ইসলাম

দাফন কাফনের নিয়ম

Share this

পুরুষের জন্য তিনখানা কাপড় দেয়া সুন্নত; যথা—ইযার, কোর্তা এবং চাদর । স্ত্রীলোকের জন্য পাঁচখানা কাপড় দেয়া সুন্নত; যথ— কোর্তা, ইযার, ছেরবন্দ, চাদর এবং সীনাবন্দ । ইযার মাথা হতে পা পর্যন্ত, চাদর তা হতে হাতখানেক বড় এবং কোর্তা গলা হতে পা পর্যন্ত হবে অবশ্য কোর্তার কল্লি বা আস্তিন হবে না ।

শুধু মাঝখান দিয়ে কিছু ফেঁড়ে মাথা ঢুকিয়ে দিতে হবে। ছেরবন্দ ১২ গিরা চওড়া এবং) তিন হাত লম্বা এবং সীনাবন্দ চওড়ায় বগলের নিচ হতে রান পর্যন্ত হবে, লম্বায় এতটুকু হতে হবে যে বাঁধা যায়।

মহিলাদের কাফন যদি পাঁচখানা না দিয়ে ইযার, চাদর এবং ছেরবন্দ মাত্র এই তিনখানা কাপড় দেয়, তবে তাও দুরুস্ত আছে, এটাই যথেষ্ট। তিন কাপড়ের চেয়ে কম দেয়া মাকরুহ্ । আর একেবারে অক্ষম হলে তিন কাপড়ের চেয়েও কম দেয়া জায়েয আছে।

সীনাবন্দ যদি ছাতি হতে নাভি পর্যন্ত দেয়, তবে তাও জায়েয আছে, কিন্তু রান (হাটুর উপর) পর্যন্ত দেয়া উত্তম ।

(১) কাফন পরাবার পূর্বে তাতে তিনবার কিংবা পাঁচবার লোবান বা আগর বাতির ধুনি দেয়া উচিত ।

(২) খাটের উপর সর্ব প্রথমে (নিচে) চাদর, তার উপর ইযার, তার | উপর কোর্তার নিচের পাট বিছাবে, উপরের পাট গুছিয়ে মাথার কাছে রেখে দিবে।

(৩) | তারপর মোর্দাকে গোসলের পানি মুছিয়ে একখানা কাপড় দ্বারা ঢেকে আস্তে এনে কাফনের উপর চিৎ করে শোয়াবে এবং তাকে কোর্তা পরিয়ে দিবে।

(৪) তারপর যদিপুরুষ হয়, তবে শুধু ইযার এবং চাদর পেছিয়ে দিবে। আর যদি মেয়েলোক হয়, তবে তার চুলগুলো দুই ভাগ করে ডানে বামে কোর্তার উপর দিয়ে বুকের উপর রেখে দিবে এবং ছেরবন্দ দ্বারা মাথা ঢেকে ঐ দুই ভাগ চুলের উপর দুই দিকে ছেরবন্দের কাপড়খারা রেখে দিবে । এই কাপড়ে গিরাও দিবে না পেঁচাবেও না।

(৫) তারপর ইযারের বাম পার্শ্ব মৃতের বাম পার্শ্বে আগে উঠাবে এবং ডান পার্শ্ব পরে উঠিয়ে তার উপর রাখবে।

(৬) তারপর সীনাবন্দ দ্বারা সীনা পেঁচিয়ে দিবে ।

(৭) তারপর চাদর পেঁচিয়ে দিবে- বাম পার্শ্ব নিচে এবং ডান পার্শ্ব উপরে থাকবে।

(৮) তারপর একটা সুতা দ্বারা কাফনের পায়ের দিক, একটা সুতা দ্বারা মাথার দিক বেঁধে দিবে এবং কোনো কিছুর দ্বারা কোমরের দিকে এক বাঁধ দিয়ে দিলে ভাল হয়- যাতে কবরস্থানে নিয়ে যাবার সময় খুলে না যায় ।

(৯) কবরে রেখে এসব বাঁধ খুলে দিবে

আরো পড়ুন:- লাশ গোসল দেওয়ার নিয়ম

শিশু ও ছোট বাচ্চার কাফন

অকালে গর্ভপাত হলে যদি সন্তানের হাত, পা, নাক, কান, ইত্যাদি কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই প্রকাশ না পায়, তবে গোসল ও নিয়মিত কাফন দিবে না। শুধু একখানা কাপড়ে পেচিয়ে একটি গর্ত খুঁড়ে মাটির নিচে পুতে রাখবে।

আর যদি হাত, পা, নাক ইত্যাদি কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায়, তবে তাকে মোর্দা বাচ্চা মানে করতে হবে এবং নাম রাখতে হবে আর গোসল দিতে হবে; কিন্তু জানাযার নামাজ পড়তে বা নিয়মিত কাফন দিতে হবে না, শুধু একখানা কাপড়ে লেপ্টাইয়া দাফন করে রাখতে হবে ।

যে সময় সন্তানের মাথা বের হয়েছে সে সময় জীবিত থাকার আলামত পাওয়া গেলেও যদি তৎক্ষণাৎ মরে যায়, তবে ঐ বাচ্চাকে মোর্দাই পয়দা হয়েছে মানে করতে হবে। অবশ্য যদি বুক পর্যন্ত বের হয়ে থাকে বা উল্টা বের হলে নাভি পর্যন্ত বের হয়ে থাকে, তবে তাকে জীবিত জন্ম হয়েছে মনে করবে ।

মেয়ে যদি ছোট হয় কিন্তু বালেগা হওয়ার কাছাকাছি হয়, তবে তাকে বয়স্কা মহিলার নিয়মে (পাঁচ কাপড়ে) কাফন দেয়া সুন্নত, তিন কাপড়ে দিলেও চলবে। বয়স্কা এবং কুমারী ও ছোট মেয়েদের জন্য এই হুকুম । কিন্তু বয়স্কাদের জন্য এটা তাকিদী হুকুম, যদি কিছু ছোট হয়, তবে তাকেও ঐ নিয়মে কাফন দেয়া উত্তম ।

মেয়ে যদি অত্যন্ত ছোট হয় যে, এখনও বালেগা হতে অনেক দেরি, তার জন্যও কাফন দেয়, তাও জায়েয আছে । আওরাতের নিয়মে পাঁচ কাপড়ে কাফন দিবে। যদি শুধু ইযার ও চাদর এই দুই কাপড়ে

ছোট ছেলেকে মেয়েলোকেরা উপরিউক্ত নিয়মে গোসল দিতে এবং কাফন পরাতে একটি কোর্তা পারে। অবশ্য কাপড় পুরুষের নিয়মে দিতে হবে অর্থাৎ একখানা চাদর, এক ইযার ও

পুরুষের কাফনে যদি শুধু ইযার ও চাদর এই দুইখানা কাপড় দেয়, তাও দুরুস্ত আছে, দুইখানার চেয়ে কম দেয়া মাকরুহ্ অক্ষম হলে দুই খানার চেয়ে কমও মাকরুহ্ নয়।

কাফন সম্পর্কে কতিপয় জরুরি মাসায়েল

সীনাবন্দ যদি চেরবন্দের পর ইযার পেঁচাইবার আগে বেঁধে দেয় তাও জায়েয আছে। (কোর্তর উপর) বা সব কাফনের উপর দেয়া জায়েয। (মোর্দা মেয়েলোক হলে) মেয়ে মহলে এই পর্যন্তই কাজ হবে। তারপর পুরুষদেরকে ডেকে তাদের হাওয়ালা করে দিবে। তারা জানাযা পড়ে দাফন করবে।

যদি মেয়েলোকেরাই জাসাযার নামাজ পড়ে দেয়, তবুও জায়েয হবে। (পুরুষের অভাবে মেয়েলোকেই জানাযার নামাজ পড়বে এবং দাফনও করবে)।

মৃতের কাফনের মধ্যে বা কবরের মধ্যে আহাদনামা, পীরের শাজরা অথবা অন্য কোন দুয়া কালাম লিখে রাখা বা কাঞ্চনের উপর অথবা সীনার উপর কালি বা কর্পূর দ্বারা কোনো দুয়া বা কলেমা-কালাম লিখে দেয়া জায়েয নেই। অবশ্য (খালি আঙ্গুলে কলেমা বা আল্লাহর নাম লিখে দেয়া বা) কা’বা শরীফের গেলাফ বা পীরের রুমাল ইত্যাদি অবশ্য বরকতের জন্য সঙ্গে দেয়া জায়েয আছে।

ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই যে শিশুর মৃত্যু হয়েছে তার নাম রাখবে, উপরিউক্ত নিয়মে গোসল, কাফন এবং জানাযার নামাজ পড়ে দাফন করবে।

যে শিশু মৃত অবস্থায় প্রসব হয়েছে, প্রসবকালে জীবিত হওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি তাকেও গোসল দিতে হবে এবং তার নাম ও রাখতে হবে। কিন্তু নিয়ম মত কাঞ্চন দেয়া ও জানাযা পড়ার আবশ্যক নেই। একখানা কাপড় লেপটে কবরে মাটি দিয়ে রাখলেই চলবে

জানাযার উপর যে চাদর ঢাকবার জন্য দেয়া হয়, তা কাফনের মধ্যে শামিল নয় । যে শহরে মৃত্যু হয়, সেখানেই কাফন-দাফন করা ভাল, অন্যত্র নিয়ে যাওয়া ভাল নয়। (অবশ্য প্রয়োজন হলে দুই এক মাইল দূরে নেওয়া দোষ নেই)।

কোথাও কোনো মৃত লোকের কোন অঙ্গ যথা- মাথা, হাত বা পা, অথবা মাথা ছাড়া শরীরের অর্ধেক পাওয়া যায়, তবে তা শুধু একখানা কাপড়ে লেপটে দিলেই চলবে। আর যদি মাথাসহ অর্ধেক অথবা মাথা ছাড়া বেশি অর্ধেক পাওয়া যায়, তবে নিয়ম মত কায়ন দিতে হবে।

যদি কোথাও কবর খুঁড়ে মোদার লাশ না পচে থাকে আর তার শরীরে কাফন না থাকে তবে তাকে সুন্নত নিয়ম মত কাফন পরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু যদি শরীর পচে গিয়ে থাকে, তবে নিয়ম মত কাফন পরিয়ে দেয়ার দরকার নেই কিন্তু একখানা কাপড়ে পেটে মাটি দিয়ে দিলেই চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *