মুসাফির কাকে বলে, মুসাফিরের নামাজ
Share this
বাড়ী হতে মধ্যম গতিতে পায়ে চলা পথে তিন দিন তিন রাত্রির দুরবর্তী স্থানে গমণ করার উদ্দেশ্যে বের হলে সে শরীয়ত মতে মুসাফির অর্থাৎ ভ্রমণকারী বলে গণ্য হবে রেল, ষ্টীমার বা অন্য কোন দ্রুতগামী যানবাহনে উক্ত পরিমাণ পথ এক ঘণ্টায় অতিক্রম করলেও পায়ে চলা পথেরই হিসাব করবে এবং মুসাফির বলে গণ্য হবে।
গন্তব্যস্থানে পৌঁছে যদি সেখানে ১৫ দিন অবস্থান করার নিয়্যত না করে তবে মুসাফিরই থাকবে।১৫ দিন অবস্থান করার নিয়্যত করলে মুসাফির থাকবে না ।
মুসাফির গন্তব্যস্থানে ১৫ দিন থাকার নিয়্যত না করা পর্যন্ত অথবা নিজ বাড়ীতে ফিরে না আসা পর্যন্ত কছর নামায পড়বে। কছর অর্থ সংক্ষিপ্ত এই আবস্থায় চার রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকআত পড়তে হবে। সফরের কষ্টের কারণে আল্লাহ নামাযীদেরকে এ সুযোগ দিয়েছেন।
মুসাফির স্থানীয় ইমামের পেছনে নামায পড়লে তখন ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামায পড়তে হবে। মুসাফির একা পড়লে বা ইমামতি করলে কছর পড়বে।
মুসাফির ইমামের পেছনে মুকীম ব্যক্তি নামায পুড়া পড়বে, অর্থাৎ ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে বাকী দুই রাকআত পড়বে। তাতে সূরা -ক্বেরাআত পড়তে হবে না ।
কছরের নামাযের নিয়্যতের সময় ‘নাওয়াইতু আন আকছুরা’ অতিরিক্ত বলবে। অন্য সবই ওয়াক্তিয়া নামাযের মত বলতে হবে।
মুসাফিরের নামাজ
মুসাফির কাকে বলে ঃ যদি কেউ এক মঞ্জিল অথবা, দুই মঞ্জিলের সফর করে, তবে তাতে শরীয়তের কোনো হুকুম পরিবর্তন হয় না এবং শরীয়ত অনুযায়ী তাকে মুসাফিরও বলা যায় না। সমস্ত হুকুম তার জন্য অবিকল ঐরকম বর্তাবে যেরকম বাড়িতে থাকাকালীন সময় ছিল।
চার রাকাত নামায চার রাকাতই পড়তে হবে, রোযা ছাড়তে পারবে না এবং চামড়ার মোজার উপর এক দিন এক রাত অপেক্ষা অধিক কাল মাসেহ করতে পারবে না ।
মাসয়ালা ঃ যে ব্যক্তি কমপক্ষে তিন মঞ্জিল দূরবর্তী স্থানে যাবার নিয়্যত করে বাড়ি পর্যন্ত লোকালয়ের মধ্যে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মুসাফির হবে না । লোকালয় অতিক্রম করবে, তখন তার উপর মুসাফিরের হুকুম প্রযোজ্য হবে।
যতক্ষণ তিন মঞ্জিলের দূরত্ব কাফেলা বেঁধে চললে খাওয়া-দাওয়া, পাক-সাফ এবং আরাম-বিশ্রামের সময় বাদ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলে বা নৌকায় বসে বা উটের পিঠে সওয়ার হয়ে তিন দিনে যতদূর স্থানে পৌঁছা যায়, তাকে তিন মঞ্জিল বলে ।
আরব দেশে প্রায়ই মঞ্জিল নির্ধারিত আছে। আমাদের দেশে মোটামুটি হিসেবে এর আনুমানিক দূরত্ব প্রচলিত ইংরেজি মাইলে ১৭৬০ গজে ১ মাইল হিসেবে ৪৮ মাইল ।
মাসয়ালা ঃ যদি কোনো স্থান এত পরিমাণ দূরবর্তী হয় যে, স্বাভাবিকভাবে পায়ে হেঁটে, নৌকাযোগে বা উটযোগে গেলে তিন দিন সময় লাগে, কিন্তু কোনো দ্রুতগামী যানবাহন যেমন— ঘোড়া, ঘোড়ার গাড়ি, স্টিমার, রেলগাড়ি, দ্রুতগামী নৌকা, মোটর, বিমান ইত্যাদিতে তদপেক্ষা কম সময় লাগে এমন অবস্থায় শরীয়ত অনুযায়ী মুসাফিরই হবে ।
আরো জানুন:- কসর নামাজের নিয়ম
মহিলাদের সফর
মেয়েলোকের জন্য তিন মঞ্জিল দূরবর্তী স্থানে স্বামী বা বাপ-ভাই ইত্যাদি মুহরিম পুরুষ আত্মীয়ের সঙ্গে ছাড়া একাকী সফর (যাতায়াত) করা জায়েয নয়, এরকম স্থানে একাকী যাতায়াত করলে শক্ত গুনাগার হবে। এক মঞ্জিল বা দুই মঞ্জিল দূরবর্তী স্থানে মেয়েলোকের জন্য একাকী সফর করা হারাম নয়, কিন্তু তা মোটেই উচিত নয় । হাদীস শরীফে এন প্রতি কঠোর নিষেধ আছে।
মাসয়ালা : মুহরিম ব্যক্তি যদি ধর্মভীরু না হয় এবং গুনাহ্ কাজে তার ভয় না থাকে, তবে তার সঙ্গেও মেয়েলোকের সফর করা জায়েয নয় ।
সফরে নামাযের রাকাত
যে ব্যক্তি শরীয়ত অনুসারে মুসাফির, সে যোহর, আসর ও ইশার নামায দুই দুই রাকাত পড়বে। সুন্নতের হুকুম এই যে, যদি ব্যস্ততা থাকে, তবে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত ছেড়ে দেয়া দুরুস্ত আছে, এতে কোনো গুনাহ্ হবে না ।
আর যদি ব্যস্ততা না থাকে এবং সঙ্গীগণ হতে পশ্চাতে থেকে যাবার আশংকা না থাকে, তবে ছাড়বে না । সফর অবস্থায় সুন্নত পুরাপুরি পড়বে, কেননা সুন্নতের কসর হয় না।
মাসয়ালা : ফজর, মাগরিব এবং বিত্র প্রভৃতি নামাজে কসর নেই, সব সময় যেভাবে পড়ে থাক সেভাবেই পড়বে।
মাসয়ালা : যোহর, আসর এবং ইশা এই তিন ওয়াক্তের নামায সফরের হালতে ইচ্ছা করে চার রাকাত পড়লে গুনাহ্ হবে। আবার কেউ যদি যোহরের নামায ছয় রাকাত পড়ে, তবে গুনাগার হবে ।
মাসয়ালা : সফরের হালতে যদি কেউ ভুলে চার রাকাত পড়ে ফেলে, তবে যদি দুই রাকাতের পর বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে থাকে, তবে ফরয আদায় হয়ে যাবে, অতিরিক্ত দুই রাকাত নফল হবে এবং সাহু সিজদা করতে হবে। আর যদি দুই রাকাতের পর না বসে থাকে, তবে ফরয আদায় হবে না। ঐ নামায নফল হবে এবং ফরয পুনরায় পড়তে হবে।