বিবাহ ইসলামের বিধান
Share this
বিবাহ বা দাম্পত্য বন্ধন
পরুষ এবং স্ত্রী পরস্পর দাম্পত্য বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে বিবাহ বলে । স্থায়ী অকৃত্রিম ভালবাসা জন্মানো, সন্তান-সন্ততি জন্মদান ও বৈধ জৈবিক চাহিদা মিটানো- এ তিনটি হল বিবাহের প্রধান উদ্দেশ্য ।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন- “আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বজাতীয় নারীর সৃষ্টি এ জন্য করেছেন যে, তোমরা তাদের সাথে একত্রে বাস করে শান্তি ভোগ করবে।”
আল্লাহ তাআলা আরও বলেছে-
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَانْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
উচ্চারণ : হুন্না লিবাসুল লাকুম ওয়া আনতুম লিবাসুল লাহুন্না ।
অর্থ : নারী জাতি তোমাদের পোশাক এবং তোমরাও তাদের পোশাক ।
অর্থাৎ, পুরুষ ব্যতীত স্ত্রী এবং স্ত্রী ব্যতীত পুরুষ একাঙ্গহীন উভয়ের জীবন দুঃখময় । স্ত্রী ব্যতীত জীবন কখনও সুখ-শান্তিময় হতে পারে না এবং মানব জীবনের উদ্দ্যেশ সফল হয় না ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
كَاحُ مِنْ سُنَّتِى فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنّتِـ فَلَيْسَ مِنِّى .
উচ্চারণ : আননেকাহু মিন সুন্নাতী, ফামান রাগেবা আন সুন্নাতী ফালাইসা মিন্নী ।
যাদেরকে বিবাহ করা হারাম
চৌদ্দ জন মেয়েলোককে বিবাহ করা হারাম :
(১) মাতা, মাতার মাতা, দাদী যত উপরের দিকে যাক না কেন ।
(২) বিমাতা ।
(৩) আপন মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের-মেয়ে যত নীচে যাবে।
(৪) সহোদর ভগ্নী, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে । যত নিম্নে যাক ।
(৫) পিতার উক্ত তিন প্রকার ভগ্নী ।
(৬) মাতার উক্ত তিন প্রকার ভগ্নী ।
(৭) উক্ত তিন প্রকার ভাইয়ের মেয়ে। তাদের মেয়ে যত নীচে যাক ।
(৮) উক্ত তিন প্রকার বোনের মেয়ে ।
(৯) দুধমা (দুই বৎসর বয়সের মধ্যে যার দুধ পান করেছে) ।
(১০) শাশুড়ী, দাদী ও নানী শাশুড়ীগণ এবং দুধ দাদী ও নানীগণ ।
(১১) স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর পক্ষের মেয়ে ও মেয়ের মেয়ে-যত নিচে যাবে । (১২) আপন ঐরসজাত পুত্রের বৌ ও তৎপুত্রের বৌ-যত নিচে যাবে।
(১৩) সহোদরা দুই বোনকে একসঙ্গে বিবাহ করা ।
(১৪) যে মেয়ে কারো স্ত্রীর দুধ পান করেছে, এ মেয়ে এবং এ মেয়ের মেয়ে-যত নীচে যাক বিবাহ করা হারাম বা নিষিদ্ধ
বিবাহের রোকন ও শর্ত
রোকন : বিবাহের রোকন দু’টি। যথা- (১) ইজাব (যা প্রথম পক্ষ হতে উত্থাপিত হয়ে থাকে। (২) কবুল (যা দ্বিতীয় পক্ষ হতে উত্তর দেয়া হয়ে থাকে)।
শর্ত : বিবাহের শর্ত দশটি । যথা-
(১) বুদ্ধিমান বুদ্ধিমতী হওয়া ।
(২) একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রী হওয়া।
(৩) স্ত্রী-পুরুষ কিংবা তাদের অলী ইজাব-কবুল শুনতে পাওয়া ।
(৪) দুই জন পুরুষ সাক্ষী থাকা
(৫) পাত্রী বিবাহে রাজি হওয়া ।
(৬) ইজাব-কবুল একই মনজিলে হওয়া ।
(৭) ইজাব-কবুলে মোহর বেশ-কম না হওয়া ।
(৮) সাক্ষীগণও ইজাব-কবুল শুনতে পাওয়া ।
(৯) পুরুষ স্ত্রীর সমস্ত শরীরের প্রতি লক্ষ্য রেখে কবুল করা ।
(১০) বিবাহকারী কে সাক্ষীগণ তা অবগত হওয়া। এ দশটি শর্ত পাওয়া গেলেই কেবল বিবাহ সিদ্ধ হবে-নচেৎ নয় ।
মোহরানা
স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া ফরয। কোরআন পাকে আছে, হে রাসূল! আমি তোমার স্ত্রীগণকে তোমার জন্য হালাল করেছি, যাকে তুমি মোহরানা দিয়েছ। অন্য আয়াতে আছে, তাদেরকে বিবাহ করাতে তোমাদের দোষ নেই যদি তাদের মোহরানা দিয়ে থাক।
তোমাদের স্ত্রীগণকে তাদের মোহরানা সদকাস্বরূপ দাও। তবে তারা যদি তার কিছু অংশ স্বেচ্ছায় মাফ করে দেয়, তা সন্তুষ্ট চিত্তে উপভোগ কর। স্বেচ্ছাচারী স্বামীদের অত্যাচার হতে মেয়েদেরকে বাঁচবার পন্থারূপে মোহরানাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
(১) মোহরে মোআজ্জাল এবং
(২) মোহর গায়রে মোআজ্জাল । প্রথমটি তলব এবং দ্বিতীয়টি মৃত্যুর পূর্বে বা তালাকের পরে দিতে হয় । সহবাস হলে পূর্ণ মোহরানা এবং সহবাস না হলে অর্ধেক মোহরানা দিতে হয়। যেখানে মোহরানা ধার্য হয় নাই তথায় মেয়ের পিতৃকুলের যেকোন স্ত্রীলোকের মোহরানা অনুসারে মোহরানা ধার্য করতে হবে। তাকে মোহরে মেচাল বলা হয় ।