নামাজ

নামাজ ভঙ্গের কারণ

Share this

আমরা মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের এ নামাজ সঠিক ভাবে আদায় হয় না। নিচে যে সকল কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় তার বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

যে সব কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়

  • নামাযের ভেতরে স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় কথা বললে ।
  • সালামের জওয়াব দিলে ।
  • বেদনা বা রোগের জন্য আহ উহ করলে ।
  • কষ্ট বা বিপদের কারণে উচ্চস্বরে কাঁদলে ।
  • বিনা ওজরে গলা খাকার দিলে
  • হাঁচির জবাব দিলে ।
  • দুঃসংবাদে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহহ রাজিউন’ পড়লে ।
  • সুসংবাদে আলহামদু লিল্লাহ’ পড়লে ।
  • আশ্চর্য সংবাদে ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়লে ।
  • নিজের ইমাম ব্যতীত অন্যকে লোকমা দিলে (ইমাম নামাযের কেরাআত ভুল পড়লে তা শুদ্ধ করে বলে দেয়াকে লোকমা বলে)।
  • নাপাক স্থানে সেজদা করলে ।
  • নামাযে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে কিছু প্রার্থনা করলে ।
  • নামাযের মধ্যে পানাহার করলে ।
  • আমলে কাছীর অর্থাৎ নামাযের মধ্যে এমন কাজ করলে, যাতে অন্য লোক মনে করে সে নামাযে নেই তাকে আমলে কাছীর বলে । উক্ত কারণসমূহের দ্বারা নামায ফাছেদ হয়ে যায় এবং পুনরায় আদায় করতে হয় ।

আরো পড়ুন:- জুমার নামাজের নিয়ত

নামাজ ভঙ্গের কারণ সমূহের বিস্তারিত আলোচনা

১। নামাজের মধ্যে কথা বললে নামাজ ভেঙ্গে যায়,কথা অনিচ্ছায় বলুক বা ইচ্ছাকৃত বলুক ।

২। নামাজের মধ্যে আহ, উহ্, হায়! কিংবা ইস্! ইত্যাদি বললে অথবা উচ্চৈঃস্বরে কাঁদলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। অবশ্য যদি কারোর বেহেশত দোযখের কথা মনে উঠে প্রাণ কেঁদে উঠে এবং অনিচ্ছাকৃত আওয়ায বের হয়, তবে তাতে নামাজ ভঙ্গ হবে না।

৩। অত্যন্ত প্রয়োজন ব্যতীত কাশি দিলে এবং গলা সাফ করলে যাতে এক আধ হরফ সৃষ্টি হয়, তাতে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। অবশ্য গলা একেবারে বন্ধ হয়ে আসলে আওয়ায চেপে আস্তে কাশলে গলা সাফ করা দুরুস্ত আছে, এতে নামাজ নষ্ট হবে না ।

তা বলা উচিত নয় । যদি অন্যের হাঁচি শুনে নামাজের মধ্যে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বলে, তবে ৪। নামাজের মধ্যে হাচি দিয়ে ‘আলহাম্‌দু লিল্লাহ্’ বললে নামাজ ভঙ্গ হবে না, কিন্তু নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।- শরহে বেকায়া

৫। নামাজের মধ্যে কুরআন শরীফ দেখে পড়লে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায় ।

৬। নামাজের মধ্যে মুখ বা চোখ এদিক ওদিক ঘুরানো মাকরুহ্, আবার যদি সিনা/ বুক কেবলার দিক হতে ঘুরে যায়, তবে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে ।

৭। নামাজের মধ্যে অন্যের সালামের জবাব দিলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে ।

৮। নামাজে থেকে চুল বাঁধলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।

৯। নামাজের মধ্যে কিছু খেলে বা পান করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমন কি যদি একটি সামান্য তিলও বাইরে থেকে মুখে নিয়ে চিবিয়ে খায়, তবুও নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

অবশ্য যদি দাঁতের ফাঁকে কোনো জিনিস আটকিয়ে থাকে এবং তা গিলে ফেলে, তবে ঐ জিনিস যদি আকারে ( বুটের চেয়ে ছোট) তিল, সরিষা, মুগ, মসুরির মত হয়, তবে নামাজ হয়ে যাবে ( কিন্তু এমনটি করবে না) যদি ছোলা (বুট) পরিমাণে এর চেয়ে বড় হয়, তবে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে ।

১০। নামাজের মধ্যে পান মুখে চেপে রেখেছে, যার পিক গলার ভেতরে যাচ্ছে, এমন অবস্থায় নামাজ হবে না।

১১। নামাজের পূর্বে হয়তো কোনো মিঠা জিনিস খেয়ে তারপর ভালমত কুল্লি করে নামাজ শুরু করেছে; আর নামাজের মধ্যে কিছু মিঠা মিঠা লাগছে এবং তা থুথুর সাথে গলার মধ্যে যাচ্ছে, এতে নামাজ নষ্ট হবে না; বরং সহীহ হবে

১২। নামাজের মধ্যে কোনো খোশখবরি শুনে যদি ‘আলহামদু লিল্লাহ্’ বলে, বা কারোর মৃত্যু সংবাদ শুনে যদি ‘ইন্না লিল্লাহ’ বলে, তবে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

১৩। নামাজ পড়তে শুরু করেছে, এমন সময় একটি ছেলে হয়ত পড়ে গেল, তখন বিসমিল্লাহ’ বলল; এতে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

১৪। কোনো একজন স্ত্রীলোক নামাজ পড়ছিল, এমন সময় তার শিশু ছেলে এসে স্তন হতে দুধ পান করা আরম্ভ করল কিংবা তার স্বামী তাকে চুম্বন করল, এমন হলে ঐ স্ত্রীলোকের নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। অবশ্য যদি ছেলে মাত্র দুই এক টান চুষে থাকে এবং দুধ বের না হয়, তবে নামাজ ভঙ্গ হবে না।

‘আলিফ’ টেনে বলে ‘বা’ আকবরের ‘ বা বর্ণ টেনে বলে, তবে নামাজ হবে না।

১৫ । আল্লাহু আকবর বলার সময় যদি কেউ আল্লাহ শব্দের ‘আলিফ’ বা আকবরের দুররুল মুখতার

১৬। নামাজ পড়ার সময় যদি কোনো চিঠির দিকে কিংবা কোনো বইয়ের দিকে হঠাৎ নজর পড়ে এবং মনে মনে লিখার মর্ম বুঝে আসে, তবে তাতে নামাজ ভাঙ্গবে না। কিন্তু যদি কোনো একটি কথা পড়ে, তবে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে ।

১৭। নামাজের মধ্যে নিজের ইমাম ব্যতীত অন্য কাউকে লোকমা দিলে নামাজ বাতিল হয়ে যায় । ( ভুল কিরাত পাঠকের ভুল সংশোধন করে দেয়াকে ‘লোক্‌মা দেয়া’ বলে) ।

বিশুদ্ধ কথা হলো এই যে, ইমামকে লোকমা দিলে নামাজ বাতিল হবে না; ইমাম যদি জরুরত পরিমাণ কিরাত পড়ার আগেই আটকে যায় এবং সেই অবস্থায় লোকমা দেয়,

তবে তো নামাজ বাতিল হবে না; এমনকি, যদি জরুরত পরিমাণ কিরাত পড়ার পর লোক্‌মা দেয়, তবুও নামাজ বাতিল হবে না। অর্থাৎ যেই নামাজে যেই পরিমাণ কিরাত পড়া সুন্নত সেই পরিমাণ কিরাত পড়া উচিত ।

যদি ইমাম সাহেব জরুরত পরিমাণ কিরাত পড়ার পর আটকে যায় তবে তার সাথে সাথে রুকুতে যাওয়া উচিত, ( বার বার দোরিয়ে বা ভুল বাদ দিয়ে পড়ে বা যদি চুপ করে থেকে) মুক্তাদিকে লোকমা দেওয়ার জন্য বাধ্য করা উচিত নয়, এরূপ করা মাকরুহ্।

আর মুক্তাদিদেরও বিনা জরুরতে লোক্‌মা দেয়া ঠিক নয়। বিনা জরুরতে লোক্‌মা দেয়া মাকরুহ্। এখানে জরুরতের অর্থ- হল ইমাম যদি জরুরত পরিমাণ কিরাত পড়তে না পারে, আটকে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে বা বার বার দোহরাতে থাকে বা ভুল রেখে সামনে পড়া শুরু করে, তবে মুক্তাদি লোকমা দিবে। অবশ্য যদি এরূপ জরুরত ছাড়াও নিজের ইমামকে লোক্‌মা দেয়, তবে তাতে নামাজ বাতিল হবে না, বরং মাকরূহ হবে।

১৮ । একজন লোক নামাজ পড়ছে, তাকে তার মুক্তাদি ছাড়া অন্য কেউ লোকমা দিল, যদি সে ঐ লোক্‌মা নেয়, তবে তার নামাজ বাতিল এবং সে যদি নিজের স্মরণ অনুসারে পড়ে, তবে তার নামাজ ভঙ্গ হবে না ।

১৯। যদি কোনো ব্যক্তি নামাজের মধ্যে থেকে নিজের ইমাম ছাড়া অন্য কাউকেও বা বাইরে হোক । লোক্‌মা দেয়, তবে তার নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে। অন্য ব্যক্তিটি নামাজের মধ্যে হোক

২০। যদি মুক্তাদি অন্যের পড়া শুনে কিংবা কুরআন মজিদ দেখে ইমামকে লোক্‌মা দেয়, তবে তার নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে, আর যদি ইমাম লোকমা নেয় তাঁরও নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।

যদি কুরআন মজীদ দেখে বা অন্যের পড়া শুনে মুক্তাদির স্মরণ হয় এবং নিজের স্মরণেই লোক্‌মা দেয়, তবে নামাজ ফাসেদ হবে না ।

২১ । অনুরূপ যদি নামাজে কুরআন মজিদ দেখে একটি আয়াত পড়ে, তবে নামাজ ফাসেদ হবে । কিন্তু যে আয়াত দেখে পড়েছে, তার যদি প্রথম হতে ইয়াদ থেকে থাকে,

তবে নামাজ ফাসেদ হবে না, কিংবা প্রথম হতে স্মরণ ছিল না বটে, কিন্তু এক আয়াতের কম দেখে পড়ে থাকে, তবে নামাজ ফাসেদ হবে না ।

২২। নামাযে মেয়েলোক যদি পুরুষের সাথে এমনভাবে দাড়ায় যে, একজনের কোনো অঙ্গ অপর জনের কোনো অঙ্গের বরাবর হয়ে যায়, তবে নিম্ন শর্তে নামাজ। বরাবর হয়ে যায়, তবে নামাজ ফাসেদ হবে।

ফাসেদ হয়ে যাবে। এমন কি যদি সিজদায় যাওয়ার সময় মেয়েলোকের মাথা পুরুষের

শর্তঃ মেয়েলোক বালেগা হওয়া চাই যুবতী হোক বা বৃদ্ধা হোক, কিংবা সহবাস উপযোগী নাবালেগা হোক । আর যদি অল্প বয়স্কা না বালেগা মেয়ে নামাজে বরাবর হয়ে যায়, তবে নামাজ ফাসেদ হবে না ।

শর্তঃ উভয়ে নামাজের মধ্যে হওয়া চাই। যদি একজন নামাজে অন্যজন নামাজের বাইরে থাকে, তবে এরূপ বরাবর হওয়ার কারণে নামাজ ফাসেদ হবে না ।

৩য় শর্তঃ উভয়ের মাঝে কোনো আড়াল না হওয়া। যদি মাঝখানে কোনো পর্দা থাকে কিংবা কোনো সুতরা থাকে, অথবা মাঝখানে এত পরিমাণ জায়গা খালি থাকে যে, তাতে অনায়াসে একটি লোক দাড়াতে পারে, তবে নামাজ ফাসেদ হবে না ।

৪র্থ শর্তঃ নামাজ সহীহ্ হওয়ার শর্তাবলী ঐ মেয়েলোকের মধ্যে থাকা চাই । কাজেই মেয়েলোক যদি পাগল অথবা ঋতুবতী বা নেফাস অবস্থায় হয়, তবে ঐ মেয়েলোকের বরাবরে হলে নামাজ ফাসেদ হবে না । কেননা এসকল অবস্থায় এই মেয়েলোক নামাজের মধ্যে গণ্য নয় বলে বিবেচিত হয় ।

৫ম শর্তঃ জানাযার নামাজ না হওয়া চাই। জানাযার নামাজে বরাবর হলে নামাজ ভঙ্গ হবে না ।

৬ষ্ঠ শর্তঃ এই বরাবর হওয়া অবস্থা এক রোকন পরিমাণ ( তিন তসবিহ্ পড়ার সময় পরিমাণ) স্থায়ী হওয়া চাই। যদি এর কম সময় বরাবর থাকে, তবে ফাসেদ হবে না। যেমন, এতটুকু সময় বরাবর রয়েছে যে, ঐ পরিমাণ সময়ে রুকু সিজদা ইত্যাদি হতে পারে না। এই অল্প সময়ের বরাবর হওয়ার কারণে নামাজ ফাসেদ হয় না।

৭ম শর্তঃ উভয়ের তারিমা এক হওয়া চাই। অর্থাৎ এই মেয়েলোক ঐ পুরুষের মুক্তাদি হওয়া, কিংবা উভয়ে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির মুক্তাদি হওয়া। মানজারী চা

৮ম শর্তঃ ইমামের নামাজের প্রথমে বা মাঝখানে যখন মেয়েলোক শামিল হল তখন তার ইমামতের নিয়্যত করা চাই । ইমাম যদি ইমামতের নিয়্যত না করে, তবে এই রকম বরাবর হওয়াতে নামাজ ফাসেদ হবে না; বরং ঐ মেয়েলোকের নামাজ সহীহ হবে না ।

২৩। কোনো স্ত্রীলোক পুরুষের কাতারে দাঁড়িয়ে জামাতে নামাজ পড়লে পার্শ্ববর্তী পুরুষদের নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে ।

২৪ । ইমামের ওযু ভেঙ্গে গেলে ইমাম যদি কোনো উপযুক্ত লোককে প্রতিনিধি না বানিয়ে

২৫। ইমাম যদি কোনো পাগল, নাবালেগ বা মেয়েলোককে, যে ইমামের অযোগ্য তাকে খলিফা বানায়, তবে সকলের নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।

২৬। স্বামী নামাজ পড়ার সময় যদি স্ত্রী তাকে চুম্বন করে, তবে তার নামাজ নষ্ট হবে না, কিন্তু মনে উত্তেজনা জন্মালে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। যদি মেয়েলোক নামাজ পড়ার সময় পুরুষ তাকে চুম্বন করে, তবে মেয়েলোকের নামাজ ফাসেদ হবে । কামভাবে চুম্বন করুক কিংবা বিনা কামভাবে করুক। মেয়েলোকের মধ্যে কামভাব উদয় হোক বা না হোক ।

২৭। যদি কেউ নামাজির সামনে দিয়ে যেতে চায়, তবে তাকে বাধা দেওয়া জায়ে আছে। কিন্তু যদি নামাজের মধ্যে থেকে বাধা দিতে গিয়ে ‘আছলে কাসির করতে হয় অর্থাৎ, কথা বলতে হয় বা অগ্রসর হতে হয় বা ধাক্কাধাক্কী করতে হয়, তবে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি আস্তে হাত দিয়ে ইশারা করে দেয় বা সোবহানাল্লাহ বলে সতর্ক করে দেয়, তবে তাতে নামাজ নষ্ট হবে না ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *