প্রশ্ন-উত্তর

সুন্নত অর্থ কি | সুন্নত কাকে বলে

Share this

সুন্নত কাকে বলে:- যে কাজ হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বা তাঁর সাহাবী করেছেন, তাকে — সুন্নত’ বলে । সুন্নত দুই প্রকার । যথা:-

  • সুন্নতে মুয়াক্কাদা
  • সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা ।

সুন্নতে মুয়াক্কাদা কী

যে কাজ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অথবা তাঁর সাহাবীগণ সব সময় করেছেন, বিনা ওযরে কোনো সময় ছাড়েননি; তাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে । যেমন আযান, ইকামত, খতনা, নিকাহ ইত্যাদি। সুন্নতে মুয়াক্কাদা আমলের দিক দিয়ে ওয়াজিবেরই মত অর্থাৎ, যদি কেউ বিনা ওজরে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ত্যাগ করে কিংবা তরক করার অভ্যাস করে, তবে সে ফাসেক ও গুনাহগার হবে এবং নবীর খাস শাফায়াত বঞ্চিত থাকবে। কিন্তু ওয়াজিব তরকের গুনাহ্ অপেক্ষা কম গুনাহ্ হবে এবং কখনো ওযর বশত ছুটে গেলে তা কাযা করতে হবে না। কিন্তু ওয়াজিব ওযর বশত ছুটলে কাযা করতে হবে।

সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা কী

যে কাজ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অথবা তাঁর সাহাবীগণ করেছেন, কিন্তু ওযর ছাড়াও কোনো কোনো সময় তরক করেছেন, তাকে সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা বলে । (একে সুন্নতে যায়েদা ও বলে) এটা করলে সওয়াব আছে, কিন্তু না করলে গুনাহ নেই।

আরো পড়ুন:- ওয়াজিব অর্থ কি? ওয়াজিব কাকে বলে

নামাজের সুন্নতসমূহ

নিম্নলিখিত কাজগুলো নামাযের মধ্যে সুন্নতঃ

(১) তকবিরে তাহরিমা বলার পূর্বে পুরুষের উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো এবং স্ত্রীলোকের কাঁধ পর্যন্ত উঠানো সুন্নত। তবে ওযর বশত পুরুষ কাঁধ পর্যন্ত উঠালেও কোনো দোষ নেই ।

(২) তাকবিরের সময় মাথা না ঝুঁকানো ।

(৩) তাকবিরে তারিমা বলার সাথে সাথে পুরুষের নাভির নিচে এবং স্ত্রীলোকের সিনার ওপর হাত বাঁধা সুন্নত ।

(৪) ইমামের জন্য তকবির, তাসমিয়া এবং সালাম আবশ্যক পরিমাণে জোরে বলা, (মুন্ফারেদ ও মুক্তাদি শুধু নিজে শুনতে পারে তত পরিমাণে চুপে চুপে বলবে (৫) সানা, তাআউয, তাসমিয়া এবং আমীন চুপে চুপে বলবে ।

(৬) পুরুষের নাভির নিচে হাত বাঁধা, স্ত্রীলোকের জন্য বুকের ওপর বাম হাত নিচে রেখে ডান হাত উপরে রাখা ।

(৭) পুরুষের হাত বাঁধার সময় ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার ওপর রেখে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বারা বাম হাতের কব্জি চেপে ধরা এবং বাকি তিন আঙ্গুল বাম হাতের কব্জির ওপর বিছিয়ে রাখা সুন্নত ।

(৮) পুরুষগণ রুকুর সময় এমনভাবে ঝুঁকবে যেন পিঠ, মাথা ও নিতম্ব এক বরাবর হয়ে যায় ।

(৯) রুকুতে যাবার সময় ‘ আল্লাহু আকবর‘ বলা ।

 (১০) রুকু হতে মাথা উঠাবার সময় ‘ সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ বলা ।

(১১) রুকুর মধ্যে তিনবার তাসবীহ্ পড়া অর্থাৎ ‘ সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম’ বলা ।

(১২) রুকুতে পুরুষের উভয় হাত বগল হতে পৃথক রাখা। জামাতে নামাযের ক্ষেত্রে রুকু হতে দাঁড়াবার সময় ইমামের “সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলা, মুক্তাদির “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা এবং একা নামাজির পক্ষে উভয়টি বলা সুন্নত।

(১৩) রুকুর মধ্যে আঙ্গুলগুলো ফাক করে উভয় হাত দ্বারা উভয় হাটুকে ধরা স্ত্রীলোকগণ হাঁটুর ওপর কেবল হাত রাখবে ।

(১৪) সিজদা হতে মাথা উঠাবার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা (অর্থাৎ উপরিউক্ত রূপে লাম টেনে বলা যাতে দাঁড়িয়ে আকবর বলা যায়)।

(১৫) সিজ্দায় তিনবার তসবিহ পড়া অর্থাৎ ‘ সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ বলা ।

(১৬) সিজদার সময় দুই হাত, দুই পা এবং দুই হাঁটু মাটিতে রাখা ।

(১৭) আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় পুরুষের জন্য বাম পা বিছিয়ে তার ওপর বসা

(১৮) দুই সিজদার মাঝখানে কিছু সময় বসা এবং তদবস্থায় দুই হাত উরুর উপর হাটু সংলগ্ন করে রাখা ।

(১৯) শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর দুরুদ শরীফ পড়া।

(২০) দুরুদের পর দুয়া মাসূরাহ্ পড়ে দোয়া করা ।

(২১) রুকুতে যাবার সময়, সিদায় যাবার সময়, সিজদা হতে উঠার সময় এবং দুয়ায়ে কুনূত আরম্ভ করার সময় ‘আল্লাহু আকবর’ বলা ।

(২২) রুকু হতে মাথা উঠাবার সময়, ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলা ।

(২৩) রুকু থেকে উঠে “রাব্বানা লাকাল হাম্দ“ বলা ।

(২৪) সালাম ফিরাবার সময় ডানে বায়ে মুখ ফিরিয়ে পার্শ্বস্থ নামাজি এবং ফেরেশ্তার প্রতি নিয়্যত করে সালাম করা ।

(২৫) সিজদা অবস্থায় পুরুষের পেট রান হতে, কনুই বগল হতে এবং উভয় হাত মাটি হতে উঠিয়ে রাখা সুন্নত ।

(২৬) প্রথম ও শেষ বৈঠকে পুরুষের ডান পায়ের আঙ্গুলসমূহের ওপর ভর দিয়ে পা খাড়া রেখে আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে বাম পা মাটির ওপর বিছিয়ে তার ওপর বসা এবং উভয় হাত জানুর ওপর এবং আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ হাঁটুর নিকটে রাখা সুন্নত।

(২৭) ইমামের জন্য উচ্চ আওয়াযে ‘ সালাম— বলা সুন্নত ।

(২৮) ইমামের জন্য সালামের মধ্যে সমস্ত মুক্তাদিকে এবং সঙ্গের ফেরেশ্তাগণকে সালাম করার নিয়্যত করা সুন্নত। মুক্তাদির জন্য সালামের মধ্যে সমস্ত মুসল্লিকে এবং সঙ্গে ফিরিশ্তাকে এবং ইমামকে সালাম করার নিয়্যত করা সুন্নত । আর ইমাম যদি ডান দিকে থাকে, তবে ডান দিকে সালাম ফিরাবার সময়, যদি বাম দিকে থাকে, তবে বাম দিকে সালাম ফিরাবার সময় এবং যদি সামনাসামনি থাকে, তবে উভয় দিকে সালাম ফিরাবার সময় ইমামকে সালাম করার নিয়্যত করা সুন্নত ।

(২৯) তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় পুরুষের উভয় হাতকে জামার আস্তিন কিংবা চাদর ইত্যাদির ভেতর থেকে বের করা সুন্নত, যদি অত্যধিক অসুস্থতা, শীত ইত্যাদির মতো ওযর না থাকে ।

(৩০) যদি রুকু হতে উঠার সময় তাসমিয়া (সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ্) এবং রুকু হতে উঠে তাহমিদ (রাব্বানা লাকাল হাম্দ) না পড়ে বা রুকুতে রুকুর তাসবিহ না পড়ে, বা সিজদায় তাসবিহ না পড়ে বা শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দুরুদ শরীফ না পড়ে, তবে নামায হয়ে যাবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হবে। এভাবে যদি কেউ দুরুদ শরীফ পড়েই সালাম ফিরায়, কোনো দোয়া মাসূরাহ্ না পড়ে তবুও নামায হয়ে যাবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হবে।

(৩১) নামাযের নিয়্যত (তাকবীরে তাহরিমা) বাঁধার সময় হাত উঠানো সুন্নত। হাত উঠালে নামায হয়ে যাবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হবে ।

(৩২) প্রত্যেক রাকাত নামায শুরু করার সময় বিস্মিল্লাহ্ পড়ে আলহাম্দু সূরা শুরু করবে। অন্য সূরা শুরু করার সময়ও বিস্মিল্লাহ্ পড়ে শুরু করা উত্তম ।

(৩৩) নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায়, রুকুর সময় পায়ের দিকে, সিজদার সময় নাকের দিকে, বসার সময় কোলের দিকে এবং সালামের সময় নিজের কাঁধের দিকে দৃষ্টি রাখা মুস্তাহাব। (তা ছাড়া দূরে দৃষ্টি দেয়া সম্পূর্ণ অন্যায়)

আরো পড়ুন:- ইমাম হওয়ার শর্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *