ইসলাম

লাশ গোসল দেওয়ার নিয়ম

Share this

লাশের গোসল

মৃত্যু হওয়া মাত্র সকলকে সংবাদ দিয়ে কবর ও কাফনের বন্দোবস্তের জন্য লোক পাঠাবে এবং গোসল দেয়ার বন্দোবস্ত করবে । একখানা চওড়া তক্তা অথবা তক্তপোষের চতুর্দিকে ৩, ৫ বা ৭ বার লোবান অথবা আগর বাতি জ্বালিয়ে মোর্দাকে তার উপর শোয়াবে এবং তার পরিধানের সব কাপড় খুলে ফেলে শুধু নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত একখানা কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখবে ।

যদি মৃতকে গোসল দেয়ার জন্য কোনো পৃথক স্থান থাকে, যাতে পানি অন্য দিকে বেয়ে যেতে পারে, তবে ভাল কথা, নচেৎ কাঠ বা চৌকির নিচে গর্ত খুঁড়বে যেন, পানি সেখানে জমা হয় । যদি গর্ত না খোঁড়ে এবং সমস্ত পানি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে তবুও কোনো গোসল দেয়ার নিয়ম : গুনাহ্ হবে না । উদ্দেশ্য শুধু যাতায়াতে যেন কারো কষ্ট না হয় এবং যেন পড়ে না যায় । মৃতকে গোসল দেয়ার নিয়ম এই যে,

(১) প্রথমে তাকে ইস্তিঞ্জা করিয়ে দিবে। কিন্তু খবরদার! তার কাপড়ের নিচের জায়গা স্পর্শ বা দর্শন করবে না। হাতে কিছু নেকড়া পেঁচিয়ে নিয়ে কাপড়ের নিচে হাত প্রবেশ করিয়ে, প্রথমে ঢিলা দ্বারা তারপর পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করাবে।

(২) তারপর ওযুর জায়গাসমূহ ওযুর তরতিব অনুসারে ধোয়াবে, কিন্তু কুলি করাবার, নাকে পানি দিবার এবং কব্জা পর্যন্ত হাত ধোয়াবার প্রয়োজন নেই। প্রথমে মুখ ধোয়াবে, তারপর প্রথমে ডান হাত, তারপর বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়াবে তারপর মাথা মছেহ করাইবে। তারপর প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা তিন তিন বার ধোয়াবে।

(৩) যদি কিছু তুলা বা নেড়া ভিজিয়ে তিনবার দাঁতের উপর দিয়ে এবং নাকের ভিতর দিয়ে হাত ফিরিয়ে দেয়া হয়, তবে তাও জায়েয। কিন্তু যদি গোসলের হাজতের অবস্থায় অথবা হায়েয- নেফাসের অবস্থায় কারো মুত্য হয়ে থাকে, তবে এরূপে মুখে এবং নাকে পানি পৌঁছান জরুরি ।

(৪) গোসল দেয়ার পূর্বে মাইয়্যেতের নাকে এবং কানে কিছু তুলা ভরে দিবে যাতে পানি ঢুকতে না পারে।

(৫) ওযু করাবার পর মাইয়্যেতের মাথা সাবান, খইল অথবা অন্য কোনো জিনিস দ্বারা ধুয়ে পরিষ্কার করে দিবে।

(৬) তারপর বাম কাতে শুইয়ে তার ডান পার্শ্বের শরীরের উপর মাথা হতে পা পর্যন্ত বরই (কুল) পাতা সহ গরম পানি (দ্বারা তিন বা পাঁচবার) ঢেলে পরিষ্কার করে ধ্রুবে।

(৭) তারপর আবার ডান কাতে শুইয়ে বাম পার্শ্বেও এরূপ পানি দ্বারা তিন কি পাঁচবার ধোয়াবে।

(৮) এরূপে গোসল হয়ে গেলে গোসলদাতা তার নিজের শরীরের সঙ্গে ঠেক লাগিয়ে মৃতকে কিঞ্চিৎ বসাবে এর্ব আস্তে আস্তে তার পেটের উপর মালিশ করবে।

এতে পেট হতে যদি কিছু ময়লা বের হয়, তবে কুলুখ করিয়ে শুধু ময়লাটা ধুয়ে দিবে। এই ময়লা বের হওয়াতে মাইয়্যেতের ওযু ও গোসল ভাঙ্গবে না। কাজেই ওযু বা গোসল দোরাতে হবে না শুধু ময়লাটা ধুয়ে দিবে

(৯) তারপর আবার মাইয়্যেতকে বামকাতে শুইয়ে কপূরের পানি তার সর্বশরীরে মাথা হতে পা পর্যন্ত তিনবার ঢালবে।

(১০) তারপর শুকনা কাপড় দ্বারা সমস্ত শরীর ভাল মতো মুছে দিয়ে তারপর কাফন পরাবে।

বরই-এর পাতার অনুপস্তিতিতে শুধু পানি কিছু গরম করে তা দ্বারা ৩ বার ধুবে । খুব বেশি গরম পানি দ্বারা গোসল দিবে না।

উপরের গোসলের যে নিয়ম বলা হয়েছে তাই সুন্নত তরিকা। যদি তিনবার না ধুয়ে একবার মাত্র সর্ব শরীর পানি দ্বারা ধুয়ে দেয়, তাতেও ফরজ আদায় হয়ে যাবে ।

গোসল কারা দিতে পারে

পুরুষের গোসল দেয়ার জন্য কোন পুরুষ পাওয়া না গেলে, তার স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন মেয়েলোক মাহরাম হলেও তাকে গোসল দিতে পারবে না। তার স্ত্রী না থাকলে তাকে তাইয়াম্মুম করাতে হবে। কিন্তু শরীর হাত লাগাবে না। তাইয়াম্মুম করাবার সময় হাতে দস্তানা (বা কাপড়) পেঁচিয়ে নিবে।

স্ত্রী স্বামীকে গোসল দিতে এবং কাফন করাতে পারে, এটা জায়েয। কিন্তু মৃত স্ত্রীকে স্বামী স্পর্শ করতে ও হাত লাগাতে পারবে না; কিন্তু দেখা বা কাপড়ের উপর দিয়ে হাত লাগান দুরুস্ত আছে।

যে মেয়েলোক হায়েয বা নেফাসের অবস্থায় আছে তার জন্য মোর্দাকে গোসল দেয়া মাকরুহ এবং নিষেধ যে ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী আত্মীয়, তারই গোসল দেয়া উচিত, কিন্তু যদি এ রকম লোক গোসল না দিতে পারে, তবে যথাসাধ্য কোন দীনদার পরহেযগার লোকেই গোসল দেয়া ভাল ।

মৃতের গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়েল

মৃতকে কাফনের উপর রাখার সময় স্ত্রীলোকের মাথায় এবঙ পুরুষের মাথায় ও দাড়িতে আতর লাগিয়ে দিবে এবং কপালে, নাকে, হাতের তালুতে, ইভয় হাটুতে এবং উভয় পায়ে- অর্থাৎ সেজদার সকল জায়গায় কর্পূর লাগিয়ে দিবে।

কেউ কেউ কাফনে আতর লাগায় বা তুলা লাগিয়ে কানে দেয়, তা করবে না । এটা মূর্খতা; শরীয়তে যতটুকু আছে তার অতিরিক্ত করবে না। মৃতের চুল আঁচড়াবে না, নখ, চুল ইত্যাদি কাটবে না ।

গোসল দেয়ার সময় যদি দূষণীয় কিছু দৃষ্ট হয় বা খোদা না করুন মোর্দার চেহারা কাল বা বিকৃত দেখা যায়, তবে সাবধান! কস্মিনকালেও কারো কাছে বলবে না আলোচনা ও করবে না এটা না-জায়েয।

অবশ্য ঐ মৃত ব্যক্তি যদি প্রকাশ্যে শরীয়ত বিরুদ্ধ কাজ- যথা, নাচ বা গান-বাদ্য কিংবা ব্যাভিচার করত (অথবা সুদ, ঘুষ খেত বা জুলুম করত) তবে অন্য লোকে যাতে এসব গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকে, সে উদ্দেশ্যে তা প্রকাশ করা জায়েয আছে।

পানির অভাবে যদি কোন মৃতকে তাইয়াম্মুম করান হয় এবং পরে পানি পাওয়া যায়, তবে পানি দিয়ে তাকে গোসল দিতে হবে ।

বিচ্ছিন্ন অঙ্গের গোসল দোয়া

কোথাও যদি কোনো মৃত লোকের শুধু মাথা (বা হাত) পাওয়া যায়, তবে সেটাকে গোসল দিতে হবে না, অমনিই দাফন করে রাখবে। আর যদি শরীরের অর্ধেকের বেশি পাওয়া যায়- মাথাসহ হোক বা মাথা ছাড়া হোক কিংবা মাথাসহ অর্ধেক পাওয়া যায়, তবু গোসল দিতে হবে। (জানাজাও পড়তে হবে, নতুবা নয়) আর যদি কম অর্ধেক পাওয়া যায়, মাথাসহ হোক বা মাথা ছাড়া হোক তবে, গোসলের দরকার হবে না।

মুসলমান- অমুসলমান বুঝা না গেলে

কোথায় যদি কোনো মৃত লোক মুসলমান, না অমুসলমান, চিনা না যায়, তবে (মুসলমানের কোনো আলামত পাওয়া গেলে তাকে গোসল দিতে হবে এবং জানাযা পড়তে হবে।

একান্ত যদি কোনোই আলামত না পাওয়া যায়, তবুও) দারুল ইসলামের ঐ লোক পাওয়া গেলে তাকে গোসল দিতে হবে এবং নামাজ পড়তে হবে (দারুল জানাযা পড়তে হবে না । ইসলাম না হলে এবং মুসলমানের কোনো চিহ্নও পাওয়া না গেলে, গোসল দিতে বা

যদি মুসলমান এবং কাফেরদের লাশ একত্রে মিশে যায় এবং মুসলমান অমুসলমান চিনতে পারা যায়, তবে শুধু মুসলমানদের লাশ বেছে তাদের গোসল দিতে হবে। আর চিনা না গেলে সকলকে গোসল দিতে হবে।

পানিতে ডুবে যাওয়া মৃতের গোসল দেয়া

পানিতে ডুবে কোন ব্যক্তি মারা গেলে তাকে পানি হতে উঠাবার পর গোসল দেয়া ফরজ। মৃত্যুর পর পানিতে শরীর ধোয়া হয়েছে বলে গোসল মা’ফ হবে না। কেননা গোসল দেয়া জীবিত লোকের উপর ফরজ; তাদের ফরজ এতে আদায় হয় নি ।

অবশ্য পানি হতে উঠাবার সময় যদি গোসলের নিয়্যাত করে পানিতে নাড়াচাড়া দিয়ে উঠাতে বা অন্য কোনো উপায়ে তার শরীর ধুয়ে যায়, তবুও তাকে গোসল দেয়া জীবিত লোকদের উপর ফরজ হবে ।

কোন মৃতের গোসল প্রয়োজন নেই

মুসলিম রাজ্যের রাজদ্রোহী বা ডাকাত যদি যুদ্ধের সময় মারা যায় তাকে গোসল দিবে না ।

মৃত মোরতাদ (ধর্ম ত্যাগী)-কে গোসল দিবে না এবং যে ধর্মে সে গিয়েছে সে ধর্মাবলম্বীরা তার লাশ চাইলে তাদেরকেও দিবে না

যদি কোনো মুসলমানের কোনো কাফির আত্মীয় মারা যায়, তবে তাকে তার স্বধর্মীদের হাওলা করে দিবে এবং যদি এই মুসলমান ছাড়া তার ধর্মের কেউ তার কাফন-দাফন করবার না থাকে, বা নিতে না চায় তবে এই মুসলমানই অগত্যা তাকে গোসল দিবে। কিন্তু সুন্নত পন্থা অনুযায়ী গোসল দিবে না, অর্থাঃ ওযু করাবে না, মাথাও পরিষ্কার করবে না কাফুর বা খো লাগাবে না, নাপাক বস্তু ধোয়ার ন্যায় ধুবে, কাফিরকে সাতবার ধুলেও সে পাক হবে না। যদি কেউ তাকে নিয়ে নামাজ পড়ে, তবে তার নামাজ দুরুস্ত হবে না ।

আরো পড়ুন:- নফল নামাজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *