ইসলাম

সাহু সিজদা কখন দিতে হয়

Share this

সাহু সেজদা কি

নামাজের মধ্যে যতগুলো ওয়াজিব আছে তার একটি বা কয়েকটি যদি ভুল বশত ছুটে যায়, তবে তার ক্ষতিপূরণের জন্য সাহু সিজ্দা করা ওয়াজিব । এতে নামায দুরুস্ত হয়ে যাবে । যদি সাহু সিজদা না করে, তবে নামায দোরিয়ে পড়তে হবে।

মাসয়ালা : যদি নামাযের কোনো ফরজ ভুলে ছুটে যায় বা কোনো ওয়াজিব ইচ্ছাপূর্বক ছেড়ে দেয়, তবে তার ক্ষতিপূরণের কোনোই উপায় নেই, সাহু সিজদার দ্বারাও নামায দুরুস্ত হবে না, নামায দোরিয়ে পড়তে হবে।

আরো পড়ুন:- সিজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ম

কখন কখন সাহু সেজদা দেয়া অপরিহার্য

১। ভুল বশত যদি কেউ দুই রুকু করে ফেলে বা তিন সিজ্দা করে ফেলে তবে সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হবে।

২। যদি কেউ ভুল বশত সূরা ফাতিহা না পড়ে শুধু সূরা পড়ে বা আগে সূরা পড়ে তারপর ফাতিহা পড়ে, তবে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।

৩। যদি কোন ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা মিলাতে ভুলে যায়, তবে শেষের দুই রাকাতে সূরা মিলাবে এবং সাহু সিজ্‌দা করবে। যদি প্রথম দুই রাকাতের কোনো এক রাকাতে সূরা মিলাতে ভুলে যায়, তবে তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা মিলাবে এবং সাহু সিজদা করবে।

যদি প্রথম দুই রাকাতেও সূরা মিলাতে ভুলে গিয়ে থাকে এবং শেষের দুই রাকাতেও স্মরণ না হয় এবং আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় স্মরণ হয় তবে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে সাহু সিজদা করবে। তাতেই নামায দুরুস্ত হয়ে যাবে ।

৪। (বিতর) সুন্নত ও নফল নামাযের সব রাকাতে সূরা মিলান ওয়াজিব, যদি কেউ কোনো রাকাতে ভুল বশত সূরা না মিলায়, তবে তার সাহু সিজ্দা করতে হবে।

৫। কেউ আল্হামদু বা অন্য কোনো সূরা পড়ে চিন্তা করতে লাগল যে, এর পর কোনো সূরা বা কোনো আয়াত পড়বে, এরূপ চিন্তা করতে করতে যদি তার তিনবার ‘সুবহানাল্লাহ্’ পড়া যায় এ পরিমাণ সময় বিনা পড়ায় অতিবাহিত হয়, তবে তার সাহু সিজ্‌দা ওয়াজিব হবে ।

৬। কেউ শেষ রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে সন্দেহের কারণে চুপ করে বসে চিন্তা করতে লাগল যে, এটা তৃতীয় রাকাত না চতুর্থ রাকাত? কিছুক্ষণ চিন্তা করে স্থির করল যে,

এটা চতুর্থ রাকাত, তারপর সালাম ফিরাল (বা তৃতীয় রাকাত স্থির করে দাঁড়িয়ে আর এক রাকাত পড়তে প্রস্তুত হল) কিন্তু এই চিন্তায় সে এতক্ষণ চুপ করে রয়েছে যত সময়ে তিনবার ‘ সোবহানাল্লাহ্ পড়া যেত, তবে তার সাহু সিজদা দিতে হবে।

৭। যদি কেউ আল্হামদু পড়ে সূরা মিলিয়ে ভুল বশত কিছু চিন্তা করতে থাকে এবং সেই চিন্তায় তিনবার সোবহানাল্লাহ্ পড়া যায় এ পরিমাণ সময় অতীত হয়ে যায় বা কারোর যদি রুকুর মধ্যে গিয়ে স্মরণ হয় যে,

সূরা মিলাতে ভুলে গিয়েছে, তারপর রুকু হতে উঠে সূরা মিলায়, তবে তার নতুন করে রুকু করতে হবে। এই উভয় অবস্থায় সাহু সিজদা ওয়াজিব।

৮। অনুরূপ যদি কেউ কোনো সূরা পড়তে পড়তে আট্‌কিয়ে যায় এবং চুপ করে দাঁড়িয়ে তিন তীহ্ পরিমাণ চিন্তা করে, বা দ্বিতীয় বা চতুর্থ রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে বসে, তা না পড়ে চিন্তা করে তিন তবিহ্ পরিমাণ দেরি করে, বা রুকু হতে উঠে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে থাকে এবং

এই জন্য তিন তীহ পরিমাণ দেরি হয়, বা প্রথম সিজ্দা হতে উঠে চিন্তা করতে থাকে এবং সেই জন্য দ্বিতীয় সিজ্‌দায় যেতে তিন তীহ পরিমাণ দেরি হয়ে যায়, তবে এসব অবস্থায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।

ফলকথা, ওয়াজিব তরক হলে যেমন সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়, তেমনি ভুলে বা চিন্তা করার কারণে যদি কোনো ফরজ বা ওয়াজিব আদায় করতে তিন তসবিহ্ পরিমাণ দেরি হয়ে যায়, তবে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে ।

৯ । যদি কেউ তিন বা চার রাকাত ফরজ নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে বসে ভুলে আত্তাহিয়্যাতু দুইবার পড়ে ফেলে, বা আত্তাহিয়্যাতু শেষ করে (আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদীন) পর্যন্ত বা আরও বেশি দুরুদ পড়ে ফেলে, তৎপর স্মরণ হওয়ার পর দাড়িয়ে যায়, তবে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। এর কম পড়লে ওয়াজিব হবে না ।

১০। সুন্নত ও নফল নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে আত্তাহিয়্যাতুর পর দুরুদ পড়া জায়েয আছে । কাজেই নফল নামাযে দুরুদ পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে

১১। আত্তাহিয়্যাতু পড়তে বসে যদি ভুলে অন্যকিছু যেমন সুবহানাকা, দোয়া কুনুত বা সূরা ফাতেহা পড়ে, তবে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে

১২। নামাযের নিয়্যত বেঁধে কেউ যদি ভুলে সুবহানাকা পড়ার পরিবর্তে দোয়া কুনূত বা আত্তাহিয়্যাতু পড়ে তাতে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। এভাবে যদি ড ফরজ নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে আল্হামদুর স্থলে আত্তাহিয়্যাতু বা বেহানাকা বা অন্য কিছু (যেমন আল্হামদুর পর সূরা) পড়ে তাতেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না ।

১৩। তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট (ফরজ) নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে বসা ওয়াজিব। কিন্তু যদি কেউ বসতে ভুলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতে উদ্যত হয় এবং শরীরের নিম্নার্থ সোজা হওয়ার পূর্বে বসে পড়ে,

তবে আর বসবে না; বরং দাঁড়িয়ে তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাত পড়বে, এবং শেষ বৈঠকে সাহু সিজদা করবে। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর বসে তাশাহ্হুদ পড়লে গুনাগার হবে। কিন্তু নামায হয়ে যাবে এবং সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে ।

১৪। যদি কেউ চতুর্থ রাকাতের পর বসতে ভুলে দাঁড়াতে উদ্যত হয়, সে শরীরের নিম্নার্ধ সোজা হওয়ার পূর্বে স্মরণ আসলে বসে পড়বে এবং আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ পড়ে সালাম ফিরাবে, সাহু সিজদা দিতে হবে না ।

আর যদি সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে যাওয়ার পরে স্মরণ হয়, তবুও বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে হবে, এমন কি সূরা ফাতেহার পর কিংবা রুকু করার পরও যদি স্মরণ আসে, তবুও বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে হবে এবং সাহু সিজদা করতে হবে।

কিন্তু যদি সিজদা করার পর স্মরণ হয় তবে আর বসবে না, পঞ্চম রাকাত পূর্ণ করবে এবং অতিরিক্ত এক রাকাত পড়ে ছয় রাকাত পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে। কিন্তু এই অবস্থায় ফরজ পুনরায় পড়তে হবে, এই নামায নফল হয়ে যাবে, সাহু সিজদা করতে হবে না।

আর যদি ষষ্ঠ রাকাত না মিলিয়ে পঞ্চম রাকাতের পর বসে সালাম ফিরায়, তবে তার এক রাকাত বাতিল ও চার রাকাত নফল হবে এবং ফরজ পুনরায় পড়বে ।

১৫। যদি কেউ চতুর্থ রাকাতে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর ভুলে দাঁড়িয়ে যায় ও পঞ্চম রাকাতের সিজদা করার পূর্বে স্মরণ হয়, তবে সাথে সাথে সে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দিবে; তারপর আত্তাহিয়্য। ভ্রু পড়ে নামায শেষ করবে।

আর যদি পঞ্চম রাকাতের সিজদা করার পর স্মরণ হয়, তবে আরও এক রাকাত পড়ে ছয় রাকাত পূর্ণ করবে; চার রাকাত ফরজ এবং দুই রাকাত নফল হবে এবং সাহু সিজদা করতে হবে।

আর যদি পঞ্চম রাকাতের সঙ্গে ষষ্ঠ রাকাত না মিলিয়ে পঞ্চম রাকাতেই সালাম ফিরায় এবং সাহু সিজদা করে, তবুও নামায হয়ে যাবে, কিন্তু অযথা হবে । চার রাকাত ফরজ হবে এবং এক রাকাত বৃথা যাবে।

১৬। কেউ চার রাকাত নফল বা সুন্নত নামায পড়তে গিয়ে যদি দুই রাকাতের সময় দিতে ভুলে যায়, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তৃতীয় রাকাতের সিজদা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বসে পড়বে,

আর যদি তৃতীয় রাকাতের সিজদা করার পর স্মরণ হয়, মনে আসা মাত্র তবে আর বসবে না। চার রাকাত পূর্ণ করে বসবে। এই উভয় অবস্থায় নামায হয়ে যাবে, কিন্তু সাহু সিজদা দিতে হবে।

১৭। যদি কারোর নামাযের মধ্যে সন্দেহ হয় যে, চার রাকাত পড়েছে কি তিন রাকাত পড়েছে, তবে যদি কদাচিত এরূপ সন্দেহ হয়, তবে (একদিকে সালাম ফিরিয়ে ঐ নামায ছেড়ে দিয়ে) নতুন নিয়্যত করে নামায দোহরিয়ে পড়বে।

আর যদি প্রায়ই তার এরূপ সন্দেহ হয়ে থাকে, তবে তার চিন্তা করে দেখতে হবে যে, তার মন তিন বা চার এই দুই দিকের কোনো দিকে বেশি ঝোঁকে কি না? যদি এক দিকে বেশি ঝোঁকে, তবে তিনের দিকে ঝোঁকলে ‘তিন রাকাত ধরে অবশিষ্ট এক রাকাত পড়ে নামায শেষ করবে,

আর যদি চারের দিকে ঝোঁকে, তবে চার রাকাত ধরে নামায শেষ করবে। এরূপ সন্দেহের কারণে সাহু সিজদা করতে হবে না। কিন্তু যদি চুপ করে বসে বসে চিন্তা করে সময় অতিবাহিত করে, তদ্দরুন সাহু সিজদা করতে হবে।

আর যদি উভয় দিকে হয়, অর্থাৎ কোনো দিকে মন না যায় এবং তিন বা চার কিছুই স্থির করতে না পারে, তবে তিনই (অর্থাৎ কমটাই) ধরতে হবে, কিন্তু এই তৃতীয় রাকাতেও বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে হবে।

কারণ, হয়ত তা চতুর্থ রাকাতও হতে পারে । তৎপর চতুর্থ রাকাতেও বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে হবে এবং সাহু সিজদা দিতে হবে ।

১৮। যদি এরূপ সন্দেহ হয় যে, প্রথম রাকাত কি দ্বিতীয় রাকাত? তবে তার হুকুমও এরূপ হবে যে, যদি কদাচিৎ এরূপ সন্দেহ হয়, তবে নতুন নিয়্যত করে নামায দোরিয়ে পড়তে হবে। যদি অধিকাংশ সময় এরূপ সন্দেহ হয়, তবে যে দিকে মন ঝুঁকবে সেই দিকে গ্রহণ করবে।

যদি মন কোনো এক দিকে না ঝুঁকে ও উভয় দিকে সমান হয়, তবে এক রাকাতই (অর্থাৎ, কমটাই) ধরতে হবে, কিন্তু এই প্রথম রাকাতে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে।

কারণ, হয়ত এটা দ্বিতীয় রাকাত ও হতে পারে, দ্বিতীয় রাকাতের পরও বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে এবং এই রাকাতে সূরাও মিলাবে (কারণ, এতে তাকেই দ্বিতীয় রাকাত সাব্যস্ত করা হয়েছে) তারপর তৃতীয় রাকাতেও বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে কারণ, হয়ত তা চতুর্থ রাকাত হতে পারে, তারপর চতুর্থ রাকাত পড়ে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে এবং সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করবে।

১৯। যদি দ্বিতীয় কি তৃতীয় রাকাত হওয়ার মধ্যে সন্দেহ হয়, তবে তার হুকুমও এরূপ। যদি উভয় দিকের ধারণা সমান সমান হয় তবে এই দ্বিতীয় রাকাতেও বসবে এবং তৃতীয় রাকাতেও বসবে। কারণ, হয়ত তা চতুর্থ রাকাত হতে পারে, তারপর চতুর্থ রাকাত পড়ে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করবে।

২০। নামায শেষ করার পর যদি এরূপ সন্দেহ হয় যে, তিন রাকাত হয়েছে, না কি চার রাকাত? তবে এই সন্দেহের কোনো মূল্য নেই নামায হয়ে গিয়েছে। অবশ্য যদি সঠিক স্মরণ থাকে যে, তিন রাকাতই হয়েছে, তবে সাথে সাথে উঠে আর এক রাকাত পড়ে নিবে এবং সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে, তাতেই নামায হয়ে যাবে।

কিন্তু যদি সালাম ফিরাবার পর কথা বলে থাকে, বা এমন কাজ করে থাকে যাতে নামায ভেঙ্গে যায় যেমন; কিবলা হতে ঘুরে বসল, এরূপ নতুন নিয়্যত বেঁধে সম্পূর্ণ নামায দোহরিয়ে পড়তে হবে। এভাবে যদি শেষ আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পরে এরূপ সন্দেহ হয়, তবে তারও এই হুকুম যে, সঠিকভাবে স্মরণ না আসলে যে সন্দেহেরও কোনো মূল্য নেই। (অবশ্য যদি ঠিকভাবে স্মরণ আসে যে, এক রাকাত কম হয়েছে, তবে এক রাকাত বাড়িয়ে পড়ে সাহু সিজদা করে নামায শেষ করবে)।

যে সব অবস্থায় সন্দেহের কোনো মূল্য নেই বলা হয়েছে, সে সব অবস্থায়ও যদি কেউ ঐ নামায শেষ করে মনের সন্দেহ দূর করার জন্য হারুন নিয়্যত করে নামায দোহরিয়ে নেয়, তবে তা খুবই ভাল।

২১। এক নামাযে একবার মাত্র সাহু সিজদা হতে পরে। দুই বা ততোধিক ভুল হলেও মাত্র একবার সাহু সিজদা করতে হবে। এক নামাযে দু’বার সাহু সিজদার দরকার হয় না ।

২২। যদি সাহু সিজদা করার পরও কোনো ভুল হয়, তবুও পুনর্বার সাহু সিজদা করতে হবে না, ঐ সিজ্দাই যথেষ্ট হবে ।

২৭। নামাযের মধ্যে কারোর হয়ত এমন ভুল হয়েছিল, যার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল, কিন্তু সিজদা করতে মনে নেই, উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলেছে, তবে যতক্ষণ সে কথা না বলবে বা বক্ষ কিবলা হতে না ঘুরাবে, বা নামায ভঙ্গ হওয়ার অন্য কোনো কারণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ সাহু সিজদা করতে পারবে।

এমন কি যদি কিবলামুখী হয়ে নামাযের বিছানার ওপর বসে অনেকক্ষণ পর্যন্ত ওযীফা পড়তে থাকে, তারপর সাহু সিজদার কথা মনে হয়, তবে সাথে সাথে আল্লাহু আকবর বলে দুটি সিজদা করে আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ ও দোয়া পড়ে সালাম ফিরালে নামায হয়ে যাবে, এতে কোনো দোষ হবে না (আর যদি নামায-বিরুদ্ধ কোনো কাজ বা কথার পর স্মরণ আসে, তবে নামায দোরিয়ে পড়া ছাড়া বিকল্প নেই ।

২৩। সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার পর যদি ইচ্ছা করে উভয় দিকে সালাম ফিরায় এবং এই নিয়্যত করে যে, সাহু সিজদা করব না, তবুও যতক্ষণ পর্যন্ত নামায-বিরুদ্ধ কোনো কাজ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ না সাহু সিজদা করার এখতিয়ার থাকবে।

২৪ । চার রাকাত বা তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাযে যদি কেউ দুই রাকাত পড়েই ভুলে সালাম ফিরিয়ে ফেলে, তবে সে স্মরণ আসা মাত্র দাঁড়িয়ে নাগায় পূর্ণ করতে পারবে এবং সাহু সিজদা করবে ।

অবশ্য যদি সালামের পর নামায-বিরূদ্ধ কো- কাজ হওয়ার স্মরণ আসে, তবে নতুন নিয়্যত বেঁধে নামায দোরিয়ে পড়তে হবে।

২৫। বেতরের প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাতে যদি কেউ ভুলে দোয়া- কুনূত পড়ে ফেলে তবে এই পড়ার কোনো মূল্য নেই, তৃতীয় রাকাতে যথারীতি আবার পড়তে হবে এবং সাহু সিজদা করতে হবে।

২৬। বেতরের নামাযে যদি কারোর সন্দেহ হয় যে, এটা কি দ্বিতীয় রাকাত না তৃতীয় রাকাত? আবার মনও কোনো এক দিকে বেশি ঝোঁকে না, উভয় দিকে সমান থাকে, তবে দুই রাকাতই ধরতে হবে, কিন্তু ঐ দ্বিতীয় রাকাতেও দুয়া-কুনূত পড়বে, বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে এবং তারপর যে আর এক রাকাত বাকী থাকবে, সে রাকাতেও দোয়া-কুনুত পড়বে এবং শেষে সাহু সিজদা করবে।

২৭। বেতরের নামাযে যদি কেউ ভুলে দুয়া-কুনূতের পরিবর্তে ‘ সোবহানাকা’ পড়ে, তারপর স্মরণ আসার পর আবার দোয়া-কুনূত পড়ে, তবে তাতে সাহু সিজদা করতে হবে না ।

২৮। যদি কেউ বেতরের নামাযে দুয়া-কুনূত পড়তে ভুলে গিয়ে সূরা পড়ে রুকুতে চলে যায়, তবে রুকু হতে ফিরে আসে আর দুয়া-কুনূত পড়তে হবে না, রুকু হতে উঠে দুয়া-কুনূত পড়ে, তাতেও নামায নষ্ট হবে না, কিন্তু রুকু হতে ফিরে উঠে যদি দুয়া-কুনূত পড়ে, তাতেও নামায নষ্ট হবে না, কিন্তু তাকে রুকু পুনরায় করতে হবে এবং সাহু সিজ্দাও করতে হবে ।

২৯। নফল নামাযে আল্হামদুর পর দুই বা ততোধিক সূরা পড়ায় কোনো দোষ নেই। কিন্তু ফরজ নামাযে আল্হামদুর পর দুই বা ততোধিক সূরা পড়া ভাল নয় । কিন্তু যদি কেউ পড়ে ফেলে, তবে তাতে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না ।

৩০। ফরজ নামাযের শেষার্ধে অর্থাৎ তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা মিলানোর হুকুম নেই, কিন্তু যদি কেউ মিলায়, তবে তাতে নামাযের কোনো সমস্যা হবে না, সাহু সিদাও ওয়াজিব হবে না

৩১ । নামাযের শুরুতে সানা পড়া, রুকুতে একা পড়া, রুকু হতে উঠার সময় পড়া, সিজদাতে এবং  নিয়্যত বাঁধার সময় হাত উঠানো এবং শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতুর পর দুরুদ ও দুয়া পড়া- এই সব কাজগুলো সুন্নত, ওয়াজিব নয়। কাজেই ভুলে এই সব ছুটে গেলে তাতে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না ।

৩২। ফরজ নামাযের শেষার্ধে অর্থাৎ, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে আলহামদু পড়া ওয়াজিব নয়, বরং সুন্নত । কাজেই যদি কেউ ভুলে আলহামদু না পড়ে কতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে রুকু সিজদা করে নামায শেষ করে, তবে তাতে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না ।

৩৩। ভুল বশত ওয়াজিব তরক করলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত এরূপ করে, তবে তাতে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। যদি সাহু সিজদাও করে, তবুও নামায হবে না, নামায দোরিয়ে পড়তে হবে। যে সব কাজ নামাযের মধ্যে সিজদা ওয়াজিব হয় না । ফরজ বা ওয়াজিব নয়, (সুন্নত বা মুস্তাহাব) তা ভুল বশত তরক করলে তাতে সাহ

৩৪। যে সব নামাযে চুপে চুপে কিরাত পড়া ওয়াজিব, যেমন যোহর, আছর ও দিনের নফল এবং সুন্নত সেই সব নামাযে যদি কেউ ভুলে উচ্চৈঃস্বরে কিরাত পড়ে তবে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে । অবশ্য দুই এক শব্দ যদি কিছু উচুস্বরে বের হয়ে যায়, তাতে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। এভাবে যেসব নামাযে ইমামের উচ্চৈঃস্বরে কিরাত পড়া ওয়াজিব যেমন ফজর, ইশা, মাগরিব সেই সব নামাযে যদি ভুলে চুপে চুপে কিরাত পড়ে, তবে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। কিন্তু দুই এক শব্দ যদি আস্তে পড়ে বা একাকী নামায যদি সমস্তই আস্তে পড়ে তাতে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না ।

সাহু সিজদা দেয়ার নিয়ম

সাহু সিজদা করার নিয়ম এই যে, শেষ রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরাবে এবং আল্লাহু আকবর বলে নিয়ম মত দুটি সিজদা করবে, তারপর আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ ও দুয়া অন্য সব পড়ে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে ।

যদি কেউ ভুলে ডান দিকে সালাম না ফিরিয়ে শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়ে এমন কি দুরুদ ও দুয়া প্রভৃতি পড়ে সাহু সিজদা করে, তবুও সাহু সিজদা আদায় হবে এবং নামাযও দুরুস্ত হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *