জুমার নামাজের নিয়ত ও জুমার নামাজ কত রাকাত
Share this
জুমার নামাজের বিবরণ: আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ শুক্রবার দিনে জোহরের নামাজের পরিবর্তে যে নামাজ পড়া হয় তাকে জামআর নামাজ বলা হয়। জুমার নামাজ পড়া ফরজে আইন। যা না পড়লে গুরুতর গুনাহ হবে।
জুমার নামাজের জন্য জামাত শর্ত । একাকী জুমার নামাজ পড়া যায় না । জুমার নামাজ ইমাম ব্যতীত অন্তত দুই জন লোক দরকার । জুমার ও যোহরের ওয়াক্ত একই । সুতরাং জামাতের সাথে জুমার নামাজ পড়লে সেদিন আর যোহর পড়তে হয় না ।
জুমার নামাজ কত রাকাত
জুমার নামাজ ১০ রাকাত। তবে জোহরের নামাজের মতো কেউ চাইলে অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করতে পারে। নিচে ১০ রাকাত জুমার নামাজের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো-
ফরজ | ২ রাকাত |
কাবলাল জুমা (সুন্নত) | ৪ রাকাত |
বাদাল জুমা (সুন্নত) | ৪ রাকাত |
কাবলাল জুমার নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসলাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকআতি ছালাতিল কাবলাল জুমুআতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতীশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
জুমার দুই রাকাত ফরজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসকিতা আন যিম্মাতি ফারদাজ জোহরি বি আদায়ি রাকআতাই ছালাতিল জুমুআতি ফারদ্বাল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার
বাদাল জুমার নামাজের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকআতি ছালাতিল বা’দাল জুমুআতি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
দুই রাকাত ওয়াক্তি সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহ তা’আলা রাকআতাই ছালাতিল ওয়াক্তিয়া সুন্নাতা রাসুলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতীশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
যে কোন নামাজের জন্য নিয়ত আরবী বাংলা অথবা যে কোন ভায়ায় করা যায়। নিয়্যত মনে মনে করতে হয়।
জুমার দিনে করণীয়
গোসল করা সুন্নত। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড়-চোপড় পরিধান করা এবং খোশবু ব্যবহার করা মুস্তাহাব। প্রত্যেক বালেগ, বুদ্ধিমান, মুকীম ও সুস্থ পুরুষের প্রতি জুমুআর নামায ফরয। নাবালেগ, মুসাফির, পাগল, অন্ধ, খোঁড়া বিকলাঙ্গ ও স্ত্রীলোকের প্রতি জুমুআ পড়া ওয়াজিব নয়। তবে পড়লে তাদের যোহরের নামায আদায় হয়ে যাবে।
জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার শর্ত
জুমার ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত
- শহর হওয়া অর্থাৎ শহরের নিম্নতম শর্তযুক্ত স্থান হওয়া ।
- মুসলমান বাদশাহ, কাজী বা তাদের প্রতিনিধি বিদ্যমান থাকা ।
- মুসলমাগণের সম্মতিতে নির্বাচিত ইমামই বাদশাহের প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য ।
- ইযনে আম অর্থাৎ সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকা ।
জুমুআর নামাযের নিয়্যতসমূহ সমজিদে ঢুকে প্রথমেই দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ ও পরে চার রাকআত কাবলাল জুমআর নামায পড়তে হয়।
চার রাকআত কাবলাল জুমুআ সুন্নতে মোআক্কাদা। তাহিয়্যাতুল ওযূ কোন ওয়াক্তের নামায নয় ওযূ করার পর মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে পড়ে নেয়া ভাল ।
আরো পড়ুন:- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহিয়্যাতুল ওযু নামাযের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আর উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকআতাই ছালাতিত তাহিয়্যাতি লিলওযুয়ি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
দুখুলুল মসজিদ নামাযের নিয়ত
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকআতাই ছালাতি দুখুলিল মাসজিদি সুন্নাতা রাসূলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
মুসনাদে আহমদে আছে- জুম’য়ার রাতের ফযিলত শবে কদর অপেক্ষাও অধিক জুময়া’র রাতের মাহাত্ম্য : কারণ, এই রাত্রেই সরওয়ারে কায়েনাত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় মাতৃগর্ভে শুভাগমন করেছিলেন এবং হযরতের শুভাগমনের মধ্যেই দুনিয়া ও আখেরাতের অগণিত ও অশেষ মঙ্গল নিহিত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেন, “জুম’য়ার রাত নূরে ভরা রাত এবং জুম’য়ার নূরে ভরা দিন।” -মেশকাত শরীফ দিন
জুমআ’র দিন সপ্তাহের সর্বোত্তম দিন : মুসলিম শরীফে এক বর্ণনায় আছে- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সপ্তাহের দিনসমূহের মধ্যে জুম’য়ার দিনই সর্বশ্রেষ্ঠ দিন।
এই দিনেই হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, এই দিনেই তাঁকে বেহেশতে স্থান দান করা হয়েছিল, এই দিনেই তাঁকে বেহেশত হতে বের করে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং এই দিনেই কিয়ামত (হিসাব নিকাশের পর পাপীদের দোযখ নির্বাসন ও মু’মিনগণের বেহেশত গমন) অনুষ্ঠিত হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আল্লাহ্র নিকট ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা অপেক্ষাও জুম’য়ার দিন অধিক মর্যাদাশীল (আর এই দিনই সমস্ত দিনের সর্দার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দিন)। —ইবনে মাজাহ
আবু দাউদ শরীফে এসেছে- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- জুম’য়ার দিনই সর্বাপেক্ষা অধিক ফযিলতের দিন। এই দিনেই কিয়ামতের জন্য শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। সুতরাং তোমরা এই দিনে আমার জন্য বেশি করে দুরুদ শরীফ পড়বে। ঐ দিন তোমরা যখন দুরুদ বা সালাম পড় তৎক্ষণাৎ তা আমার সামনে পেশ করা হয় (এবং আমি তার প্রতিউত্তর ও দোয়া দেই)।
সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল ! আপনার সামনে কিভাবে পেশ করা হয় (হবে)?? মৃত্যুর পর তো আপনার হাড় পর্যন্ত থাকবে না । তখন মহানবী (সাঃ) বললেন, “(জেনে রাখ) আল্লাহ্ তা’য়ালা জমিনের নবীদের শরীর হজম করাকে হারাম করে রেখেছেন।”
জুম’য়া ঈদের সমতুল্য
এক জুম’য়ার দিন হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন- “হে মুমিনগণ! জুম’য়ার দিনকে আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্য ঈদের দিন ধার্য করেছেন । অতএব, এই দিনে তোমরা গোসল করবে, (গরিব হলেও সাধ্যমত ভাল কাপড় পরিধান করবে) অবশ্যই মিসওয়াক করবে, (দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করবে) এবং যার কাছে যে সুগন্ধি (আতর, মেক, তৈল) থাকে তা লাগাবে ।”
সাহাবী ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত
করলেন-
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আজ আমি তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং আমার অনুগ্রহ পূর্ণরূপে তোমাদের দান করলাম এবং তোমাদর জন্য ইসলামকে ধর্মরূপে মনোনীত করলাম” ।
তখন তার নিকট একজন ইহুদি বসা ছিল । ইহুদি লোকটি (আয়াতের মর্ম বুঝে) বলল (ধর্মের পূর্ণাঙ্গ ও সত্য হওয়া সম্বন্ধে এবং আল্লাহর এত বড় অনুগ্রহ প্রাপ্তি সম্বন্ধে এমন (স্পষ্ট বাণী) আয়াত যদি আমাদের ভাগ্যে জুটত, তবে আমরা এমন আয়াত নাযিল হওয়ার দিনকে চিরতরে ঈদের দিন ধার্য করে নিতাম।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) উত্তর করলেন ঃ স্বয়ং আল্লাহ্ তা’য়ালাই এই আয়াত নাযিল হওয়ার দিনকে ঈদের দিন ধার্য করেছেন অর্থাৎ, সেদিন জুম’য়া এবং আরাফাতের দিন ছিল। অতএব, আমরা নিজেরা ঈদ বানাবার প্রয়োজন নেই ।
জুম’য়ার দিন দোয়া মঞ্জুর হয়
বুখারী শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- জুম’য়ার দিনে সারা দিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে যে, সেই সময় কোন মু’মিন বান্দা দিল্লাহর নিকট যা কিছু চাইবে তাই পাবে। এই সময়টি যে কোন সময় তা নির্দিষ্ট করে মতভেদ করেছেন।
তন্মধ্যে দুটি মতই সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। একটি এই যে, সেই বলা হয়নি। হাদীসের ব্যাখ্যাকার ইমামগণ এটা নির্দিষ্ট করতে গিয়ে অনেক রকম সময়টি খুত্বার সময় হতে নামাযের শেষ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আছে।
দ্বিতীয় মতকে ওলামাদের এক বড় দল গ্রহণ করেছেন এবং এর স্বপক্ষে বহু সহীহ হাদীস রয়েছে। আল্লামা দেহলভী (র) বলেন- এই বর্ণনাটি সহীহ্, কেননা, হযরত ফাতেমা (রাঃ) জুম’য়ার দিন খাদেমকে বলে দিতেন যে, জুম’য়ার দিন শেষ হওয়ার সময়টি আমাকে খবর দিও।
হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আন্হা শুক্রবার দিনের শেষ ভাগে আসরের পর সব কাজ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ্ জি এবং দোয়ায় মশগুল হতেন ।
আল্লাহ তা’য়ালা জুম’য়ার দিনের শপথ করেছেন
་ ང མ তিরমিযী শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “আল্লাহ্ তা’য়ালা স্বীয় পবিত্র কালামে শাহেদ (Li) শব্দের কসম করেছিলেন। এর অর্থ- জুম’য়ার দিন ।
আল্লাহ্র কাছে জুম’য়ার দিন অপেক্ষা ভাল দিন আর নেই । এই দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়ে কোনো মু’মিন বান্দা আল্লাহ্র নিকট যে কোন দুয়া করবে, আল্লাহ্ তা’য়ালা তা কবুল করবেন এবং যে কোনো বিপদ মুসীবত হতে রক্ষা পাবার জন্য আল্লাহ্র নিকট কাঁন্নাকাটি করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তাকে সেই বিপদ হতে রক্ষা করবেন।” শব্দটি সূরায়ে-বুরূজে আছে, আল্লাহ্ তা’য়ালা ঐ
দিনের কসম খেয়েছেন ।
وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْبُرُوحِ وَالْيَوْمِ المَوْعُودٍ وَشَاهِدٍ وَمَشْهُو
অর্থাৎ, “বুরূজ বিশিষ্ট আসমানের কসম, প্রতিশ্রুতি ও কিয়ামতের দিনের কসম, আর শাহেদ (জুম’য়া)-এর কসম এবং মাশহুদ (আরাফাত) -এর কসম ।
জুম’য়ার দিন দোযখের আগুন স্তিমিত হয়
প্রত্যহ দ্বিপ্রহরের সময় দোযখের আগুনের তেজ বাড়িয়ে দেয়া হয়; কিন্তু জুম’য়ার দিন দ্বিপ্রহরে একমাত্র জুম’য়ার বরকতে দোযখের আগুনের তেজ হয় না ।
জুম’য়ার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণকারীর অবস্থা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “যে (মু’মিন) মুসলমান বান্দার মৃত্যু জুম’য়ার দিনে বা জুম’য়ার রাত্রে হয়, আল্লাহ্ পাক তাকে গোর-আযাব হতে বাঁচিয়ে রাখেন। – তিরমিযী
জুমার নামাজের ফজিলত
হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি শুক্রবারে গোসল করে যথাসম্ভব পাক-সাফ হয়ে চুলে তৈল মেখে খোশ্ব লাগিয়ে জুম’য়ার নামাযের জন্য যাবে এবং মসজিদে গিয়ে কাউকে তার জায়গা হতে উঠিয়ে না দিয়ে যেখানে জায়গা মিলে সেখানেই বসবে এবং যে পরিমাণ নামাজ তার ভাগ্যে রয়েছে তা পড়বে, তারপর যখন ইমাম খুত্বা দিবেন, তখন চুপ করে খুতবা শুনবে, তার গত জুম’য়া হতে এই জুম’য়া পর্যন্ত যত (সগিরা) গুনাহ হয়েছে সব মাফ হয়ে যাবে।
হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে গোসল করে পদব্রজে তাড়াতাড়ি জামে মসজিদে যাবে, গাড়ি বা ঘোড়ায় সওয়াব হয়ে যাবে না এবং খুতবার সময় বেহুদা কাজ করবে না তথা কথাবার্তা বলবে না এবং চুপ করে খুব মনোযোগের সাথে খুত্বা শ্রবণ করবে, তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে পূর্ণ এক বৎসরের ইবাদতের (এক বৎসরের নফল রোযার এবং নামাজের) সওয়াব মিলবে
জুমার নামাজ ফরজে আইন
জুম’য়ার নামাজ পড়া ফরজে আইন। কুরআনের স্পষ্ট বাণী দ্বারা, হাদীসে মুতাওয়াতের দ্বারা ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা এটা প্রমাণিত আছে এবং এটা ইসলামের একটি অন্যতম অঙ্গ । কেউ এর ফরযিয়্যাত অস্বীকার করলে সে কাফির হবে এবং বিনা ওযরে কেউ তরক করলে, সে ফাসেক বলে বিবেচিত হবে
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলতেছেন ঃ
يأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلوةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إلى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ .
অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! যখন জুম’য়ার নামাজের আযান হয়, তখন তোমরা ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ করে আল্লাহর জিকিরের দিকে দৌড়িয়ে চল। তোমরা যদি বুঝ, তবে এটাই তোমাদের জন্য উত্তম।”- সূরা জুম’য়া
অত্র আয়াতে আল্লাহর জিকিরের অর্থ জুময়ার খুতবা এবং নামাজ আর দৌড়ায়ে চলার অর্থ- কাল বিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ দুনিয়ার সব কাজ কর্ম-পরিত্যাগ করে আল্লাহর জিকিরের জন্য ধাবিত হওয়া ।
হাদীস শরীফে আছে, মুসাফির, মহিলা, নাবালেগ এবং গোলাম ব্যতীত প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তির উপরই জুম’য়ার নামাজ ফরজ। অতএব, যদি কেউ এই ফরজ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কোনো বেহুদা কাজে দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কাজে লিপ্ত হয়, তবে আল্লাহ তা’য়ালা সেই ব্যক্তি হতে মুখ ফিরিয়ে নেন।
নিশ্চয় জানবে, আল্লাহ তা’য়ালা অমুখাপেক্ষী এবং তিনি সর্বাবস্থায় প্রশংসনীয়। অর্থাৎ তিনি কারোর ইবাদতের পরওয়া করেন না, তার ফায়েদাও নেই, তিনি সর্বগুণের আধার, কেউ তাঁর প্রশংসা করুক বা না করুক ।
হাদীস শরীফে আছে, শরয়ী গোলাম, স্ত্রীলোক, নাবালেগ ছেলে এবং পীড়িত শ্রেণীর এবং এটি আল্লাহর হক। -আবু দাউদ ব্যক্তি ব্যতীত প্রত্যেক মুসলমানের উপরই জুম’য়ার নামায জামাতের সঙ্গে পড়া ফরজ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ? আমার দৃঢ় ইচ্ছা যে, কাউকে আমার স্থলে ইমাম বানিয়ে দেই, অতঃপর তাদের ঘর-বাড়িসমূহ জ্বালিয়ে দেই। (এই বিষয়ের হাদীস জামাত তরককারীদের সম্পর্কেও বর্ণিত হয়েছে- যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।) কী
মাসয়ালা : হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি বিনা ওযরে জুম’য়ার নামাজ তরক করে, তার তাকে মুনাফিকের দলভুক্ত করে দেয়া হয় । – মেশকাত নাম এমন কিতাবে লেখা হয় যা পরিবর্তন হতে সংরক্ষিত অর্থাৎ, (আল্লাহর দরবারে)
মাসয়ালা : হাদীস শরীফে আছে, মানুষ যেন কিছুতেই জুম’য়ার নামাজ তরক না করে, অন্যথায় তাদের দিলের উপর মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে। তারপর তারা ভীষণ গাফলতের মধ্যে পড়ে থাকবে । -মুসলিম শরীফ ।
মাসয়ালা : হাদীস শরীফে আরও আছে, যে ব্যক্তি আলস্য করে তিন জুম’য়া তরক করে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর নারায হয়ে যান। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তায়ালা তার দিলের উপর মোহর মেরে দেন। – তিরমিযী
মাসয়ালা ঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি পর পর কয়েক জুম’য়া তরক করে, তবে সে যেন ইসলামকেই তরক করল ।
মাসয়ালা : জনৈক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিল, এমন কোনো ব্যক্তি যদি মরে যায়, যে জুম’য়া এবং জামাতে উপস্থিত হত না, তবে তার ব্যাপারে আপনার কি মত? তিনি উত্তর দিলেন যে, সে ব্যক্তি দোযখি হবে। প্রশ্নকারী তাঁকে এক মাস যাবৎ প্রতিদিন এরূপ প্রশ্ন করেছিল এবং তিনি বরাবর ঐ একই উত্তর দিয়েছিলেন।
মুকিম হওয়া ঃ মুসাফিরের উপর জুম’য়া ফরজ নয়। চত
সুস্থ হওয়া ঃ যে রোগী জুম’য়ার মসজিদ পর্যন্ত নিজ ক্ষমতায় হেঁটে যেতে অক্ষম তার উপর জুম’য়া ফরজ হবে না। অনুরূপ যে বৃদ্ধ বার্ধক্যের দরুণ জামে মসজিদে হেঁটে যেতে অক্ষম কিংবা অন্ধ ব্যক্তি, এদেরকে রোগী বলা হবে; তাদের উপর জুম’য়ার নামাজ ফরজ নয় ।
আযাদ হওয়া : গোলামের উপর জম’য়ার নামায ফরজ নয় ।
পুরুষ হওয়া ঃ স্ত্রীলোকের উপর জুম’য়া ফরজ নয়। কোন ওযর না থাকা : যে সব ওযরের কারণে পাঞ্জেগানা নামাযের জামাত তরক করা জায়েয হয় সেইসব ওযর না থাকা। যথা : (ক) মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া । (খ) রোগীর সেবা-শুশ্রূষায় লিপ্ত থাকা। (গ) পথে শত্রুর ভয়ে প্রাণ নাশের আশঙ্কা থাকা। (ঘ) পথ দেখতে পায় না এরূপ অন্ধ হওয়া ইত্যাদি যা নামাজের জামাতের অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।
পাঞ্জেগানা নামাযের জন্য যে সব শর্ত আছে তা মওজুদ থাকা। যথা : আকেল হওয়া, বালেগ হওয়া, মুসলমান হওয়া, এই সব শর্তে জুম’য়ার নামাজ ফরজ হয় । কিন্তু যদি কেউ এই শর্ত ছাড়াও জুম’য়া পড়ে, তবুও তার ফরজে ওয়াক্ত অর্থাৎ যোহর আদায় হয়ে যাবে । যেমন, কোনো মুসাফির অথবা কোনো স্ত্রীলোক যদি জুম’য়ার নামায পড়ে, তবে যোহর আদায় হয়ে যাবে ।
জুম’য়ার নামায সঠিক হবার শর্তসমূহ
শহর বা শহরতলী হওয়া : বড় শহর বা ছোট শহর বা ছোট শহরতুল্য গ্রাম হওয়া। অতএব, ছোট পল্লীতে বা মাঠে জুম’য়ার নামাজ দুরুস্ত নয় । যে গ্রাম ছোট শহরতুল্য অর্থাৎ, ৩/৪ হাজার লোকের বসতি আছে, সেখানে জুম’য়ার নামায দুরুস্ত আছে ।
যোহরের ওয়াক্ত হওয়া ঃ যোহরের ওয়াক্তের পূর্বে বা পরে জুম’য়ার নামাজ পড়লে তা দুরুস্ত হবে না। আবার জুম’য়ার নামাজ পড়তে পড়তে যদি যোহরের ওয়াক্ত চলে যায়, তবে জুম’য়ার নামাজ দুরস্ত হবে না।
যদিও দ্বিতীয় রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু বসে থাকে । আর জুম’য়ার নামাজের কাযা পড়া যায় না পড়তে হবে । কাজেই এই কারণে বা অন্য কোনো কারণে জুম’য়ার নামাজ সহীহ না হলে যোহর
খুত্বা পাঠ করা : খুতবা অর্থাৎ মুসল্লিদের সম্মুখে আল্লাহ তায়ালার যিকর করা, শুধু সুবহানাল্লাহ বলা হোক বা আলহামদুলিল্লাহ বলা হোক। অবশ্য শুধু এতটুকু বলে শেষ করা সুন্নতের খেলাফ, তাই মাকরূহ হবে ।
খুতবার নামাযের পূর্বে পড়া : নামাজের পূর্বে খুত্বা না পড়ে পরে পড়লে জুম’য়ার নামাজ দুরুস্ত হবে না ।
খুত্বা যোহরের ওয়াক্তের মধ্যে হওয়া : খুতবা যোহরের ওয়াক্তের মধ্যে হতে হবে। যোহরের ওয়াক্তের পূর্বে খুতবা পড়লে জুম’য়ার নামাজ দুরুস্ত হবে না ।
জামাত হওয়া : খুতবার শুরু হতে প্রথম রাকাতের সিজদা পর্যন্ত ইমামের সঙ্গে তিনজন পুরুষ উপস্থিত থাকা চাই। যদিও খুতবায় যে তিনজন লোক উপস্থিত ছিল তারা চলে যায় এবং অন্য তিনজন নামাজে শামিল হয় । কিন্তু শর্ত এই যে, লোক তিনজন ইমামতের যোগ্য হওয়া চাই । সুতরাং শুধু স্ত্রীলোক বা নাবালেগ ছেলে মুক্তাদি হলে জুম’য়ার জামাত দুরুস্ত হবে না
যদি সিজদা করার পূর্বেই লোক চলে যায় এবং তিন জনের কম অবশিষ্ট থাকে, কিংবা কেউ না থাকে, তবে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে। অবশ্য যদি সিজদা করার পর চলে যায়, তবে কোনো অসুবিধা নেই ৷ এলানে আম এবং এজাযতে আম যে স্থানে জুম’য়ার নামাজ পড়া হয়, যে স্থানে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকা চাই।
সুতরাং, যদি কোনো স্থানে গোপনীয়ভাবে নামাজ পড়া হয় যেখানে সাধারণের তবে জুম য়ার নামাজ দুরুস্ত হবে না ৷ প্রবেশের অনুমতি না থাকে বা মসজিদের দরজা বন্ধ করে জুম’য়ার নামাজ পড়া হয়,
মাসয়ালা ঃ উপরোক্ত শর্তগুলি জুম’য়ার নামাজ দুরুস্ত হবার শর্ত। কাজেই এর একটি মাত্র শর্তও যদি না পাওয়া যায়, তবে জুম’য়ার নামাজ দুরুস্ত হবে না, যোহর পড়তে হবে। যে স্থানে নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে,জুম’য়ার নামাজ দুরুস্ত নয়,
সেখানে যোহর পড়াই ফরজ। সেখানে জুম’য়া নফল মাত্র এবং নফল ধুমধামের সাথে জামাত করে পড়া মাকরুহ । সুতরাং এমতাবস্থায় জুম’য়ার নামাজ পড়া মাকরুহ্ তাহরিমী । জুম’য়ার কতিপয় প্রয়োজনীয় মাসয়ালা
যিনি খুত্বা পড়বেন নামাজও তিনি পড়াবেন, এটাই উত্তম। কিন্তু যদি অন্য কেউ নামাজ পড়ান, তাও দুরুস্ত আছে।
মাসয়ালা : খুত্বা শেষ হওয়া মাত্রই ইকামতের পর নামাজ শুরু করা সুন্নত । খুতবা ও নামাজের মাঝখানে দুনিয়াবি কোনো কাজকর্ম করা মাকরূহ তাহরিমী । যদি খুত্বা ও নামাজের মধ্যে বেশি ব্যবধান হয়ে যায়, তবে খুতবা পুনরায় পড়তে হবে।
অবশ্য যদি কোন জরুরী দ্বীনি কাজ সামনে এসে পড়ে, যেমন, কাউকে কোনো জরুরি মাসয়ালা বলে দেয়া, অথবা ওযু ভেঙ্গে গেলে ওযু করে নেয়া, কিংবা গোসলের প্রয়োজন বলে দেয়া, অথবা ওযু ভেঙ্গে গেলে ওযু করে নেয়া, কিংবা গোসলে.. প্রয়োজন নিজ যিম্মায় থাকলে গোসল করতে যাওয়া ইত্যাদি কাজ করা মাকরুহ নয়, খুত্বাও দোহরাতে হবে না ।
মাসয়ালা : এক মহল্লার সকল লোক একত্রিত হয়ে একই মসজিদে জুম’য়া পড়া উত্তম। অবশ্য যদি একই স্থানের কয়েকটি মসজিদে জুম’য়া পড়া হয়, তাতেও নামাজ হয়ে যাবে ।
মাসয়ালা ঃ যদি কেউ আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় কিংবা সাহু সিজদার পর ইমামের সাথে শরীক হয়, তবে তার ওয়াক্তের ফরজ আদায়ের জন্য যোহরের চারি রাকাত পড়ার পরকার নেই, জুম’য়ার দুই রাকাত পড়লেই চার রাকাত ফরজ আদায় হয়ে যাবে ।
সরলা চাই এহতিয়াতু যোহর কোনো কোনো লোক জুম’য়ার পর এই তিয়াতুয্ যোহর নামায পড়ে থাকে, যেহেতু সর্বসাধারণের আকিদা এর কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কাজেই তাদেরকে একেবারে নিষেধ করা প্রয়োজন। অবশ্য যদি কোনো আলেম সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পড়তে চায়, তবে এভাবে পড়বে, যেন কেউ না জানতে পারে ।
জুমার দিনে যা করা প্রয়োজন
প্রত্যেক মুসলমানের বৃহস্পতিবার দিন (শেষ বেলা) হতেই জুময়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং যত্ন নেয়া কর্তব্য। বৃহস্পতিবার আসরের পর দুরূদ, ইস্তেগফার এবং তবিহ-তাহলিল বেশি করে পড়বে। পরিধানের কাপড় ভালভাবে পরিষ্কার করবে। যদি কোনো সুগন্ধি ঘরে না থাকে অথচ কেনার সঙ্গতি থাকে, তবে ঐ দিনই আনিয়ে রাখবে, যাতে জুম’য়ার দিনে ইবাদত ছেড়ে এইসব কাজে লিপ্ত না হতে হয় ।
পূর্ববর্তী বুজুর্গানে দ্বীন বলেছেন যে, জুম’য়ার ফযিলত সবচেয়ে বেশি সে ব্যক্তি পাবে, যে জুম’য়ার প্রতীক্ষায় থাকে এবং বৃহস্পতিবার হতেই জুম’য়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
অন্যদিকে সর্বাপেক্ষা অধিক হতভাগা সেই ব্যক্তি, যে জুম’য়া কবে তার খবর রাখে না, এমনকি, জুম’য়ার দিন সকাল বেলায় অন্য লোকের নিকট জিজ্ঞাসা করে যে, আজ কি বার? অনেক বুজুর্গ লোক জুম’য়ার জন্য তৈরি থাকার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রে মসজিদে গিয়ে থাকতেন ।
প্রত্যেক জুম’য়ার দিন প্রত্যেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে। গোসল করবে, মাথার চুল এবং সর্বশরীর উত্তমরূপে পরিষ্কার করবে এবং মিসওয়াক করে দাঁতগুলি পরিষ্কার করা অধিক ফযিলতের কাজ । যার নিকট যেরূপ উত্তম পোশাক থাকে, সামর্থ্য অনুযায়ী তা পরিধান করে খো লাগিয়ে মসজিদে যাবে, গোফ, নখ ইত্যাদি কাটবে
মাসয়ালা : জামে মসজিদে খুব সকালে যাবে। যে যত সকালে যাবে সে ততই অধিক সওয়াব পাবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : জুম’য়ার দিনে ফেরেশ্তাগণ জামে’ মসজিদের দরজায় দণ্ডায়মান থেকে মুসল্লিগণ যে যে সময় আসতে থাকে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। যে প্রথমে আসে, তার নাম সকলের শীর্ষে লেখা হয় । তারপর দ্বিতীয়, তারপর তৃতীয় এভাবে পর্যায়ক্রমে সকলের নাম লেখা হয় ।
যে সর্বপ্রথমে আসে, সে আল্লাহর রাস্তায় একটি উট কুরবানি করার সমতুল্য সওয়াব পায় । যে দ্বিতীয় নম্বরে আসে সে একটি গরু কুরবানি করার সম পরিমাণ সওয়াব পায় । যে তৃতীয় নম্বরে আসে, সে একটি বকরি কুরবানি করার সওয়াব পায়। তারপর যে আসে,
সে আল্লাহর রাস্তায় একটি মোরগ যবেহ করার সমতুল্য সওয়াব পায় এবং তারপর যে আসে সে আল্লাহর রাস্তায় একটি ডিম দান করার সমান সওয়াব পায়। অতপর যখন খুত্বা আরম্ভ হয়, তখন ফেরেশতাগণ ঐ খাতা বন্ধ করে খুত্বা শুনতে থাকেন। -বুখারী
মাসয়ালা : আগের যমানায় শুক্রবারে লোক এত সকালে এবং আগ্রহের সাথে জানে মসজিদে যেত যে, ফজরের পর হতেই শহরের রাস্তাগুলি ঈদের দিনের মত লোকের ভিড় জমে যেত। তারপর যখন এই রীতি মুসলমানদের মধ্য থেকে ধীরে ধীরে লোপ পেতে লাগল, তখন বিজাতীয় লোকেরা বলল যে, ‘ইসলামের মধ্যে এই প্রথম বিদ’আত
জারি হল ।’ এই পর্যন্ত লিখে ইমাম গায্যালী (রহঃ) বলতেছেন, মুসলমানগণ ইহুদি এবং নাসারাদের অবস্থা দেখে কেন লজ্জিত হয় না? ইহুদিগণ শনিবারে এবং নাসারাগণ রবিবারে কত সকাল সকাল তাদের প্রার্থনালয়ে ও গির্জা গৃহে গমন করে। আবার অন্বেষণকারীগণ কেন অগ্রসর হয় না? –এয়িয়াউল উলুম ।
মাসয়ালা ঃ প্রকৃত প্রস্তাবে মুসলমানগণ এই যমানায় এই মুবারক দিনের মর্যাদা একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে। তারা এতটুকু পর্যন্ত জানে না যে, আজ কোন দিন এবং তার কি-ই বা মর্যাদা? অতীব পরিতাপের বিষয় যে, দিনটি এক কালে মুসলমানদের কাছে ঈদ অপেক্ষা বেশি প্রিয় ও মর্যাদাবান ছিল, যে দিনের প্রতি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর গর্ব ছিল, পূর্বযুগের উম্মতদের যা জুটেনি আজ মুসলমানদের হাতে সেই দিন এমন অসহায়ভাবে অপদস্থ হচ্ছে । আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতকে এভাবে ধ্বংস করা অতি বড় অকৃতজ্ঞতা, যার অশুভ প্রতিক্রিয়া স্বচক্ষে আমরা দেখছি।
মাসয়ালা : জুম’য়ার নামাজের জন্য পদব্রজে গমন করলে প্রত্যেক কদমে এক বৎসরকাল নফল রোযা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়! -তিরমিযী
মাসয়ালা : মহানবী (সাঃ) জুম’য়ার দিনে ফজরের নামাজে “আলিফ-লাম্-মীম্ সিজদা” এবং “হাল্ আতা আলাল ইন্সান” এ দুটি সূরা পাঠ করতেন। কাজেই মুস্তাহাব মনে করে সূরাগুলো কোনো কোনো সময় পড়বে, আবার কোনো কোনো সময় ছেড়ে দিবে। লোকেরা যেন ওয়াজিব মনে না করে ।
মাসয়ালা : জুম’য়ার নামাজে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) “সূরায়ে জুম’য়া” এবং “সূরায়ে মুনাফিকুন” এবং কখনও কখনও “সাব্বিহিস্মা” এবং “হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ্” এই সূরাগুলো পাঠ করতেন ।
মাসয়ালা : জুম’য়ার দিনে জুময়ার নামাজের প্রাক্কালে কিংবা পরে “সূরায়ে কার্ফ’ তিলাওয়াত করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। হাদীস শরীফে এসেছে, “যে ব্যক্তি জুম’য়ার দিনে সূরায়ে কার্ফ তিলাওয়াত করবে,
কিয়ামতের দিন তার জন্য আরশের আকাশতুল্য একটি উচ্চ নূর প্রকাশ পাবে, যদ্দারা তার হাশরের ময়দানে সব নিচে অন্ধকার দূর হয়ে যাবে এবং বিগত জুম’য়া হতে এই জুম’য়া পর্যন্ত তার যত (সগিরা) গুনাহ হয়েছে, সব মাফ হয়ে যাবে। (অবশ্য তওবা ব্যতীত কবিরা গুনাহ্ মাফ হয় না)”। – শরহে সেফরুস সাআদাত
জুমার নামাজের খুতবা
যখন সমস্ত মুসল্লি উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন ইমাম সাহেব মিম্বরের উপর মুসল্লিগণের দিকে মুখ করে বসবেন এবং মুয়াযযিন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আযান দিবেন । আযান শেষ হলে তৎক্ষণাৎ ইমাম দাড়িয়ে জুমআর খুত্বা শুরু করবেন ।
নবী পাক (সাঃ)-এর খুত্বা : নবী (সাঃ)-এর খুত্বা নকল করার উদ্দেশ্য এই নয় যে, সর্বদা এই খুতবা পড়বে । বরং উদ্দেশ্য এই যে, বরকতের জন্য মাঝে মাঝে পড়বে।