Uncategorized

জায়গীর প্রথা বা ছাত্রদের লজিং

Share this

দীর্ঘ দুইশত বৎসর যাবৎ ইসলামের পরম দুশমন ইংরেজগণ আমাদের দেশ শাসন করে যে বিষফলের বীজ বপন করে গেছে তার মধ্যে সবচাইতে অধিক মারাত্মক ও ধ্বংসকর বিষফল হচ্ছে এই যে, তারা ধর্মহীন কুশিক্ষার ধারা চালু করে রেখে গেছে। ফলে যে মুসলমানগণ একদিন ধর্মের জন্য আখেরাতের সওয়াবের উদ্দেশ্যে জীবনে অনেক কাজ করতে অভ্যস্ত ছিল, সেই সওয়াবের কাজ করা এখন তারা ভুলে গেছে।

এখন তারা সর্বকাজেই দুনিয়ার হীন স্বার্থকেই খুব বড় করে দেখে। তারা এখন বিদ্যা শিখে চাকরির জন্য বা পয়সা উপার্জনের জন্য । ডাক্তার গরিব রোগীকে ঔষধের ব্যবস্থা লিখে দেয়, উকিল গরিব মযলুমকে পরামর্শ দেয়, শিক্ষক ছাত্রকে পড়ায়-এসব তারা শুধু টাকার জন্যই করতে শিখেছে।

কিন্তু মুসলমানদের এমন ছিল, যেদিন মুসলমানেরা এসব ছিল । শুধু গরিবের উপকারের জন্য তথা আখেরাতের সওয়াবের উদ্দেশ্যে করতে অভ্যস্ত আমি শুনেছি, লন্ডনের মহাসভ্য ব্যক্তিরা ছাত্রদেরকে বাড়িতে জায়গীর রেখে তাদের নিকট হতে টাকা নেয়, ব্যবসা করে এবং তাদের বলা হয় যটধঢ থলÍ বা টাকার অতিথি ।

সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশে তা এখনও চালু হয়নি। অবশ্য যাদের মধ্যে পাশ্চাত্য বর্বরতা বনাম সভ্যতা বেশি ঢুকেছে তারা দ্বীনি-ইলমের সাহায্যার্থে মাদরাসার ছাত্র জায়গীর রাখা একেবারে ছেড়ে দিয়েছে। এই প্রথা ইসলামের আদি হতেই চলে আসছে যে, কতক লোক আল্লাহর দ্বীনের উচ্চ শিক্ষা লাভ করার জন্য বাড়ি-ঘর ত্যাগ করে বিদেশে বের হয়েছে এবং সেখানে মুসলমানগণ রাসূলের এই মেহমানদেরকে আখেরাতের সওয়াবের উদ্দেশ্যে থাকার ও খাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ।

আরো পড়ুন:- ওসিয়ত নামা | অসিয়ত করার নিয়ম

আজও যেসব মুসলমান খ্রিস্টান সভ্যতার দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। তাঁরা তালেবে ইলম ছাড়া ভাত খাওয়াকে আল্লাহর রহমত উঠে যাওয়া বলে মনে করে। কুরআন হাদীসের ইলম তথা ইলমে দ্বীনের শিক্ষার্থী তালেবে ইলমদেরকে রাসূলের খাস মেহমান মনে করে শুধু সওয়াবের নিয়্যতেই বাড়িতে স্থান দেয়া, দুনিয়ার কোনো স্বার্থে নয়, বরং শুধু সওয়াবের উদ্দেশ্যেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়াকে বলা হয় জায়গীয়।

এটা একটি সুন্দর ব্যবস্থা, কারণ তালেবে ইলমদের থাকা-খাওয়ার মোট তিন প্রকার ব্যবস্থা হতে পারে। যথা-(১) বাড়িতে থেকে খাওয়া ও পড়া, (২) বোডিংয়ে থেকে খাওয়া-পড়া ও (৩) জায়গীরে থেকে খেয়ে পড়া । এই তিন প্রকার ব্যবস্থার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হচ্ছে জায়গীর ব্যবস্থা।

কেননা, বাড়িতে থেকে পড়তে গেলে পড়ার মধ্যে অনেক বাধাবিঘ্ন দেখা দেয় আর বোডিংয়ে থাকতে গেলে খরচ পড়ে অনেক বেশি, যা অনেকের পক্ষে অনেক সময় বহন করাই সম্ভব হয় না। পক্ষান্তরে জায়গীর থাকলে একদিকে

(১) জায়গীরদাতার বাড়ি দ্বীনি ইলমের চর্চায় আলোকিত হয়।

(২) জায়গীরওয়ালা দ্বীনের খেদমত করে ছদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অর্জন করে; অথচ যে পরিবারে ৪/৫ জন লোক আছে সেই পরিবারে একজন তালেবে ইলমের খোরাকের জন্য পৃথক কোনো ব্যয় করতে হয় না ।

(৩) গরিবদের ব্যাপক শিক্ষার ব্যবস্থা শুধু এই জায়গীর পদ্ধতি দ্বারাই সম্ভব। (

৪) যে তালেবে ইলম জায়গীরে থাকে, তার ইলম শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ সেবার অভিজ্ঞতা জন্মে এবং অনেক নৈতিক চরিত্র যে আয়ত্ত করতে পারে ।

কাজেই প্রত্যেক মুসলমানের বাড়িতে অবশ্যই একজন তালেবে ইলম রাখা একান্ত দরকার এবং নিয়্যত খালেছ করে একমাত্র আখেরাতের সওয়াবের নিয়্যতেই রাখা অবশ্যক ।

আজকাল ইসলামি শিক্ষা বাদ দিয়ে, ইসলামি শিক্ষা লাভের ফরজ তরক করে যারা ধর্মহীন শিক্ষা লাভ করে তারাও অনেক জায়গীর খোঁজে। কিন্তু মুসলমানদের জেনে রাখা প্রয়োজন যে, জায়গীর রাখার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে সওয়াব অর্জন করা।

আর সওয়াব অর্জন হবে ধর্ম বিদ্যা শিক্ষার্থী তালেবে ইলমদের সাহায্য করলে। কিন্তু যারা ধর্মহীন শিক্ষা লাভ করে তারা টাকার জন্যই পড়ে। এই টাকার লালসা তাদের এত স্পষ্ট যে, ওকালতি ডাক্তারি প্রভৃতি করার সময় তারা টাকা ছাড়া কাজ করে না এবং টাকা খরচ করেই পড়েছি, অতএব আমরা টাকা ছাড়া কাজ করতে পারব না।

এই ধরনের শিক্ষার্থীদেরকে সাহায্য করে আখেরাতে সওয়াব পাওয়ার আশা করা একেবারেই বৃথা। আজকাল ধর্মজ্ঞান বিবর্জিত শিক্ষার প্রভাবে এবং তৎসঙ্গে খ্রিষ্টানী বর্বরতামূলক তথাকথিত সভ্যতার তাসীরে অনেক নব্যশিক্ষিত যুবক ইসলাম ধর্মের সত্য সনাতনতা অস্বীকারপূর্বক তা ত্যাগ করছে এবং ইসলাম বিরোধী নাচ, গান বাদ্য, বাজনা, থিয়েটার, সিনেমা, বেহায়াপনা ইত্যাদির চরিত্রহীনতামূলক অনেক কাজ করতেছে।

এ সমস্ত ইসলাম বিরোধী কাজ হতে মুসলমানদের নিজেরও বেঁচে থাকা কর্তব্য এবং নিজেদের ছেলে-মেয়েদেরকেও বাঁচিয়ে রাখা দরকার। শুধু তা নয়, নিজ নিজ সমাজকেও এসময় চরিত্রনাশক কার্য হতে পবিত্র রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা একান্ত আবশ্যক। মুসলমানদের দুনিয়াবী উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সব সময় খেয়াল রাখা দরকার, যেন তাদের ধর্ম নষ্ট না হয় এবং আখেরাতের মঙ্গলজনক কার্য যাতে নষ্ট না হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *