ওয়াজিব অর্থ কি? ওয়াজিব কাকে বলে
Share this
ওয়াজিব
যে কাজ ফরজের মত অবশ্য কর্তব্য। ফরজ ছেড়ে দিলে যেমন ফাসেক ও গুনাগার হতে হবে এবং শাস্তির উপযুক্ত হবে, ওয়াজিব ছেড়ে দিলেও তেমনি ফাসেক ও গুনাহগার হতে হবে এবং শাস্তির উপযুক্ত হবে। শুধু পার্থক্য এতটুকু যে, ফরজ অস্বীকার করলে কাফের হবে, কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফের হবে না, বরং ফাসেক হবে । যেমন, বিতরের নামায পড়া, পশু কোরবানি করা, ফিতরা দেয়া ইত্যাদি ।
নামাজের ওয়াজিবসমূহ
নামাযের মধ্যে নিম্নলিখিত কাজগুলো করা ওয়াজিব। যথা-
(১) (ফরজ নামাযে প্রথম দুই রাকাতে এবং বিতর, নফল ও সুন্নতের সব রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়া এবং
(২) ফাতেহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলানো,
(৩) নামাযের প্রত্যেকটি ফরজ নিজ নিজ স্থানে আদায় করা,
(৪) প্রথমে ফাতেহা পড়া, তারপর সূরা পড়া, তারপর রুকু করা, তারপর সিজদা করা,
(৫) দুই রাকাত পূর্ণ করে বসা,
(৬) প্রথম বৈঠক হোক বা দ্বিতীয় বৈঠক হোক উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়া,
(৭) বেতর নামাযে দুয়া কুনুত পড়া,
(৮) আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরানো,
(৯) তাদীলে আরকান অর্থাৎ নামাযের সব কাজগুলো ধীরে সুস্থে আদায় করা, তাড়াহুড়া না করা। (যেমন রুকু হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান, প্রথম দুই রাকাতের মধ্যে ইমামের জোরে কিরাত পড়া এবং ছিী নামাযের মধ্যে ইমাম এবং একাকী নামাজির চুপে চুপে পড়া। (ফজর, মাগরিব ও এশা এবং জুম’য়া, ঈদ ও তারাবিহ হল জেহরী নামায; এতদ্ব্যতীত দিবাভাগের সব নামায ছিররী নামায়),
(১১) সিজদার মধ্যে উভয় হাত এবং হাঁটু মাটিতে রাখা । ফরজ ও ওয়াজিবগুলো ছাড়া অন্য যে কাজগুলো নামাযে আছে তার কোনোটি এবং কোনোটি মুস্তাহাব ।
নামাজের ওয়াজিব সম্পর্কিত বিভিন্ন মাসয়ালা
(১) নামাযের মধ্যে সূরা ফাতেহা না পড়ে অন্য কোনো আয়াত বা সূরা পড়ে বা,
(২) প্রথমে দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়ে অন্য সূরা বা আয়াত না মিলায়, বা,
(৩) দুই রাকাত পড়ে না বসে, বা,
(৪) আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে ও তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ায় কিংবা বসেছে কিন্তু আত্তাহিয়্যাতু পড়েনি, তবে এই সব অবস্থায় ওয়াজিব তরক হবে। ফরজ অবশ্য যিম্মায় থাকবে না, কিন্তু নামায একেবারে অকেজো এবং নিকৃষ্ট স্তরের হবে । সুতরাং নামায দোরিয়ে পড়া ওয়াজিব, না দোরালে ভারী গুনাহ্ হবে ।
মাসয়ালা : কেউ ভুল বশত এমন করে, তবে ‘ সাহু সিজদা করলে নামায শুদ্ধ হবে । (ওয়াজিব ভুল বশত তরক হলে তার সংশোধন সাহু সিজদার মাধ্যমে হতে পারে, কিন্তু ফরজ তরক হলে বা ওয়াজিব ইচ্ছাপূর্বক তরক করলে তার সংশোধন সাহু সিজদার দ্বারা হতে পারে না, নামায দোরিয়ে পড়তে হয়)।
মাসয়ালা : ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহ্মাতুল্লাহ্’ বলার স্থানে যদি কেউ এই লফযের দ্বারা সালাম না ফিরিয়ে দুনিয়ার অন্য কোনো কথা বলে উঠে, বা উঠে চলে যায়, বা অন্য কোনো এমন কাজ করে যাতে নামায ভেঙ্গে যায়, তবে তার ওয়াজিব তরক হবে এবং সে গুনাগার হবে। অবশ্য ফরজ আদায় হবে, কিন্তু ঐ নামায দোরিয়ে পড়া ওয়াজিব । অন্যথায় গুনাগার হবে ।
মাসয়ালা : পূর্বে সূরা পড়ে শেষে আলহামদু পড়লে ওয়াজিব তরক হবে এবং নামায দোরাতে হবে ।যদি ভুলে এরূপ করে তাহলে সাহু সিজদা করলে নামায দুরুস্ত হবে।
মাসয়ালা ঃ সূরা ফাতিহার পর অন্তত তিনটি আয়াত পড়তে হবে। যদি কেউ তার পরিবর্তে এক আয়াত বা দুই আয়াত পড়ে যদি ঐ এক আয়াত বা দুই আয়াত ছোট ছোট তিনটি আয়াতের সমপরিমাণ হয়, তবে নামায দুরুস্ত হয়ে যাবে ।
মাসয়ালা ঃ সিজদায় নাক মাটিতে না রেখে শুধু কপাল মাটিতে রাখলেও নামায আদায় হবে, কিন্তু যদি কপাল মাটিতে না রেখে শুধু নাক মাটিতে রাখে, তবে নামায হবে না। অবশ্য যদি কোনো ওযর বশত কপাল মাটিতে না রাখতে পারে এবং শুধু নাক মাটিতে রাখে, তবে নামায হয়ে যাবে।
মাসয়ালা : রুকুর পর সোজা হয়ে দাড়াল না, বরং মাথা সামান্য উঠিয়ে সিজদায় চলে গেল, তার নামায হবে না, পুনরায় পড়তে হবে।
মাসয়ালা : দুই সিজদার মাঝখানে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসা ওয়াজিব । সোজা হয়ে না বসে অল্প একটু মাথা উঠিয়ে দ্বিতীয় সিজ্দায় গেলে নামায হবে না, পুনরায় পড়তে হবে।
আর যদি এতটুকু উঠায় যে, বসার কাছাকাছি হয়ে যায়, তবে তার ওপর থেকে নামাযের যিম্মা আদায় হয়ে গেল; কিন্তু সেটা বড় অকেজো এবং নিকৃষ্ট নামায হল । কাজেই পুনরায় নামায পড়া কর্তব্য । অন্যথায় কঠিন গুনাহ্ হবে ।
মাসয়ালা : ফরজ নামাযে প্রথম দুই রাকাতে আল্হামদুর সঙ্গে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। যদি কেউ প্রথম দুই রাকাতে আল্হামদুর সঙ্গে কোন সূরা না মিলায় বা আল্হামদুও না পড়ে, শুধু সুবহানাল্লাহ্ সুব্হানাল্লাহ্ বলতে থাকে, তবে শেষের দুই রাকাতে আলহামদুর সঙ্গে অবশ্যই সূরা মিলাতে হবে। কিন্তু ইচ্ছাপূর্বক এমন করে থাকলে নামায দোহ্রাতে হবে, অবশ্য ভুলে এমন করলে সাহু সিজদা দ্বারা নামায হয়ে যাবে ।
মাসয়ালা : ঈদুল-ফিতর এবং ঈদুল আযহার নামাযে সাধারণ নামাযের চেয়ে ছয়টি তক্বির বেশি বলা ওয়াজিব