নফল নামাজের নিয়ত | নফল নামাজ
Share this
বার চাদেঁর নাফল নামাজের বিবরণ।
মহরম মাসের নফল নামাজের বিবরণ
হযরত মাওলানা শাহ সুফী বাহাউদ্দীন নকশাবন্দী রা. বলেছেন, মহরম মাসের চাঁদ দেখার রাতে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করা যায়। এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর এগারো বার সূরা ইখলাছ পড়তে হয়।
মহরমের ১লা তারিখের নফল নামাজ
বর্ণিত আছে, মহরমের ১লা তারিখ দিনের যে কোন সময় দু রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাছ তিন বার পড়তে হয়।
যে ব্যক্তি এ নামাজ পড়বে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা দুজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিবেন তারা নামাযী ব্যক্তির কাজে কর্মে সাহায্য করবে এবং শয়তান যাতে তাকে ধোকা দিতে না পারে সেজন্য তারা সাহায্য করবে।
আশুরার রাতের নফল নামাজ
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, যে লোক মহররম মাসের প্রথম রাতে দু রাকাত করে মোট আট রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১০ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার মাল আসবাব ও সন্তান-সন্তুতিদেরকে সারা বছর হেফাজত করবেন এবং নিজের সন্তুষ্টির দিকে ধাবিত করবেন।
আর নামাযী ব্যক্তির পূর্বের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।আর এক বর্ণনায় আছে যে, মহররম মাসের প্রথম রাতে যদি কোন ব্যক্তি আট রাকাত নামাজ এরূপে আদায় করে যে, তার প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে দশ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে এবং দু দু রাকাতরে নিয়্যতে নামাজ পড়বে।
যদি নামাযী ব্যক্তি ও তার পরিবার পরিজন শিরক বিদআতে শরীক না হয়ে থাকে, তবে তাকে ও তার পরিবার বর্গের জন্যে রোজ কেয়ামতে হযরত মুহাম্মদ স. অবশ্যই শাফায়ত করবেন।
সফর মাসের নফল নামাজের বিবরণ
সফর মাসের ১লা তারিখে মাগরিবের পরে এশার নামাজের পূর্বে দু রাকাত নিয়তে মোট চার রাকাত নামাজ কেউ আদায় করলে, যার প্রতি রাকাতে সূরা ফতিহার পর এগারো বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করবে। এতে অনেক সওয়াব অর্জন করা যায়।
বর্ণিত আছে, সফর মাসের প্রথম সপ্তাহ অত্যাধিক ফযীলতপূর্ণ ও বরকতময়। কেউ যদি প্রথম সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিনগত জুমার রাতে এশার নামাযের পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রার্থনা কবুল করবেন।
আরো পড়ুন: সপ্তাহের বিভিন্ন দিনের নফল নামাজ
রবিউল আউয়াল মাসের নফল নামাজের বিবরণ
বর্ণিত আছে, এ মাসের ১২ তারিখে বুজুর্গ তাবেযী গণ রাসূলে করীম, স. এর রূহের ওপর ছওয়াব পৌছানোর জন্য বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়তেন।
এ নামাজ দু দু রাকাতের নিয়তে আদায় করতেন এবং প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে এগারো বার সূরা ইখলাছ পড়তেন। নামাজ শেষে আল্লাহর হাবীবের প্রতি সওয়াব রেছানী করতেন।
তারা এর বরকতে স্বপ্নের মাধ্যেমে হযরত রাসূলুল্লাহ স. কে দর্শন লাভ করতেন এবং যোজাহানের ভালই ও বরকত লাভ করতেন।
রবীউস সানী মাসের নফল নামাজের বিবরণ
জাওয়াহেরে গায়েবী কেতাবে বর্ণিত আছে, রবিউস সানী মাসের প্রথম তারিখ রাতে চার রাকাত নফল নামায আদায় করতে হয়। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাছ পড়তে হয়।
এ নামাজ আদায়কারীর আমলনামায় ৯০ হাজার ছওয়াব লেখা হবে এবং ৯০ হাজার বছরের গুণাহ মাপ করে দেয়া হয়।
আর এক বর্ণনায় আছে যে, এ মাসের শেষ রাতে দু রাকাত নিয়তে চার রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে তিনবার করে সূরা ইখলাছ পড়তে হয়। আল্লাহ তায়ালা ঐ নামাযীর কবররের আজাব মাফ করে দিবেন।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, কোন ব্যক্তি যদি এ মাসের প্রথম সপ্তাতে যে কোন দিন দু রাকাত নিয়তে মোট চার রাকাত নামাজ আদায় করে এবং প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে এগারো বার সূরা ইখলাছ পাঠ করে তার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা নামাযী ব্যক্তির শত্রু থাকলে দমন করে দিবেন।
জামাদিউল আউয়াল মাসের নফল নামাজের বিবরণ
বর্ণিত আছে, কোন ব্যক্তি যদি এ মাসের প্রথম তারিখে দিনের বেলা দু রাকাত নিয়তে মোট আট রাকাত নমাজ আদায় করে এবং তার প্রত্যেক রাকাতে এগারো বার সূরা ইখলাছ পাঠ করে, তবে আল্লাহ তায়ালা উক্ত নামাযীর অসংখ্য ছওয়াব দান করবেন এবং তার দিলের নেক নিয়্যত পূর্ণ করে দিবেন।
আরও বর্ণিত আছে, রাসূলে করীম স. এর সাহাবীরা এ মাসের প্রথম তারিখে দু রাকাতের নিয়্যিতে মোট ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতেন এবং এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে একবার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করতেন। নামাজের পরে দুরূদ শরীফ ১০০ বার পাঠ করতেন।
জামাদিউচ্ছানী মাসের নফল নামাজের বিবরণ
জামাদিউস সানী মাসের নফল ইবাদত সম্পর্কে কয়েকটি নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হল। বর্ণিত আছে, জামাদিউস সানী মাসের প্রথম তারিখে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এবং অন্যান্য সাহাবীগণ দু রাকাত নিয়্যতে মোট ১২ রাকাত নামাজ আদায় করতেন।
এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা ইখলাছ পড়তেন। আবার কেউ কেউ সূরা ইখলাছের পরে ৩ বার আয়াতুল কুরসী পড়তেন। এ নামাযে অসংখ্য নেকী লাভ করা যায়।
রজব মাসের নফল নামাজের বিবরণ
হযরত ওয়ায়েছ ক্বরনী রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রজব মাসের দ্বিতীয় , চতুর্থ, পঞ্চম এবং ১৪, ১৫ এবং ১৭ তারিখে এবং ২৩, ২৪, ও ২৫ তারিখে রোযা রাখবে।
এবং উক্ত দিনসমূহে রোযাববস্থায় চাশতের ওয়াক্তে গোসল করে কারো সাথে কথাবার্তা না বলে চার রাকাতের নিয়াতে মোট ১২ রাকাত নামাজ আদায় করবে। এ নামাযের প্রথম চার রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ক্বদর তিনবার করে পাঠ করবে।
শাবান মাসের নফল নামাজের বিবরণ
বছরের বার মাসের মধ্যে অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাসের মর্যাদা ও ফযীলত অত্যাধিক বেশ। এ মাসের মধ্যে শবে বরাত নামে একটি রাত আছে, যার ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
এ রাতে জাগ্রত থেকে নপল ইবাদত বন্দেগী করলে অসংখ্য সওয়াব লাভ হয়। এা ইবাদত সম্পর্কে কয়েকটি নিয়ম নিম্নে উল্লেখ করা হল।
ফাজায়েলে জুহুর নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, এ মাসের পহেলা রজনীতে দ রাকাত নিয়্যতে মোট ১২ রাকাত নামাজ আদায় করবে। এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১৫ বার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। এ নামাযীর আমলনামায় অশেষ পূণ্য লিপিবদ্ধ করা হবে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, শাবান মাসের যে কোন জুমার দিনে দু রাকাতের নিয়্যতে মোট চার রাকাত নামাজ আদায় করবে। এ নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৩০ বার সূরা ইখলাছ পড়বে।
নামাজের পরে ১০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। এ নামাযী ব্যক্তি একটি হজ্ব ও একটি ওমরার তুল্য সওয়াব লাভ করবে। হাদীসে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি শাবান মাসে খুলুছিয়াতের সাতে ৩০০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে, তবে তার শাফায়াতের দায়িত্ব আমার উপর বর্তাবে।
শাওয়াল মাসের নফল নামাজের বিবরণ
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, যে ব্যক্তি এ মাসের যে কোন জুমার দিনে দু দু রাকাত নিয়্যতে চার রাকাত নামায আদায় করবে, যার প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে ১০ বার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে একটি হজ্জ ও একটি ওমরার সওয়াব দান করবেন।
আর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, যে ব্যক্তি যিলক্বদ মাসের প্রত্যেক রজনীতে দু রাকাত করে নামাজ আদায় করবে এবং প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাছ তিনবার পাঠ করবে।
আল্লাহ তায়ালা সে ব্যক্তির আমলনামায় একজন হাজী ও একজন শহীদের পুণ্যের তুল্য সওয়াব দান করবেন এবং রোজ কেয়া মতে সে ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান লাভ করবে।
যিলহজ্জ মাসের নফল নামায
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের প্রথম দিন হতে দশম দিন পর্যন্ত প্রত্যহ বিতের নামাজের পরে দু রাকাত করে প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে তিন বার করে সূরা কাওছার ও সূরা ইখলাছ পড়ে নফল নামাজ আদায় করবে,
আল্লাহ তায়ালা তাকে ইল্লিন নামক শান্তিময় বেহেশত দানক করবেন। এবং তার আমলনামায় মস্তকের চুলের সংখ্যার সহস্র গুণ বেশি সওয়াব ও সমপরিমাণ দান খয়রাতের সওয়াব লিখে দেবেন।
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের জুমার দিবসে দু দু রাকাতে নিয়তে মোট ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং
তার প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাস ১৫ বার পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা আখিরাতে তার মর্জদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত এবং নিয়ম