নামাজ

কসর নামাজের নিয়ম

Share this

কসর নামাজ

মাসয়ালা : তিন মঞ্জিলের নিয়্যতে বাড়ি হতে বের হওয়ার পর পথিমধ্যে কোনো স্থানে যদি কয়েক দিন থাকার ইচ্ছা হয়, তবে যতক্ষণ ১৫ দিন বা তদূর্ধকাল থাকার নিয়্যত না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুসাফিরের ন্যায় কসর পড়তে থাকবে।

অবশ্য যদি ১৫ দিন বা তদূর্ধকাল থাকার নিয়্যত করে তবে যখন এরূপ নিয়্যত করবে, তখন হতেই পুরা নামাজ  পড়া শুরু করবে। তারপর যদি নিয়্যত বদলে যায় এবং ১৫ দিনের আগেই চলে যাওয়ার ইচ্ছা করে, তবে পুরা নামাজ ই পড়তে হবে, কসর জায়েয হবে না।

এভাবে ১৫ দিন থাকার নিয়্যত করে মুকিম হয়ে যাওয়ার পর যখন ঐ স্থান হতে অন্য স্থানে যাওয়ার ইচ্ছা করবে, তখন দেখতে হবে যেই স্থানে যাবার ইচ্ছা করেছে সে স্থানের দূরত্ব কত?

যদি সেই স্থানের দূরত্ব ঐ অবস্থানের স্থান হতে তিন মঞ্জিল বা ৪৮ মাইল হয়, তবে আবার কসর পড়তে হবে, আর যদি তার দূরত্ব ৪৮ মাইল না হয়, তবে কসর পড়তে পারবে না, পুরা নামাজ ই পড়তে হবে। (এরূপ পনের দিন অবস্থানের স্থানকে ‘ওতনে ইকামাহ’ বলে)।

আরো পড়ুন:- কোন কোন সময় নামাজ পড়া হারাম

মাসয়ালা : এক ব্যক্তি বাড়ি হতে বের হয়েছে এবং তিন মঞ্জিল বা ৪৮ মাইল দূরবর্তী স্থানেই যাবার নিয়্যত করেছে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এটাও নিয়্যত করেছে যে, পথিমধ্যে এক মঞ্জিল বা দুই মঞ্জিল দূরবর্তী অমুক গ্রামে ১৫ দিন থাকবে, তবে সে মুসাফির হবে না।

সমস্ত রাস্তায়ই তাকে পুরা নামাজ  পড়তে হবে । তারপর সেই গ্রামে না । গিয়ে যদি ১৫ দিন না-ও থাকে, তবুও পুরা নামাজ  পড়তে হবে, কসর পড়া জায়েয হবে

মাসয়ালা ঃ কোন এক ব্যক্তি যে স্থান হতে চলেছে সে স্থান হতে গন্তব্যস্থান তিন মি ল বটে, কিন্তু পথিমধ্যে তার নিজের গ্রামে আসল, তবে সে মুসাফির হবে না। সমস্ত রাস্তায় তার পুরা নামাজ  পড়তে হবে। কারণ, যদিও সে বাড়িতে অবস্থান না করে বা বাড়িতে প্রবেশও না করে, তবুও নিজ গ্রামের সীমানায় পা রাখা মাত্রই শরীয়ত মোতাবেক তার সফর বাতিল হয়ে যাবে ।

মাসয়ালা ঃ কোনো মেয়েলোক ঋতুবর্তী অবস্থায় ৪ মঞ্জিল যাবার ইচ্ছা করে বাড়ি হতে চলেছে। দুই মঞ্জিল যাওয়ার পর সে পবিত্র হয়েছে, সে মুসাফির হবে না।

গোসল করে অবশিষ্ট রাস্তায় পুরা নামাজ  পড়বে। অবশ্য যদি পাক হওয়ার পরও অবশিষ্ট রাস্তা তিন মঞ্জিল পরিমাণ দূরত্বে থাকে বা বাড়ি হতে যখন চলেছে তখন পাক ছিল, কিন্তু নিজ শহর অতিক্রম করার পর পথিমধ্যে ঋতু শুরু হয়েছে, তখন সে মুসাফির গণ্য হবে এবং পাক হওয়ার পর কসর করবে।

মাসয়ালা : এক ব্যক্তি যখন নামাজ  আরম্ভ করেছে তখন মুসাফির ছিল, কসরেরই গিয়েছে, তবে ঐ নামাজ  এবং তার পরবর্তী সব নামাজ  পুরা পড়বে । নিয়ত করেছে। কিন্তু নামাযের মধ্যেই নিয়্যত বদলিয়ে ১৫ দিন থাকার নিয়্যত হয়ে

মাসয়ালা ঃ যদি কেউ বাড়ি হতে তিন মঞ্জিল অপেক্ষা বেশি দূরে যাবার নিয়্যত করে বের হয়, কিন্তু পথিমধ্যে ঘটনাক্রমে কোনো স্থানে দুই চার দিন থাকার দরকার পড়েছে, তারপর রোজই ধারণা করে যে, কাল পরশুই চলে যাবে, কিন্তু যাওয়া আর হয় না।

এভাবে যাদ বহুকালও ঐ স্থানে থাকা হয় এবং কোনো সময়ই ১৫ দিন থাকার ধারণা না হয়, তবে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকবে ততক্ষণ মুসাফিরই থাকবে, মুকিম হবে না ।

মাসয়ালা ঃ এক ব্যক্তি তিন মঞ্জিল যাবার নিয়্যত করে বাড়ি হতে বের হয়েছিল, কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর নিয়্যত বদলে গেল এবং বাড়ি ফিরে আসল। তখন যখন হতে বাড়ি ফিরার ইচ্ছা করেছে, তখন হতেই তার পুরা নামাজ  পড়তে হবে। অবশ্য এরূপ ধারণা হবার পূর্বে যা কসর পড়েছে তা জায়েয বিবেচিত হবে।

মাসয়ালা : স্ত্রী যদি স্বামীর সাথে সফর করে ও স্বামীর সঙ্গ ছাড়া অন্যত্র যাবার ধারণা না থাকে, তবে স্ত্রীর নিয়্যতের কোনো মূল্য নেই, স্বামী যেরূপ নিয়্যত করবে স্ত্রীরও সেরকম নিয়্যত করে নামাজ  পড়তে হবে। মনিবের ন্যায় চাকরেরও এরূপ হুকুম ।

মাসয়ালা ঃ এক ব্যক্তি তিন মঞ্জিল যাওয়ার পর এমন স্থানে পৌঁছে যদি তা তার নিজ বাড়ি হয় এবং সেখানে কম বেশি যে কয়দিন থাকুক নিজ গ্রামের সীমানায় পা রাখা মাত্রই তার পুরা নামাজ  পড়তে হবে।

আর যদি তা অন্যের বাড়ি হয় এবং সেখানে ১৫ দিন থাকার নিয়্যত থাকে, তবে সে গ্রাম বা শহরের সীমানায় পা রাখার পর হতে পুরা নামাজ  পড়তে হবে, আর যদি ১৫ দিন থাকার নিয়্যত না থাকে এবং তার নিজ বাড়িও না হয়, তবে সেখানে পৌছার পরও কসর পড়তে থাকবে।

মাসয়ালা : কোনো ব্যক্তি তিন মঞ্জিল যাবার ইচ্ছা করে বাড়ি থেকে বের হয়েছে কিন্তু পথিমধ্যে কয়েক জায়গায় থামার ইচ্ছা আছে কোথাও ৫ দিন, কোথাও ১০ দিন, কিন্তু ১৫ দিন থাকার ইচ্ছা কোথাও নেই, তবে এই সকল স্থানে সে কসরই পড়তে থাকবে ।

মাসয়ালা ঃ যদি কেউ জন্মভূমি সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে অন্যত্র গিয়ে বাড়ি করে, তবে ঐ জন্মভূমির হুকুম এবং বিদেশের হুকুম একই হবে, অর্থাৎ, সেই জন্মভূমির গ্রামে বা সেই শহরে প্রবেশ করলে বিনা নিয়্যতে সে মুকীম হবে না।

কিন্তু যদি তা সম্পূর্ণ পরিত্যাগ না করে, প্রথম বাড়িও রাখে অন্যত্রও বাড়ি তৈরি করে, তবে উভয় স্থানকেই তার ‘ওতনে আছলি’ ধরা হবে এবং উভয় স্থানেই প্রবেশ করা মাত্র বিনা নিয়্যতে মুকিম হয়ে যাবে ।

মাসয়ালা : যদি কেউ বিদেশে বাসা করে ভাড়া বাড়িতে বা জায়গিরে বা চাকুরির স্থানে বহুকাল যাবৎ থাকে এবং এসব স্থান বাড়ি হতে তিন মঞ্জিল দূরবর্তী হয়, তবে ১৫ দিনের নিয়্যত ব্যতিরেকে এসব স্থানে প্রবেশ করলে সফর বাতিল হবে না।

আর যদি বাড়ি হতে তিন মঞ্জিলের কম দূরবর্তী হয়, তবে বাড়ি হতে আসলে আদৌ সফর হলেল এবং অন্য স্থান হতে সফর করে আসলে ঐ স্থানে এসেও ১৫দিনের নিয়্যত ব্যতিরেকে সফর বাতিল হবে না ।

মাসয়ালা ঃ যদি কারোর মুসাফির অবস্থায় নামাজ  কাযা হয় ও সেই নামাজ  মুকিম অবস্থায় কাযা পড়তে চায়, তবে যোহর, আসর এবং ইশার দুই রাকাতই কাযা পড়বে।

এরূপ মুকিমি হালতে যদি নামাজ  কাযা হয়ে থাকে এবং সেই নামাজ  মুসাফির হালতে কাযা পড়তে চায়, তবে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযের কাযা চার রাকাতই পড়বে, দুই রাকাত পড়া যাবে না ।

নিজের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ি কসর নামাজ

মাসয়ালা : বিবাহের পর মেয়েকে যখন স্বামীর বাড়িতে নেয়া হবে এবং সেখানেই থাকা সাব্যস্ত হবে, তখন হতে স্বামীর বাড়িই তার আপন বাড়ি (ওতনে আছলি) বলে বিবেচিত হবে।

অতএব, তার মা-বাবার বাড়ি যদি স্বামীর বাড়ি হতে তিন মঞ্জিল পরিমাণ দূরবর্তী স্থানে হয়, তবে বাপ-মা বাড়িতে গিয়ে যদি ১৫ দিন থাকার নিয়্যত না করে, তবে তার কসর করতে হবে।

আর যদি স্বামীর বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না করে, তবে পূর্ব ওতনে আছলি অর্থাৎ, মা-বাপের বাড়ি এখনও ওতনে আছলি থাকবে।

অবশ্য যতদিন স্বামীর বাড়িতে উঠিয়ে না নেয়া হবে, ততদিন শুধু বিবাহের কারণে তার ওতনে আছলি বাতিল হবে না। পুরুষের পক্ষেও শ্বশুর বাড়ি যদি তিন মি ল দূরবর্তী হয়, তবে শুধু বিবাহের কারণে শ্বশুর বাড়ি ওতনে আছলির মধ্যে গণ্য হবে কি-না এ বিষয়ে আলেমগণের মতভেদ আছে।

মতভেদের কারণে সন্দেহস্থলে পুরা নামাজ  পড়াই উত্তম কিন্তু এভাবে সন্দেহের অবস্থায় ইমামত না করা উচিত। অবশ্য যদি ঘর-জামাই থাকা শর্তে বিবাহ করে, তবে বিনা মতভেদে তার পূর্ণ নামাজ  পড়তে হবে এবং ঐ স্থানটি তার ওতনে আছলি বলে গণ্য হবে ।

মাসয়ালা ঃ যদি কোনো ব্যক্তি মুসাফির হালতে দুই গ্রাম মিলিয়ে ১৫ দিন অবস্থান করার নিয়্যত করে এবং ঐ গ্রামদ্বয়ের মধ্যে এতটা ব্যবধান হয় যে, এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামে আযানের আওয়ায না পৌঁছে,

অনুরূপ যদি কেউ মক্কা শরীফে ১০ দিন এবং মিনাবাজারে ৫ দিন থাকার নিয়্যত করে তবে মুকিম হবে না, মুসাফিরই থাকবে। প্রকাশ থাকে যে, মক্কা হতে মিনার দূরত্ব তিন মাইল ।

মাসয়ালা ঃ অবশ্য যদি ঐ দুই গ্রামের মধ্যে অল্প ব্যবধান হয়, এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামে আযানের আওয়ায পৌছে, তবে এমন দুই গ্রাম মিলিয়ে ১৫ দিনের নিয়্যত করলেও সে মুকিম হবে।

মাসয়ালা ঃ এভাবে বেশি ব্যবধান হওয়া সত্ত্বেও যদি রাতে একই জায়গায় ১৫ দিন থাকার নিয়্যত থাকে, দিনে অন্যত্র কাজের জন্য যায় এবং রাতে এসে একই জায়গায় থাকে,

তবে তাকেও মুকিমই বলা হবে এবং উভয় স্থানেই পুরা নামাজ  পড়তে হবে। কিন্তু যদি দিনের কর্মস্থল রাতের বাসস্থান হতে তিন মঞ্জিল দূরবর্তী হয়,

তবে দিনে যখন রাতে যখন ঘরে ফিরে আসবে, তখন মুকিম হবে এবং পুরা নামাজ  পড়বে। সেখানে যাবে তখন মুসাফির হবে এবং কসর পড়বে, অন্যথায় মুকিম থাকবে। আবার

মাসয়ালা ঃ মুসাফির যদি নামাযের ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ, সিজদা সাহু কিংবা সালাম ফিরানের আগে নামাযের মধ্যে যে কোনো সময়ে ইকামতের নিয়্যত করে,

তবে তার পুরা নামাজ  পড়তে হবে, কিন্তু নামাযের মধ্যেই যদি ওয়াক্ত চলে যায় এবং তদবস্থায় ইকামতের নিয়্যত করে, কিংবা লাহেক অবস্থায় ইকামতের নিয়্যত করে, তবে ঐ নামাজ  তাকে পুরা পড়তে হবে না, বরং কসরই পড়তে হবে ।

১। কোন মুসাফির যোহরের নামাজ  এক রাকাত পড়ার পর ওয়াক্ত চলে গেল এবং ইকামতের নিয়্যত করল, এই নামাজ  কসর পড়তে হবে।

২। মুসাফির অন্য মুসাফিরের ইক্তেদা করল এবং লাহেক হল । অতঃপর পূর্বের নামাজ  আরম্ভ করল, এমতাবস্থায় ইকামতের নিয়্যত করলে যদি এটা চার রাকাতের নামাজ  হয়, তবে কসর পড়তে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *