দোয়া

জায়নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ

Share this

জায়নামাজের দোয়া বলতে সাধারণত নামাজ শুরু করার আগে, নামাজ শেষে বা নামাজের মাঝে আল্লাহর দরবারে করা বিশেষ দোয়াকে বোঝানো হয়। অনেকে জায়নামাজে বসে নামাজের পরে দোয়া করে থাকেন, যা ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

শোয়ার বিছানায় নামায আদায় : মায়মুনা থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) জায়নামাযের উপর নামায পড়তেন । নবীপত্নী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) এর সামনে নিদ্রা যেতাম এবং আমার পদদ্বয় তাঁর কিবলার দিকে (সিজদাহর স্থানে) থাকত ।

তিনি যখন সিজদার সময় আমার পা সরিয়ে দিতেন। তখন আমি আমার পা দুটি গুটিয়ে নিতাম, তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমার পা দুটি প্রসারিত করতাম । তিনি বললেন, ঐ সময়ে গৃহে বাতি ছিল না। কিবলার মাঝখানে বিছানার উপর জানাযার ন্যায় শায়িত থাকতাম । আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (সাঃ) নামায পড়তেন এবং আমি তাঁরা ও (বুখারী শরীফ)

ওরওয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) নামায পড়তেন এবং আয়েশা (রাঃ) তার ও কিবলার মাঝখানে তাদের শোয়ার বিছানার উপর শুয়ে থাকতেন । (বুখারী শরীফ) গরমের সময় কাপড়ের উপর সিজদাহ করা আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সাঃ) এর সাথে নামায পড়তাম এবং আমাদের কেউ কেউ অত্যন্ত গরমের জন্য কাপড়ের আঁচল সিজদাহর স্থানে রাখত ।

আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ কে

জায়নামাজের দোয়া

জায়নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ (jaynamajer dua bangla):- ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন ।

জায়নামাজের দোয়া বাংলা অর্থ:– নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহি ।

জায়নামাজে দোয়া করা ইবাদতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু গুনাহ মাফের মাধ্যম নয়, বরং জান্নাতের পথ সুগম করার একটি কার্যকর পন্থা। তাই আমাদের সকলের উচিৎ, প্রতিদিন নামাজের পর দোয়া করার অভ্যাস গড়ে তোলা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন- আমিন।

আরো পড়ুন:- তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থ সহ

মোজার উপর মাসেহ করে নামায পড়া

মুগীরাহ ইবনে শো’বা থেকে বর্ণিত । তিনি বললেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে অজু করালাম এবং তিনি মোজার উপর মাসেহ করে নামায পড়লেন (বুখারী শরীফ)

সিজদাহ পূর্ণভাবে করবে : হোযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একজন লোককে অসম্পূর্ণ রুকু ও সিজদাহ করতে দেখলেন। লোকটি নামায শেষ করলে হোযাইফাহ তাকে বললেন, তোমার নামাজ হয়নি।

বর্ণনাকারী বললেন, আমার মনে হয়, হোযাইফাহ এও বলেছেন যে, যদি তুমি এ অবস্থায় মারা যাও তবে মুহাম্মদ (সাঃ) এর তরীকার বাইরে মারা যাবে ।

সিজদাহর সময় বগল ও পার্শ্বদ্বয় প্রশস্ত করা :

আবদুল্লাহ ইবনে মালেক ইবনে বুহাইনাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসূল (সাঃ) নামায পড়ার সময় (সিজদা) দু হাতের মাঝখানে এত বেশী ব্যবধান রাখতেন যে, তার উভয় বগলের শুভ্রতা দেখা যেতো ।

জায়নামাজের দোয়ার গুরুত্ব

আল্লাহর দরবারে সরাসরি প্রার্থনার সুযোগ

জায়নামাজে বসে থাকা অবস্থায় বান্দা দুনিয়ার সব ব্যস্ততা ভুলে একান্তভাবে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। এই সময় হৃদয় হয় নরম, চোখ হয় অশ্রুসিক্ত — দোয়া কবুলের উপযুক্ত মুহূর্ত।

নামাজের পর দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:

তোমরা যখন ইকামত শোনো, তখন নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ো এবং নামাজ শেষে দোয়া করো; নিশ্চয়ই তা কবুল হয়।
— (তিরমিজি)

এটি প্রমাণ করে, জায়নামাজে বসে দোয়া করাও একটি ইবাদত

জায়নামাজ মানেই ইবাদতের স্থিরতা খুশু

জায়নামাজে বসে দোয়া করলে একাগ্রতা থাকে, মনোযোগ থাকে আল্লাহর দিকে। এমন পরিস্থিতিতে দোয়া বেশি আন্তরিক হয় এবং তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

দুনিয়া আখিরাতের কল্যাণ লাভের উপায়

জায়নামাজে বসে দোয়া করা মানেই আল্লাহর দরবারে নিজের সমস্যা, চাহিদা, কৃতজ্ঞতা ও ক্ষমা প্রার্থনার উপস্থাপন — যা দুনিয়াতে শান্তি এবং আখিরাতে মুক্তির দরজা খুলে দেয়।

আত্মার প্রশান্তি লাভ হয়

কষ্ট, চিন্তা, দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য জায়নামাজে বসে দোয়া করা খুবই ফলপ্রসূ। মহান আল্লাহ বলেন:

“أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ”
“জেনে রেখো, আল্লাহর জিকিরেই অন্তর প্রশান্ত হয়।”
— (সূরা রা’দ: ২৮)

নামাজের পর জায়নামাজে দোয়া করাও আল্লাহর জিকিরের একটি রূপ।

জায়নামাজের দোয়ার ফজিলত

দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত

নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসে দোয়া করা সময়টি দোয়া কবুলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়।
রাসুল (সা.) বলেন:

তোমরা দোয়া করো, তোমাদের দোয়া কবুল করা হবে।”
— (তিরমিজি)

নামাজের পরের মুহূর্তে হৃদয় নরম থাকে, যা দোয়া কবুলে সহায়ক।

জায়নামাজে দোয়া মানেই আল্লাহর রহমতের চাবিকাঠি

আল্লাহ বলেন:

আমার কাছে দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।”
— (সূরা গাফির: ৬০)

নামাজ শেষে জায়নামাজে বসে এই আহ্বানের প্রতি সাড়া দেওয়াই হলো রহমতের পথে চলা।

ফরজ নামাজের পর দোয়া গুনাহ মাফের কারণ

হাদীসে আছে:

যে ব্যক্তি প্রতি নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করে, তার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়।”
— (সহীহ মুসলিম)

এই দোয়ার পরে বান্দা যা চায়, আল্লাহর কাছে তা চাওয়া যায়—এটি গুনাহ মোচনের দ্বার।

আত্মশুদ্ধি মানসিক প্রশান্তি

জায়নামাজে দোয়া করলে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়, মন আল্লাহর দিকে মুখ ফিরিয়ে শান্তি লাভ করে। এটি আল্লাহর সান্নিধ্যে আসার এক সরাসরি উপায়।

জান্নাতের পথ প্রশস্ত হয়: রাসূল (সা.) বলেছেন, যারা দোয়া করে, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেন।

গুনাহ মোচনের সুযোগ: জায়নামাজে দোয়া করলে আল্লাহ গুনাহ মাফ করে দেন।

আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ: দোয়া করা আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম।

মনের প্রশান্তি: দোয়া করলে অন্তরে প্রশান্তি ও আত্মিক প্রশুদ্ধতা আসে।

ফরজ নামাজের পর দোয়া করলে বিশেষ রহমত নেমে আসে

রাসূল (সা.) বলেছেন:
দোয়া ইবাদতের মূল” (তিরমিজি: ৩৩৭১)

নামাজ শেষে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি

আরো পড়ুন: কসর নামাজের নিয়ম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *