প্রশ্ন-উত্তর

তায়াম্মুমের নিয়ম, সুন্নাত এবং তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি

Share this

লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়লে জানতে পারবেন তায়াম্মুমের নিয়ম, তায়াম্মুমের সুন্নাত কয়টি, তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি এবং কখন তায়াম্মুম ভঙ্গ হয় সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এক বর্গমাইলের ভিতরে কোথাও পানি পাওয়া না গেলে। এমন জঙ্গলের ভিতর গিয়ে পৌঁছলে, যেখানে কোথায় পানি পাওয়া যায় তা জানা না থাকলে, এমনকি জিজ্ঞেস করে জানার মত লোকও পাওয়া না গেলে ।

মুসাফিরী অবস্থায় সঙ্গে যে পানি আছে তা অযু-গোসলে খরচ করে ফেললে নিজের ও সাথের বাহন পিপাসায় কষ্ট বা মৃত্যু হওয়ার ভয় থাকলে । পানি যেখানে পাওয়া যায়, সেখানে যাওয়ার রাস্তায় কোন ভয়ের কারণ থাকলে।

পানির কুপ সম্মুখেই আছে, কিন্তু তুলবার কোন উপায় বা জিনিস না পাওয়া গেলে । এমন স্থানে গিয়ে পৌঁছলে, পানি যেখানে পানি খরিদ করে ব্যবহার করতে হয় কিন্তু পানি খরিদ করার অর্থ না থাকলে । রোগ-বিমার, অসুখ-বিসুখ অবস্থায় পানি ব্যবহার করলে অসুখ বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকলে ।

আর তােমরা যদি পানি না পাও তাহলে পাক মাটি দিয়া কাজ (পবিত্রতা ) সম্পন্ন করতে পার। তাতে হাত মেরে নিজেদের মুখমন্ডল ও হাত দুটোর উপর মসেহ কর, আল্লাহ তােমাদেরকে সংকীর্ণতার মধ্যে ফেলতে চান না বরং তিনি চান তােমাদেরকে পাক করে দিতে এবং তাঁর নেয়ামত তােমাদের প্রতি পরিপূর্ণ করে দিতে যাতে তােমরা শােকর আদায়কারী হও। (আল মায়েদা-৬)

তায়াম্মুমের ফরজ তিনটি

  • আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পাক-পবিত্র হওয়ার জন্যে মনে মনে নিয়্যত করা।  
  • মাটির উপর দু’হাত মেরে সমস্ত মুখমন্ডল মসেহ্ করা
  • দু’হাত মাটির উপর মেরে দু’হাতের কনুই পর্যন্ত মসেহ্ করা।

আরো পড়ুন: নামাজ পড়ার নিয়ম

নিম্নে উল্লেখিত কাজগুলাে তায়াম্মুমের সুন্নাত

  • “বিসমিল্লাহ” বলে তায়াম্মুম করা।
  • সুন্নাত নিয়মানুপাতে তায়াম্মুম করা।
  • মাটির উপর হাত মারার সময় হাতের ভেতর দিক মারা।
  • হাত মাটিতে মারার পর মাটি জেড়ে ফেলা।
  • মাটির উপর হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলাে প্রসারিত রাখা যাতে আঙ্গুলের ফাঁকের ভেতরে ধূলা পৌঁছে যায়।
  • অন্তত পক্ষে তিন আঙ্গুল দিয়ে মুখমন্ডল ও হাত মসেহ করা।
  • প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত মসেহ্ করা।
  • মুখমন্ডল মসেহ করার পর দাড়ি খেলাল করা।

আরো পড়ুন: নামাজের প্রতিদান ও ফজিলত

তায়াম্মুমের নিয়ম

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে পাক হওয়ার নিয়্যত করে “বিসৃমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে দু’হাতের তালু একটু প্রসারিত করে পাক মাটির উপর ধীরে মারবে। বেশী ধূলাবালি হাতে লেগে গেলে ঝেড়ে নিয়ে অথবা মুখ দিয়ে ফুকে দিয়ে তা ফেলে দেবে। তারপর দু’হাত সমস্ত মুখমন্ডলের উপর এভাবে মসেহ করবে যাতে মুখমন্ডলের কোন জায়গা বাদ না পড়ে।

এরপর দাঁড়ি খেলাল করবে তারপর দ্বিতীয় বার ঐ ভাবে মাটিতে হাত মেরে এবং হাত ঝেড়ে নিয়ে প্রথমে বাম হাতের চার আঙ্গুলের মাথার নিম্নভাগ দিয়ে ডান হাতের আঙ্গুলের উপর থেকে কনুই পর্যন্ত নিয়ে যাবে।

তারপর বাম হাতের কনুইয়ের উপরের অংশের উপর মসেহ করে বাম হাতের পিঠের উপরি ভাগ দিয়ে ডান হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত নিয়ে আসবে এবং আঙ্গুলগুলাে খেলাল করবে।

এভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মসেহ করবে। হাতে কোন আংটি বা ঘড়ি থাকলে তা সরিয়ে তার নীচেও মসেহ করা প্রয়ােজন।

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ

১। যে সমস্ত কারণে ওযু ভঙ্গ হয়, সেই সমস্ত কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়ে যায়। যথা-শরীরের কোন ক্ষতস্থান হতে রক্ত বা পূজ বেয়ে গড়িয়ে পড়া, নিদ্রা যাওয়া, মুখ ভর্তি করে বমি করা, পায়খানার জায়গা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হওয়া, পাগল বা বেহুশ হওয়া, স্বামী-স্ত্রী সংগমের উত্তেজনাসহ আলিঙ্গণ করা ইত্যাদি ।

২। পানি পাওয়া গেলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেহেতু পানি না পাওয়ায় তায়াম্মুম করা হয়েছে।

৩। যে সমস্ত করণে তায়াম্মুম জায়েয হয় সেসব কারণ দূর হয়ে গেলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। যথা-পানির নিকটে পৌছা রাস্তায় ভয় ছিল বলে তায়াম্মুম করা জায়েয ছিল; এই ভয় যখন কেটে যাবে তখনই তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে ।

৪। পানির অভাবে তায়াম্মুম করার পর যদি কঠিন কোন রোগগ্রস্ত হয়, তবে পানি পাওয়া গেলে প্রাণের ভয় থাকে বা পীড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সে অবস্থায় তায়াম্মুম ভঙ্গ হবে না। তবে নতুনভাবে তায়াম্মুম করে নেয়া ভাল ।

কখন তায়াম্মুম করা যাবে

মাসয়ালা : কোন লোক এমন স্থানে এসে পৌছেছে যে, কোথাও পানি আছে বলে সে মোটেও জানে না এবং কোনো লোকও পায় না যে, যাকে জিজ্ঞাসা করে, তবে এমন অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামায পড়বে।

আর যদি কোনো লোক পায়, আর সে বলে দেয় যে শয়ী এক মাইলের মধ্যে পানি আছে এবং সে সত্য বলেছে, অথবা কোনো লোক তো পাওয়া যায়নি, কিন্তু কোনো লক্ষণে সে নিজেই বুঝতে পারল যে, শয়ী এক মাইলের মধ্যেই কোথাও নিশ্চয়ই পানি আছে, তবে এমতাবস্থায় সে পানি এতদূর তালাশ করতে যাবে, যাতে তার নিজের ও সঙ্গীদের কোনোরূপ কষ্ট না হয় ।

তালাশ না করে তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হবে না। (আর যদি সঙ্গীদের কোনো রকম কষ্ট হয়, তবে তালাশ করা ওয়াজিব নয়)। আর যদি দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, শয়ী এক মাইলের মধ্যেই পানি আছে, তবে সাথিদের কষ্ট হলেও সেখানে গিয়ে পানি আনা ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, ইংরেজি এক মাইল এবং এক মাইলের এক অষ্টমাংশ মিলে শয়ী এক মাইল হয়।

মাসয়ালা : পানির খবর পাওয়া গেল, কিন্তু শয়ী মাইল হতে দূরে, তাহলে সেখান থেকে পানি এনে অযূ করা ওয়াজিব নয়; বরং তায়াম্মুম করা জায়েয ।

মাসয়ালা : কেউ বাসস্থান হতে এক মাইল দূরে আছে । এক মাইলের কমে কোথাও পানি পায় না, তার জন্যও তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হবে, সে মুসাফির হোক বা না হোক । কারণ, সে সামান্য কতদূর যাবার জন্য বাসস্থান হতে বের হয়েছে মাত্র ।

তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি

মাসয়ালা : রাস্তার পাশে কূপ আছে, কিন্তু কূপ হতে পানি তুলার জন্য সঙ্গে কিছু নেই। কোথাও চেয়েও পাওয়া গেল না; এমতাবস্থায় তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে।

মাসয়ালা : পানি আছে, কিন্তু এত অল্প যে একবার হাত, মুখ ও উভয় পা ধোয়া যায়, তবে তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হবে না। এক এক বার ঐ সব অঙ্গ ধুবে এবং মাথা মাসেহ করবে । নাকে পানি, দেয়া কুলি ইত্যাদি অযূর সুন্নতগুলো ছেড়ে দিবে; আর যদি এত পরিমাণও না হয়, তবে অবশ্য তায়াম্মুম করবে।

মাসয়ালা : রোগের কারণে পানি ক্ষতি করলে, অর্থাৎ পানি দিয়ে অযু বা গোসল করলে হয় রোগ বৃদ্ধি পাবে, না হয় আরোগ্য লাভে বিলম্ব হবে, এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হবে। কিন্তু যদি ঠাণ্ডা পানি ক্ষতি করে কিন্তু গরম পানি ক্ষতি না করে, তবে গরম পানি দিয়ে অযূ-গোসল ওয়াজিব । গরম পানিও পাওয়া সম্ভব না হলে তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হবে।

মাসয়ালা : যদি নিশ্চিতভাবে জানা থাকে যে, শয়ী এক মাইলের ভিতর পানি আছে তবে তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে না। সেখান থেকে পানি এনে অযূ করা ওয়াজিব লোক-লজ্জার খাতিরে বা পর্দা করার জন্য পানি আনতে না দিয়ে তায়াম্মুম করে নেয়া দুরস্ত নয়।

শরীয়তের হুকুম ছুটে যায়, এমন পর্দা না-জায়েয এবং হারাম; বরং বোরকা পরে বা চাদর দিয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে পানি এনে অযূ করা ওয়াজিব। কিন্তু লোকজনের সামনে বসে অযূ করবে না, মুখ হাতও খোলা রাখা জায়েয হবে না ।

মাসয়ালা : যে পর্যন্ত পানি দিয়ে অযূ করা না যায় সে পর্যন্ত তায়াম্মুমই করতে থাকবে, যত সময়ই অতীত হোক না কেন, কোনো রকম সংশয় বা সন্দেহ করবে না। অযূ এবং গোসল দ্বারা যেমন পাক হওয়া যায়, তেমনি তায়াম্মুম দ্বারাও পাক হওয়া যায়! এরকম মনে করবে না যে, তায়াম্মুমে ভালমত পাক হয় না ।

মাসয়ালা : যদি পানি বিক্রি হয় এবং ক্রয় করার মূল্য না থাকে, তবে তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে। যদি ক্রয় ক্ষমতা থাকে, আর পথের আবশ্যক খরচেরও অভাব না পড়ে, তবে পানি কিনে অযূ করা ওয়াজিব হবে, তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে না।

অবশ্য যদি এত বেশি মূল্য চায় যে, এত মূল্যে কেউই খরিদ করে না, তবে তায়াম্মুম করা জায়েয আছে, পানি খরিদ করা ওয়াজিব নয় । যদি কেরায়া ইত্যাদি কারণে পথ-খরচের অতিরিক্ত অর্থ না থাকে তবুও পানি কেনা ওয়াজিব নয়, তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে ।

মাসয়ালা : শীতের দরুন যদি বরফ জমে এবং গোসল করলে প্রাণ নাশ বা রোগ বৃদ্ধির পূর্ণ আশংকা থাকে, শরীর গরম করার জন্য লেপ তোষক ইত্যাদি কোনো প্রকার গরম বস্ত্র না থাকে, তবে এ ধরনের কঠিন ওজরের সময় তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হবে।

মাসয়ালা : যদি কারোর অর্ধেকের চেয়ে বেশি শরীরে যখম থাকে অথবা বসন্ত বের হয়, তবে তার জন্যও গোসল ওয়াজিব নয়, তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে ।

মাসয়ালা : কেউ ময়দানে তায়াম্মুম করে নামায পড়েছে অথচ পানি কাছেই ছিল, কিন্তু সে আদৌ জানতে পারেনি পরে জানতে পেরেছে, তবে তার তায়াম্মুম এবং নামায উভয় দুরুস্ত হয়েছে, এখন আর নামায দোরাতে হবে না ।

মাসয়ালা : সফরে যদি অন্য কারোর কাছে পানি থাকে, তবে চিন্তা করে দেখবে, যদি বিশ্বাস হয় যে, চাইলে দিতে পারি, তবে না চেয়ে তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে না । আর যদি চাইলে দিবে না বলে মনে হয়, তবে না চেয়েও তায়াম্মুম করে নামায পড়া দুরুস্ত হবে; কিন্তু এই অবস্থায় নামাযের পর চাইলে যদি পানি দেয়, তবে নামায দোহ্রাতে হবে।

মাসয়ালা : কৌটায় বন্ধ যমযমের পানি সঙ্গে থাকলে তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে না, কৌটা বা টিন খুলে ঐ পানি দ্বারা অযূ এবং গোসল করা ওয়াজিব ।

মাসয়ালা : সঙ্গে পানি আছে, কিন্তু রাস্তা এমন ধরনের যে, সামনে কোথাও পানির আশা নেই, পানির অভাবে (নিজের বা সঙ্গীয় বাহনের) প্রাণ নাশের বা কষ্ট পাওয়ার আশংকা আছে, এমন অবস্থায় অযূ করবে না, তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে ।

মাসয়ালা : গোসলে ক্ষতি করে কিন্তু অযূতে ক্ষতি করে না, তবে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। কিন্তু গোসলের তায়াম্মুমের পরে যখন অযূ ভাঙ্গবে, তখন পরিবর্তে তায়াম্মুম জায়েয হবে না, অযূই করতে হবে।

যদি গোসলের তায়াম্মুমের আগে অযূ ভাঙ্গারও কোনো কারণ হয়ে থাকে, তারপর গোসলের তায়াম্মুম করে থাকে, তবে এই তায়াম্মুমই গোসল এবং অযূর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে।

কোন কোন বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েজ

মাসয়ালা : মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা উত্তম। মাটি ছাড়া মাটি জাতীয় অন্যান্য জিনিসের ওপরও তায়াম্মুম করা দুরুস্ত আছে; যেমন, বালি, পাথর, বিলাতি মাটি, পাথরে চুন, হরিতাল, সুরমা, গেরুমাটি ইত্যাদি। মাটি জাতীয় জিনিস না হলে এর ওপর তায়াম্মুম জায়েয নয়; যেমন- সোনা-রূপা, রং, গেহু, কাঠ, কাপড় এবং অন্যান্য শস্য। কিন্তু যদি এই সব জিনিসের ওপর মাটি জমে থাকে, তবে মাটির কারণে এগুলোর ওপর তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে ।

মাসয়ালা : যে জিনিস আগুনে দিলে জ্বলেও না, গলেও না, তা মাটি জাতীয় জিনিস। তার ওপর তায়াম্মুম দুরুস্ত আছে। যে জিনিস জ্বলে ছাই হয়ে যায় বা গলে যায়, তার ওপর তায়াম্মুম দুরুস্ত নয় । এক কথায় ছাইয়ের ওপর তায়াম্মুম দুরস্ত নয় ।

মাসয়ালা : তামার পাত্র, বালিশ বা গদি ইত্যাদির ওপর তায়াম্মুম দুরুস্ত নয়। যদি এ সব জিনিসের ওপর এত ধুলা জমে থাকে যে, হাত মারলে বেশ ধুলা উড়ে এবং হাতে কিছু ধুলা ভালভাবে লেগে যায়, তবে অবশ্য তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে । আর যদি হাত মারলে সামান্য কিছু ধুলা উড়ে, তবে তার ওপর তায়াম্মুম দুরস্ত হবেনা। পানিপূর্ণ থাকুক বা বালি থাকুক, মাটির কলস বা লোটা বদনার ওপর তায়াম্মুম দুরস্ত আছে, কিন্তু মাটির পাত্রের ওপর যদি রং বা বার্নিশ করা হয়ে থাকে, তবে তার উপর দিয়ে তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে না।

মাসয়ালা : পাথরের ওপর যদি ধুলা মাত্রও না থাকে, তবুও এর ওপর তায়াম্মুম দুরুস্ত আছে; বরং যদি পানি দিয়ে ভাল করে ধুলে এর ওপর তায়াম্মুম করে, ধুলা থাকুক বা না থাকুক তবুও তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে। হাতে ধুলা লাগা জরুরি নয়। অন্যদিকে ধুলা থাকুক বা না থাকুক পাকা ইটের ওপরও তায়াম্মুম দুরস্ত আছে।

মাসয়ালা : কাদা দ্বারা তায়াম্মুম করা দুরুস্ত আছে বটে; কিন্তু ভাল নয়। যদি কোনো স্থানে কাদা ব্যতীত অন্য কোনো জিনিস না পাওয়া যায়, তবে কাপড়ে কাদা মেখে দিবে। যখন শুকিয়ে যাবে, তখন তা দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে। কিন্তু যদি নামাযের।

ওয়াক্ত চলে যেতে থাকে, তবে কাদা হলেও তা দ্বারা সেই সময় তায়াম্মুম করে নামায পড়বে; কিছুতেই নামায কাযা হতে দিবে না ।

মাসয়ালা : মাটিতে পেশাব জাতীয় কোনো নাজাসাত পড়েছিল, কিন্তু রোদে শুকিয়ে গেছে এবং দুর্গন্ধও চলে গেছে, এখন সে মাটি পাক হয়ে গেছে। এর ওপর নামায দুরুস্ত হবে; কিন্তু সেই মাটি দিয়ে তায়াম্মুম দুরস্ত হবে না । এই হুকুম তখন হবে, যখন জানা থাকে যে, পেশাব পড়েছিল । অন্যথায় সন্দেহের ওপর জায়েয হবে না ।

তায়াম্মুমের বিভিন্ন মাসয়ালা

মাসয়ালা : অযূর পরিবর্তে যেমন তায়াম্মুম জায়েয, সেরূপ গোসলের পরিবর্তে কোন ওযর বশত তায়াম্মুম জায়েয। যে স্ত্রীলোক হায়েয বা নেফাস হতে পাক হয় আর ওযরবশত গোসল করতে না পারে, তার জন্যও তায়াম্মুম দুরস্ত আছে। অযূর তায়াম্মুম এবং গোসলের তায়াম্মুম একই রকম; উভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই ।

মাসয়ালা : কেউ আরেক জনকে শিক্ষা দেবার জন্য তায়াম্মুম করল, কিন্তু নিজের তায়াম্মুমের নিয়্যত করেনি, শুধু তাকে শিক্ষা দেয়াই উদ্দেশ্য এতে তায়াম্মুম হবে না। কেননা, তায়াম্মুম দুরুস্ত হওয়ার জন্য মনে মনে তায়াম্মুমের নিয়্যত করা আবশ্যক। নিয়্যত না করলে তায়াম্মুম হয় না। যেহেতু নিজের তায়াম্মুমের নিয়্যত করা হয়নি, উদ্দেশ্য ছিল অন্যকে শিখানো, কাজেই তার তায়াম্মুম হয়নি।

মাসয়ালা : “আমি পাক হবার জন্য বা নামায পড়ার জন্য তায়াম্মুম করতেছি“ শুধু এতটুকু অন্তরে রাখলেই তায়াম্মুম হয়ে যাবে; ‘গোসলের তায়াম্মুম করছি’ বা ‘অযূর তায়াম্মুম করছি— এত কিছু বলা দরকার নেই ।

মাসয়ালা : যদি কুরআন শরীফ স্পর্শ করার জন্য কেউ তায়াম্মুম করে থাকে, তবে সে তায়াম্মুমে নামায পড়া দুরুস্ত হবে না। এক ওয়াক্ত নামাযের তায়াম্মুম দ্বারা অন্য ওয়াক্তের নামায পড়া জায়েয এবং কুরআন শরীফ স্পর্শ করাও জায়েয ।

মাসয়ালা ঃ একই তায়াম্মুমে ফরয গোসল ও অযূ উভয়ের কাজ হয়; এজন্য পৃথক পৃথক তায়াম্মুম করতে হয় না।

মাসয়ালা : কেউ উল্লিখিত নিয়মানুসারে তায়াম্মুম করে নামায পড়ার পর পানি পেয়েছে এবং নামাযের ওয়াক্ত তখনও বাকি আছে, তবে ঐ নামায আর দোরাতে হবে না । ঐ তায়াম্মুমেই নামায দুরস্ত হয়েছে।

মাসয়ালা : পানি শরয়ী এক মাইল হতে দূরে নয়; কিন্তু নামাযের সময় এত অল্প যে, পানি আনতে গেলে সময় চলে যাবে, তবে তায়াম্মুম দুরস্ত হবে না, পানি এনে অযূ করে কাযা পড়বে ।

মাসয়ালা : পানি থাকতে কুরআন শরীফ ধরার জন্য তায়াম্মুম করা জায়েয নেই ।

মাসয়ালা : সামনে গিয়ে পানি পাওয়ার আশা আছে, তবে প্রথম ওয়াক্তে নামায না পড়ে মুস্তাহাব ওয়াক্ত পর্যন্ত পানির ব্যবস্থা করা ভাল; কিন্তু ব্যবস্থা করতে করতে মারূরুহ ওয়াক্ত যেন না এসে পড়ে; কিন্তু যদি প্রথম ওয়াক্তেও পড়ে নেয়, তবুও দুরস্ত হবে।

মাসয়ালা : পানি নিকটেই আছে, পানি আনতে নামলে যদি গাড়ি ছেড়ে দেবার আশংকা হয়, তবে তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে। তেমনি পানির নিকট সাপ, বাঘ ইত্যাদি হিংস্র জন্তুর ভয়ের কারণে পানি না আনা গেলে তায়াম্মুম দুরস্ত হবে ।

মাসয়ালা : মাল-পত্রের সঙ্গে পানি ছিল কিন্তু এখন মনে নেই; তায়াম্মুম করে নামায পড়ার পর পানির কথা মনে হল, এখন নামায দোহরিয়ে পড়া ওয়াজিব নয় ।

মাসয়ালা ঃ যে সব কারণে অযূ ভাঙ্গে সে সকল কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গে তাছাড়া পানি পাওয়া গেলেও তায়াম্মুম ভেঙ্গে যায়। এভাবে হয়ত তায়াম্মুম করে সামনে চলল, চলতে চলতে যখন শয়ী এক মাইল হতে কম দূরে পানি পাওয়া গেল, তখন তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে।

মাসয়ালা : তায়াম্মুম যদি অযূর পরিবর্তে করে থাকে, তবে অযূর পরিমাণ পানি হলে অর্থাৎ, এতটুকু পানি পেলে যাতে শুধু অযূর ফরজগুলি আদায় হতে পারে তাহলে তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে।

আর যদি গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে থাকে, তবে গোসলের পরিমাণ পানি পেলে অর্থাৎ, এতটুকু পানি পেলে যাতে শুধু গোসলের ফরজগুলি আদায় হতে পারে তাহলে তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে। যদি এই পরিমাণ অপেক্ষা কম পানি পাওয়া যায়, তাতে তায়াম্মুম ভাঙ্গবে না ।

মাসয়ালা : রাস্তায় পানি পাওয়া গেছে, কিন্তু সে আদৌ জানতে পারেনি যে, এখানে পানি আছে, তবে তার তায়াম্মুম ভাঙ্গবে না। যদি পথ এরকম হয় যেখানে পানি পাওয়া যায়, দেখাও যায়, জানাও যায়, কিন্তু রেলগাড়ি হতে নামা যায় না; তাতে তায়াম্মুম ভাঙ্গবে না ।

মাসয়ালা : যে রোগের কারণে তায়াম্মুম করেছিল অতপর যখন সে রোগ আরোগ্য হবে অর্থাৎ অযূ-গোসল করলে ক্ষতি হবে না; তখন তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে এবং অযূ -গোসল করা ওয়াজিব হবে।

মাসয়ালা : পানি না পেয়ে তায়াম্মুম করেছিল, পরে এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে, পানি ব্যবহার করতে পারে না, এখন পানি পাওয়া গেলে পূর্বের তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে, নতুন তায়াম্মুম করতে হবে।

গোসলের হাজত হওয়ায় গোসল করেছে, তবে সামান্য একটু জায়গা শুকনো রয়ে গেছে এমন সময় পানি শেষ হয়ে গেছে; পানি আর পাওয়া যাচ্ছে না, তবে সে পুরোপুরি পাক হয়নি, এ অবস্থায় গোসলের তায়াম্মুম করতে হবে, পরে যখন পানি পাবে, তখন ঐ শুকনো জায়গাটুকু ধুয়ে নিলেই চলবে, সমস্ত শরীর ধুতে হবে না ।

মাসয়ালা : যদি এমন সময় পানি পায় যে, যখন অযূ ভেঙ্গে গেছে, তবে আগে ঐ শুকনো জায়গা ধুবে, আর অযূর পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে, যদি পানি এত অল্প হয় যে, অযূ করা যেতে পারে, কিন্তু ঐ শুকনো জায়গাটুকু সম্পূর্ণভাবে ঐ পানিতে ধোয়া যাবে না, তবে সে পানির দ্বারা অযূ করবে এবং ঐ শুকনো জায়গার জন্য তায়াম্মুম করবে। হাঁ, যদি এই গোসলের তায়াম্মুম পূর্বেই করে থাকে, তবে নতুন করে তায়াম্মুম করার দরকার নেই, পূর্বের তায়াম্মুমই রয়ে গেছে ।

মাসয়ালা : কারোর হয়ত কাপড় বা শরীর নাপাক আছে, কিন্তু অযূ নেই, আবার পানি আছে অল্প, তবে ঐ পানি দিয়ে কাপড় এবং শরীর পাক করবে, আর অযূর জন্য তায়াম্মুম করবে।

মাসয়ালা ঃ অন্য কোথাও পানি নেই, একটি কূপে পানি আছে, কিন্তু পানি উঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই; এমনকি এমন কোনো কাপড়ও নেই যে, তা ভিজিয়ে নিংড়িয়ে তা দিয়ে কাজ চালাতে পারে, এমন অবস্থায় তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে ।

মাসয়ালা ঃ যে ওযরের তায়াম্মুম করেছে তা যদি মানুষের পক্ষ হতে হয়, যেমন, যদি জেলখানায় পানি না দেয় বা বলে যে, ‘যদি তুই অযূ করিস তবে তোকে হত্যা করব।— এই অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামায পড়বে, কিন্তু পরে যখন ঐ ওযর চলে যাবে, তখন ঐ সকল নামায পুনরায় পড়তে হবে। আর যদি ওযর আল্লাহর তরফ হতে হয়, তবে নামায দোরাতে হবে না ।

মাসয়ালা : একই স্থানের মাটিতে বা একই ঢিলায় যদি কয়েকজন মিলে তায়াম্মুম করে, তবে তা দুরস্ত আছে।

মাসয়ালা ঃ যদি অযূর জন্য পানি কিংবা তায়াম্মুমের জন্য মাটি না পায় যেমন, কেউ রেলগাড়িতে বা জেলখানায় পানিও পায় না, পাক মাটিও পায় না, তবে সে বিনা অযূতে এবং বিনা তায়াম্মুমেই নামায পড়বে, তবুও ওয়াক্তের নামায ছাড়বে না । কিন্তু পরে যখন পানি পাবে, তখন অযূ করে ঐ নামাযগুলো দোরিয়ে পড়বে।

মাসয়ালা : মুস্তাহাব ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত পানি পাওয়ার আশা থাকলে পানির জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম; যেমন, মুস্তাহাব ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত কূপের পানি উঠানোর জন্য বালতি, রশি পাওয়ার আশা থাকলে অথবা রেলগাড়ি মুস্তাহাব ওয়াক্তের মধ্যে এমন স্টেশনে পৌঁছবে যেখানে পানি পাওয়ার আশা আছে, এরূপ অবস্থায় মুস্তাহাব ওয়াক্ত পর্যন্ত দেরি করে নামায পড়া উত্তম ।

মাসয়ালা : কেউ রেলগাড়িতে পানি না পাওয়ার দরুন তায়াম্মুম করল, পরে গাড়িতে চলল এসময় পানি দেখল, তাতে তায়াম্মুম ভাঙ্গবে না। কারণ সেই পানি পাওয়ার শক্তি তার নেই, যেহেতু চলন্ত গাড়ি হতে নামা অসম্ভব ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *