কাজা নামাজের নিয়ত
Share this
কাযা নামাজ
বিশেষ কারণে ওয়াক্ত মতো নামাজ না পড়তে পারলে অন্য সময় তা পড়ে নেওয়াকে কাযা নামাজ বলে । ফজরের কাজা নামাজ সুন্নাতসহ দুপুরের আগে পড়ে নেওয়াই শ্রেয়। পাঁচ ওয়াক্তের বেশি নামাজ কাজা হলে তা আদায় করতে গেলে বর্তমান নামাজ কাজা হওয়ার ভয় থাকলে শেষ ওয়াক্তের কাযাটা পড়ে নিয়ে বর্তমান নামাজ আদায় করবে। পরে বাকী কাজা গুলো পড়বে। পাঁচের কম নামাজ কাযা হলে বর্তমান নামাজের আগে পড়ে নেওয়া ভালো
কাজা নামাযের নিয়ম
কোন কারণে নামায ভঙ্গ হলে অন্য সময় তা আদায় করাকে কাজা নামায বলে । এক ওয়াক্ত হতে পাঁচ ওয়াক্ত পর্যন্ত কাজা হলে তা উপস্থিত নামাযের পূর্বে আদায় করবে।
যদি কাজা নামায আদায় করতে গিয়ে উপস্থিত নামায কাযা হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তবে উপস্থিত নামায আগে আদায় করবে। পরে কাজা আদায় করে সেই ওয়াক্তের সুন্নাত থাকলে পড়বে।
কাযা কেবল ফরয ও ওয়াজিব নামাযেরই পড়তে হয়। সুন্নতের কাযা পড়তে হবে না । ফজর নামাযের ওয়াক্ত চলে গেলে সেদিনের নামায সুন্নতসহ দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়তে হয় । দ্বি-প্রহরের পরে যোহরের পুর্বে পড়লে ফরয দুই রাকআত পড়বে
আছরের কাজা মাগরিবের পূর্বে না পড়ে পরে পড়বে। কেননা মাগরিবের ওয়াক্ত সংকীর্ণ। ঈদের নামাযের কাজা নেই। পাঁচ ওয়াক্তের বেশি নামায কাজা হলে যে কোন সময় একের পর এক আদায় করলেই চলবে ।
ফজরের কাজা নামাযের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ
উচ্চরণ ঃ নাওয়াইতু আন আকুদিয়া লিল্লাহি তাআলা রাক’আতাই সালাতি ফাওতিল ফাজরি ফারদাল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
কাজা নামাযের নিয়তে ‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা’ এর স্থলে ‘নাওয়াইতু আন আক্বদিয়া লিল্লাহি তা’আলা বলতে হবে ।
আরো পড়ুন:- জমাতে নামাজ পড়ার নিয়ম
কাযা নামাজের মাসয়ালা
মাসয়ালা : যদি কারোর কোন ফরজ নামাজ ছুটে যায়, তবে স্মরণ হওয়া মাত্রই কাযা পড়া ওয়াজিব। বিনা ওযরে যদি কাযা পড়তে দেরি করে, তবে গুনাগার হবে ।
অতএব, কারোর যদি কোন নামাজ কাযা হয়ে যায় এবং স্মরণ হওয়ার মাত্র তার কাযা না পড়ে অন্য সময় পড়বে বলে রেখে দেয় এবং হঠাৎ মৃত্যু এসে পড়ে, তার দুই ধরনের গুনাহ্ হবে।
এক প্রকার গুনাহ্ নামাজ না পড়ার, আর এক প্রকার গুনাহ্ সময় পাওয়া সত্ত্বেও তার কাযা না পড়ার কারণে।
মাসয়ালা : যদি কারোর কয়েক ওয়াক্ত নামাজ কাযা হয়ে থাকে, তবে যথা সম্ভব সব নামাযের কাযা পড়ে নেয়া উচিত। এমন কি, যদি সাহস করে সব নামাজের কাযা এক ওয়াক্তেই পড়ে নিতে পারে,
তবে তো সবচেয়ে ভাল । যেমন যোহরের নামাজের কাযা যোহরের ওয়াক্তেই পড়তে হবে এমন কোনো বিধান নেই। যদি কারোর কয়েক মাসের বা কয়েক বছরের নামাজ কাযা হয়ে থাকে, তবে তারও যথাসম্ভব সব নামাযের কাযা পড়ে নেয়া কর্তব্য।
এক এক ওয়াক্তে দুই তিন বা চার ওয়াক্তের কাযা পড়ে নিলেও চলে। একান্ত যদি কোনো মজবুরী হয় (অর্থাৎ বেশি অভাবী লোক হয় এবং – বাল-বাচ্চাদিগকে খেটে খাওয়াতে হয় বলে সময় না পায়,
তবে খাটুনির বাইরে যখনই একটু সময় পাবে, তখনই কাযা নামাজগুলো পড়বে, অন্তত এক ওয়াক্তের সঙ্গে এক । ওয়াক্তের কাযা অবশ্যই পড়বে।
মাসয়ালা ঃ কাযা নামাজ পড়ার জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট নেই, যখনই একটু সময় পাওয়া যায়, তখনই অযূ করে দুই-চার ওয়াক্তের কাযা পড়ে নেয়া যায়। তবে কখনো
মাকরূহ্ ওয়াক্তে পড়বে না।
মাসয়ালা : যদি কারোর মাত্র দুই এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা হয়ে থাকে এবং এর পূর্বে কোনো নামাজ কাযা হয়নি, অথবা কাযা হয়েছে কিন্তু কাযা পড়ে নিয়েছে।
শুধু এক ওয়াক্তের কাযা বাকি আছে, তবে সে যতক্ষণ পর্যন্ত কাযা নামাজ শেষ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার ওয়াক্তিয়া নামাজ দুরুস্ত হবে না । কাযা না পড়ে যদি ওয়াক্তিয়া পড়ে তবে তা আবার দোহরিয়ে পড়তে হবে।
অবশ্য যদি কাযা নামাযের কথা স্মরণ না থাকাবশত ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়ে থাকে, তবে ওয়াক্তিয়া নামাজ দুরুস্ত হবে, দোরাতে হবে না। কিন্তু স্মরণ আসা মাত্রই কাযা পড়ে নিবে ।
মাসয়ালা ঃ যদি ওয়াক্ত এমন সংকীর্ণ হয় যে, কাযা পড়ে ওয়াক্তিয়া পড়লে ওয়াক্তিয়াও কাযা হয়ে যায়, তবে ওয়াক্তিয়া আগে পড়ে তারপর কাযা পড়বে।
মাসয়ালা : যদি কারোর দুই, তিন, চার অথবা পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ কাযা হয় অর্থাৎ এক দিনের পরিমাণ নামাজ কাযা হয়, তবে তাকে সাহেবে তরতিব বলে।
এক দিনের বেশি নামাজ কাযা হলে অর্থাৎ, ছয় বা ততোধিক ওয়াক্তের নামাজ কাযা হলে তরতিব থাকে না; এক সঙ্গে হোক বা পৃথক পৃথক কাযা জমা হোক । সাহেবে তরতিব হলে তার যেমন কাযা এবং ওয়াক্তিয়ার মধ্যে তরতিব রক্ষা করা ফরজ,
তেমনই কাযা নামাজগুলোর মধ্যে অনুরূপ তরতিব রক্ষা করা ফরজ। কারোর ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং ইশা (বিত্রসহ) কাযা হলে এই নামাজগুলো পড়ার পূর্বে পরদিনের ফজরের নামাজ পড়লে তা শুদ্ধ হবে না।
যে নামাজগুলো কাযা হয়েছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে অর্থাৎ আগে ফজর, তারপর যোহর, তারপর আসর, তারপর মাগরিব, তারপর ইশা, তারপর বিত্র পড়তে হবে। সাহেবে তরতিব না হলে কাযা নামাজ রেখে দিয়ে ওয়াক্তিয়া পড়লে তা দুরুস্ত হবে না ।
মাসয়ালা : যদি কারোর ছয় ওয়াক্তের বেশী অতীতের কাযা থাকে, তারপর রীতিমত নামাযি হয় এবং বহুকাল পরে হঠাৎ এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা হয়ে যায়, তবে নামাজ দুরুস্ত হয়ে যাবে। সেও সাহেবে তরতিব থাকবে না। এই কাযা রেখে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়লে ওয়াক্তিয়া
মাসয়ালা : কারোর জিম্মায় ছয় কিংবা বহু নামাজ কাযা ছিল, সেই কারণে সে সাহেবে তরতিব ছিল না, তারপর কিছু কিছু করে কাযা পড়তে পড়তে সে সব নামাজ পড়ে ফেলল, তবে সে এখন হতে আবার সাহেবে তরতিব হবে।
অতএব, আবার যদি পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজ কাযা হয়; তবে আবার তরতীব রক্ষা করা ফরয হবে এবং যদি ছয় বা ততোধিক সংখ্যক কাযা একত্র হয়ে যায়, তবে আবার তরতিব মাফ হয়ে যাবে কাযা নামাজ থাকতে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়তে পারবে।
কিন্তু পূর্বেই বলা হয়েছে, ইচ্ছাপূর্বক কাযা না পড়ে তরতিব মাফ হয়ে যাবে এই আশায় কাযার সংখ্যা বাড়াতে থাকলে গুনাহগার হবে!!
মাসয়ালা : অনেক সংখ্যক নামাযের অল্প অল্প করে কাযা পড়তে পড়তে মাত্র চার যা ইচ্ছা সে আগে পড়তে পারবে এবং এগুলো অবশিষ্ট থাকা
সত্ত্বেও ওয়াক্তিয়া নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকলেও তরতিব ওয়াজিব হবে না। এই চার পাচ ওয়াক্তের মধ্যে পড়তে পারবে ।
মাসয়ালা : যদি কারোর বির নামাজ কাযা হয়ে যায় এবং অন্য কোনো নামাজ তার জিম্মায় কাযা না থাকে, তবে বিতর না পড়ে ফযরের নামাজ পড়া দুরুস্ত হবে না । স্মরণ থাকা এবং সময় থাকা সত্ত্বেও যদি স্বজ্ঞানে বিত্র না পড়ে ফজর পড়ে, তবে বির কাযা পড়ে, তারপর পুনরায় ফজর পড়তে হবে।
মাসয়ালা ঃ কেউ শুধু ইশার নামাজ পড়ে বিত্র না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ল, শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে বিত্র পড়ল, পরে জানতে পারল যে, ভুলে ইশার নামাজ বে-ওযু অবস্থায় পড়েছিল, এরূপ অবস্থায় তার শুধু এশার নামাজ কাযা পড়তে হবে, বিত্র কাযা পড়তে হবে না ।
মাসয়ালা : শুধু ফরয নামাজ এবং বিরের কাযা পড়ার হুকুম আছে, তা ব্যতীত সুন্নত বা নফলের কাযা পড়ার বিধান নেই। অবশ্য যদি সুন্নত বা নফল নামাজ শুরু করার পর নিয়্যত ভঙ্গ করে তবে তার কাযা পড়তে হবে বা ফজরের নামাজ যদি ছুটে যায় এবং দুপুরের পূর্বে কাযা পড়ে,
তবে সুন্নতসহ কাযা পড়তে হবে; কিন্তু এক্ষেত্রেও দুপুরের পর কাযা পড়লে শুধু ফরজ দুই রাকাতের কাযা পড়তে হবে। কিন্তু সুন্নতের কাযা পড়তে হবে না ।
মাসয়ালা : নামাযের সময় সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় বা জামাত ছুটে যাওয়ার আশংকায় যদি ফজরের সুন্নত ছেড়ে শুধু ফরয পড়ে নেয়, তবে সূর্য উদয় হয়ে এক ‘নেয়া’ ওপরে ওঠার পর হতে দুপুরের পূর্বেই সুন্নতের কাযা পড়ে নিবে
মাসয়ালা : যদি কোন লোক শয়তানের ধোকায় পড়ে প্রথম বয়সে বে-নামাযি থাকে এবং কিছু কাল পর সৌভাগ্যবশত তওবা করে নামাজ পড়া শুরু করে, তবে বালেগ হওয়ার পর হতে তার যত নামাজ ছুটে গিয়েছে সব নামাজের কাযা পড়া ওয়াজিব হবে ।
তওবার দ্বারা নামাজ মাফ হয় না। অবশ্য নামাজ না পড়ার কারণে গুনাহ্ যে হয়েছিল তা মাফ হয়ে যেতে পারে । যদি বিগত সব সমাযের কাযা না পড়ে, তবে গুনাহগার হবে ।