দোয়া

জানাযার নামাজের নিয়ত ও দোয়া বাংলা অর্থসহ

Share this

কারো যখন মৃত্যুকাল উপস্থিত হয় তখন তার তাওবা করা, ঋণ থাকলে পরিশোধ করা এবং ক্ষমা চেয়ে সকলকে সন্তুষ্ট করা কর্তব্য। মুমূর্ষু ব্যক্তিকে ডান কাতে শুইয়ে কেবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে দিবে, এটা সুন্নত। যদি এই প্রক্রিয়ায় অসুবিধা হয় তা হলে ।

চিৎকরে পশ্চিম দিকে মুখ করে দিবে এবং তার নিকট বসে কলেমা শাহাদাত ও সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, যেমন মুমূর্ষ ব্যক্তি শুনতে পায়। রূহ বের হয়ে গেলে এক টুকরা কাপড় দ্বারা চোয়াল বেঁধে দিবে।

কেননা মুখ হা করে থাকতে পারে এবং চক্ষুও বন্ধ করে দিবে। হাত-পা সোজা করে দিবে, সতর কাপড় দিয়ে ঢেকে দিবে। যদি কোন গলিজ, পায়খানা ইত্যাদি বের হয় তবে হাতে কাপড় জড়িয়ে মুছে দিবে এবং মৃত ব্যক্তির বিছানা বদল করে দিবে ।

জানাযার নামাজের নিয়ম

কবরস্থ করার পূর্বে মৃতকে সামনে রেখে চার তাকবীরে যে নামায পড়া হয় তাকে জানাযার নামায বলে। জানাযার নামায ‘ফরজে কেফায়া’। কতিপয় ব্যক্তি আদায় করলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হবে।

আর কেউই আদায় না করলে সকলেই গুনাহগার হবে। পাড়া-প্রতিবেশী সকল মুসলমানের এই নামায পড়া কর্তব্য। কেননা প্রত্যেকেরই এইভাবে দুনিয়া ছেড়ে যেতে হবে।

এই নামায জামায়াতে পড়তে হয় । এ নামাযে রুকু বা সেজদা নেই। জানাযায় লোক যত বেশি হয় ততই ভাল । কেননা বেশি লোকের দোয়ায় মৃতের আত্মা বেশি শান্তি পায় । যারা এই নামাযে যোগদান করে তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হন ।

মৃত দেহ সুবিধাজনক স্থানে খাটের উপর উত্তর দিকে মাথা রেখে কেবলামুখী করে জানাযার নামায আদায় করবে।

মৃতের ওলিই ইমামতি করবে মৃত ব্যক্তির পুত্র আলেম হলে অথবা ওলি যাকে হুকুম করবে সেই ইমামতি করবে, ওলির বিনা এজাযতে জানাযার ইমামতি করা উচিত নয়।

জানাযার নামাযে ইমাম ব্যতীত মোক্তাদিগণ তিন কাতারে দাঁড়াবে। বেশি লোক হলে অধিক সংখ্যায় বিজোড় কাতারে দাঁড়াবে মোক্তাদিগণ নিয়্যত করে তাকবীর তাহরীমা বাঁধবে।

বাকী তিন তাকবীরে আর হাত তুলতে হবে না ।

জানাযার নামাজের নিয়ত

نَوَيْتُ أَنْ أُودِيَ لِلَّهِ تَعَالَى أَرْبَعَ تَكْبِيرَاتٍ صَلوةِ الْجَنَازَةِ فَرْضِ الْكِفَايَةِ التَّنَا : لِلّهِ تَعَالَى وَالصَّلوةَ عَلَى النَّبِى وَالدُّعَا: لهذا لِهَذَا لمَيتِ مُتَوجها إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ .

জানাযার নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ- নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ তাকবীরাতি ছালাতিল জানাযাতি ফারদিল কিফায়াতি আচ্ছানাউ লিল্লাহি তা’আলা ওয়াচ্ছালাতু শারীফাতি আল্লাহু আকবার । আলান্নাবিয়্যি ওয়াদ্দুয়াউ লিহাযাল মাইয়্যিতি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতি

অর্থ : আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে চার তাকবীরের সাথে জানাযার নামায পড়তে নিয়্যত করলাম। সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহর নিমিত্ত আর নবীর উপর দরুদ ও এই মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া বর্ষিত হউক, আল্লাহু আকবার ।

মুর্দার স্ত্রীলোক হলে (লিহাযাল মাইয়্যিতি)-এর স্থলে (লিহাযিহিল মাইয়্যিতি) বলতে হবে । তাকবীর বলে এর পর ইমাম এবং মোক্তাদীগণ নিম্ন বর্ণিত ছানা পড়বে।

আরো পড়ুন:- জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া

ছানা

উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ।

এরপর দ্বিতীয় তাকবীর বলে নিম্নের দরূদ পাঠ করে তৃতীয় তাকবীর বলবে।

দরূদ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ । আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

এরপর তৃতীয় তাকবীর বলে নিম্নের দোয়া পাঠ করবে।

জানাযার নামাজের দোয়া

জানাযার নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ- আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গাইবিনা ওয়া চাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনচানা আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমানি। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধ, পুরুষ ও স্ত্রীলোক সকলকে ক্ষমা কর । হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাদের জীবিত রাখ তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রেখো এবং যাদেরকে মৃত্যু দান কর তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত দান করে। তোমারই দয়ায়-হে সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাময় ।

উক্ত দোয়া পাঠান্তে চতুর্থ তাকবীর বলে ডানে ও বামে সালাম ফিরাবে। মৃত যদি নাবালেগ ছেলে হয় তা হলে উক্ত দোয়ার পরিবর্তে নিম্নের দোয়া পাঠ করবে ।

اللّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلَهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَعًا

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আজাআলহু লানা ফারতাও ওয়াজআলহু লানা আজরাও ওয়া যখরাওঁ ওয়াজআলহু লানা শাফিয়াওঁ ওয়া মুশাফাআ । মৃত যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তা হলে নিম্নের দোয়া পাঠ করবে।

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহা লানা ফারতাঁ ওঁ ওয়াজআলহা লানা আজরাওঁ ওয়া যুখরাওঁ ওয়াজআলহা লানা শাফিআতাওঁ ওয়া মুশাফাআহ । মৃত সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার জানাযা পড়তে হয় না কিন্তু ভূমিষ্ঠ হবার পর মারা গেলে জানাযা পড়তে হবে।

জানাযার নামাযের পরে লাশ খাটের উপর রেখে খাটের চারকোণ কাঁধে উঠিয়ে কালেমা শাহাদাত পাঠ করতে করতে গোরস্থানের দিকে অগ্রসর হবে। লাশ স্ত্রীলোকের হলে খাটের উপর পর্দা করে নিবে। হাঁটার সময় মুর্দারের মাথা সর্বদা সামনের দিকে রাখবে।

মুর্দারের মুখ পশ্চিম দিকে রেখে কবরে নামান সুন্নত। কবরে নামাবার সময় নিম্নের দোয়া পাঠ করবে।

بِسمِ اللهِ وَعَلى مِلَّةِ رَسُول الله .

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়া ‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহি ।

অর্থ : আল্লাহর নামের সাথে হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর ধর্মের উপর এই মুর্দার কবরে রাখলাম । লাশ স্ত্রীলোকের হলে পুত্র, পৌত্র, পিতা, ভ্রাতা, চাচা, দাদা এবং যাদের সাথে বিবাহ হারাম এই ধরণের লোক কবরে নামাবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *