ইসলাম

দাম্পত্য জীবনে সমস্যা ও সমাধান

Share this

নসব বা বংশ নির্ণয়

স্বামী ওয়ালা স্ত্রীর সন্তান হলে স্বামীকেই সন্তানের পিতা বলতে হবে, তাতে কোনোরূপ সন্দেহের কারণে এটা বলা জায়েয হবে না যে, এই সন্তান তার স্বামীর নয়, বরং অমুকের অথবা এই সন্তান হারামী; যদি কেউ এমন বলে, তবে শরীয়তের বিচার অনুসারে তাকে কোড়া লাগাতে হয়। এমনকি স্বয়ং স্বামীও এই সন্তানকে অস্বীকার করতে পারবে না ।

চারজন সাক্ষীর প্রমাণ ব্যতিরেকে যদি সন্তানকে অস্বীকার করে, তবে তারও হয় তোহমতের শাস্তি (৮০ দোর্রা) ভোগ করতে হবে, ‘না হয় লেয়ান’ করতে হবে। -(লেয়ানের বয়ান দ্রষ্টব্য)

গর্ভধারণের সময়কাল কমপক্ষে ছয় মাস এবং অধিকের অধিক দুই বছর অর্থাৎ ছয় মাসের কমে সন্তান হতে পারে না এবং দুই বছরের বেশিও সন্তান পেটে থাকতে পারে না। অতএব, যদি বিবাহের পর ছয় মাসের একদিন কম থাকতেও সন্তান হয়, সন্তানকে হারামী বলতে হবে এবং ঐ স্বামীর সন্তান বলা যাবে না ।

শরীয়তের হুকুম এই যে, (স্ত্রীকে তোহমত হতে বাঁচাবার জন্য এবং লোকদের ফাহেশা কথার আলোচনা হতে দূরে রাখার জন্য এবং) সন্তানকে যাতে হারামী না বলতে হয়, তজ্জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে । অবশ্য যখন একেবারে অসম্ভব হয়ে যায়, তখন বাধ্য হয়ে সন্তানকে হারামী এবং সন্তানের মাকে হারামকারিণী বলতে হবে ।

আরো পড়ুন:- স্বামীর হক বা অধিকার

কেউ যদি নিজ স্ত্রীকে রেজয়ী তালাক দেয় এবং তালাকের তারিখ হতে দুই বছরের ভেতর সন্তান জন্মে, তবে সেই সন্তানকে হারামের সন্তান বলা যাবে না, সে সন্তানের বাপ ঐ স্বামীকেই সাব্যস্ত করা হবে। শরীয়তের আইন অনুসারে এই সন্তানের নসব ঠিক

আছে, তার নসব বাতেল করা যাবে না। যদি দুই বছরের মাত্র একদিন বাকি থাকতে সন্তান হয়, তবুও তার এই হুকুম ।

এই ধরনের ঘটনা হলে মনে করতে হবে যে, তাল- াকের পূর্বেই গর্ভধারণ হয়েছে। সন্তান দুই বছর মাতৃগর্ভে রয়েছে, সন্তান হওয়ার পর ইদ্দত শেষ হয়েছে এবং বিবাহ ছিন্ন হয়েছে (এর পূর্বে ইদ্দতও শেষ হয়নি এবং বিবাহ ও ছিন্ন হয়নি।) অবশ্য যদি স্ত্রীলোকটি নিজ মুখে স্বীকার করে যে,

সন্তান প্রসবের পূর্বেই তার ইদ্দত শেষ হয়ে গেছে, তবে বাধ্য হয়ে তাকে হারামকারিনী এবং সন্তানকে হারামজাদা বলতে হবে । এই রেজয়ী তালাকের পদ্ধতিতে যদি দুই বছরের পরেও সন্তান হয় এবং স্ত্রী লোকটিও ইদ্দত শেষ হওয়ার কথা স্বীকার না করে, তবে সন্তানের নছব সাব্যস্ত মানতে হবে ।

কেননা, রেজয়ী তালাকের পদ্ধতিতে ইদ্দতের মধ্যেও স্বামী-স্ত্রী মিলনের দ্বারা রুজয়াত করা জায়েয আছে, যত বছরই হোক না কেন । মনে রাখতে হবে যে, তালাকের পর ইদ্দতের ভিতর স্বামী সহবাসের দ্বারা রুজয়াত করেছে, সন্তান হওয়ার পরও তার বিবাহ ছুটেনি।

আর যদি স্বামীর ছেলে না হয়, সে বলে দিবে, এটা আমার ছেলে নয় । যখন অস্বীকার করবে, তখন লেয়ানের হুকুম বর্তাবে।

যদি বায়েন তালাক দিয়ে থাকে, তবে অবশ্য দুই বছরের ভিতর সন্তান হলে তার নসব হবে, দুই বছরের পরে হলে আর নছব ছাবেত করা যাবে না, বাধ্য হয়ে সন্তানকে হারামের সন্তান বলতে হবে এবং মনে করতে হবে যে, হয়ত ইদ্দতের ভিতর ভুলে সহ- বাস করেছে । এতে গর্ভ হয়েছে ।

যে মেয়ের বালেগা হওয়ার এখনও কোনো আলামত পাওয়া যায়নি কিন্তু বালেগ হবার নিকটবর্তী হয়েছে, সেইরূপ মেয়েকে স্বামী তালাক দিলে যদি বায়েন তালাক দেয়, আর মেয়েটি তিন মাসের মধ্যেই গর্ভবর্তী আছে বলে প্রকাশ করে, তবে নয় মাসের ভিতর সন্তান হলে হালালের সন্তান মনে করতে হবে; আর যদি রেজয়ী তালাক দেয়, তবে ২৭ মাসের ভিতর সন্তান হলে হালালের অর্থাৎ ঐ স্বামীর সন্তান সাব্যস্ত করতে হবে ।

সন্তানকে হারামের সন্তান বলা যাবে না। অবশ্য যদি বায়েন তালাক দিয়ে থাকে এবং ইদ্দতের মধ্যে গর্ভের কথা প্রকাশ না করে থাকে এবং নয় মাসের পরে গিয়ে সন্তান জন্ম হয়, তবে বাধ্য হয়ে হারামের সন্তান বলতে হবে ।

যে স্ত্রীলোকের স্বামী মরে গেছে তার যদি দুই বছরের মধ্যে সন্তান হয়, তবে সেই সন্তানকে হালালের সন্তান বলতে হবে। অবশ্য যদি স্ত্রীলোকটি সন্তান প্রসবের পূর্বেই ইদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার কথা নিজ মুখে স্বীকার করে থাকে অথবা দুই বছর পরে গিয়ে সন্তান হয়, তখন বাধ্য হয়ে বলতে হবে যে, হালালের সন্তান নয় বরং হারামের সন্তান।

সতর্কতা : মূর্খ সমাজের মধ্যে এরূপ প্রচলিত আছে যে, স্বামীর মৃত্যুর পর নয় মাসের বেশি এক দুই মাস হয়ে সন্তান জন্মালেও মেয়েলোকটিকে খামাখা তোমত লাগাতে থাকে। উপরিউক্ত মাস’য়ালার দ্বারা বুঝা গেল যে, ঐরূপ অনর্থক তোমত লাগান জায়েয নয় ।

বিবাহের পর ছয় মাসের ঠিক পরদিন অথবা তার দুই দিন এক দিন বেশি হলে যদি সন্তান হয়, তবে সন্তানকে হালালের সন্তান বলতে হবে (হারামের বলা দুরুস্ত নয়)।

অবশ্য যদি ছয় মাসের কমে হয়, তখন বাধ্য হয়ে হারামের সন্তান বলতে হবে বা স্বামী যদি অস্বীকার করে, তবে ‘লেয়ান’ করতে হবে।

শুধু কালেমা, আক্দ হয়ে যাওয়ার ছয় মাস পরে বৌ উঠিয়ে আনার পূর্বে সন্তান হয়, তবুও সে সন্তানকে হারামের সন্তান বলা যাবে না, ঐ স্বামীর সন্তানই বলতে হবে । অবশ্য স্বামীর না হলে স্বামী যদি অস্বীকার করে, তবে লেয়ান করতে হবে।

স্বামী অনেকদিন ধরে বিদেশে আছে, এমনকি কয়েক বছর চলে গেছে বাড়ি আসেনি। এদিকে সন্তান পয়দা হয়েছে। এই সন্তানকে হারামজাদা বলা যাবে না। স্বামীরই সন্তান বলা যাবে ।

সংবাদ পেয়ে যদি স্বামী অস্বীকার করে, তবে লেয়ানের হুকুম বর্তাবে। শরীয়তী আইনের পরিপ্রেক্ষিতে একে স্বামীর সন্তান বলা যাবে। মীরাস ইত্যাদির হুকুম তার উপর বর্তাবে।

এর একটি কারণ এই যে, হয়ত কোনো সময় স্বামী-স্ত্রীর মিলন হয়ে থাকবে, অথচ অন্য লোক তা জানতে পারেনি ।

যিহার (বিবিকে-মায়ের সাথে তুলনা করা )

১। কেউ আপন স্ত্রীকে বলল, “তুমি আমার মায়ের সমতুল্য” অথবা বলল, “তুমি আমার জন্য মায়ের সমতুল্য, তুমি আমার হিসাবে মার তুল্য, এখন তুমি আমার নিকট মাতার ন্যায় বা মাতার মত” ।

 –এই সকল অবস্থায় দেখতে হবে, তার মতলব কি? যদি এই মতলব হয় যে, তা’যিম ও বুজুর্গিতে মায়ের বরাবর অথবা এই মতলব হয় যে, তুই একেবারে বুড়ি, বয়সে আমার মায়ের সমান, তা হলে এমন বলায় যিহার হবে না ।

আর যদি বলার সময় কোনো নিয়্যত না থাকে এবং কোনো মতলব না থাকে এমনি বলে ফেলেছে, তাতেও যিহার হবে না । যদি তালাক বা ছেড়ে দিবার নিয়্যত না থেকে থাকে,

তবে এক তালাক বায়েন হবে; যদি তালাক দিবারও নিয়্যত না থেকে থাকে, স্ত্রীকে ছেড়ে দিবারও নিয়্যত ছিল না, বরং মতলব শুধু এই যে, যদিও তুমি আমার স্ত্রী, তোমা হতে বিবাহ ছিন্ন করছি না; কিন্তু তোমার সঙ্গে কখনও সহবাস করব না, তোমার সাথে সহ- বাস করা আমার উপর হারাম করে নিলাম । ভরণ-পোষণ নিয়ে পড়ে থাক ।

মোটকথা তাকে ছেড়ে দিবার নিয়্যত ছিল না,সহবাস করাকে হারাম করে নিয়েছে। একে শরীয়তের বিধানে ‘যিহার’ বলে ।

এর হুকুম হল এই-সে স্ত্রী স্ত্রীই থাকবে, কিন্তু স্বামী কাফফারা আদায় না করা পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করা, কামভাবের সাথে তাকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা, আদর সোহাগ করা ইত্যাদি হারাম থাকবে ।

এই অবস্থায় যত বছরই অতীত হোক না কেন কাফ্ফারা আদায় করলে উভয়ে স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় থাকতে পারবে, পুনরায় বিবাহের প্রয়োজন নেই। এই কাফ্ফারা রোযা ভঙ্গের কাফ্ফারার ন্যায় দিতে হবে।

২। কাফ্ফারা দেয়ার পূর্বেই যদি সহবাস করে, তবে বড় গুনাহ হবে। তজ্জন্য আল্লাহ তা’য়ালার নিকট গুনাহ মাফের জন্য তওবা ইস্তেগফার করবে। আর দৃঢ় সংকল্প করবে যে, কাফ্ফারা না দিয়ে আর কখন ও সহবাস করবে না। কাফ্ফারা আদায় না করা পর্যন্ত স্ত্রীও স্বামীকে তার নিকট যেতে দিবে না ।

৩। যদি ভগ্নী, মেয়ে, ফুফু অথবা এমন এক স্ত্রীলোকের সাথে তুলনা করে যার সাথে চিরকাল বিবাহ হারাম, তবে তারও এই একই হুকুম ।

৪ । কেউ বলল, তুই আমার জন্য শূকর সদৃশ, তবে যদি তালাক বা ছেড়ে দিবার নিয়্যত থেকে থাকে, তবে তো তালাক হবেই । আর যদি যিহারের নিয়্যত করে থাকে

অর্থাৎ মতলব ছিল যে, তালাক তো দিতাম না; বরং সহবাস করা নিজের উপর হারাম করা, তবে কিছুই হয়নি, তদ্রূপ যদি কোনো নিয়্যত না করে থাকে, তবেও কিছু হয়নি।

৫। যদি যিহারে চার মাস কিংবা তদপেক্ষা অধিককাল স্ত্রী-সহবাস না করে থাকে

এবং কাফ্ফারা না দিয়ে থাকে, তবে তালাক হবে না, এতে ঈলাও হবে না ।

৬। কাফ্ফারা না দেয়া পর্যন্ত দেখা ও কথাবার্তা বলা হারাম নয়, তবে গুপ্তাঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করা জায়েয নয় ।

৭। সর্বদার জন্য যিহার না করে একটা সময় নির্দষ্ট করেছিল । যেমন বলল, “এক বছরের জন্য বা চার মাসের জন্য তুই আমার মায়ের সমতুল্য ।

তা হলে নির্ধারিত যিহার থাকবে । এই সময়ের মধ্যে সহবাস করতে চাইলে কাফ্ফারা দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের পর সহবাস করলে কিছুই দিতে হবে না । স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে।

৮। যিহারেও যদি তৎক্ষণাৎ ইনশাআল্লাহ বলে ফেলে, তবে কিছুই হবে না ।

৯। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে এবং উম্মাদ পাগল যিহার করতে পারে না। করলেও কিছুই হবে না। যার সাথে এখনও বিবাহ হয়নি, এমন স্ত্রীলোকের সাথে যিহার করলেও কিছু হবে না । বরং তার সাথে বিবাহ দুরুস্ত হবে ।

১০। যদি যিহারের শব্দ কয়েকবার বলে যেমন, দুইবার বা তিনবার এই কথা বলল যে “তুই আমার জন্য মায়ের ন্যায়” । এভাবে যে কয়বার বলেছে, ঐ পরিমাণ কাফফারা দিতে হবে। অবশ্য দুই বা তিনবার কথাটি পাকা ও মজবুত করার নিয়্যতে বলে থাকে এবং নতুন করে বলবার ইচ্ছা না থেকে থাকে, তবে একই কাফফারা দিবে।

১১। যদি কয়েক স্ত্রীকে এমন বলে থাকে, তবে যে কয়েকজন স্ত্রী থাকবে, তত কাফ্ফারা দিতে হবে ।

১২। যদি “তুমি আমার মার তুল্য, তুমি আমার ভগ্নীর তুল্য” বলে থাকে, (অর্থাৎ তুল্য শব্দ না বলে) শুধু “তুমি আমার মা” “তুমি আমার ভগ্নী” বলে থাকে, তবে এতে যিহার হবে না, স্ত্রী হারাম হবে না ।

অবশ্য এমন বলা অন্যায় ও গুনাহ । তদ্রূপ ডাকবার যিহার হবে না । সময় এমন বলা যে, আমার বোন অমুক কাজ কর, এমন বলাও অন্যায়, তবে এতে

১৩। কেউ বলল, যদি তোমাকে রাখি, তবে মাকে রাখলাম । অথবা বলল, যদি তোমার সাথে সহবাস করি, তবে যেন মায়ের সাথে সহবাস করি । এটা অত্যন্ত খারাপ কথা, অত্যন্ত গুনাহের কথা, কিন্তু এতে যিহার হবে না

১৪ । যদি বলে, তুমি আমার জন্য মায়ের ন্যায় হারাম, তবে তালাকের নিয়্যতে বলে থাকলে তালাক হবে, আর যিহারের নিয়্যত করুক বা কিছুই নিয়্যত না করুক, যিহার হবে, কাফ্ফারা দিয়ে সহবাস করতে পারবে।

ঈলা বা স্ত্রীর কাছে না যাওয়ার শপথ

এক ব্যক্তি কসম খেয়ে বলল, খোদার কসম, এখন আর সহবাস করব না; খোদার কসম, তোর সাথে কখনও সহবাস করব না; কসম খেতেছি যে, তোমার সাথে ছোহবত করব না, অথবা অন্য কোনো প্রকারে বলল, এ সমস্ত অবস্থায় হুকুম হলো এই- যদি সহবাস না করে থাকা অবস্থায় চার মাস অতীত হয়ে যায়, তবে স্ত্রীর উপর বায়েন তালাক পড়বে।

এখন পুনঃবিবাহ ব্যতীত স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় সহবাস করতে পারবে না। যদি চার মাসের ভিতর কসম ভঙ্গ করে এবং সহবাস করে, তবে তালাক হবে না, অবশ্য কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা দিতে হবে। এমন কসমকে শরীয়তের ভাষায় ‘ঈলা’ বলে ।

কেউ আজীবন সহবাস না করার কসম খেল না;বরং শুধু চার মাসের জন্য কসম খেল, যেমন বলল, খোদার কসম চার মাস কাল তোমার সাথে সহবাস করব না, এতে ঈলা হয়ে যাবে ।

এরও বিধান এই যে, ৪ মাস সহবাস না করলে ‘বায়েন তালাক’ পতিত হবে। ৪ মাসের পূর্বে সহবাস করলে কসমের কাফফারা দিতে হবে । কসমের কাফফারা সম্বন্ধে পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে ।

চার মাস হতে কম সময়ের কসম খেলে তাতে ‘ঈলা’ সাব্যস্ত হবে না । এমনকি চার মাসের একদিন কমের কসম খেলেও ঈলা হবে না। অবশ্য যত দিনের কসম খাবে, ততদিনের পূর্বে সহবাস করলে কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা দিতে হবে। সহবাস না করলে তালাক বর্তাবে না, কসমও পুরা থাকবে ।

কেউ শুধু চার মাসের জন্য কসম খেল, কসম ভাঙ্গল না, চার মাসের পর তালাক হিসেবে গণ্য হলো । তালাকের পর ঐ পুরুষের সঙ্গে বিবাহ হলো । এখন চার মাস পর্যন্ত সহবাস না করলে কোনো ক্ষতি হবে না ।

হামেশার জন্য কসম খেলে, যেমন কেউ বলল, “কসম খাইতেছি যে, এখন হতে আর তোমার সাথে সহবাস করব না”। অথবা বলল, “খোদার কসম, তোমার সাথে কখনও সহবাস করব না”।

সে কসম ভঙ্গ করল না । চার মাস পর তালাক হয়ে যাবে । এর পর তাকে বিবাহ করল, বিবাহের পর চার মাস পর্যন্ত সহবাস করল না, এখন পুনরায় তালাক হয়ে যাবে ।

তৃতীয়বার তাকেই বিবাহ করল । তারও হুকুম এই যে, যদি এই বিবাহের পর চার মাস সহবাস না করে তবে তৃতীয় তালাক পতিত হবে । এখন অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত এর সাথে বিবাহ হতে পারবে না ।

অবশ্য যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিবাহের পর সহবাস করত, তবে কসম ভঙ্গ হত । তাহলে আর কখনও তালাক পড়ত না, অবশ্য কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা দিতে হত ।

যদি এভাবে আগে পিছে তিন বিবাহেই তিন তালাক পড়ে গেল । এরপর স্ত্রী অপর স্বামী গ্রহণ করল, এখন এই স্বামী তালাক দিল । এমতাবস্থায় ইদ্দত শেষে প্রথম স্বামীর সাথে পুনরায় বিবাহ হল, সে সহবাস করল না।

এখন তালাক পড়বে না, যত দিনই সহবাস না করুক না কেন । কিন্তু যখনই সহবাস করবে কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা দিতে হবে। কারণ, সে যে কসম খেয়েছিল “কখনও তার সাথে সহবাস করবে না”, সে কসম ভঙ্গ হয়ে গেছে।

স্ত্রীকে বায়েন তালাক দেয়ার পর যদি তার সাথে সহবাস না করার কসম খায়, তবে ঈলা হবে না। এখন পুনরায় বিবাহের সহবাস না করে তবে তালাক বর্তাবে না।

কিন্তু সহবাস করলে কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা দিতে হবে। ঈলা হবে । যদি রুজয়াত করে এবং সহবাস না করে, তবে চার মাস পর তালাক বর্তাবে । যদি সহবাস করে, তবে কসমের কাফ্ফারা দিবে।

তালাক।”

এতেও ঈলা হয়ে যাবে। সহবাস করলে রেজয়ী তালাক হবে, কলমের কেউ খোদার কসম খায়নি; বরং বলল, “যদি তোমার সাথে সহবাস করি, তবে তুমি কাফ্ফারা দিতে হবে না ।

সহবাস না করলে চার মাস পর বায়েন তালাক হবে। আর টাকা খয়রাত অথবা এক কুরবানি, এ সকল পদ্ধতিতে ও ঈলা হবে। যদি সহবাস করে `যদি বলে, তোমার সাথে সহবাস করলে আমার উপর এক হজ্জ অথবা এক রোযা, এর তবে যে কথা বলেছে তা করতে হবে, কাফ্ফারা দিতে হবে না । যদি চার মাস সহবাস না করে, তবে তালাক হবে ।

যিহারের কাফ্ফারা

১। যিহারের কাফ্ফারা রোযা ভঙ্গের কাফ্ফারার ন্যায়। এ দু’য়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই । পূর্বেই পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে ভাল করে দেখবে। এখানে কতগুলি জরুরি কথা বর্ণনা করছি, তা সেখানে বর্ণনা করা হয়নি ।

২। সামর্থ্য থাকলে পুরুষ একাধারে ৬০টি রোযা রাখবে। মাঝখানে কোনো রোযাই ছুটতে পারবে না । রোযা শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী-সহবাস করতে পারবে না । রোযা শেষ হবার পূর্বে, রাতেই হোক বা দিনেই হোক, স্বেচ্ছায় হোক বা ভুলে হোক, যদি স্ত্রী- সহবাস করে, তবে পুনঃ প্রথম হতে শুরু করে সমস্ত রোযা রাখতে হবে ।

৩। চাঁদের মাসের প্রথম তারিখ হতে যদি রোযা শুরু করে, তবে পুরো দুই মাস রোযা রাখবে । ৩০, ৩০ করে পুরা ৬০ দিন হোক, অথবা তার চেয়ে কম দিন হোক । উভয় প্রকারের কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। প্রথম তারিখ হতে শুরু না করে থাকলে পুরো ৬০ দিন রোযা রাখতে হবে

৪ । রোযার দ্বারা কাফ্ফারা আদায় করতে শুরু করেছে। কাফ্ফারা পুরা হবার পূর্ব দিনে বা রাত্রে ভুলে সহবাস করে ফেলেছে, এখন কাফ্ফারা দোহরাতে হবে। (অর্থাৎ, পুনরায় প্রথম হতে রোযা শুরু করতে হবে।)

৫। রোযা রাখার শক্তি না থাকলে ৬০ জন গরিব-মিসকীনকে দুই বেলা আহার করাবে, অথবা প্রত্যেককে ২ সের করে গেঁহু দিবে

সমস্ত ফকিরকে এখনও আহার করিয়ে শেষ করেনি, মাঝখানে হঠাৎ সহবাস করে ফেলেছে এতে গুনাহ হবে কিন্তু কাফ্ফারা দোরাতে হবে না। খানা খাওয়াবার ছুরত (নিয়ম) পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে।

৬। কারো জিম্মায় যিহারের দু’টি কাফ্ফারা ছিল । সে ৬০ জন মিসকীনকে চার সের গেঁহু দিয়ে দিল এবং মনে করল, প্রত্যেক কাফ্ফারার জন্য দুই সের করে দিচ্ছি।

এম- তাবস্থায় এক কাফ্ফারাই আদায় হবে। অপর কাফ্ফারা আবার দিবে। আর যদি রোযা ভঙ্গের জন্য এক, যিহারের জন্য এক কাফ্ফারা থেকে থাকে, তা আদায়ের জন্য যদি এমন করে থাকে, তবে উভয় কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *