কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম বাংলা উচ্চারণসহ
Share this
কবর জিয়ারত
পুরুষদের জন্য কবর জিয়ারত করা মুস্তাহাব। জিয়ারত করার অর্থ দেখা-শুনা । সপ্তাহে অন্তত একদিন করব জিয়ারত করা উচিত। সেই দিন শুক্রবার হওয়াই সবচেয়ে ভাল। বুজুর্গানে দ্বীনের কবর জিয়ারত করার জন্য সফরে যাওয়া দুরুস্ত আছে, কিন্তু শরীয়তের পরিপন্থি কোনো আকিদা বা আমল হওয়া ঠিক নয় ।
যেরূপ বর্তমানে ওরসের সময় হয়ে থাকে । (যেমন আজকাল অনেকে মাযার জিয়ারত করতে গিয়ে এরূপ ধারণা করে যে, বুজুর্গ মনের ভেদ জানতে পারেন বা মনের বাসনা পূর্ণ করে দিতে পারেন । কেউ বা মাযারকে সিজদা করে, মাযারের উপর ফুল বাতি বা শিরনি ছড়ায়; এরূপ করলে মহা পাপ হবে) ।
কবর জিয়ারতের দোয়া
কবর দর্শন করাকে জিয়রতের বলে। কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে নিম্ন দোয়া পাঠ করবে এবং কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিদের আত্মার মুক্তির জন্য দোয়া-দুরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করবে । কোন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলে এ দোয়া পাঠ করতে হয় ।
কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ : আস্সালামু আলাইকুম ইয়া আহলালকুবুর।
কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা অর্থ : হে কবর বাসীগণ! তোমাদের উপর শান্তিবর্ষিত হোক।
এরপর কবর জিয়ারতের নিয়ত থাকরে দাঁড়িয়ে সর্ব প্রথম এ দোয়া পড়বে-
উচ্চারণ ঃ আসসালামু আলাইকুম ইয়া আতালদিয়ারি মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি ওয়াল মুসলিমীনা ওয়ার মুসলিমাত ওয়া ইন্না ইনশা আল্লাহু বিকুম লাহিকুনা নাসআলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আফিয়াহ ।
এরপর দরূদ শরীফ, সূরায়ে ফাতেহা, ইখলাছ, নাছ, ফালাক, কাফিরুন ইয়াসিন, ও সূরায়ে মূলক ইত্যাদি সূরা এবং কোরআনের অন্যান্য আয়াত যতটুকু সম্ভব হয় তিলাওয়াত করে তার ছওয়াব তাদের রুহের মাগফিরাতের জন্য দান করে দিবে । যদি কেউ ইচ্ছে করে তবে হাত উঠিয়ে স্বীয় মনোবাঞ্ছা আল্লাহর কাছে বলতে পারে, তবে কবরস্থানে হাত না উঠিয়ে দোয়া করাই ভাল ।
এছাড়াও নফল নামায, রোযা ক্ষধার্তকে অন্ন দান মসজিদ ও মাদ্রাসায় দান করার মাধ্যমেও মৃতের জন্য ছওয়াব রেসীট করা যায়। আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে তার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
আরো পড়ুন:- জানাযার নামাজের নিয়ত ও দোয়া বাংলা অর্থসহ
করব
লাশের চেয়ে কবর একটু লম্বা এবং প্রস্থ লম্বার অর্ধেক হবে। পুরুষের কবর নাভি পর্যন্ত গভীর ও স্ত্রীলোকের কবর বুক পর্যন্ত গভীর করে খুঁড়তে হবে। সাধারণত দুই প্রকার কবর খোঁড়া হয় । এক প্রকার বগলী ও অন্য প্রকার সিন্দুকী। মাটির অবস্থা দেখে সিন্দুকী বা বুগলী খনন করতে হয়।
লাশ কবরে রেখে উপরে কাঁচ বাঁশ দিবে। কাঠ কিংবা পাকা ইট দেয়া মাকরূহ। দাফনকালে যারা উপস্থিত থাকেন তারা প্রত্যেকে নিম্নের দোয়া পড়ে তিন মুষ্টি মাটি কবরে দেয়া মুস্তাহাব।
উচ্চারণ ঃ মিনহা খালাক্বনাকুম ওয়া ফীহা নুঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা।
সমুদ্রের জাহাজে অথবা নৌকায় অবস্থানকালে যদি কারও মৃত্যু ঘটে তাহলে লাশ গোসল ও কাফন দিয়ে জানাযা পাঠান্তে সমুদ্রে ছেড়ে দিবে
দাফন করার পর দোয়া
দাফন করার পর কিছুক্ষণ কবরের নিকট অপেক্ষা করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দুয়ায়ে মাগফেরাত করা বা কিছু কুরআন পাক পড়ে ছওয়াব বখশিয়ে দেয়া মুস্তাহাব। মাথার দিকে দাঁড়িয়ে সূরা-বাকারার শুরুর তিন আয়াত এবং পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে শেষে তিন আয়াত পড়া মুস্তাহাব।
কবর সম্পর্কিত কতিপয় মাসায়েল
মাটি দেয়ার পর কবরে পানি ছিটিয়ে দেয়া মুস্তাহাব। (পানি মাথার দিক হতে ছিটাবে) । কিন্তু কবর লেপা মাকরুহ। মৃত ব্যক্তিকে ছোট বা বড় ঘরের মধ্যে কবর দেয়া নিষেধ। কোনো, ঘরের মধ্যে কবর পাওয়া পয়গম্বরের জন্য খাছ। কবরের উপরটা চতুষ্কোণ বানান মাকরুহ। বিঘত খানেক উঁচা করে উটের পিঠের ন্যায় মাঝখানে উঁচু এবং দুই দিকে ঢালু বানান মুস্তাহাব কবর এক বিঘত হতে অনেক উঁচু করা, চুনা সুরকী দিয়ে পাকা বা লেপা মাকরুহ্
দাফন শেষে কবরের উপরের সৌন্দর্যের জন্য গম্বুজ বা পাকা ঘর বানান হারাম এবং মযবুতির জন্য পাকা বানান মাকরুহ। এভাবে স্মরণার্থে কবরের উপর কিছু লিখে রাখা যদি আবশ্যক হয়, তবে তা জায়েয, নতুবা জায়েয নয়।
কিন্তু এই যুগের সর্বসাধারণ যেহেতু তাদের আকিদাহ এবং আমল অত্যন্ত খারাপ করে ফেলেছে, সে কারনে মোবাহ জিনিস ও না-জায়েয হয়ে যায়। এজন্য এসব কাজ একেবারেই না-জায়েয হবে আর তারা যে কারণটি প্রয়োজনীয়তার স্বপক্ষে দেখায় তা সবই নফসের বাহানা, তারা নিজেরাও একথা মনে মনে অনুভব করে ।
কবরের উপর কোনো তাজা ডাল রেখে দেয়া মুস্তাহাব, আর যদি কবরের উপর (বা পার্শ্বে) কোনো গাছপালা জন্মে তবে তা কেটে বা মেরে ফেলা মাকরুহ। কিন্তু নিজে নিজে শুকিয়ে বা মরে গেলে কেটে ফেলা মাকরুহ নয়)।
একটি কবরে একজনের বেশি মাইয়্যেত দাফন করা উচিত নয়, তবে অত্যন্ত ঠেকাবশত জায়েয আছে। এরকম করতে হলে মাইয়্যেতকে যদি শুধ পুরুষ হয়, তবে তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে ভাল তাকে সামনে অর্থাৎ,
কেবলার দিকে রাখতে হবে এবং যদি পুরুষ, স্ত্রী (ও বালক) মিশ্রিত হয়. তবে প্রথমে কেবলার দিকে পুরুষ, (তারপর বালক) তারপর স্ত্রীলোকগণকে রাখতে হবে। এবং প্রত্যেক দুইজনের মধ্যে মাটি দ্বারা কিছু আড়ালের মত করে দিতে হবে।
মৃতকে কবর দিবার পর আবার কবর খুলে মাইয়্যেতকে বের করা দুরুস্ত নয়। অবশ্য যদি কোনো বান্দার হক নষ্ট হয় যেমন যদি অন্যের জমিনে মাটি দেয়া হয় এবং জমিনওয়ালা ঐ জমিনের পরিমাণ বা তার মূল্য নিয়েও ক্ষান্ত না হয়, বা কারো মূল্যবান কোনো জিনিস যদি কবরে থেকে যায়, তবে কবর খোয়া জায়েয হবে ।
” যদি কোন গর্ভবর্তী স্ত্রীলোকের মৃত্যু হয় এবং পেটের মধ্যে বাচ্চা নড়া-চড়া করে, তবে পেট কেটে বাচ্চা বের করতে হবে । এরূপে যদি কেউ কারো টাকা বা গিনি গিলে মরে যায় এবং টাকাওয়ালা মাফ না করে বা মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তিও না থাকে, তবে পেট কেটে টাকা বের করতে হবে। ত্যাজ্য সম্পত্তি থাকলে তা হতে পরিশোধ করবে, কিন্তু পেট কাটবে না ।
যে স্থানে যার মৃত্যু হয় সে এলাকার কবরস্থানেই তাকে মাটি দেয়া উত্তম, অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া ভাল নয়, যদি ঐ স্থানে দুই এক মাইলের বেশি দূরে না হয় । আর যদি তদপেক্ষা অধিক দূরবর্তী হয়, তবে সেখানে নিয়ে যাওয়া জায়েয নয় (মাকরুহ)। কিন্তু মাটি দিয়ে ফেললে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া কোনোরূপেই জায়েয নয় ।
গদ্যে বা পদ্যে মৃত ব্যক্তির গুনাগুণ প্রকাশ করা বা প্রশংসা করা জায়েয আছে। কিন্তু অতিরঞ্জিত করা বা মিথ্যা প্রশংসা করা জায়েয নয় ।
মৃত ব্যক্তির শোকাতুর আত্মীয়দেরকে ছবরের ফযিলত উপকারিতা বর্ণনা করে। সান্ত্বনা দেয়া এবং মৃতের জন্য নাজাতের এবং তার আত্মীয়-স্বজনের জন্য ছবর ও ছওয়াবের দুয়া করা জায়েয। শোকাতুরকে সান্ত্বনা দেয়াকে আরবিতে তাযিয়াত বলে । তিন দিনের পর তাযিয়াত করা মাকরুহ। একবারের পর দ্বিতীয় বার তাযিয়াত করা মাকরুহ্
তানযিহি; কিন্তু যদি আত্মীয়-স্বজন বিদেশ হতে দেরিতে আসে বা খবর দেরিতে পৌঁছে, তবে মাকরুহ নয়। নিজের জন্য কাফন প্রস্তুত করে রাখা মাকরুহ নয়, কিন্তু কবর প্রস্তুত করে রাখা মাকরুহ।