নামাজ

অসুস্থ অবস্থায় নামাজ পড়ার নিয়ম

Share this

অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ

মাসয়ালা : কোনো অবস্থায়ই নামাজ ছাড়া যাবে না। যতক্ষণ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সক্ষম দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বে, আর দাঁড়াতে না পারলে বসে নামাজ পড়বে, বসে বসেই রুকু করবে, রুকু করে উভয় সিজ্দা করবে এবং রুকুর জন্য এতটুকু ঝুঁকবে যেন কপাল হাঁটু বরাবর হয়ে যায় ।

মাসয়ালা : যদি কারোর রুকু, সিজদা করারও ক্ষমতা না থাকে, তবে ইশারায় রুকু ও সিজদা আদায় করবে। এই সিদার জন্য রুকুর চেয়ে বেশি ঝুঁকবে ।

মাসয়ালা ঃ সিজদা করার জন্য কাঁথা, বালিশ ইত্যাদি কোনো উঁচু বস্তু রাখা এবং তার ওপর সিজদা করা ভাল নয়, সিজদা করতে না পারলে ইশারা করে নিবে, তবুও বালিশের ওপর সিজদা করার প্রয়োজন নেই ।

চেয়ারে বসে নামাজ পড়া যাবে কি

মাসয়ালা : কোনো রোগীর যদি এরূপ অবস্থা হয় যে, ইচ্ছা করলে দাঁড়াতে পারে, কিন্তু এতে অনেক কষ্ট হয় বা রোগ বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা হয়, তবে তার জন্য বসে নামাজ পড়া জায়েয আছে।

মাসয়ালা : আবার কোনো রোগীর এমন অবস্থা হয় যে, সে দাড়াতে পারে কিন্তু রুকু-সিজদা করতে পারে না, তবে তার জন্য উভয় সুরতই জায়েয আছে- দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ুক অথবা বসে বসে ইশারা দ্বারা রুকু-সিজদা আদায় করুক।

অবশ্য এরূপ নামাজ পড়ুক এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইশারা করে রুকু-সিজদা আদায় করুক, বা বসে অবস্থায় বসে বসে ইশারা করাই উত্তম ।

মাসয়ালা : রোগীর যদি নিজ ক্ষমতায় বসার শক্তি না থাকে, কিন্তু গাও-তাকিয়ায় বা দেয়ালে হেলান দিয়ে অর্ধ বসা অবস্থায় শোতে পারে, তবে তাকে তদ্রূপ গাও-তাকিয়া মাথার এবং পিঠের নিচে দিয়ে পশ্চিম দিকে মুখ করে শোয়াবে, যাতে অনেকটা বসার মত অবস্থা হয় এবং পা দুখানি কিবলার দিকে প্রসারিত করে দিবে,

পা গুটিয়ে হাঁটু যদি খাড়া করে রাখতে পারে, তবে তদ্রূপ করে দিবে এবং যদি হাঁটু খাড়া করে না রাখতে পারে, তবে হাঁটুর নিচে বালিশ রেখে দিবে, যাতে পা দুখানি কিলার দিক হতে যথাসম্ভব ফিরিয়ে থাকে । কারণ, বিনা ওযরে কিলার দিকে পা রাখা মাকরুহ্ ।

মাসয়ালা ঃ এরূপ বসে মাথার ইশারা দ্বারা রুকু-সিজ্‌দা আদায় করে নামাজ পড়বে, তবুও নামাজ ছাড়বে না। অবশ্য সিদার ইশারার সময় রুকুর ইশারা অপেক্ষা মাথাটা কিছু বেশি ঝুঁকাবে।

যদি এরূপ হেলান দিয়েও বসতে না পারে, তবে মাথার নিচে কিছু উঁচু বালিশ দিয়ে রোগীকে শুইয়ে দিবে, যাতে মুখটা আকাশের দিকে না থেকে যথাসম্ভব কিলার দিকে থাকে।

তারপর মাথার ইশারা দ্বারা রুকু-সিজদা আদায় করে নামাজ পড়বে। আর রুকুর ইশারা একটু কম করবে এবং সিজদার ইশারা একটু বেশি করবে।

মাসয়ালা : যদি কেউ এগুলোর পরিবর্তে ডান বা বাম কাতে শোয় এবং কিলার দিকে মুখ করে অর্থাৎ ডান কাতে শোইলে উত্তর দিকে শিয়র দিয়ে এবং বাম কাতে শোইলে দক্ষিণ দিকে শিয়র করে মাথার ইশারায় রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করে, তবে তাও দুরুস্ত আছে। কিন্তু চিৎ হয়ে শুয়ে নামাজ পড়া অধিক উত্তম ।

মাসয়ালা : রোগীর যদি মাথা দ্বারা ইশারা করার ক্ষমতাও না থাকে, তবে শুধু চক্ষুর দ্বারা ইশারা করে নামাজ আদায় হবে না, এমন অবস্থায় নামাজ আর ফরযও থাকে না।

অবশ্য ঐরূপ অবস্থা যদি চব্বিশ ঘন্টা কাল অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে, তবে ঐ সময়ের নামাজগুলোর কাযা পড়তে হবে; কিন্তু এরূপ অবস্থা যদি চব্বিশ ঘণ্টা কালের (পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের) বেশি থাকে, তবে সেগুলোর কাযাও পড়তে হবে না; নামাজ সম্পূর্ণ মা’ফ হয়ে যাবে।

মাসয়ালা : চব্বিশ ঘণ্টা কাল বা তার কম সময় এমন অবস্থা থাকার পর যদি অবস্থা কিছু ভাল হয় এবং শুয়ে মাথার ইশারা দ্বারা নামাজ পড়ার মত শক্তি পায়, তবে ঐ অবস্থায় মাথার ইশারা দ্বারা রুকু-সিজদা আদায় করেই ঐ কয়েক ওয়াক্তের নামাযের কাযা পড়ে নিবে।

কিন্তু একথা মনে করবে না যে, সম্পূর্ণ ভাল হয়ে তারপর কাযা পড়ব। কারণ হয়ত ঐ অবস্থায় তোমার মৃত্যু এসে পড়তে পারে, তা হলে গুনাহ্গার অবস্থায় মরবে।

মাসয়ালা ঃ যদি কোনো লোক হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে পড়ে এবং এক দিন-একরাত বা তার কম বেহুঁশ থাকে অর্থাৎ, পাচ ওয়াক্ত বা তার চেয়ে কম নামাজ ছুটে যায়,

তবে শুধু ঐ কয়েক ওয়াক্ত নামাযের কাযা পড়তে হবে। আর যদি এক দিন এক রাতের চেয়ে বেশি সময় বেহুঁশ থাকে অর্থাৎ, বেহুঁশ অবস্থায় পাচ ওয়াক্তের চেয়ে বেশি নামাজ কাযা হয়, তবে তা আর পড়তে হবে না । অর্থাৎ, মাফ হয়ে যাবে।

মাসয়ালা ঃ কোনো লোক নামাজ শুরু করার সময় বেশ ভাল সুস্থ ছিল, কিছু নামাজ পড়ার পর হঠাৎ রগের উপর রগ উঠে বা অন্য কোনো রোগ উপস্থিত হয়ে এমন হয়ে গেল যে, উঠে দাঁড়াবার শক্তি আর রইল না, তবে অবশিষ্ট নামাজ সে বসেই আদায় করবে।

এমন কি, বসে বসে যদি রুকু-সিজদা করতে পারে, তবে করবে; নতুবা মাথার ইশারায় রুকু-সিজদা করে হলেও নামাজ পূর্ণ করবে, তবুও নামাজ ছাড়বে না। এমন কি, যদি বসতে না পারে তবে শুয়ে হলেও অবশিষ্ট নামাজ পূর্ণ করবে।

মাসয়ালা : কোনো লোক অসুস্থ অবস্থায় দাঁড়াতে না পারায় বসে পড়ার নিয়্যত বেঁধেছে এবং বসে বসে রুকু-সিদা করে দুই এক রাকাত পড়েছে, তারপর কিছুটা সুস্থ হয়ে দাঁড়াবার মত শক্তি পেয়েছে, এই অবস্থায় অবশিষ্ট নামাজ দাঁড়িয়ে পূর্ণ করবে। নতুন করে নিয়্যত বাঁধার দরকার নেই ।

মাসয়ালা : রোগীর অবস্থা যদি এমন শোচনীয় হয় যে, রুকু-সিজদা করে নামাজ পড়তে পারে না, মাথার ইশারায় বসে বা শুয়ে নামাজ পড়ে এবং ঐ অবস্থায় নামাজের নিয়্যত বেঁধে দুই এক রাকাত নামাজ পড়েছে,

তারপর বসে বা দাঁড়িয়ে রুকু-সিজদা করার মত শক্তি যদি পায়, তবে যখন এমন শক্তি পাবে তখনই পূর্বের নামাযের নিয়্যত বাতিল হয়ে যাবে এবং নতুন করে নিয়্যত বেঁধে নামাজ পড়তে হবে।

মাসয়ালা : রোগীর যদি এমন শোচনীয় অবস্থা হয় যে, বসে পায়খানাও করতে পারে না, শুয়ে শুয়ে পেশাব-পায়খানা করে পানির দ্বারা ইস্তিঞ্জাও করতে পারে না, তবে পুরুষ হলে তার স্ত্রী এবং স্ত্রী হলে তার স্বামী যদি পানির দ্বারা ইস্তিঞ্জা করিয়ে দেয়,

তবে অতি ভাল, নতুবা নেড়া দিয়ে মুছে ফেলে ঐ নাপাক অবস্থায়ই নামাজ পড়বে- তবুও নামাজ ছাড়বে না। পুরুষের যদি ছেলে বা ভাই থাকে আর স্ত্রীর যদি মেয়ে বা ভগ্নী থাকে,

তবে তারা অযূ করিয়ে দিতে পারবে বটে, কিন্তু ইস্তিঞ্জা করাতে পারবে না। কারণ ছেলে, মেয়ে, মা, বাপ, বোন, কারোর লজ্জাস্থান দেখা বা স্পর্শ করা জায়েয নয় ।

স্বামী-স্ত্রীর জন্য একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখা বা ছোঁয়া জায়েয আছে। রোগী যদি নিজে অযূ বা তায়াম্মুম করতে না পারে, তবে অন্য কেউ অযূ বা তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। যদি নেড়ার দ্বারা মুছবার মত শক্তিও না থাকে এবং পুরুষের স্ত্রী বা স্ত্রীর স্বামী না থাকে, তবে রোগী ঐ অবস্থায়ই নামাজ পড়বে, তবুও নামাজ ছাড়বে না

মাসয়ালা : কোনো ব্যক্তির সুস্থ অবস্থায় কিছু নামাজ কাযা হয়েছিল,রোগে পড়ে স্মরণ হয়েছে। এখন বসে, শুয়ে বা ইশারা করে যেভাবে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়বে, সেভাবেই ঐ কাযা নামাজগুলো পড়ে নিবে ।

কখনও এরূপ মনে করবে না যে, সুস্থ হয়ে পড়বে বা যখন দাড়িয়ে নামাজ পড়তে পারে, তখন পড়বে বা যখন বসে রুকু-সিজদা দ্বারা নামাজ পড়তে পারে, তখন পড়বে।

এসব খেয়াল শয়তানী ধোকামাত্র, কাজেই এমন খেয়াল করবে না । যখন মনে আসে, তখনই পড়ে নিবে; দেরি করবে না ।

মাসয়ালা : রোগীর বিছানা যদি নাপাক হয়ে যায় এবং বিছানা বদলাতে যদি রোগীর অতিশয় কষ্ট হয় বা এটুকু নড়াচড়াতেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তবে ঐ নাপাক বিছানায়ই নামাজ পড়বে।

মাসয়ালা : ডাক্তার যদি চোখ অপারেশন করে এবং নড়াচড়া করতে নিষেধ করে, তবে শুয়ে শুয়ে নামাজ পড়বে।

আরো পড়ুন:- নামাজে ভুল হলে করণীয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *