নামাজ

মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত

Share this

মাগরিবের নামাজ ইসলামের পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মধ্যে চতুর্থ নামাজ। এটি সূর্যাস্তের পর শুরু হয় এবং আকাশে লাল আভা সম্পূর্ণ বিলীন হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। মাগরিবের নামাজ মোট ৭ রাকাত। তার মধ্যে ৩ রাকাত ফরজ নামাজ যা পড়া বাধ্যতামূলক, ২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা এবং ২ রাকাত নফল । এর মধ্যে থেকে আপনি চাইরে নফল নামাজ না পড়লে গুণা হবে না। তবে পড়লে অতিরিক্ত সাওয়াব পাওয়া যায়।

মাগরিবের নামাজের সময়সূচি

মাগরিবের নামাজের সময় শুরু হয়: মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়। অর্থাৎ, যখন সূর্য পুরোপুরি দিগন্তের নিচে অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন থেকেই মাগরিবের নামাজ পড়ার নির্ধারিত সময় শুরু হয়।

মাগরিবের নামাজের সময় শেষ হয়: মাগরিবের নামাজ আদায়ের সময় আকাশের লালচে আভা বিলীন হওয়া পর্যন্ত থাকে। যখন আকাশ সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায় এবং লালচে আভা আর দেখা যায় না, তখন মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়।

দেরি না করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই নামাজ পড়া উচিত, যাতে ফরজ ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায় এবং কাজা হয়ে না যায়।

মাগরিবের নামাজের নিয়ম

মাগরিবের ৩ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম: মাগরিবের ফরজ নামাজ তিন রাকাত হয়। নিচে ধাপে ধাপে নিয়ম দেওয়া হলো—

প্রথম রাকাত:

  • নিয়ত করা (মনে মনে স্থির করা বা নিচু স্বরে উচ্চারণ করা)।
  • তাকবির বলে (আল্লাহু আকবার) হাত বাঁধা।
  • সানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা…) পাঠ করা।
  • সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
  • এর পর অন্য কোনো সূরা পড়া (যেমন সূরা ইখলাস)।
  • রুকু করা (সুবহানা রব্বিয়াল আজিম)।
  • সোজা হয়ে দাঁড়ানো (সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ)।
  • সিজদাহ করা (সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা)।
  • বসা।
  • দ্বিতীয় সিজদাহ করা।

দ্বিতীয় রাকাত

  • দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা পড়া।
  • অন্য কোনো সূরা পড়া।
  • রুকু করা, সোজা হয়ে দাঁড়ানো, সিজদাহ ও বসা।
  • দ্বিতীয় সিজদাহ করা।
  • বসে আত্তাহিয়াতু পড়া।

তৃতীয় রাকাত

  • দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা পড়া।
  • অন্য কোনো সূরা পড়া।
  • রুকু, সোজা হয়ে দাঁড়ানো ও সিজদাহ করা।
  • বসে আত্তাহিয়াতু, দরুদ শরিফ ও দোয়া মাসুরা পড়া।
  • সালাম ফিরানো (ডানে ও বাঁয়ে)।

২ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ম

মাগরিবের ফরজের পর রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া মুস্তাহাব। এর নিয়ম হলো—

প্রথম রাকাত

  • সূরা ফাতিহা পড়া।
  • সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোনো সূরা পড়া।
  • রুকু, সোজা হয়ে দাঁড়ানো ও সিজদাহ করা।

দ্বিতীয় রাকাত:

  • সূরা ফাতিহা ও অন্য কোনো সূরা পড়া।
  • রুকু, সিজদাহ, বসা ও আত্তাহিয়াতু, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়া।
  • সালাম ফিরানো।

মাগরিবের নামাজ কসর কয় রাকাত

মাগরিবের ফরজ নামাজে কসর করা হয় না, কারণ এটি তিন রাকাত ফরজ নামাজ। মুসাফির অবস্থায় হলেও মাগরিবের নামাজে তিন রাকাত ফরজ নামাজই আদায় করতে হবে, কোন রাকাত কমানো হয় না। অর্থাৎ, মাগরিবের নামাজ কসর করা সম্ভব নয়।

মাগরিবের নামাজের ফজিলত

কুরআন ও হাদিসে মাগরিবের নামাজের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব এবং ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন—

“নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে।”

মাগরিবের পর আউওয়াবিন নামাজের ফজিলত
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ৬ রাকাত নফল নামাজ পড়বে, তার জন্য আউওয়াবিনের সওয়াব লেখা হবে।”

মাগরিবের নামাজ: জান্নাতে যাওয়ার এক মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের নামাজ পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

মাগরিবের নামাজ: শয়তান থেকে হেফাজত
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন—

যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন শয়তান ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং সূর্যাস্তের সময় তোমরা ঘরে প্রবেশ করো এবং নামাজ আদায় করো।”

তিন রাকাত ফরজ নামাজের বিশেষ মর্যাদা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

তোমাদের কেউ যখন মাগরিবের নামাজ পড়বে, সে যেন এর পূর্বে তিন রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করে।”
(তিরমিজি: ৪৩৭)

মাগরিবের পর ইস্তেগফার ও দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন—

আর প্রভুর প্রশংসাসহ সন্ধ্যায় ও সকালে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।

মাগরিবের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত, জান্নাতের সুসংবাদ এবং গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

আরো পড়ুন: নামাজের রুকন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *