শরীরের কোন স্থান হতে রক্ত, পূজ, দূষিত পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
  • দাঁতের মাঢ়ী হতে ঐ পরিমাণ রক্ত বের হওয়া, যাতে থুথুর বর্ণ লাল হয়ে যায় । তবে থুথুর রং পরিবর্তিত না হলে অযু নষ্ট হবে না।
  • মুখভরা বমি হওয়া । মুখভরা কফ উঠলে অযু নষ্ট হয় না ।
  • চিত-কাত হয়ে বা কোন বস্তুকে ঠেস দিয়ে নিদ্রা যাওয়া ।
  • উন্মাদ, মাতাল বা অন্য কারণে অচেতন হয়ে পড়া।
  • স্বামী-স্ত্রী পরস্পর কামোত্তেজনা সহকারে নগ্নদেহে মিলিত (সঙ্গম নয়) হওয়া।
  • যে নামাযে রুকু-সেজদা আছে, তাতে বালেগ লোকের উচ্চস্বরে হাসা। এতে অযু এবং নামায উভয়ই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু যে নামাযে রুকু-সেজদা নেই, তাতে উচ্চস্বরে হাসলে শুধু নামায নষ্ট হয়, ওযু ভঙ্গ হয় না ।

আরো পড়ুন:- অজু করার নিয়ম

কোন কোন মহিলার ধারণা অযু করার পর পর পুরুষের দৃষ্টিতে পড়লে, ওযু ভঙ্গ হয়ে যায় । এটা তাদের ভুল ধারণা। যাদের সঙ্গে দেখা দেওয়া দুরস্ত নেই, এরূপ কোন পুরুষের দৃষ্টিতে পড়ে গেলে পর্দা অমান্যের জন্য গুনাহগার হবে, কিন্তু ওযু নষ্ট হবে না । আর যাদের সাথে দেখা দেয়া দুরস্ত আছে, তাদের সামনে গেলে অযু নষ্ট হওয়া দূরের কথা গুনাহের প্রশ্নই উঠে না ।

যে সকল কারণে অজু ভঙ্গ হয় না

মাসয়ালা : মলমূত্র বের হলে এবং পায়খানার রাস্তা দিয়ে বাতাস বের হলে অ ভেঙ্গে যায়। আর যদি পেশাবের রাস্তা দিয়ে কখনও বাতাস বের হয়, যেমন কোনো কোনো রোগের কারণে বের হয়ে থাকে, তাতে অযূ ভেঙ্গে যায় না। আর যদি কোনো পোকা বা পাথর বের হয় ( তা পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হোক বা পেশাবের রাস্তা দিয়ে হোক ) তাতে অযূ ভেঙ্গে যাবে। — কবীরী

মাসয়ালা : যখম হলে বা কান হতে পোকা বের হলে অযূ ভাঙ্গবে না । যখম হতে কিছু গোশ্ত কেটে পড়ে গিয়ে রক্ত বের না হলে তাতে অযূ ভেঙ্গে যায় না ।

মাসয়ালা : শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করলে বা নাক দিয়ে রক্ত আসলে কিংবা শরীরের অন্য কোনো স্থান বা কোনো ফোঁড়া হতে রক্ত পুঁজ বের হলে অযূ ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু রক্ত যদি যখমের মধ্যেই থাকে, নির্গত স্থান হতে বাইরে না যায়, তবে অযূ ভাঙ্গবে না ।

সুতরাং যদি সুঁচ বিদ্ধ হওয়ার কারণে রক্ত বের হয় এবং এদিক ওদিক বয়ে না যায়, তবে অযূ যাবে না। কিন্তু যদি এক বিন্দুও এদিক ওদিক গড়িয়ে যায়, তবে অযূ ভেঙ্গে যাবে । — মুনইয়া

মাসয়ালা ঃ নাক সাফ করার সময় যদি জমাট বাঁধা রক্ত বের হয় তবে তাতে অযূ যাবে না। কিন্তু পাতলা তরল রক্ত বের হয়ে বয়ে গেলে অযূ ভেঙ্গে যায় । সুতরাং যদি নাকে আঙ্গুল দিলে তাতে রক্তের দাগ দেখা যায়, কিন্তু সে রক্ত বয়ে না আসে, তবে তাতে অযূ নষ্ট হবে না । – গুনইয়া

মাসয়ালা ঃ চোখে কোনো দানা ছিল তা ভেঙ্গে গিয়ে পানি বয়ে গেছে, কিন্তু চোখের ভিতরেই রয়েছে, বাইরে আসে নি, তাতে অযূ ভেঙ্গে যাবে না। কিন্তু বাইরে এসে থাকলে অযূ ভেঙ্গে যাবে।

অনুরূপভাবে যদি কানের মধ্যে কোনো দানা-থাকে আর পূঁজ বা রক্ত বের হয়, তবে দেখতে হবে যে, রক্ত বা পূঁজ যদি গোসলের সময় যে পর্যন্ত ধোয়া ফরজ সে পর্যন্ত না এসে থাকে, তবে অযূ ভেঙ্গে যায়নি, আর যদি সে পর্যন্ত এসে থাকে, তবে অযূ ভেঙ্গে যাবে। – মুনইয়া

মাসয়ালা : ফোড়া বা ফোস্কার উপরের চামড়া উঠিয়ে ফেললে যদি ভেতরে রক্ত বা পূঁজ দেখা যায় কিন্তু গড়িয়ে বাইরে না আসে, তবে অযূ যাবে না, বাইরে গড়িয়ে আসলে অযূ ভেঙ্গে যাবে । – মুনইয়া

মাসয়ালা ঃ ফোঁড়া ফোস্কা ইত্যাদির যখম খুব গভীর হলেও যে পর্যন্ত রক্ত বা পূঁজ মুখের বাইরে না আসে সে পর্যন্ত অযূ ভেঙ্গে যায় না ।

মাসয়ালা : ফোঁড়ার রক্ত নিজে বের হয়নি, যদি টিপে বের করা হয়ে থাকে এবং যখমের বাইরে বেয়ে যায়, তবে অযূ ভেঙ্গে যাবে।

মাসয়ালা ঃ কারোর যখম হতে একটু একটু করে রক্ত বের হচ্ছে আর সে তার ওপর মাটি ছড়িয়ে দিচ্ছে বা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলছে, যাতে রক্ত বেয়ে এদিকে ওদিকে না যেতে পারে,

তবে তাকে চিন্তা করে দেখতে হবে যে, যদি সে না মুছত, তবে রক্ত বয়ে যখমের মুখ হতে ছড়িয়ে পড়ত কি-না, যদি ছড়িয়ে পড়ত বলে বোধ হয়, তবে অযূ ভেঙ্গে যাবে, যদি এরকম বিশ্বাস হয় যে, না মুছলেও রক্ত এত কম ছিল যে, এদিকে ওদিকে ছড়াত না, তবে অযূ যাবে না। – কবীরী

মাসয়ালা ঃ কফ বা থুথুর সঙ্গে রক্ত দেখা গেলে যদি তা নেহায়েত কম হয়, বর্ণ সাদা বা হলদে রঙ্গের মত হয়, তবে অযূ যাবে না; আর যদি রক্ত বেশি হয় এবং লাল রঙ্গের মত হয়, তবে অযূ ভেঙ্গে যাবে। – কবীরী

মাসয়ালা ঃ দাঁত দিয়ে কোনো জিনিস চিবাতে গিয়ে সেই জিনিসের ওপর রক্তের দাগ দেখা গেল, কিন্তু থুথুর সঙ্গে আদৌ রক্তের রং দেখা গেল না এতে অযূ যাবে না ।

মাসয়ালা : জোঁকে ধরলে যদি তা এত পরিমাণ রক্ত পান করে থাকে যে, জোকটাকে কেটে ফেললে রক্ত গড়িয়ে পড়বে, তবে অযূ ভেঙ্গে যাবে। যদি সামান্য মাত্রায় পান করে থাকে, তবে অযূ যাবে না। মশা, মাছি বা ছারপোকায় যে রক্ত পান করে থাকে, তাতে অযূ যায় না। – মুনইয়া

মাসয়ালা : যদি কানের মধ্যে বেদনা অনুভব হয় এবং পানি বের হয়, যদিও কোনো ফোঁড়া ফুঁসি অনুভব না হয়, তবুও এরকম পানি নাপাক; তা কানের ছিদ্রের বাইরে এমন জায়গা পর্যন্ত আসলে অযূ নষ্ট হবে, যা অযূর মধ্যে ধোয়া ফরজ।

যদি নাভিস্থান হতে পানি বের হয় এবং ব্যথা ও অনুভব হয়, তবে তাতে অযূ নষ্ট হবে কিংবা যদি চক্ষু হতে পানি বের হয় এবং ব্যথা ও হয়, তবে তাতে অযূ নষ্ট হবে। অন্যথায় শুধু চোখ দিয়ে পানি বের হলে অযূ যাবে না । – শঃ তানবীর

মাসয়ালা ঃ স্তন হতে পানি বের হলে যদি বেদনা অনুভব হয়, তবে পানি নাপাক এবং অযূ ছুটে যাবে । আর যদি বেদনা অনুভব না হয়, তবে সে পানি নাপাক নয় এবং অযূও যাবে না । – মুনইয়া

মাসয়ালা ঃ বমিতে ভাত, পানি বা পিত্ত বের হলে যদি মুখ ভরে এসে থাকে, তবে অযূ যাবে। মুখ ভরে না আসলে অযূ ভাঙ্গবে না (মুখ ভরে আসার অর্থ, মুখের মধ্যে সামলিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে এই পরিমাণ) মুখ ভরে কফ বমি করলে অযূ যাবে না ।

বমিতে প্রবাহমান তরল রক্ত বের হলে অযূ ভেঙ্গে যাবে। তা মুখ ভরে আসুক বা না আসুক জমাট রক্ত মুখ ভরে বের হলেই অযূ নষ্ট হবে; অন্যথায় অযূ যাবে না ।

মাসয়ালা : শুয়ে শুয়ে সামান্য পরিমাণ ঘুমালেও অযূ ভেঙ্গে যাবে, আর যদি কোনো বেড়া বা দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে বসে ঘুমিয়ে থাকে, তবে যদি নিদ্রা এত গাঢ় হয়ে থাকে যে, ঐ বেড়া বা দেয়াল সেখানে না থাকলে ঘুমের ঝোঁকে পড়ে যেত, তবে অযূ ভেঙ্গে যাবে ।

নামাযে দাঁড়ান অবস্থায় ঘুমালে অযূ যায় না, (কিন্তু কোনো রোকন নিদ্রিতাবস্থায় আদায় করলে তা দোরাতে হবে।) সেজদা অবস্থায় (বিশেষ করে স্ত্রীলোকদের) ঘুম আসলে অযু ভেঙ্গে যাবে। -রদ্দুল মোখতার দৃঢ়ভাবে চেপে বসে ঘুমালে তাতে অযূ যাবে না। – কবীরী মাসয়ালা : নামাযের বাইরে কোনো বেড়া বা দেয়ালে হেলান না দিয়ে চুতড়

মাসয়ালা : বসে বসে ঘুমের এমন তন্দ্রা এসেছে যে, লোকটি পড়ে গেছে, তবে যদি পড়া মাত্রই সজাগ হয়ে থাকে, তবে অযূ যাবে না। আর যদি কিছুমাত্র বিলম্বে জেগে অযূ যাবে না। – শামী থাকে, তবে অযূ যাবে। আর যদি শুধু বসে বসে ঝিমোতে থাকে এবং না পড়ে, তবে

মাসয়ালা : অল্প সময়ের জন্যও বেহুশ বা পাগল হয়ে গেলে অযূ যাবে। যদি তামাক জাতীয় কোনো নেশার জিনিস খেয়ে এরকম অবস্থা হয়ে থাকে যে, ভালমত হাঁটতে পারে না, পা এদিক ওদিক চলে যায়, তবে তাতেও অযূ যাবে। – দুররুল মুখতার

মাসয়ালা : নামাযের মধ্যে এরকম ভাবে হাসলে, যাতে নিজেও শব্দ শুনতে পায় এবং পাশের লোকেও শব্দ শুনতে পায় অর্থাৎ হা হা (খিল খিল করে হাসলে অযূ ভেঙ্গে যাবে এবং নামাযও ভেঙ্গে যাবে।

আর যদি এরকম ভাবে হাসে যাতে নিজেও আওয়াজ শুনে থাকে এবং অতি নিকটে যদি কেউ থাকে সেও শুনতে পায়, কিন্তু পাশের লোকেরা সাধারণত শুনতে পায় না তবে তাতে শুধু নামায ভাঙ্গবে, অযূ ভাঙ্গবে না। আর যদি হাসতে আওয়াজ না হয়ে থাকে, শুধু ঠোঁট ফাঁক হয়ে দাঁত বের হয়ে থাকে, তবে তাতে অযূও যাবে না, নামাযও যাবে না । নাবালেগ ছেলে বা মেয়ে খিল খিল করে হাসলে তার অযূ যাবে না। কিন্তু তেলাওয়াতে সিজদার মধ্যে কোনো বালেগ ছেলে না মেয়ে খিল খিল করে হাসলেও তার অযূ যাবে না; তবে ঐ সিজদা ও নামায হবে না, পুনরায় আদায় করতে হবে। – মুনিয়া

মাসয়ালা ঃ অযূ করার পর নখ কাটলে বা যখমের উপরের মরা চামড়া খুটে ফেললে তাতে অযূর কোনো ব্যাঘাত হয় না- অযূ দোরাতে হবে না বা সেই জায়গাটুকু ধোয়ার কোনো হুকুম নেই । – শঃতাঃ

মাসয়ালা ঃ অযূ করে অন্য কারোর সতরে নজর পড়লে বা নিজের সতর খুলে গেলে তাতে অযূ যায় না । হাঁ ঠেকা না হলে অন্যের সতর দেখা বা নিজের সতর খোলা গুনাহ্র কাজ । এভাবে (প্রাচীর বেষ্টিত গোসলখানায়) কাপড় খুলে গোসল করে ঐ কাপড় খোলা অবস্থায়ই যদি অযূ করে থাকে, তবে তাতেই অযূ হয়ে যাবে; পুনরায় তাকে অযূ করতে হবে না । – কবীরী

মাসয়ালা : স্বামীর হাত লাগার দরুন বা স্বামীর চিন্তা করার কারণে যদি সামনের রাস্তা দিয়ে এক প্রকার পানির মত তরল পদার্থ বের হয় যাকে মযী বলে – এতে অযূ ভেঙ্গে যাবে।

মাসয়ালা : রোগের (প্রদর বা প্রমেহ) কারণে সামনের রাস্তা দিয়ে এক প্রকার বিজল পানির মত বের হলে অযূ ভেঙ্গে যায়।

মাসয়ালা : যে জিনিস শরীর হতে বের হলে অযূ ভেঙ্গে যায়, সে জিনিস নাপাক আর যে জিনিস বের হলে অযূ যায় না, সে জিনিস নাপাক নয়। অতএব, যদি সামান্য এক বিন্দু রক্ত বের হয়ে থাকে আর তা যখমের মুখ হতে ছড়িয়ে না যায়, অথবা সামান্য কিছু বমি হয়ে থাকে আর তাতে ভাত, পানি, পিত্ত বা জমাট রক্ত বের হয়ে থাকে, তবে

ঐ রক্ত এবং বমি নাপাক নয় । সুতরাং তা কাপড়ে বা শরীরে লাগলে তা ধোয়া ওয়াজিব নয়। আর যদি মুখ ভরে বমি হয়ে থাকে বা রক্ত যখমের মুখ হতে বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে থাকে, তবে তা নাপাক এবং তা ধোয়া ওয়াজিব। যদি এই পরিমাণে বমি করে গ্লাস, পেয়ালা বা বদনায় মুখ লাগিয়ে কুলি করার জন্য পানি নিয়ে থাকে, তবে ঐ পাত্রগুলোও নাপাক হয়ে যাবে। অতএব, সতর্ক হওয়া দরকার। হাতে করে পানি নিয়ে কুলি করাই সবচেয়ে নিরাপদ । – শামী

মাসয়ালা : শিশু ছেলে যে দুধ উদ্‌গীরণ করে তারও একই হুকুম, যদি মুখ ভরে না এসে থাকে, তবে নাপাক নয়। কিন্তু মুখ ভরে এসে থাকলে তা নাপাক। – দুররে মুখতার

অজুবিহীন অবস্থার হুকুম

মাসয়ালা : বিনা অযূতে কুরআন শরীফ ছোয়া জায়েয নেই। অবশ্য যদি পৃথক কোনো কাপড় দিয়ে ধরে, তবে জায়েয আছে। কিন্তু নিজের পরিচিত কাপড় বা কোর্তার আঁচল দিয়ে ধরা জায়েয নয় ।

যদি মুখস্থ পড়ে, তবে অযূ ছাড়াও জায়েয আছে, আর যদি কুরআন শরীফ সামনে খোলা থাকে, তাতে হাত না লাগায়, তবে দেখে পড়াও জায়েয আছে । এভাবে যে সব তাবিযে বা তরিতে কুরআন শরীফের আয়াত লেখা থাকে তাও অযূ ছাড়া ছোয়া জায়েয নয় । এই মাসয়ালাটি খুব ভালভাবে মনে রাখবে ।

মাসয়ালা : বিনা অযূতে কুরআন শরীফ অথবা আমপারার কোনো পাতা এবং জিদ স্পর্শ করাও মাকরূহ্ েতারিমী । পাতার যে যে স্থানে লেখা না থাকে সে সে স্থানে স্পর্শ করাও মাকরূহ্ তাহরিমী।

কিন্তু অন্য কিতাবের কোনো পাতায় যদি কুরআনের কোনো আয়াত অথবা আয়াতের অংশ লেখা থাকে, তবে কুরআনের আয়াতটুকু স্পর্শ করা জায়েয নয়; সেটুকু বাদ দিয়ে অন্য অংশ স্পর্শ করা জায়েয আছে ।

মাসয়ালা : বিনা অযূতে কুরআনের আয়াত স্পর্শ করা যেমন মাকরূহ্ তেমনি হাতের দ্বারা লেখাও মাকরূহ্ ।

মাসয়ালা : না-বালেগ ছেলে-মেয়েরা যদিও শরীয়তের বিধান প্রয়োগযোগ্য নয়, তবুও তাদেরকেও অযূ করে আমপারা কুরআন শরীফ ধরতে শিক্ষা দেয়া উচিত ।

মাসয়ালা : হাদীস, তাফসির, ফিকাহ্ ও তাসাউফের কিতাব অযূ করে ধরাই উত্তম । কিন্তু এসব কিতাবে কুরআনের আয়াত লেখা থাকলে তাও বিনা অযূতে স্পর্শ করলে গুনাহ্ হবে, তাছাড়া অন্য জায়গা স্পর্শ করলে গুনাহ্ হবে না, আদবের খেলাফ হবে মাত্র ।

মাসয়ালা : ইঞ্জিল, তাওরাত ইত্যাদি মানসূখ আসমানি কিতাবগুলোও বিনা অযূতে স্পর্শ করা দুরুস্ত নয় । মোজার ওপর মাসেহ

অযূ করে যদি চামড়ার মোজা পরার পরে অযূ ভেঙ্গে যায়, তবে আবার অযূ করার সময় মোজার ওপর মাসেহ করে নেয়া দুরুস্ত আছে। যদি মোজা খুলে ফেলে পা ধুয়ে * নেয়, তবে সবচেয়ে ভাল ।

মাসয়ালা ঃ চামড়ার মোজা যদি এত ছোট হয় যে, টাখনো (ছোট গিরা) ঢাকা না তবে সে মোজার ওপর মাসেহ করা দুরুস্ত হবে না। এরকম যদি বিনা অযূতে পা ধুতে হবে চামড়ার মোজাই পরে থাকে, তবে তার ওপর মাসেহ করা দুরুস্ত হবে না; মোজা খুলে

মাসয়ালা : শয়ী সফর অবস্থায় তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মাসেহ করতে পারবে: আর সফর ব্যতীত (যেমন, বাড়ি থাকাবস্থায়) এক দিন এক রাত পর্যন্ত মাসেহ করতে পারবে। আর যেই অযূ করে মোজা পরেছে সেই অযূর পর প্রথমে যখন অযূ ভাঙ্গবে সেই সময় হতে এক দিন এক রাত বা তিন দিন তিন রাতের হিসাবে ধরা হবে।

যে সময় মোজা পরেছে সে সময় হতে হিসেব ধরা হবে না। যেমন, হয়ত কেউ যোহরের সময় অযূ করে মোজা পরল, তারপর সূর্যাস্তের সময় অযূ ভাঙ্গল, তবে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত মাসেহ করতে পারে, আর সফরের অবস্থায় তৃতীয় দিনে সূর্যাস্তের সময় পর্যন্ত মাসহে করতে পারবে; যখন সূর্য ডুবে যাবে, তখন আর মাসেহ করতে পারবে না।

মাসয়ালা : গোসলের প্রয়োজন হলে মোজা খুলে ফেলতে হবে; গোসলের সঙ্গে মোজার ওপর মাসেহ করা চলবে না।

মাসয়ালা : মোজার ওপর মাসেহ করার সময় হাতের আঙ্গুলগুলি পানিতে ভিজে পায়ের পাতার অগ্রভাগে রাখবে যেন সম্পূর্ণ মোজার ওপর আঙ্গুলগুলির চাপ পড়ে।

অতঃপর হাতের পাতা শূন্য রেখে ক্রমশঃ আঙ্গুলগুলি টেনে পায়ের টাখনোর দিকে আনবে। আর যদি হাতের পাতাসহ মোজার উপরে রেখে টেনে আনা হয় তবে তাও দুরুস্ত আছে।

মাসয়ালা ঃ যদি কেউ উল্টো মাসেহ করে অর্থাৎ, টানোর দিক হতে টেনে পায়ের আঙ্গুলের দিকে আনে, তবুও মাসেহ দুরুস্ত হবে, কিন্তু এরকম করা মুস্তাহাবের খেলাফ।

যদি লম্বাভাবে মাসেহ না করে মোজার চওড়া দিকে মাসেহ করে তবুও মাসহে দুরুস্ত হবে; কিন্তু মুস্তাহাবের খেলাফ হবে। কিন্তু যদি শুধু মোজার তলার দিকে বা গোড়ালি দিকে মাসেহ করে, তবে দুরুস্ত হবে না ।

মাসয়ালা : আঙ্গুলগুলো সম্পূর্ণ না লাগিয়ে যদি কেবল আঙ্গুলের মাথা লাগিয়ে উপরের দিকে টেনে আনে, মাসেহ দুরুস্ত হবে না। কিন্তু যদি আঙ্গুল পরিমাণ মোজায় লেগে যায়, তবে অবশ্য মাসেহ দুরুস্ত হবে।

মাসয়ালা : মাসেহর মুস্তাহাব হল হাতের আঙ্গুলের ভিতর দিক দিয়ে মাসেহ করবে। আঙ্গুলের পিঠ দিয়ে মাসেহ করাও দুরুস্ত আছে।

মাসয়ালা : হাতের তিন আঙ্গুল পরিমাণ স্থান প্রত্যেক মোজার ওপর মাসেহ করা ফরজ; এর কম করলে মাসেহ দুরুত্ত হবে না ।

মাসয়ালা ঃ যে যে কারণে অযূ ভেঙ্গে যায়, সে সকল কারণে মাসেহও ভেঙ্গে যায়। অতএব, উপরিউক্ত মুদ্দতের মধ্যে অযূর সঙ্গে সঙ্গে মাসেহ করবে।

মোজা খুললেও মাসেহ ভেঙ্গে যায়। সুতরাং যদি কারোর অযূ ভেঙ্গে না থাকে, কেবল মোজা খুলে গিয়ে থাকে, তবে তার মাসেই ভেঙ্গে যাবে। তখন শুধু উভয় পা ধুয়ে নিবে, আবার সম্পূর্ণ অযূ করতে হবে না ।

মাসয়ালা ঃ যদি দুটো মোজার একটি মোজা খুলে থাকে, তবুও মাসেহ ভেঙ্গে যাবে; এখন অপরটিও খুলে উভয় পা ধোয়া ওয়াজিব হবে।

মাসয়ালা ঃ মাসেহের মুদ্দত পুরা হয়ে গেলেও মাসেহ ভেঙ্গে যায় । সুতরাং যদি অযূ না ভেঙ্গে থাকে, আর মাসেহর মুদ্দত শেষ হয়ে যায়, তবে মোজা খুলে শুধু পা দু’খানি ধুয়ে নিবে; পুরা অযূ করতে হবে না। আর যদি অযূ ভেঙ্গে গিয়ে থাকে, তবে মোজা খুলে পুরা অযূ করবে।

মাসয়ালা : মোজার ওপর মাসেহ করার পর কোথাও পানির মধ্যে পা পড়ে গেছে, মোজাটি ঢিলা থাকার কারণে মোজার ভিতরে পানি ঢুকে সম্পূর্ণ পা বা পায়ের অর্ধেকের বেশি ভিজে গেছে, এরকম অবস্থা হলেও মাসেহ ভেঙ্গে যাবে, উভয় পায়ের মোজা খুলে ভালভাবে পা দুটি ধুতে হবে ।

মাসয়ালা ঃ মোজা এত পরিমাণ ছিঁড়ে গেছে যে, হাঁটার সময় পায়ের ছোট আঙ্গুলের তিন আঙ্গুল পরিমাণ খুলে যায়, এমতাবস্থায় মোজার ওপর মাসেহ দুরুস্ত হবে না । আর যদি তা অপেক্ষা কম খুলে তবে মাসেহ দুরুস্ত হবে ।

মাসয়ালা ঃ মোজার সেলাই খুলে গেছে, কিন্তু পা দেখা যায় না, তবে মাসেহ দুরুস্ত হবে। যদি হাঁটবার সময় তিন আঙ্গুল পরিমাণ পা দেখা যায়, কিন্তু দাঁড়ানো থাকলে পা দেখা যায় না, তবে মাসেহ দুরুস্ত হবে না।

মাসয়ালা : একটা মোজা এতটুকু ছেঁড়া যে, এতে দুই আঙ্গুল পরিমাণ পা দেখা যায়, আর অপরটির এক আঙ্গুল পরিমাণ দেখা যায়, তবে মাসেহ দুরুস্ত হবে। একটা মোজারই বিচ্ছিন্নভাবে কয়েক জায়গা ছেঁড়া কিন্তু সব মিলিয়ে তিন আঙ্গুল পরিমাণ হয়, তবে মাসেহ দুরুস্ত হবে না। যদি সব ছেঁড়া মিলিয়েও তিন আঙ্গুল পরিমাণ না হয়, তবে মাসেহ দুরুস্ত হবে

মাসয়ালা : কেউ বাড়িতে মাসেহ করা শুরু করেছে, কিন্তু এক দিন এক রাত পুরা হওয়ার পুর্বেই সফরে গেছে; তবে এখন সে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মাসেহ করতে পারবে।

আর যদি সফর শুরু করার পূর্বেই এক দিন এক রাত পার করে থাকে, তবে তার মুদ্দত পুরা হয়ে গেছে; এখন আর মাসেহ করতে পারবে না। পা ধুয়ে নতুন করে মোজা পরতে হবে।

মাসয়ালা : কেউ সফরে থাকাকালে মাসেহ করা শুরু করেছিল, এখন বাড়ি এসে

যদি এক দিন একরাত হয়ে যায়, তবে মোজা খুলে ফেলবে, আর মাসেহ করতে পারবে না। যদি এক দিন এক রাতও না হয়ে থাকে, তবে এক দিন এক রাত হওয়া পর্যন্ত মাসেহ করতে পারবে, কিন্তু এর বেশি পারবে না।

মাসয়ালা : কাপড়ের মোজার ওপর যদি চামড়ার মোজা পরে থাকে, তবে মাসেহ জায়েয হবে।

মাসয়ালা : কাপড়ের মোজার ওপর সাধারণভাবে মাসেহ করা জায়েয নয়, কিন্তু যদি কাপড়ের মোজার ওপর চামড়া লাগিয়ে নেয় বা অন্তত পুরুষের জুতার পরিমাণ চামড়া লাগিয়ে নেয়, অথবা যদি কাপড়ের মোজা এমন শক্ত ও মোটা হয় যে, বাঁধা ছাড়াই পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে এবং পায়ে দিয়ে তিন চার মাইল পথ হাঁটা যেতে পারে, এ সব অবস্থায় কাপড়ের মোজার ওপর মাসেহ করা দুরুস্ত হবে ।

মাসয়ালা : বোরকা এবং হাত-মোজার ওপর মাসেহ করা জায়েয নয় ।

মাসয়ালা : বুটজুতা যদি পাক হয় এবং ফিতা দ্বারা খুব এঁটে বাঁধা হয় যাতে টাখনো পর্যন্ত পা ঢাকা থাকে, তবে যেমন চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করা জায়েয আছে, তেমনি বুটজুতার ওপরও মাসেহ করা জায়েয হবে ।

মাসেহ জায়েয নয় ৷ মাসয়ালা : যার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে তার পক্ষে চামড়ার মোজার ওপর

মাসয়ালা : মা‘যুর যদি মাসেহ করে, তবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে যেমন তার অযূ ভেঙ্গে যাবে তেমনি তার মাসেহ ভেঙ্গে যাবে। অযূ করার সময় তার মোজা খুলে পা ধুতে হবে। কিন্তু যদি অযূ করার সময় এবং মোজা পরার সময় কোনো ওযর না থাকে, তবে অন্যান্য সুস্থ লোকের ন্যায় সে নিজেও মাসেহ করতে পারবে ।

মাসয়ালা : যদি কোনো কারণে চামড়ার মোজার মধ্যে পানি প্রবেশ করে পায়ের পা ধুতে হবে অধিকাংশ স্থান ধোয়া হয়ে থাকে, তবে তার পক্ষে মাসেহ করা চলবে না, মোজা খুলে

অজুর বিভিন্ন মাসয়ালা

মাসয়ালা : অযূর মধ্যে যে চারটি অঙ্গ ধোয়া ফরজ সেগুলো ধোয়া হয়ে গেলে অযূ হয়ে যাবে। ইচ্ছা করে ধুয়ে থাকুক বা অনিচ্ছায় ধুয়ে থাকুক, নিয়্যত করে থাকুক বা না করে থাকুক।

যেমন, গোসলের সময়’ অযূ না করে সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিল বা পুকুরের মধ্যে পড়ে গেল বা বৃষ্টিতে ভিজল, এতে এই চারটি অঙ্গ যদি পূর্ণরূপে ধোয়া হয়ে যায়, তবে অযূ হয়ে যাবে, কিন্তু নিয়্যত না থাকার দরুন অযূর সওয়াব পাবে না ।

মাসয়ালা : এভাবে যদি বাম পা এবং বাম হাত আগে ধোয়, তবুও অযূ হয়ে যাবে, কিন্তু মুস্তাহাবের খেলাফ হবে। – মারাকী

মাসয়ালা : এক অঙ্গ ধুয়ে অন্য অঙ্গ ধুতে এত দেরি করবে না যে, প্রথম অঙ্গ আলমগীরী শুকিয়ে যায়। এরকম দেরি করলে অবশ্য অযূ হয়ে যাবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হবে। –

মাসয়ালা : প্রত্যেক অঙ্গ ধুবার সময় হাত দিয়ে ঘষা-মাজা করাও সুন্নত, যেন কোনো জায়গা শুকনো না থাকে (শীতকালে ডলে- মলে ধোয়া বেশি আবশ্যক; কেননা, তখন শুকনো থাকর আশঙ্কা বেশি।

মাসয়ালা : নামাযের ওয়াক্তের পূর্বে অযূ করে নামাযের আয়োজন করা এবং নামাযের জন্য প্রস্তুত হওয়া ভাল এবং মুস্তাহাব। – মারাকী

মাসয়ালা : কোনো অঙ্গ তিনবারের বেশীও ধুবে না। মুখ ধুবার সময় পানি বেশি জোরে মুখে মারবে না, ফুক মেরে পানি উড়াবে না, মুখ এবং চোখ অতি দ্রুততার সাথে বন্ধ করবে না।

কেননা, এসব কাজ মাকরূহ্ । যদি মুখ এবং চোখ এরকম জোরে বন্ধ করে রাখা হয় যাতে চোখের পলক বা ঠোঁটের কিছু অংশ ধোয়া হলো না, বা চোখের কোণায় পানি পৌঁছাল না, তবে অযূই হবে না । – কবীরী

মাসয়ালা ঃ আংটি, চুড়ি, বালা, যদি এরকম ঢিলা হয় যে, সহজেই তার নিচে পানি পৌঁছতে পারে, তবুও সেগুলি নেড়েচেড়ে ভালভাবে খেয়াল করে তার নিচে পানি পৌঁছানো মুস্তাহাব।

আর যদি ঢিলা না হয় এবং পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থাকে, সেগুলিকে ভালভাবে নেড়েচেড়ে নিচে পানি পৌঁছানো ওয়াজিব । নাকের নথ চুঙ্গিরও এই হুকুম যে, যদি ছিদ্র ঢিলা হয়, তবে নেড়েচেড়ে পানি পৌঁছান মুস্তাহাব; আর যদি ছিদ্র আঁটা হয়, তবে মুখ ধোয়ার সময় নথ, বালি ভালভাবে ঘুরায়ে পানি পৌছানো ওয়াজিব । -কবীরী

মাসয়ালা ঃ যদি নখের ভিতরে আটা জমে (অথবা কোনো স্থানে চুন ) শুকিয়ে থাকে এবং অযূর সময় যদি তার নিচে পানি না যায়, তবে অযূ হবে না । যখন মনে আসে এবং আটা দেখে, তখন আটা (চুন ইত্যাদি) ছাড়িয়ে সেখানে পানি ঢেলে দিবে (সম্পূর্ণ অযূ দোরাবে না ।) পানি ঢালার পূর্বে নামায পড়ে থাকলে সেই নামায দোহ্র্রাতে হবে

মাসয়ালা : কপালে ও মাথায় আশান (এবং নখে নখ- পালিশ) ব্যবহার করলে তার আটা উঠিয়ে ধুতে হবে, নতুবা অযূ বা গোসল কোনটাই হবে না ।

মাসয়ালা ঃ অযূ করার পর দুই রাকাত — তাহিয়্যাতুল অযূ— নামায পড়া ভাল । হাদীস শরীফে এর অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে । কবীরী

মাসয়ালা : একবার অযূ করেছে এখনও সেই অযূ ভাঙ্গেনি, অন্য এবাদতও সেই অযূর দ্বারা করে নি, এখন পুনঃ অযূ করা মাকরূহ্ এবং নিষেধ । সুতরাং গোসলের সময় অযূ করে থাকলে সেই অযূর দ্বারাই নামায পড়বে; সে অযূ না ভাঙ্গা পর্যন্ত পুনরায় অযূ করবে না। যদি দুই রাকাত নামাযও ঐ অযূর দ্বারা পড়ে থাকে, তবে আবার অযূ করলে কোনো ক্ষতি নেই; বরং অযূ করলে বেশি সওয়াব পাবে। — মারাকী

মাসয়ালা ঃ হাত পা কেটে গেছে এবং যেখানে ঔষধ লেগেছে ঔষধ ছাড়িয়ে অযূ করলে ক্ষতি হয়। যদি সেই ব্যক্তি ঔষধ না ছাড়িয়ে শুধু ওপর দিয়ে পানি ঢেলে নেয়, ও অযূ হয়ে যাবে

মাসয়ালা ঃ অযূ করার সময় হয়ত পায়ের গোড়ালি বা অন্য কোনো জায়গায় পানি পৌঁছে নি, তা অযূ করার পর নজর পড়েছে; এখন সেই জায়গা শুধু হাত বুলিয়ে দিলে অযূ হবে না, পানি ঢেলে দিতে হবে

মাসয়ালা : শরীরের ফোঁড়া বা অন্য কোনো রোগ এই রকম আছে যে, পানি লাগলে ক্ষতি হয়, তবে যেকানে পানি লাগলে ক্ষতি হয়, সেখানে পানি না লাগিয়ে শুধু ভিজা হাত দিয়ে মুছে নিতে পারে (এরকম মুছে নেয়াকে মাসেহ বলে)। আর যদি শুধু মুছে নিলেও ক্ষতি হয়, তবে সে জায়গাটুকু একেবারে ছেড়েও দিতে পারে। – মারাকী

মাসয়ালা : যখমের পট্টি খুলে যখমের ওপর মাসেহ করলে যদি ক্ষতি হয় বা পট্টি ওপর মাসেহ করা দুরুস্ত হবে না (যদিও ধোয়া না হয়) । খুলতে খুব কষ্ট হয়, তবে পট্টির ওপরও মাসেহ করা চলে । এমন অবস্থা না হলে পট্টির শরহে বেঃ

মাসয়ালা : সম্পূর্ণ পট্টির নিচে যদি যখম না থাকে, তবে যদি পট্টি খুলে যখমের জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গা ধুতে পারে, তবে ধুতে হবে। আর যদি পট্টি খুলতে না পারা নিবে। – কবীরী যায়, তবে যখমের জায়গায় এবং যে জায়গায় যখম নেই সে জায়গায়ও মাসেহ করে

মাসয়ালা ঃ হাড় ভেঙ্গে গেলে বাঁশের চটা দিয়ে যে তেকাঠিয়া বাধা হয় তার হুকুমও পট্টিরই মত। যতদিন তেকাঠি খুলতে না পারে, তেকাঠির ওপরই মাসেহ করে নিবে এবং শিঙ্গার ওপর পট্টিরও এই হুকুম, যদি যখমের ওপর মাসেহ করতে না পারে, তবে পট্টি খুলে কাপড়ের বান্ডিজের ওপর মাসেহ করবে।

আর যদি খুলার ও বাঁধবার লোক না পাওয়া যায়, তবে পট্টির ওপরই মাসেহ করবে । – কবীরী মাসয়ালা : মাসেহ করতে হলে সমস্ত পট্টির ওপর মাসেহ করা ভাল, কিন্তু অর্ধেকের করে, তবে অযূ আদৌ হবে না । বেশির ভাগ মাসেহ করলেও অযূ হয়ে যাবে। আর যদি সমান অর্ধেক বা কম অর্ধেক

মাসয়ালা : হঠাৎ পট্টি পড়ে গেল, এখনও যখম ভাল হয় নি, তবে পট্টিই বেঁধে নিবে, আর পূর্বের মাসেহ বাকি থাকবে । আবার মাসেহ করতে হবে না । যদি যখম ভাল হয়ে থাকে আর পট্টি বাঁধার দরকার না থাকে, তবে মাসেহ ভেঙ্গে যাবে, নতুন অযূ না করে শুধু ঐ স্থানটুকু ধুয়েও নামায পড়তে পারে । – ফাঃ হিঃ

মাসয়ালা : পুরুষগণ অযূর সময় তিনবার মুখমণ্ডল ধোয়ার পর দাড়ি খেলাল করবে। অর্থাৎ, ভিজা হাতের আঙ্গুল দাড়ির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দাড়ি ভিজাবে। তবে তিনবারের বেশি খেলাল করবে না।- দোররে মুখতার

মাসয়ালা ঃ অযূর সময় দাড়ি এবং কানের মধ্যবর্তী স্থানটুকু ধোয়া ফরজ, সেখানে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক। – শরহে তানবীরুল আবছার

মাসয়ালা : অযূর মধ্যে থুতনী ধৌত করা ফরজ, যদিও তার ওপর দাড়ি না থাকুক শরহে তানবীরুল আবছার বা দাড়ি থাকুক।

মাসয়ালা : মুখ বন্ধ করলে ঠোঁটের যে অংশ স্বাভাবিকভাবে বাইরে থেকে দেখা যায়, তাও অয়ূর মধ্যে ধোয়া ফরজ। – শামী

মাসয়ালা : দাড়ি, মোচ বা ভ্রূ ঘন হওয়ার দরুন ভিতরকার চামড়া দেখা না গেলে, তার নিচের চামড়া ধোয়া ফরজ নয়; বরং ঐ দাড়িকে চামড়ার বিকল্প ধরতে হবে এবং দাড়ির ওপর দিয়ে পানি বইয়ে দিলেই ফরজ আদায় হয়ে যাবে ।

মাসয়ালা : আবার দাড়ি মোচ ও ভ্রূ যদি এত হালকা হয় যে, নিচের চামড়া দেখা যায়, তবে মুখমণ্ডলের সীমার মধ্যে দাড়ি ধোয়াই ফরজ, কিন্তু বাইরের দাড়ি ধোয়া ফরজ নয় ৷

মাসয়ালা : যদি কারোর মলদ্বারের ভিতরের অংশ দ্বার হতে বের হয়ে আসে (এটা এক প্রকার রোগ বিশেষ), তবে তার অযূ ভেঙ্গে যাবে। চাই সে অংশ পুনরায় নিজে নিজেই ভিতরে প্রবেশ করুক কিংবা হাত বা কাপড়ের সাহায্যে ভিতরে প্রবেশ করানো হোক।

মাসয়ালা ঃ যদি বিনা উত্তেজনায় (যেমন ভারি কোনো বোঝা উঠালে বা ওপর হতে নিচে পড়ে গেলে তাতে) মনি বের হয়, এমতাবস্থায় গোসল ফরজ হবে না বটে, তবে অযু ভেঙ্গে যাবে।

মাসয়ালা : বেহুশ বা পাগল হলে অযূ ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু যদি মস্তিষ্ক সামান্য পরিমাণে বিকৃত হয় এবং তাতে বেহুশ বা পাগল না হয়, তবে অযূ ভাঙ্গবে না

মাসয়ালা : নামাযের মধ্যে তন্দ্রা অবস্থায় উচ্চস্বরে হাসলে অযূ যাবে না। মাসয়ালা : জানাযার নামায ও তেলাওয়াতে সেজদার সময় উচ্চহাস্য করলে বালেগ ব্যক্তিরও অযু নষ্ট হবে না, না-বালেগ ব্যক্তির তো হবেই না। – মুনিয়া

অন্যান্য কতিপয় বিষয়

মাসয়ালা : অযু করার পর যদি সন্দেহ হয় যে, কোনো একটি অঙ্গ যেন ধোয়া হয়নি, তবে সন্দেহ দূর করার জন্য শেষ অঙ্গটি ধুয়ে নিলেই চলবে। তবে যদি কারোর প্রায়ই অনর্থক এরকম কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হয়, তবে সে ওয়াসওয়াসার কোনো ইতেবার করা উচিত নয়। অযু ঠিক হয়েছে মনে করা উচিত।

মাসয়ালা : পেশাব-পায়খানার পর অথবা বায়ু নির্গত হলে অথবা ঘুম হতে উঠে তৎক্ষণ করে নেয়া ভাল। অবশ্য না করলে গুনাহগার হবে না ।

মাসয়ালা : অযু বিহীন অবস্থাকে ” হাদস আসগার “ বা ছোট নাপাকি বলে এবং গোসল ফরজ হওয়ার অবস্থাকে “হৃদসে আকবার” বা বড় নাপাকি বলে ।

মাসয়ালা : হৃদসে আসগার দূর করার জন্য অযূ করতে হয় এবং হৃদসে আকবর দূর করার জন্য গোসল করতে হয়।

মাসয়ালা : যে ব্যক্তির নাক বা অন্য কোনো যখন হতে অনবরত রক্ত বের হয়ে থাকে অথবা অবিরাম পেশাবের ফোঁটা আসতে থাকে, এমন কি নামাযের সম্পূর্ণ ওয়াক্তের মধ্যে এতটুকু সময়ও বিরাম হয় না যাতে শুধু ফরজ অঙ্গগুলি ধুয়ে অয়ূর সাথে সংক্ষেপে ফরজ নামায আদায় করে নিতে পারে, তবে এরকম ব্যক্তিকে মাথুর বলে।

মাসয়ালা : মা’য়ুরের হুকুম এই যে, প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে নতুন অযূ করে নামায পড়তে হবে। যে পর্যন্ত ঐ নামাযের ওয়াক্ত থাকবে সে পর্যন্ত তার অযূ থাকবে; (অর্থাৎ ওযরজনিত রক্ত বা পেশাব বের হওয়ার কারণে তার অবূ যাবে না)। কিন্তু যে রোগের কারণে মা’য়ুর হয়েছে, তা ছাড়া অয়ূ ভাষার কারণ পাওয়া গেলে অবশ্য অ

ভেঙ্গে যাবে এবং পুনরায় অযূ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ কারোর নাক দিয়ে অনবরত রক্ত বের হতে থাকে, একেবারেই বন্ধ হয় না, সে যোহরের সময় অযূ করল, তবে যে পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত থাকবে সে পর্যন্ত ঐ নাকের রক্তের কারণে তার অযূ ভাঙ্গবে না; কিন্তু যদি পেশাব-পায়খানা করে থাকে, বা সূচবিদ্ধ হয়ে রক্ত বের হয়ে থাকে,

তবে শুধু অযূ ভেঙ্গে যাবে এবং পুনরায় অযূ করতে হবে। যখন যোহরের ওয়াক্ত অতীত হয়ে আসরের ওয়াক্ত আসবে, তখন আবার অযূ করতে হবে। এভাবে প্রত্যেক নামাযের পারবে । – শঃ তানবীর ওয়াক্তে নতুন অযূ করতে হবে এবং এই অযূর দ্বারা ফরজ, নফলসহ সব নামায পড়তে

মাসয়ালা ঃ মা‘যুর ব্যক্তি ফজরের সময় অযূ করেছে, সূর্যোদয় হলে সে অযূ দিয়ে আর নামায পড়তে পারবে না, নতুন করে অযূ করতে হবে। যদি সূর্যোদয়ের পর অযূ করে থাকে, তবে সে অযূ দিয়ে যোহরের নামায পড়তে পারবে, নতুন অযূ করতে হবে না । কিন্তু আসরের ওয়াক্ত আসলে নতুন অযূ করতে হবে। যদি অন্য কোনো কারণে অযূ ভেঙ্গে থাকে, তবে আলাদা কথা। – শরহে বেকায়া

মাসয়ালা : কারোর একটি যখম ছিল তা হতে সব সময় রক্ত বের হত; কিন্তু অযূ করার পর আর একটা জখম হয়ে আরও রক্ত বের হতে লাগল, তখন তার অযূ ভেঙ্গে যাবে, পুনরায় অযূ করতে হবে।

মাসয়ালা ঃ মা‘যুরের হুকুম প্রযোজ্য হওয়ার জন্য শর্ত এই যে, একটা ওয়াক্ত সম্পূর্ণ এমনভাবে অতিক্রান্ত হয়ে যাবে, যেন অবিরাম রক্ত বের হতে থাকে, এতটুকু সময়ের জন্যও বন্ধ হয় না যে; শুধু ঐ ওয়াক্তের মধ্যে এতটুকু সময় দিলে সে অযূর সাথে ঐ ওয়াক্তের ফরজ নামায পড়ে নিতে পারে, তাহলে আর তাকে মা‘যুর বলা যাবে না।

মা‘যুরের জন্য যে হুকুম আর যে মাফ আছে, তাও সে পাবে না । কিন্তু এক ওয়াক্ত সম্পূর্ণ এমনভাবে অতিক্রান্ত হয়ে গেল যে, পবিত্রতার সাথে নামায পড়ার সুযোগ পায় নি, তখন সে মা’যুর হল!

এখন তাকে প্রত্যেক ওয়াক্তে নতুন করে অযূ করতে হবে। তারপর যখন দ্বিতীয় ওয়াক্ত আসবে, তখন সম্পূর্ণ ওয়াক্তে রক্ত বের হওয়া শর্ত নয়; বরং যদি পূর্ণ ওয়াক্তের মধ্যে একবারও রক্ত আসে আর বাকী সময় ভাল থাকে, তবুও সে মা‘যুরেরই হুকুম পাবে । যদি এক ওয়াক্ত সম্পূর্ণ এরকম অতিক্রান্ত হয়ে যায় যে, রক্ত একবারও বের হয় নি, তখন আর সে মা‘যুর থাকবে না। যতবার রক্ত বের হবে, ততবারই তার অযূ ভেঙ্গে যাবে।

মাসয়ালা : যোহরের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পর যদি কারোর রক্ত বের হতে শুরু হয়, তবে তাকে যোহরের শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত (অর্থাৎ যখন এতটুকু সময় থাকে যে, ফরজ অযূর অঙ্গগুলি ধুয়ে শুধু ফরজ চার রাকাত নামায আদায় করা যায়, তখন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তবে ত ভালই, নতুবা অযূ করে নামায পড়ে নিবে (কিন্তু সে মা’যুরের হুকুম পাবে না)। তারপর আবার আসরের সময়ও যদি সম্পূর্ণ ওয়াক্ত এই রকমভাবেই রক্ত বের হতে থাকে এবং নামায পড়ার জন্য বিরাম না পাওয়া যায়, তবে আসরের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর তার ওপর মা‘যুরের হুকুম বলবৎ হবে। যদি আসরের ওয়াক্ত কিছু থাকতে রক্ত বন্ধ হয়ে থাকে, তবে আর সে মা’যুর হবে

না। যে সব নামায এই ওয়াক্তের মধ্যে পড়েছে তা দুরুস্ত হয় নি; সুতরাং সেগুলো দোরিয়ে পড়তে হবে। (আসরের ওয়াক্তেও মাকরূহ্ ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তবে ত ভালই, নতুবা অযূ করে নামায মাকরুহ্ ওয়াক্তের আগেই পড়ে নিবে; কিন্তু (মাকরুহ্) ওয়াক্ত থাকতে থাকতে রক্ত বন্ধ হয়ে ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে।) – রঃ মোখতার গেলে

মাসয়ালা : উপরিউক্ত নিয়ম অনুসারে যার ওপর মা’যুরের হুকুম বলবৎ হয়েছে এরকম একজন লোক পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি কারণে অযূ করেছিল, অযূ শেষ করার পর রক্ত বের হতে শুরু হয়েছে, তখন এই রক্ত বের হওয়ার কারণে তার অযূ ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু বিশেষত ঐ রক্ত বের হওয়ার কারণে যে অযূ করবে, সে অযূ অবশ্য আবার রক্ত বের হওয়ার কারণে ভাঙ্গবে না। – আলমগীরী

মাসয়ালা : যদি পেশাব, পায়খানা রক্ত ইত্যাদি (অর্থাৎ, যার কারণে মা‘যুরের হুকুম দেয়া হয়েছে তা) কাপড়ে লাগে এবং এরকম মনে হয় যে, নামায শেষ করার পূর্বে আবার লেগে যাবে, তবে ঐ রক্ত ধোয়া ওয়াজিব নয়। আর যদি মনে হয় যে,

এত অল্প সময়ের মধ্যে রক্ত লাগবে না এবং পাক কাপড়েই নামায শেষ করতে পারবে, তবে ধুয়ে নেয়া ওয়াজিব। রক্ত এক দেরহাম পরিমাণ অপেক্ষা বেশি হলে তা না ধুলে নামায হবে না। – শঃ তাঃ

মাসয়ালা : উল্লেখ্য যে, হাতের তালুকে সম্পূর্ণ খুলে পানি রাখলে যে পরিমাণ পানি তালুতে থাকে তাকে এক দেরহামের পরিমাণ বলে । নামাযের ভেতর অযূ ছুটে গেলে যা করতে হবে

মাসয়ালা : নামাযের মধ্যে অস্বাভাবিক কোনো কারণে বা মানুষের ইচ্ছাকৃত কোনো কর্মে যদি অযূ চলে যায়, তবে অযূ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাযও বাতিল হয়ে যাবে। যেমন যদি নামাযের মধ্যে গোসলের প্রয়োজন হয় বা খিলখিল করে হেসে উঠে, বা বেহুশ হয়ে পড়ে যায় বা ইচ্ছাপূর্বক বায়ু বের করে, তবে অযূ তো ভেঙ্গে যাবেই, সঙ্গে সঙ্গে নামাযও ভেঙ্গে যাবে।

মাসয়ালা : একাকী নামায আদায়কারী যদি নামাযের মধ্যে অযূ ভেঙ্গে যায়, তবে অযূ করে পুনরায় শুরু হতে নামায পড়াই তার জন্য উত্তম। কিন্তু যদি সে — বেনা— করতে অর্থাৎ, যে পর্যন্ত পড়েছে সে পর্যন্ত ঠিক রেখে অযূ করে, তার পর হতে বাকীটুকু পড়ে নামায শেষ করতে চায়, তবে সে অযূ ভঙ্গ হওয়া মাত্রই নামায ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথে অযূ করবে।

অযূ করতে যাবার সময় এদিক ওদিক তাকাবে না বা কথাবার্তা বলবে না, নিকটে পানি থাকতে দূরে যাবে না, সর্বাপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী পানির দ্বারা খুব দ্রুত অযূ করবে। অয়ূর নিকটবর্তী স্থানেই অবশিষ্ট নামায পড়বে, যদি পূর্বের স্থানে যায় তাও জায়েয আছে।

মাসয়ালা : ইমাম সাহেবের যদি নামাযের মধ্যে অযূ চলে যায়, তবে তার জন্যও এক দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায ছেড়ে অযূ করে নতুনভাবে নামায পড়া উত্তম ; কিন্তু যদি ‘বেনা’ ও ‘এস্তেখ়লাফ’ করতে চায় অর্থাৎ, যে পর্যন্ত পড়েছে তারপর হতে মুক্তাদিদের মধ্য হতে অন্য একজন দ্বারা পড়াতে চায়, তবে তার প্রক্রিয়া এই যে,

অযূ ভাঙ্গা মাত্রই সাথে সাথে নামায ছেড়ে দিয়ে একজন উপযুক্ত মুক্তাদিকে মোছাল্লার দিকে ইশারা করে খলিফা স্থলাভিষিক্ত বানিয়ে অযূ করতে যাবে, মুদরেকে খলিফা বানান উত্তম। যদি মাসবুককে খলিফা বানায় তবুও জায়েয।

কিন্তু মাসবুককে ইশারায় বলে দিবে যে, আমার ওপর এত রাকাত নামায বাকি আছে। রাকাতের জন্য আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে। যেমন, এক রাকাত বাকি থাকলে এক আঙ্গুল, দুই রাকাত বাকি থাকলে দুই আঙ্গুল উঠাবে। রুকু বাকি থাকলে হাঁটুর ওপর হাত রাখবে, সিজদা বাকি থাকলে কপালে,

আর কিরাত বাকি থাকলে মুখের ওপর, সেজদায়ে তেলাওয়াত বাকি থাকলে কপালে এবং জিহ্বার ওপর, সেদায়ে সাহু করতে হলে স্বীয় সীনার ওপর হাত রাখবে। অবশ্য যখন সে-ও এই সঙ্কেত বুঝে, নচেৎ তাকে খলিফা বানাবে না।

তারপর অযূ করে এসে যদি জামাত পায়, তবে মুক্তাদি হিসেবে শরীক হয়ে যাবে এবং বাকী নামায যা জামাতের সঙ্গে পেয়েছে তা মুক্তাদি হিসেবে এবং যদি দুই এক রাকাত মাঝখানে ছুটে গিয়ে থাকে তা লাহেকরূপে পরে পড়বে।

যদি অযূর স্থানে দাঁড়িয়ে ইক্তেদা করে, তবে যদি মাঝখানে এমন কোনো জিনিস বা ব্যবধান থাকে, যাতে ইক্তেদা করা দুরুস্ত হয় না, তবে সেখান থেকে ইক্তেদা করা দুরুস্ত হবে না। আর যদি অযূ করে জামাত না পায়, তবে একা একা অবশিষ্ট নামায পড়বে ।

মাসয়ালা : পানি যদি মসজিদের ভিতরেই থাকে, তবে খলিফা বানানো ছাড়াও ইচ্ছা করলে ‘বেনা‘ করতে পারে । নামায ছেড়ে দিয়ে দ্রুততার সাথে অযূ করে অবশিষ্ট অংশ পূর্ণ করবে। ইমাম যথাস্থানে ফিরে না আসা পর্যন্ত মুক্তাদিগণ যে অবস্থায় আছে ঐ অবস্থাতেই অপেক্ষা করতে থাকবে ।

মাসয়ালা : খলিফা বানানোর পর ইমাম আর ইমাম থাকবে না, মুক্তাদি হয়ে যাবে কাজেই যদি জামাত শেষ হয়ে যায়, তবে অবশিষ্ট নামায তিনি লাহেকরূপে পড়বেন। যদি ইমাম কাউকে খলিফা না বানান, কোনো মুক্তাদি স্বেচ্ছায় আগে অগ্রসর হয় বা মুক্তাদিরাই তাকে ইশারা করে আগে বাড়িয়ে দেয়, তবুও দুরুস্ত হবে।

কিন্তু যতক্ষণ ইমাম মসজিদের ভেতরে আছেন, কিংবা যদি নামায মসজিদে না হয়, তবে কাতার কিংবা ছোত্রা হতে আগে না যায়, ততক্ষণ এমন হতে পারবে। নতুবা ইমাম যদি খলিফা না বানিয়ে মসজিদ হতে বের হয়ে যায়, তবে সকলের নামায বাতিল হবে এবং কেউই আর খলিফা হতে পারবে না ।

মাসয়ালা : আর মুক্তাদির যদি নামাযের মধ্যে অযূ চলে যায়, তবে তার জন্যও ‘বেনা’ না করে সাথে সাথে অযূ করে মাসবুকরূপে জামাতে শরিক হওয়া বা জামাত না পেলে একা একা নতুন করে নামায পড়া উত্তম। কিন্তু যদি ‘ বেনা করতে চায়, তবে তৎক্ষণাৎ অযূ করে যদি জামাত বাকি থাকে জামাতে শামিল হয়ে যাবে,

যদি প্রথম কাতারে যেতে পারে, তবে ভাল, (নতুবা পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে যতটুকু জামাত পায় ততটুকু মাসবুকরূপে জামাতের সঙ্গে পড়বে এবং যদি দুই এক রাকাত মাঝখানে ছুটে গিয়ে থাকে-তা পরে লাহেকরূপে পড়বে।

কিন্তু যদি ইমাম ও তার অযূর স্থানের মধ্যে ইক্তেদায় বাধা স্বরূপ কোনো জিনিস না থাকে, তবে এখানেও দাড়ানো জায়েয আছে। আর যদি জামাত হয়ে গিয়ে থাকে, তবে অযূর নিকটবর্তী স্থানে দাড়িয়ে অবশিষ্ট নামায লাহেকরূপে পড়া উত্তম । যদি পূর্ব স্থানে গিয়ে পড়ে তাও জায়েয হবে ।

মাসয়ালা : ইমাম যদি মাসবুক মুক্তাদিকে খলিফা বানায়, তা জায়েয আছে, কিন্তু এক্ষেত্রে সে ইমামের অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে না, সালাম ফিরাবার জন্য একজন মোদরেক মুক্তাদিকে ইশারার দ্বারা আগে বাড়িয়ে নিবে;

নিজে একটু বসে দাঁড়িয়ে যে কয় রাকাত তার আগে ছুটে গিয়েছে, তা পড়া শেষ হলে পৃথকভাবে সালাম ফিরাবে। এই জন্যই মোদরেকে খলিফা বানানো উত্তম ।

মাসয়ালা : শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর সালাম ফিরাবার আগে যদি অনিচ্ছায় বা স্বাভাবিক উপায়ে কারও অযূ ভেঙ্গে যায়, কিংবা পাগল হয়ে যায়, বা গোসলের হাজত হয়, বা বেহুশ হয়ে যায়, তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে এবং পুনরায় নতুন করে নামায আদায় করতে হবে। (এক্ষেত্রে বেনা করতে পারবে না)।

মাসয়ালা : বেনা এবং এস্তেলাফের মাসয়ালা অতি সূক্ষ্ণ। এটা স্মরণ রাখা খুব কঠিন। তাছাড়া একটু ভুল হলেই নামায নষ্ট হবার অধিক আশঙ্কা আছে। কাজেই বেনা এবং এস্তেলাফ না করে অযূ ভেঙ্গে গেলে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায ছেড়ে দিয়ে অযূ করে নতুন করে নামায পড়াটাই উত্তম। -গওহর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *