নামাজ

মহিলাদের নামাজের নিয়ম

Share this

মহিলাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম মেয়েদের জন্যে নিজের ঘরে নামায পড়াই উত্তম। এতেই তাদের জন্যে অধিক ছওয়াব রয়েছে এবং এটাই তাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণকর। বরঞ্চ এটাই তাদের জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা; এ সংক্রান্ত কতিপয় হাদিস নিম্নে উদ্ধৃত হলো-

১। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইবনে খুযাইমা হযরত উম্মে হুমায়েদ (রা) আবু নিকট আরয করেছিলাম হুমায়েদ (রা) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন-আমি নবী করীম (সাঃ)-এর “হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার বড় স্বাধ আপনার পিছনে নামায পড়ি ।” তিনি জবাব দেন। “আমি জানি, আমার পিছে (মসজিদের জামাআতে) নামায পড়ার বড় ইচ্ছে তোমার।

কিন্তু ঘরের অভ্যন্তরীণ কক্ষে যে নামায পড়বে তা ঐ নামাযের চেয়ে উত্তম যা পড়বে ঘরের ভিতরের উন্মুক্ত জায়গায়। ঘরের ভিতরে যে নামায পড়বে তা ঐ নামাযের চেয়ে উত্তম। যা পড়বে ঘরের আঙ্গিনায়। ঘরের আঙ্গিনায় যে নামায পড়বে, তা ঐ নাম- াযের চেয়ে উত্ম যা পড়বে আমার এ মসজিদে।”

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর হযরত উম্মে হুমাইদ (রা) জি ঘরের নিভৃততম কোণে নিজের নামায পড়ার স্থান নির্ধারণ করে নেন। যতদিন জীবিত ছিলেন, এ স্থানেই নামায আদায় করেছেন ।

২। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদে এবং তিবরানী তার মুজিমুল কবীর গ্রন্থ উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমা (রা) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- “মহিলাদের সর্বোত্তম মসজিদ হলো তাদের ঘরের নিভৃততম কোণ।”

৩। সুনানে আবু দাউদে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমামর (রাঃ) থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন-

“তোমরা মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে বারণ করো না; কিন্তু ঘরে নামায পড়াই তাদের জন্য উত্তম।”

চূড়ান্ত কথা হল, মহিলাদের জন্যে মসজিদে যাওয়া নিষেধ নয় তবে বর্তমান ফেত্নার যুগে মসজিদে না যাওয়াই উত্তম। আর হাদীস দ্বারাও তাই প্রমাণিত। সুতরাং মহিলারা ঘরেই নামায আদায় করবে।

মহিলাদের ঘরে-মসজিদে নামায পড়া নিয়ে ফকিহদের মতামত

১। মালেকীদের মতে মসজিদের পরবর্তে মহিলাদের নিজ ঘরে নামায পড়াই অধিকতর শ্রেয়। আর ইমাম পুরুষ হলে জামায়াতে নামায পড়া তাদের জন্য ছওয়াবের কাজ।

২। হাম্বলীদের মতে, মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়া সুন্নাত। তবে পুরুষদের থেকে আলাদা নামায পড়বে। ইমাম পুরুষ হোক কিংবা মহিলা তাতে কিছু আসে যায় না।

৩। শাফেয়ীদের মতে, মহিলাদের ঘরে জামায়াতে নামায পড়া মসজিদের জামাআতে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। মহিলাদের জামাআতে নামায পড়া ছওয়াবের কাজ অর্থাৎ, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।

৪। হানাফীদের মতে, ইমাম যদি মহিলা হয় তবে মহিলাদের জামাআতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমি। তবে মহিলা যদি ইমামতি করে সে ইমামতি অশুদ্ধ হবে না।

এবং নামাযও হবে। আর ইমাম যদি পুরুষ হয় এবং জামাআত যদি মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়, তবে পুরুষের ইমামতি তো মাকরূহ নয়; কিন্তু ফিতনার আশংকা থাকায় মহিলাদের মসজিদে যাওয়া মাকরূহ। আর পুরুষ যদি ঘরে ইমামতি করে এবং তিনি মহিলার স্বামী। বা মাহরাম কেউ না হন আর তখন যদি ঘরে সেই ইমাম ছাড়া অপর কোন পুরুষ উপস্থিত না থাকে,

তবে ঐ ব্যক্তি ইমামতি মাকরূহ। কিন্তু ঘরে যদি স্বামী বা মাহরাম ইমামতি করে কিংবা পুরুষের ইমামতির সময় যদি আরো পুরুষ উপস্থিত থাকে, তবে মাকরুহ নয়।

জামাআতের নামাজে মহিলারা কোথায় দাঁড়াবে জামাআতের নামাযে মহিলারা ইমামের এবং ইমাম ছাড়া যদি আরো পুরুষ থাকে, তবে সব পুরুষের একেবারে পেছনে দাড়াবে,

পুরুষ যদি কেবল একজনই হয় অর্থাৎ ইমাম কিংবা শুধু মাত্র স্বামী স্ত্রী যদি জামায়াতে নামায পড়তে দাঁড়ায় সে ক্ষেত্রে মহিলা সোজা পিছে দাঁড়াবে এ মাসআলায় ফকীহদের মধ্যে কোন মত পার্থক্য নেই ।

১। সহীহ বুখারীতে হযরত আনাস (রা) থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সাঃ) আনাস (রা) এবং তাঁর মা বা খালাকে নিয়ে জামাআতে নামায পড়ান। আনাস (রা) বলেন, তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে এবং মহিলাদেরকে আমাদের পিছে দাঁড় করান ।

ইমাম মালিক হযরত আনাস (রাঃ) থেকে এই হাদীসটাই এভাবে বর্ণনা করেন। আনাস (রাঃ) বলেছেন, আমি এতীম বালক নবী (সাঃ)-এর পিছনে ছফ করে দাঁড়াই আর মহিলারা আমাদের পিছনে ছফ করে দাঁড়ায় ।

২। ইমাম শা’রানী তার “কাশফুল ওম্মাহ” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন । নবী করিম (সাঃ) বালকদের সামনে পুরুষদের ছফ বানাতেন আর বালকদের ছফ বানাতেন মহিলাদের সামনে ।

নবী করীম (সাঃ) বলতেন, পুরুষদের সর্বোত্তম ছফ হলো একেবারে সামনের আর সবচাইতে মন্দ হলো সর্ব পেছনের ছফ। মহিলাদের সর্বোত্তম ছফ হলো সর্ব পিছনের ছফ আর তাদের নিকৃষ্ট ছফ হলো সর্বাগ্রের ছফ।”

মহিলাদের জামাআতে নামায পড়ার ক্ষেত্রে আরো কিছু আদব কানুন আছে। তন্মধ্যে একটি হলো সিজদা থেকে মাথা উঠাবার এ প্রসংগে একটি হাদিস আমরা আগেই উল্লেখ করেছি।

তাহলো সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ)-এর পিছনে পুরুষ মুক্তাদিরা কাপড়ের স্বল্পতার জন্যে তহবন্দ শিশুদের মত গলায় গিঠ দিয়ে বেঁধে নিত।

তখন মহিলাদেরকে বলা হতো, যতক্ষণ না পুরুষেরা সেজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসবে, ততক্ষণ তোমরা সেজদা থেকে মাথা উঠাবে না। এ প্রসংগে একটা মত হলো, তখন কাপড়ের স্বল্পতার কারণে এক এক কাপড় পরেই নামায পড়া হতো।

লোকেরা তাদের তহবন্দ গলায় বেঁধে নিত । ফলেই রুকু সিজদার সময় কখনোও তাদের সতর উন্মুক্ত হয়ে পড়ত। তাই মহিলাদের বলা হতো পুরুষেরা সোজা হয়ে বসবার আগে তোমরা সিজদা থেকে মাথা উঠাবে না ।

মহিলাদের ইমামতি

মহিলা পুরুষদের ইমামতি করা জায়েয নেই। কারণ নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- “কখনো কোন মহিলা পুরুষের ইমামতি করবে না।”

বুখারী, আহমদ ইবনে হাম্বল, তিরমিযী এবং নাসায়ী হযরত আবু বকর (রা) থেকে এবং তিবরানী হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম (সাঃ) প্রায়ই বলতেন-

“সেই জাতি কখনো সাফল্য লাভ করতে পারে না যারা তাদের কর্মকাণ্ডের ভার ম-ি হলাদের উপর ন্যস্ত করে।

নবী করীম (সাঃ) মহিলাদের ঘরে নামাযের স্থান ঠিক করে নেবার নির্দেশ দিতেন এবং জামাআতে নামায পড়ার জন্য কোন মহিলাকে অন্য মহিলাদের ইমামতি করতে বলতেন ।

আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে-নবী করীম (সাঃ) একবার উম্মে ওরাকার (রাঃ) ঘরে তশরিফ নেন। তিনি রাসূল (সাঃ)-এর নিকট নিজ ঘরে নামাযের জায়গা ঠিক করে নেবার অনুমতি প্রদান করেন এবং তাকে নিজ পরিবারের মহিলাদের ইমামতি করার নির্দেশ দেন।

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা (রাঃ) এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) মহিলাদের নামাযে ইমামতি করতেন। অবশ্য সামনে না দাঁড়িয়ে মহিলাদের সাথে কাতারের মধ্যেই দাঁড়াতেন ।

পুরুষ ও মহিলার নামাজের পার্থক্য

তাকবীর: পুরুষেরা তাকবীরের জন্য কান পর্যন্ত তাদের উভয় হাত উঠানো ও মহিলারা তাদের কাধ পর্যন্ত হাত উঠানো সুন্নাত।

দাড়ানো: পুরুষেরা তাকবীরের পর তাদের বাম হাতের উপরে ডান হাত রেখে নাভির নিচে দু হাত বাধবে এবং মহিলারা তাদের বাম হাতের উপরে ডান হাত রেখে বুকের উপর হাত বাধবে।

রুকূ: পুরুষেরা রুকূ করার সময় তাদের হাতের আঙ্গুল হাটুর উপর সামান্য পরিমান ফাকা করে রাখবে, মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের আঙ্গুলগুলো ফাকা রাখবে না।

সিজদা: সিজদার সময় পুরুষদের পেট হাটু থেকে পৃথক থাকবে এবং উভয় হাত কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত মাটি থেকে পৃথক থাকবে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের পেট হাটুর সাথে মিলিয়ে থাকবে এবং তাদের উভয় হাতের কনুই মাটির উপর সমানভাবে রেখে শরীরের সাথে মিশিয়ে রাখবে।

বৈঠক: নামাজের বৈঠকের সময় পুরুষে বাম পা মাটিতে বিছিয়ে তার উপর বসবে, এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে আঙ্গুলগুলো কেবলামুখী রাখবে। মহিলারা তাদের দুপ ডান পার্শে রেখে বাম পার্শ্বে বসবে।

আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *