পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে
Share this
হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানব ইতিহাসের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, যাঁকে মুসলমানরা শুধু তাঁদের ধর্মীয় নেতা হিসেবেই নয়, বরং পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। অন্যান্য ধর্মের মানুষও হযরত মুহাম্মদ (স. ) পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ তা অকপটে স্বীকার করেন।
মাইকেল এইচ. হার্টের লেখা “The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History” বইয়ে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)- কেপৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ হিসেবে প্রথম স্থানে স্থান দিয়েছেন। মাইকেল হার্ট বলেছেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক উভয় দিক দিয়ে এক অসাধারণ নেতা।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানব জাতীর জন্য ন্যায়, করুণা এবং সততার আদর্শ স্থাপন করেছিলেন। তিনি প্রেম, ক্ষমা এবং আত্মত্যাগের শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর নীতি ও শিক্ষাগুলো মুসলিম এবং অমুসলিম উভয়ের জন্যই ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর জীবনের প্রতিটি দিক মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি কেবল একজন ধর্মীয় নেতা নন, মানবতার জন্য একটি আদর্শ। তাঁর নীতি, আচার-ব্যবহার, এবং দৃষ্টিভঙ্গি কোটি কোটি মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যা তাঁকে বহু মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস করে তুলেছে। তাঁর প্রতি মানুষের গভীর শ্রদ্ধার পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নৈতিক এবং চরিত্রের উৎকর্ষতা।
আরো পড়ুন:- আসসালামু আলাইকুম অর্থ
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষের তালিকা
ভালোমানুষের ধারণা নির্ভর করে তাঁদের কাজ, চরিত্র, নৈতিকতা এবং সমাজে তাঁদের অবদান নিয়ে। তবে ইতিহাসে কিছু ব্যক্তির কাজ এবং জীবন তাদেরকে কোটি কোটি মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে স্থান দিয়েছে। নিচে এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির নাম এবং তাঁদের অবদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষের তালিকা
ক্রমিক | নাম | পেশা |
১ | হযরত মোহাম্মদ (সা.) | নবী |
২ | যিশু খ্রিষ্ট | নবী |
৩ | গৌতম বুদ্ধ | ধর্মীয় নেতা |
৪ | নেলসন মেন্ডালা | রাজনৈতিক নেতা |
৫ | আইজাক নিউটন | বিজ্ঞানী |
৬ | আলবার্ট আইনস্টাইন | বিজ্ঞানী |
৭ | পল দ্য অ্যাপোস্টেল | ধর্মীয় নেতা |
৮ | কনফুসিয়াস | দার্শনিক |
৯ | আব্রাহাম লিংকন | রাজনৈতিক নেতা |
১০ | ক্রিস্টোফার কলম্বাস | নাবিক |
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ কে
হযরত মোহাম্মদ (সা.) সবচেয়ে ভালো মানুষ বলার কারন
হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের মহান নবী এবং আল্লাহর প্রেরিত চূড়ান্ত রাসূল। তিনি পৃথিবীতে ইসলামের বার্তা প্রচারের জন্য প্রেরিত হন। ইসলামের প্রতিষ্ঠা এবং তা প্রচার তাঁর জীবনের মূল উদ্দেশ্য ছিল। ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ তাঁকে নবুয়ত প্রদান করেন এবং ২৩ বছর ধরে ইসলামের বার্তা প্রচার করেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ বলার কয়েকটি কারন নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।
- তিনি ছিলেন অত্যন্ত সত্যবাদী এবং বিশ্বস্ত, যার জন্য আরবরা তাঁকে “আল-আমিন” এবং “আস-সাদিক” উপাধিতে ভূষিত
- তিনি মানুষের প্রতি দয়ার প্রতীক ছিলেন। এমনকি শত্রুদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
- ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতেন।
- তিনি গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতেন এবং সর্বদা তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসতেন।
- তিনি সবসময় যুদ্ধ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজতেন।হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং মদিনার সনদ তাঁর শান্তি প্রতিষ্ঠার কৌশলের উদাহরণ।
- তিনি ছিলেন আদর্শ স্বামী, পিতা এবং দাদা। পরিবারের প্রতি তাঁর দায়িত্ব এবং ভালোবাসা সবসময় উদাহরণস্বরূপ।
- তিনি মানবজাতির জন্য নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার আদর্শ শিক্ষাগুলো প্রচার করেছিলেন।
- জীবনের কোনো পর্যায়ে তিনি মিথ্যা বলেননি, যা তাঁর আস্থা এবং গ্রহণযোগ্যতাকে শক্তিশালী করেছে।
- মক্কা বিজয়ের সময় তিনি যেভাবে শত্রুদের ক্ষমা করেছিলেন, তা ইতিহাসে বিরল।
- তিনি সবসময় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং কখনো পক্ষপাতিত্ব করেননি।
- তাঁর আচরণে কখনো অহংকার প্রকাশ পায়নি।
- ক্ষমতাধর হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতেন এবং সবসময় নম্র থাকতেন।
- তায়েফের ঘটনায় যখন তাঁকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছিল, তখনো তিনি তাঁদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন।
- তিনি সবসময় মধুর ভাষায় কথা বলতেন এবং কাউকে কটূক্তি করতেন না।
- শিশুরা, বয়স্করা, এবং এমনকি তাঁর শত্রুরাও তাঁর আচরণে মুগ্ধ হতো।
- তিনি স্ত্রীদের প্রতি স্নেহশীল ছিলেন এবং তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন।তিনি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা চিন্তা করতেন।
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাঁর উপদেশ এবং শিক্ষা শুধুমাত্র ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, বরং জীবনব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। তাঁর দয়া, ন্যায়পরায়ণতা, নম্রতা, এবং সততা তাঁকে অনুসরণ করার যোগ্য করে তুলেছে এবং আজও কোটি কোটি মানুষ তাঁকে জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে মেনে চলেন।
যিশু খ্রিষ্ট
যিশু খ্রিষ্ট পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা এবং খ্রিস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জীবন, শিক্ষা, এবং আদর্শ বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। যিশু খ্রিষ্টের কিছু গুণাবলী নিচে উল্লেখ করা হলো:
- যিশু মানুষের প্রতি ভালোবাসা, ক্ষমা, এবং নৈতিকতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
- যিশু বলেছেন, “তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসো।”মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং সেবা প্রদর্শনের শিক্ষা দিয়েছেন।তিনি শিখিয়েছেন, শত্রুদের ক্ষমা করাই সঠিক পথ।
- তিনি ধর্মীয় রীতিনীতি ও আইন মেনে চলার পাশাপাশি আত্মার পরিশুদ্ধি এবং ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
- ক্রুশে থাকাকালীন তিনি বলেছিলেন, “পিতা, তাদের ক্ষমা করুন, তারা জানে না তারা কী করছে।
- তিনি শত্রুদেরও ভালোবাসতে এবং ক্ষমা করতে বলেছেন।ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে মানুষের হৃদয় এবং মনের পরিবর্তনকে তিনি গুরুত্ব দিতেন।
- “যিশু ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ সকলের মধ্যে সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন।সমাজের নিপীড়িত এবং দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর গুরুত্ব দিয়েছেন।
গৌতম বুদ্ধ
গৌতম বুদ্ধ ছিলেন বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং মানবজাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ও নৈতিক আদর্শ। তিনি মানুষের মধ্যে শান্তি, করুণা, এবং নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন, যা যুগে যুগে কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে।
- বুদ্ধের মতে, সমস্ত প্রাণীর প্রতি সহিংসতা ত্যাগ করতে হবে।
- তিনি জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থানের ভেদাভেদ না করে সব মানুষের প্রতি সমান আচরণের শিক্ষা দিয়েছেন।
- তাঁর অহিংসা, ধ্যান, এবং শান্তির শিক্ষা আজও কোটি মানুষের জীবনকে আলোকিত করে চলেছে।
নেলসন মেন্ডালা
নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী নেতা। তাঁর জীবন ও সংগ্রাম ন্যায়বিচার, সমতা এবং মানবাধিকারের জন্য মানুষের অবিচল প্রত্যয়ের উদাহরণ। ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার ইউনিভার্সিটি এবং উইটওয়াটারসর্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
- ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার ইউনিভার্সিটি এবং উইটওয়াটারসর্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
- ম্যান্ডেলা অহিংস আন্দোলনের পাশাপাশি সশস্ত্র প্রতিরোধেও নেতৃত্ব দেন।
- ১৯৬৪ সালে “রাষ্ট্রদ্রোহের” অভিযোগে ম্যান্ডেলাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
- ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক চাপ এবং জনগণের আন্দোলনের ফলে ম্যান্ডেলা মুক্তি পান।
- মুক্তির পর তিনি ANC-এর নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য কাজ করেন।
- ১৯৯৪ সালে ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন।
- তিনি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, এবং জাতিগত সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেন।
- ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যপ্রথা বাতিল হয় এবং “গণতন্ত্র” প্রতিষ্ঠিত হয়।
- তিনি শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেন।তিনি বলেছিলেন, “শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যা দিয়ে তুমি বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পার।
- ১৯৯৩ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।
নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন সাহস, ধৈর্য, এবং নৈতিকতার প্রতীক।নামটি আজও পৃথিবীর সকল প্রান্তে মুক্তি ও মানবতার প্রতীক হিসেবে উচ্চারিত হয়।