অজুর দোয়া ও অজুর ফরজ
Share this
কেয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে যে, তখন তাদের চেহারা দুনিয়ায় থাকতে যে অজু করছিল, তার বরকতে এমন ঝকঝক করতে থাকবে, যেমন ঘোড়ার কপালে চাঁদ উজ্জ্বল দেখায়।
সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের চেহারাকে কেয়ামতের দিন অধিকতর উজ্জ্বল করতে চায়, তার অধিক পরিমাণে অজু করা উচিত। অপর এক হাদীসে আছে-“কেহ যখন উত্তমরূপে অজু করে, তখন ওযুর পানি শরীর হতে গড়ে পড়ার সাথে সাথে তার গুনাহ ঝরে যায়”।
আমাদের মাযহাবের ইমাম হযরত আবু হানীফা (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি ঝরে পড়া গুনাহ নিজে প্রত্যক্ষ করতেন।
তিরমিযী শরীফে বর্ণিত এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামাযকে বেহেশতের চাবি এবং ওযুকে নামাযের চাবি বলেছেন। বস্তুত বিনা ওযুতে নামায পড়া দুরস্ত নেই। এর থেকেই ওযুর তাৎপর্য উপলদ্ধি করা যায় ।
অজুর দোয়া আরবি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ
অজু করার সময় নিচের দোয়াটি পড়বেন।
অজুর শেষে যে দোয়া পড়তে হয়
অজুর শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিচের দোয়াটি পড়বেন।
আরো পড়ুন:- অজু ভঙ্গের কারণ
অজুর ফরজ কয়টি ও কী কী
অজুর মধ্যে চারটি কাজ ফরয। এর কোনটি বাদ পড়লে অজু শুদ্ধ হবে না, আর অজু শুদ্ধ না হলে নামাযও শুদ্ধ হবে না। সেই চারটি কাজ হচ্ছে-
- কপালের উপরিভাগে চুল গজাবার স্থান হতে থুতনির নীচ এবং পার্শ্বের দিকে দুই কানের লতি পর্যন্ত পুরা মুখমন্ডল ধৌত করা
- দুই হাত কুনইসহ ধৌত করা
- মস্তকের চারভাগের একভাগ মোসেহ করা ।
- উভয় পা গিটসহ ধৌত করা ।
অজুর সুন্নাত কয়টি ও কী কী
- অজু আরম্ভ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া।
- দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধৌত করা।
- মেসওয়াক বা দাঁতন দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা ।
- প্রত্যেকবার নতুন পানি নিয়ে তিন বার কুলি করা
- রোযাদার না হলে কুলিতে গড়গড়া করা ।
- প্রত্যেকবার নতুন পানি নিয়ে তিন বার নাক সাফ করা।
- দাড়ি খিলাল করা ।
- উভয় হাতের অঙ্গুলি খেলাল করা ।
- ওযুর প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধৌত করা ।
- সমস্ত মাথা একবার মোসেহ করা।
- উভয় কান মোসেহ করা।
- ওযু করার সময় তারতীব’ ঠিক রাখা ।
- এক অঙ্গ না শুকাতে অপর অঙ্গ ধৌত করা ।
- হাত পায়ের অঙ্গুলির অগ্রভাগ হতে ধোয়া আরম্ভ করা।
- উভয় পায়ের অঙ্গুলি খিলাল করা।
ওযুর ‘তারতীব’ ঠিক রাখার অর্থ-প্রথমে মুখমন্ডল ধৌত করা, তারপর মাথা মোসেহ করা এবং সর্বশেষ পা ধৌত করা । এ নিয়মের ব্যতিক্রম করলে সুন্নতের খেলাফ হবে।
অজুর মাকরূহ সমূহ
ওযুর মধ্যে নিম্নলিখিত কাজগুলো মাকরূহ
- জোরে জোরে মুখমন্ডলে পানি নিক্ষেপ করা ।
- বাম হাতের সাহায্যে মুখমন্ডল ধৌত করা ।
- বাম হাতের কুলি পানি মুখে দেয়া ।
- ডান হাতের সাহায্যে নাকে পানি দেয়া ।
- একাধিক বার মাথা মোসেহ করা ।
- ওযুর অঙ্গসমূহ তিন বারের কম বা বেশি ধোয়া ।
- ওযুর সময় নিস্প্রয়োজনে কথাবার্তা বলা ।
- ওযুতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করা ।
অজুর মুস্তাহাব সমূহ
ওযুতে নিম্নলিখিত কাজগুলো মুস্তাহাব। -এই সমস্ত কার্যের প্রতি যত্নবান থাকলে ওযুর সৌন্দর্য ও ফযীলত বৃদ্ধি পায় ।
(১) কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে ওযু করা ।
(২) পানির পাত্র ছোট হলে বামপার্শ্বে রেখে ওযু করা । (৩) ওযু আরম্ভ করার পূর্বে এই দোয়া পড়া—
– اَلْحَمْدُ لِلّهِ عَلى دِينِ الإِسْلَامِ . للّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ
উচ্চারন : বিসমিল্লাহিল ‘আলিয়্যিল আযীম’ আলহামদু লিল্লাহি আ’লা দীনিল ইসলাম ।
অর্থ : সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বমহান আল্লাহর নামে ওযু আরম্ভ করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলারই প্রাপ্য যিনি আমাকে দ্বীন ইসলামের উপর রেখেছেন ।
(৪) ডান দিক হতে ওযু আরম্ভ করা । অর্থাৎ হাত ধোয়ার সময় প্রথমে ডান হাত এবং পা ধোয়ার সময় প্রথমে ডান পা ধোয়া ।
(৫) বাম হাতের কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুলির সাহায্যে নাক সাফ করা ।
(৬) অঙ্গ ধোয়ার সময় নির্দিষ্ট দোয়া পড়া ।
(৭) ঘাড় মোসেহ করা (উভয় হাতের পিঠ দ্বারা)।
(৮) প্রত্যেক অঙ্গ ভাল রকম ঘষে ধৌত করা ।
(৯) প্রত্যেক অঙ্গ নির্দিষ্ট পরিমাণ স্থান হতে কিছু বেশি ধোয়া ।
(১০) উভয় পা শুধু বাম হাতের সাহায্যে ধৌত করা । (১১) ওজর না থাকলে কারো সাহায্য না নিয়ে ওযু করা ।
(১২) ওযু করার সময় কোন রকম কথাবার্তা না বলা ।
(১৩) ওযুর পানি কিছু অবশিষ্ট থাকলে দাঁড়িয়ে পান করা । (১৪) ওযু করা শেষ হলে নিম্নলিখিত দোয়া পড়া ।
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ’আলনী মিনাত তাওয়াউবীনা ওয়াজ আলনী মিনাল মুতাত্বাহহিরীন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা হাসিলকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। (১৫) পূর্বেই ওযু করত নামাযের জন্য অপেক্ষা করা।
কোন অঙ্গ ধুতে কোন দোয়া পড়বে
মুখমন্ডল ধোয়ার সময় পড়বে
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বাইয়্যিদ্ধ ওয়াজ্বহী ইয়াওমা তাবইয়াদ্দু উজুহূওঁ ওয়া তাসওয়াদ্দু উছূহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! যেদিন কতক লোকের চেহারা উজ্জ্বল এবং কতক লোকের চেহারা মলিন হবে, সেদিন আমার চেহারাকে তুমি আলোকোজ্বল করিও।
ডান হাত ধোয়ার সময় পড়বে
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আ’তিনী কিতাবী বিইয়ামীনী অহাসিবনী হিসাবই ইয়াসীরা ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার আমলনামা আমার ডান হাতে দান করিও এবং আমার হিসাব নিকাশ সহজ করিও ।
বাম হাত ধোয়ার সময় পড়বে
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লা তু’ত্বিনী কিতাবী বিশিমালী ওয়ালামিওঁ অরায়ি জাহরী । অর্থ : হে খোদা! আমাকে আমার আমলনামা বাম হাতে বা আমার পিছন দিকে হতে দিওনা ।
নাক পরিস্কা করার সময় পড়বে
উচ্চারন : আল্লাহুম্মা আরিহনী রায়িহাতাল জান্নাতি ওয়ালা তুরিহনী রায়িহাতান্নার । অর্থ : ইয়া আল্লাহ! বেহেশতের সুবাস-সৌরভ আমাকে দান করিও দোযখের দুর্গন্ধ অনুভব করাইও না ।
মাথা মোসেহ করার সময় পড়বে
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আজিল্লিনী তাহতা জিল্লি আরশিকা ইয়াওমা লা জিল্লা ইল্লা
অর্থ : ইয়া আল্লাহ! কেয়ামতের সে দিন তোমার আরশের ছায়া ভিন্ন আর কোন ছায়া থাকবে না, তুমি আমাকে তোমার আরশের চায়াতলে স্থান দিও
কান মোসেহ করার সময় পড়বে
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ’ আলনী মিনাল্লাযীনা ইয়াসতামিউনাল ক্বাওলা ফাইয়াত্তাবিউনা আহসানাহু ।
অর্থ : ইয়া আল্লাহ! সদুপদেশ শুনিয়া যারা তদনুযায়ী আমল করে, আমাকে তাদের অন্তর্ভূক্ত কর ।
ঘাড় মোসেহ করার সময় পড়বে
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আ’তিক্ব রাক্কাবাতী মিনান্নার।
অর্থ : ইয়া আল্লাহ! আমার গর্দানকে দোযখ হতে বাঁচাও ।
সুন্নাত তরিকায় অজু করার নিয়ম
অজু করার সময় কিলার দিকে মুখ করে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় বসবে- যেন অযূর পানির ছিটা নিজের ওপর আসতে না পারে।
মাসয়ালা : তারপর তিনবার কুলি করবে এবং মিসওয়াক করবে যদি মিয়াক না থাকে, তবে মোটা কাপড় বা হাতের আঙ্গুল বা অন্য কিছু দ্বারা দাঁতগুলিকে বেশ পরিষ্কার করবে। যদি রোযাদার না হয়, তবে গড়গড়া করে ভালভাবে সমস্ত মুখগহ্বরে পানি পৌছাবে। কিন্তু রোযা অবস্থায় গড়গড়া করবে না। কেননা, হয়ত সামান্য পানি হলকুমের মধ্যে চলে যেতে পারে ।
তারপর তিনবার নাকে পানি দিবে। বাম হাত দিয়ে নাক সাফ করবে। রোযা অবস্থায় নাকের ভিতরে নরম অংশের ওপর পানি পৌঁছাবে না ।
মাসয়ালা : তারপর তিনবার মাথার চুলের গোড়া হতে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখমণ্ডল ভাল করে উভয় হাত দিয়ে ডলে -মলে ধুবে, যেন সব জায়গায় পানি পৌঁছে। ভ্রুর নিচেও খেয়াল করে পানি পৌছাবে যেন কোনো স্থান শুকনা না থাকে ।
মাসয়ালা ঃ অতঃপর ডান হাত কনুই সহ ভাল করে তিনবার ধুবে। তারপর বাম হাতও এভাবে কনুই সহ ধুবে। এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে খিলাল করবে। হাতের আংটি, চুরি ইত্যাদি নেড়ে-চেড়ে ভালমত সর্বত্র পানি পৌঁছাবে, যেন একটি পশমও শুকনো না থাকে ।
মাসয়ালা : তারপর সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করবে। শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভিতর দিক এবং বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে বাইরের দিক মাসেহ করবে এবং হাতের আঙ্গুলের পিঠের দিক দিয়ে ঘাড় মাসেহ করবে, কিন্তু গলা মহে করবে না। কেননা গলা মাসহ করা ভাল নয়; বরং নিষেধ আছে। কান মাসেহ করার জন্য নতুন পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই, মাথা মাসেহ করার পর ভেজা হাত দিয়েই মাসেহ করবে।
মাসয়ালা : তারপর তিনবার টানো (ছোট গিরা) সহ উভয় পা ধুবে । প্রথমে ডান পা পরে বাম পা ভাল করে ডলে মলে ধুবে। পায়ের তলা এবং গোড়ালির দিকে খুব খেয়াল রাখবে, যেন কোনো অংশ শুকনো থেকে না যায়।
বাম হাতের কনিষ্ঠা অঙ্গুলী নিচের দিক হতে প্রবেশ করিয়ে পায়ের অঙ্গলীগুলি খেলাল করবে। ডান পায়ের কনিষ্ঠা অঙ্গুলী হতে শুরু করে বাম পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুলীতে গিয়ে শেষ করবে। এটা হল অযু করার নিয়ম ।