দোয়া

কোরবানির দোয়া, কোরবানীর পশু ও বিভিন্ন হাদিস

Share this

কোরবানীর দোয়া বাংলা উচ্চারণ : ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজিহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতী ওয়া নুছুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আল্লাহু আকবার । আনা আউওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন ফুলানিবনি ফুলানিন বিসমিল্লাহি কোরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণে রেখে বাম কাতে কেবলামুখী শোয়াবে।

সম্মুখের ডান পা সিনার উপর রেখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে ছুরি চালাবে। কোরবানী করার ছুরি ধারাল হওয়া আবশ্যক ।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : দোয়ার মধ্যে প্রথম ফোলানের স্থানে কোরবানীদাতার নাম এবং দ্বিতীয় ফোলানের স্থানে কোরবানীদাতার পিতার নাম বলতে হবে। আর কোরবানীদাতা স্ত্রীলোক হলে ইবনে স্থলে বিনতে বলবে ।

নিজের কোরবানীর পশু নিজ হতেই যবেহ করা মুস্তাহাব। যদি নিজে যবেহ করতে না পারে, তবে অন্যের দ্বারা যবেহ করাবে, কিন্তু নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে । মেয়েলোক পর্দার আড়াল থেকে প্রত্যক্ষ করবে।

আরো পড়ুন:- ঈদুল আযহার সুন্নত সমূহ

কোরবানির বিবরণ

প্রত্যেক মালেক নেসাব মুসলমান অর্থাৎ যাদের প্রতি যাকাত ফরয, ফেতরা ওয়াজিব, তাদের উপর কোরবানী করাও ওয়াজিব। কোন ব্যক্তি মালেকে নিসাব নয়, যদি সে কোরবানীর নিয়্যতে পশু নির্দিষ্ট করে, তবে সেই ব্যক্তির উপর ঐ পশু কোরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

চন্দ্রমাসের ১০ই যিলহজ্জ তারিখে ঈদুল আযহা নামাযের পর হতে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় কোরবানী করা যায়। যার উপর কোরবানী ওয়াজিব, সে কোরবানী না করলে মহাপাপী হতে হবে।

কোরবানীর পশু ও বিভিন্ন মাসআলা

গরু, ছাগল, উট, দুম্বা, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি গৃহপালিত চতুস্পদ হালাল পশু দ্বারা কোরবানী করতে হয়। কোরবানীর পশু মোটা-তাজা ও সবল, দেখতে সুন্দর হওয়া আবশ্যক।

খোড়া, কানা, অন্ধ, পীড়িত, অতি দুর্বল, অত্যন্ত বৃদ্ধ, লেজ কাটা, দাঁতদান, পাগল ইত্যাদি পশু কোরবানী দুরস্ত নয়।

কোরবানীর পশু নিখুঁত হওয়া চাই। পশুর কান বা লেজ অর্ধেকের বেশি কাটা হলে বা এক-তৃতীয়াংশের বেশি কাটা বা ভাঙ্গা থাকলে কোরবানী দুরস্ত হবে না ।

কোরবানীর পশুর বয়স

ছাগল ভেড়া ১ বৎসর, দুম্বা ছয় মাস, গরু মহিষ দুই বৎসরের এবং উট ৫ বৎসরের কমেও দুরস্ত হবে। হতে হবে। গরু, মহিষ, উট ঊর্ধ্বে সাত নামে কোরবানী করা দুরস্ত আছে।

সাত নামের কোরবানীর গোশত ও অংশ : কোরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ এতীম- মিসকীনদের দিবে, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজনদের দিবে এবং তিন ভাগের এক ভাগ নিজে রাখবে।

এর ব্যতিক্রম করলে কোরবানীর উদ্দেশ্য ঠিক থাকে না। কিন্তু সংসারে লোকজন বেশি থাকলে কিংবা মেহমান থাকলে কিছু বেশি রাখাও দুরস্ত আছে।

মান্নাতকৃত কোরবানীর গোশত নিজে খাবে না এবং ধনীকেও খেতে দিবে না। ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দিবে। কোরবানীর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবে; কিন্তু বিক্রয় করলে তা এতীম-মিসকীনদের হক হয়ে যায়।

যে ব্যক্তি কোরবানী করবে সে যিলহজ্জের চাঁদ দেখার পর হতে নখ, চুল ইত্যাদি কাটা বন্ধ রাখবে এবং কোরবানী করার পর তা কাটবে । এটা সুন্নত

যবেহের বিবরণ

শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী কোন হালাল পশুর দেহ হতে অতি ধারাল অস্ত্র দ্বারা হারাম রক্ত বের করাকে যবেহ বলে । পশু যবেহ করার সময় তার মাথা দক্ষিণ দিকে রেখে কেবলামুখী করে শুইয়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করবে।

গলার মধ্যে প্রধান যে চারটি রগ আছে, সেই চারটি রগ কাটতেই হবে। রগ চারটি হচ্ছে শ্বাস প্রশ্বাসের একটি, পানাহারের একটি এবং ঘাড়ের দুই দিকে শাহরগ নামে দুট। এই চারটি রগ কাটতেই হবে ।

নিম্নলিখিত কারণে পশুর গোশত হারাম হয়ে যায় ৷

১ । মোশরেক বে-দ্বীন যবেহ করলে ।

২। যবেহের সময় আল্লাহ নাম ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করলে।

৩। যবেহের পরে কিংবা পূর্বে বলির অনুষ্ঠানের অনুকরণ করলে ।

৪ । যে সকল পশুর প্রতি পাশবিক অত্যাচার করা হয়েছে, এরূপ পশুর শরীরের কোন অংশ (গোশত) ভক্ষণ বা তা দ্বারা উপার্জন সবই হারাম হবে।

পশু যবেহের সময় মাকরূহ

১। যবেহের সময় ৪টি রগের কম কাটলে । অর্থাৎ ৪টি রগ পূর্ণ না কাটলে ।

২। যবেহের সময় ভুলবশঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার না বললে ।

৩। অন্য পশুর সামনে যবেহ করলে ।

৪ । শীতল হওয়ার পূর্বে চামড়া খসালে ।

৫। ভোঁতা অস্ত্র দ্বারা যবেহ করলে ।

৬। গাফলতি করে কেবলামুখী না করলে ।

৭। যবেহের সময় পশুকে যাতনা দিলে বা মারপিট করলে ।

যবেহের মধ্যে চারটি ফরয

১। যবেহের সময় বিসমিল্লাহি বলা, যদি ভুলবশতঃ বিসমিল্লাহ না বলা হয় তবু

হালাল হবে।

২। শ্বাস প্রশ্বাসের রগ, পানাহারের রগ এবং গাড়ের দুটি মোটা শাহরগ এই চারটি রগ কাটা

৩। যবেহ করে রক্ত প্রবাহিত করে দেয়া।

৪ আল্লাহ তা’আলার নামে যবেহ করা।

যবেহের মধ্যে একটি ওয়াজিব

যবেহকারীর বামে পশুর মাথা এবং ডানে পশুর দেহ থাকবে।

যবেহের মধ্যে চারটি সুন্নত

১। যবেহের আগে ওযু করা।

২। যবেহের অস্ত্র ধারাল হওয়া।

৩। যবেহকারী সকলের কেবলামুখী হওয়া এবং বিসমিল্লাহ বলা ।

৪। যবেহের নিয়্যত করা।

যবেহের মধ্যে নয়টি মাকরূহ

১। যবেহের অস্ত্র ধারাল না হলে ।

২। বিসমিল্লাহ বলা ভুলে গেলে ।

৩। বিনা ওযুতে যবেহ করলে ।

৪। যবেহের মধ্যে পশুর মাথা ইচ্ছাকৃতভাবে পৃথক করলে ।

৫। বিনা ওযরে অন্ধকার রাত্রে যবেহ করলে ।

৬। পশুর মাথা যবেহকারীর ডানে রেখে যবেহ করলে ।

যবেহের ভিতর ৫টি হারাম

১। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যবেহ করলে কিংবা আল্লাহর সাথে শরীক করে অন্য কারো নাম নিলে

২। কাফের বা মোশরেক যবেহ করলে। স্বরণ থাকা সত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না বললে ।

৩। কোন দরগাহে বুযুর্গ লোকের সম্মানার্থে যবেহ করছি এমন নিয়্যত করলে

৪। উন্মাদ যবেহ করলে।

যবেহকৃত পশুর ভেতরে যা হারাম

১। দমে মছফুহ (যে রক্ত যবেহ করার সাথে সাথে বেগে বের হয়)।

২। গোদুধ (যা গোশতের উপর সাদা হয়ে থাকে) ।

৩। হারাম মগজ (পিঠের হাড়ের ভেতরের সাদা বস্তুসমূহ)।

৪। প্রস্রাবের থলে ।

৫। অণ্ডকোষ।

৬। লিঙ্গ ।

৭। পায়খানার মাকাম ।

৮। পিত্তথলি।

যবেহের নিয়ত ও দোয়া

উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন আযহাবা বিহাযাল হায়ওয়ানি বিহাইসু ইয়াখরুযু আন্ত দ্দামুল মাছফু ওয়া তাকূনূ লাহমুহা হালালান লিযামীয়িল মু’মিনীনা ওয়াল মুনিনাতি- মিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ।

পশু-পক্ষী হালাল-হারামের বিবরণ

হায়ওয়াতুল হায়ওয়ান কিতাবে আছে, পাখীদের মধ্যে হাঁস, মোরগ, ঘুঘু, কবুতর, বক, চড়ই পাখি, আবাবিল, হুদহুদ ইত্যাদি হালাল । পশুর ভিতরে যাবতীয় হিংস্র জানোয়ার (যা শিকার ধরে খায়) খাওয়া হারাম। যেমনঃ সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ, শৃগাল, কুকুর, শূকর, বিড়াল, বানর, হাতী, বেজী, ভাল্লুক ইত্যাদি।

এইভাবে পাখীর ভেতরে যে সমস্ত পাখী নিজের নখদ্বারা শিকার ধরে খায়, সেই সকল পাখীও হারাম ।

যেমনঃ চিল, বাজ, শকুন, শিকরা, কাক, ঈগল পাখী ইত্যাদি ।

গুইল, গোসাপ, কচ্ছপ, সজারু, গাধার দুধ ইত্যাদি খাওয়া জায়েয নয়, কিন্তু শাফী মাযহাবে গুইল এবং কচ্ছপ খাওয়া জায়েয আছে। যে সমস্ত জীব মাটিতে গর্ত করে বাস করে তা খাওয়া জায়েয নয়। যেমনঃ সাপ, বিচ্চু, ইঁদুর, কেঁচে ইত্যাদি । মাছ এবং টিড্ডি ব্যতীত অন্য সকল জীব যবেহ করে খেতে হবে।

এ দুটি যবেহের দরকার হয় না। মাহ ব্যতীত অন্য হালাল জন্তু যবেহ ব্যতীত মারা গেলে তা খাওয়া হারাম। নদীতে যত প্রকার মাচ আছে এবং মাছের আকৃতিধারী জীব আছে তা খাওয়া হালাল।

মাছ আপনা আপনি মরে চিৎ হয়ে ভাসে তা খাওয়া জায়েয নয়। যদি গরম অথবা কোন আঘাত কিংবা চাপাচাপির কারণে মরে ভাসে তা খাওয়া হালাল হবে। গরু, ছাগলের পেট (নাড়ি ভুড়ি) পরিস্কার করে খাওয়া জায়েয ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *