নামাজ

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

Share this

মাকরুহ কাকে বলে

নামাজের ভিতর যে কাজ করলে গুনাহ্ হয় এবং নামাজের সওয়াব কম হয় কিন্তু নামাজ নষ্ট হয় না, এরূপ কাজকে মাকরুহ্ বলে ।

মাসয়ালা : নামাজের মধ্যে শরীর, কাপড় কিংবা অলংকারাদি নড়াচড়া করা ( দাড়িতে অনর্থক হাত বুলানো বা ধূলা-বালি ঝাড়া) কংকর সরানো মাকরূহ্ । অবশ্য যদি সিজদার জায়গায় কোনো কংকর (বা কাঁটা) থাকে যার কারণে সিদা করা যাচ্ছে না, তবে এক বা দুইবার হাত দিয়ে তা‘ সরিয়ে দেওয়া জায়েয আছে ।

মাসয়ালা- নামাজের মধ্যে আঙ্গুল মটকানো, কোমরের উপর হাত রেখে দাঁড়ানো, ডানে বায়ে এদিক-ওদিক মুখ ফিরিয়ে দেখা মাকরুহ্। অবশ্য ঘাড় বা মুখ না ফিরিয়ে শুধু চোখের কোণ দিয়ে ইমামের বা লোকজনের উঠা-বসা দেখে নেয়া দুরুস্ত আছে। কিন্তু নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত এমন করাও অনুচিত।-বেদায়া

মাসয়ালা : নামাজের মধ্যে চারজানু হয়ে আসন গেড়ে বসা, কুকুরের মত বসা, হাঁটু খাড়া করে চুতড় ও হাত মাটিতে রেখে বসা, মেয়েদের উভয় পা খাড়া রেখে বসা এবং পুরুষদের সিজদার মধ্যে উভয় হাত বা পা বিছিয়ে রাখা মাকরুহ্ । অবশ্য রোগ ব্যাধির কারণে যেভাবে বসার হুকুম আছে, যদি সেভাবে বসতে না পারে, তবে যেভাবে পারে সেভাবেই বসবে, ঐ কারণে নামায মাকরুহ হবে না ।

মাসয়ালা : নামাজের মধ্যে হাত উঠিয়ে ইশারা করে কারোর সালামের জওয়াব দেওয়া মাকরুহ্ । মুখে সালামের জওয়াব দিলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে ।

মাসয়ালা : নামাজের মধ্যে ধূলা-বালির ভয়ে কাপড় গোটানো বা সামলানো মাকরুহ।

মাসয়ালা – যে স্থানে এমন আশঙ্কা হয় যে, হয়ত কেউ নামাজের মধ্যে হাসিয়ে দিবে, বা মন এদিক-ওদিক চলে যাবে, বা লোকের কথা-বার্তায় নামাজে ভুল হয়ে যাবে, সেরকম স্থানে নামাজ পড়া মাকরুহ্।

মাসয়ালা : কেউ কথাবার্তা বলছে বা কোনো কাজ করছে, তার পিঠের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া মাকরুহ্ নয়, আশে-পাশে অন্য জায়গা থাকলে এমন স্থানে নামাজ শুরু করা উচিত নয়। কারণ, হয়ত তার উঠে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে,

অথবা নামাজের কারণে যেতে না পারায় বিরক্তি বা কষ্ট অনুভব করতে পারে বা তার কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে কিংবা হয়ত সে জোরে কথাবার্তা শুরু করে দিতে পারে এবং সে কারণে নামাজে ভুল হতে পারে। তাই কারোর মুখের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া মাকরুহ্ হয় না ।

অন্ধকার ঘরে নামাজ পড়া মাকরুহ্ নয় ।

মাসয়ালা : ছবিওয়ালা জায়নামাজ রাখা মাকরুহ্ এবং ঘরে ফটো রাখা কঠিন গুনাহ্। অবশ্য যদি কোনোখানে পাক বিছানায় ছবি এবং তার উপর নামাজ পড়ে, তবে নামাজ হয়ে যাবে, কিন্তু ছবির উপর সিজদা করবে না। ছবির উপর সিজদা করলে নামাজ মাকরুহ্ হবে ।

মাসয়ালা : নামাজির সামনে বা উপরে অর্থাৎ ছাদ বা বারান্দায় বা ডানে কি বায়ে যদি ছবি টানানো থাকে, তবে নামাজ মাকরুহ্ হবে। (পিছনের দিকে ছবি থাকলেও মাকরুহ্ হবে ।) । পায়ের নিচে ছবি থাকলে মাকরুহ্ হবে না। ছবি যদি এত ছোট হয় যে, দাঁড়ালে দেখা যায় না, কিংবা ছবি পূর্ণাঙ্গ নয় বরং মাথা কাটা এবং অস্পষ্ট তবে তাতে কোনো দোষ নেই। তা যেদিকেই থাকুক নামাজ মাকরুহ্ হবে না।

মাসয়ালা : প্রাণীর ছবিওয়ালা কাপড় পরে নামাজ পড়া মাকরুহ্ ।— শঃ তানবীর মাসয়ালা ঃ বৃক্ষ-লতা, দালান কোঠা ইত্যাদি অচেতন পদার্থের ছবি হলে নামাজ মাকরুহ্ হবে না ।

মাসয়ালা : নামাজের মধ্যে আয়াত, সূরা বা তসবিহ্ আঙ্গুলে গণনা করা মাকরুহ্ । যদি হিসাব শুধু আঙ্গুল টিপে ঠিক রাখে, তবে মাকরুহ্ হবে না।

মাসয়ালা : প্রথম রাকাত অপেক্ষা দ্বিতীয় রাকাত (তিন আয়াত বা ততোধিক পরিমাণ) দীর্ঘ করা মাকরুহ্।

মাসয়ালা : নামাজে কোনো সূরা এমনভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়া যে, কখনও সেই সূরা ছাড়া অন্য সূরা পড়বে না, তবে এটা মাকরুহ্ ।

মাসয়ালা : কাঁধের উপর রুমাল বা অন্য কোনো কাপড় ঝুলিয়ে রেখে নামাজ পড়া মাকরুহ্।

মাসয়ালা : (শিক্ষিত ও ভদ্র সমাজে যেতে লজ্জাবোধ হয় এমন) অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও ময়লা কাপড় পড়ে নামাজ পড়া মাকরুহ্। অবশ্য যদি অন্য কাপড় না থাকে, তবে মাকরুহ্ হবে না । কনুই-এর উপর আস্তিন গুটিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহ্।

মাসয়ালা : টাকা, পয়সা, সিকি দুয়ানি ইত্যাদি বা অন্য কোনো জিনিস মুখের মধ্যে | চেপে রেখে নামাজ পড়া মাকরুহ্ । যদি এমন কোনো জিনিস হয়, যার কারণে কুরআন পড়া যায় না, তবে নামাজই হবে না । পেশাব পায়খানা বা বায়ু চেপে রেখে নামাজ পড়া মাকরুহ্।

মাসয়ালা : প্রচন্ড ক্ষুধার সময় খানা তৈয়ার করলে খানা খেয়ে তারপর নামাজ পড়বে, নতুবা খাবার চিন্তায় নামাজ মাকরুহ্ হয়ে যাবে। অবশ্য যদি নামাজের ওয়াক্ত চলে যাবার মত হয় বা জামাত ছুটে যাবার ভয় হয়, তবে নামাজ আগে পড়ে নিবে।

মাসয়ালা ঃ চক্ষু বন্ধ করে নামাজ পড়া ভাল নয়। যদি চক্ষু বন্ধ করে নিলে মন ঠিক হয়, তবে চক্ষু বন্ধ করে পড়ায় কোনো দোষ নেই ।-

মাসয়ালা : নামাজের মধ্যে মুখ খুলে হাই ছাড়া মাকরুহ্ । বিনা জরুরতে থুথু ফেলা বা নাক ঝাড়া মাকরুহ্ । যদি ঠেকা পড়ে, তবে থুথু বা সিকনি কাপড়ের কোণ নিয়ে মুছে ফেলবে, এতে নামাজ ভাঙ্গবে না। কিন্তু ডান দিকে বা কিলার দিকে জায়গা থাকলেও সে দিকে থুথু ফেলবে না। বাম দিকে থুথু ফেলে দিবে ।

মাসয়ালা : নামাজের মধ্যে মশা, পিপড়া, উকুন বা ছারপোকায় কামড়ালে তাদেরকে মারা ঠিক নয়, আস্তে হাত দিয়ে তাড়িয়ে দিবে এবং না কামড়ালে হাত দিয়ে তাড়ানও মাকরুহ্ । (এসব প্রাণী মেরে মসজিদে ফেলা মাকরুহ্। যদি কষ্ট দেয়, তবে মেরে বাইরে ফেলে দিবে)।

মাসয়ালা ঃ ফরজ নামাজে বিনা জরুরতে দেওয়াল, খুঁটি বা অন্য কোনো জিনিসের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ান মাকরুহ্ ।

মাসয়ালা : কোনো কোনো লোক এত দ্রুত নামাজ পড়ে যে, সূরা খতম হবার দুই মাকরুহ্ । – মুনিয়া এক লফয বাকি থাকতেই রুকুতে চলে যায় এবং ঐ অবস্থায় সূরা খতম হয়, এমন করা

মাসয়ালা : দাড়ানোর জায়গা হতে সিজদার জায়গা যদি আধ হাত অপেক্ষা উঁচু হয়, তবে নামাজ দুরুস্ত হবে না, যদি আধ হাত বা আধ হাতের চেয়ে কম উঁচু হয়, তবে নামাজ হয়ে যাবে, কিন্তু বিনা জরুরতে এরূপ করা মাকরুহ্।

মাসয়ালা : সাধারণত যে কাপড় যেভাবে পরিধান করার নিয়ম আছে নামাজের মধ্যে তার বিপরীতভাবে ব্যবহার করা মাকরুহ্। যেমন- যদি কেউ চাদর বা কম্বল এমনভাবে গায়ে দেয় যে, দুই কাঁধের উপর দিয়ে দুই কোণা ঝুলিয়ে দেয়, কোণ ফিরিয়ে কাঁধের উপর ছড়িয়ে না দেয়, তবে তা মাকরুহ হবে।

আবার যদি ডান কোণ বাম কাঁধের পিরহানের আস্তিনের মধ্যে হাত না ভরে কাঁধের উপর দিয়ে ঝুলিয়ে ব্যবহার করে, তবে তা মাকরুহ্ হবে।

মাসয়ালা : টুপি বা পাগড়ি ছাড়া খোলা মাথায় নামাজ পড়া মাকরুহ্ । অবশ্য যদি কেউ খোদার সামনে অক্ষমতা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে টুপি বা পাগড়ি ছাড়া খোলা মাথায় নামাজ পড়ে, তবে তা মাকরুহ্ হবে না।

মাসয়ালা : নামাজের মধ্যে টুপি বা পাগড়ি মাথা হতে পড়ে গেলে সাথে সাথে এক হাত দিয়ে তা উঠিয়ে মাথায় পরে নেয়াই ভাল । কিন্তু যদি একবারে বা এক হাত উঠিয়ে পরতে না পারে, তবে উঠানোর দরকার নেই।

মাসয়ালা : পুরুষদের কনুই পর্যন্ত বিছিয়ে দিয়ে সিজদা করা মাকরুহে তাহরিমী । মাসয়ালা : ইমামের সম্পূর্ণরূপে মোবের ভিতর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ানো মাকরুহ্ তানযিহি । অবশ্য পা মেহরাবের বাইরে রেখে সিজদা মেহরাবের ভিতরে করলে মাকরুহ্ হবে না ।

মাসয়ালা : অকারণে শুধু ইমামের এক হাত বা ততোধিক পরিমাণ উচু জায়গায় দাঁড়ান মাকরুহ্ তাযিহি । যদি ইমামের দেখাদেখি আরও দুই তিনজন লোক দাঁড়ায়, তবে মাকরুহ্ হবে না, কিন্তু শুধু একজন হলে মাকরুহ্ হবে। কেউ কেউ বলেন, এক হাতের চেয়ে কম উঁচু হলেও যদি সাধারণ দৃষ্টিতে উঁচু দেখা যায়, তবে তাও মাকরুহ্ হবে।

মাসয়ালা ঃ যদি মুক্তাদিগণ উপরে এবং ইমাম একা নিচে দাঁড়ায়, তবে তা মাকরুহ্ হবে; অবশ্য যদি জায়গার অভাবে এরূপ করে বা ইমামের সঙ্গে কিছু সংখ্যক মুক্তাদিও নিচে দাড়ায়, তবে মাকরুহ্ হবে না। – দুররে মোখতার

মাসয়ালা : রুকু, সিজ্‌দা ইত্যাদি কোনো কাজ ইমামের আগে আগে করা মুক্তাদিদের জন্য মাকরুহে তাহরিমি।

মাসয়ালা : ইমামের কিরাত পড়ার সময় মুক্তাদিদের যে কোন দুয়া-কালাম, সূরা-ফাতেহা বা অন্য কোনো সূরা পড়া মাকরুহে তাহরিমি; নীরবে ইমামের ক্বেরাতের দিকে কান রাখা ওয়াজিব ।

মাসয়ালা : আগের কাতারে জায়গা থাকতে পেছনের কাতারে দাড়ানো বা একা এক। এক কাতারে দাঁড়ানো মাকরুহ্। অবশ্য যদি আগের কাতারে জায়গা না থাকে, তবে এক। পেছনের কাতারে দাড়ালে মাকরুহ্ হবে না ।

মাসয়ালা : পাগড়ি ছাড়া শুধু টুপি পরে নামাজ পড়া বা ইমামতি করা মাকরুহ্ নয়, বিপরীতে টুপি ছাড়া পাগড়ি পরেও নামাজ পড়া মাকরুহ্ নয়। অবশ্য টুপিছাড়া পাগড়ি বাঁধলে যদি মাথার তালু খোলা থেকে যায়, তবে মাকরুহ্ হবে

মাসয়ালা : যদি কেউ নামাজির সম্মুখ দিয়ে হেঁটে যায় কিংবা কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি চলে যায়, তবে নামাজ ভাঙ্গবে না । কিন্তু নামাজির সম্মুখ দিয়ে গমনকারী ব্যক্তি শক্ত গুনাগার হবে । কাজেই এমন স্থানে নামাজ পড়া উচিত, যেন সম্মুখ দিয়ে কেউ যেতে না পারে বা চলাচলে কারোর কষ্ট না হয় ।

মাসয়ালা : নামাযীর সম্মুখে এক হাত লম্বা ও এক আঙ্গুল পরিমাণ মোটা একটি লাঠি বা কাঠি পুঁতে রাখবে এবং ঐ কাঠি সামনে রেখে নামাজ পড়বে। কাঠি একেবারে নাক বরাবর পুঁতবে না, বরং ডান বা বাম চোখ বরাবর পুতবে।

যদি লাঠি বা কাঠি না পুতে ঐ পরিমাণ উচা কোনো জিনিস সামনে রেখে নামাজ পড়ে, তবে উভয় অবস্থায় তার সম্মুখ দিয়ে যাওয়া দুরুস্ত আছে। কোনো গুনাহ্ হবে না।

মাসয়ালা : প্রয়োজন বশত যদি নামাজের মধ্যেই এক আধ কদম আগে বা পিছে সরে দাড়ায়, কিন্তু বুক কিবলা হতে না ফিরে, তবে তাতে নামাজ দুরুস্ত হবে। কিন্তু যদি সিনা কিব্‌লা হতে ঝুঁকে যায় বা সিজদার জায়গা হতে বেশি সামনে সরে দাড়ায়, তবে নামাজ হবে না ।

মাসয়ালা : নামাজের মধ্যে হাই আসলে যথাসম্ভব দাতের দ্বারা নিচের ঠোঁট চেপে ধরে বন্ধ রাখবে; মুখের দ্বারা একান্ত চেপে রাখতে না পারলে (দণ্ডায়মান অবস্থায় ডান হাতের পাতার পিঠ দ্বারা এবং বসা অবস্থায় বাম) হাতের পাতার পিঠ দ্বারা তা বন্ধ রাখবে।

নামাজের মধ্যে যদি গলা খুসখুসায় বা বন্ধ হয়ে আসে, তবে যাতে না কাশি দিয়ে পারা যায়, তার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করবে। একান্ত সহ্য করতে না পারলে খুব আস্তে ভীত সংকোচিত অবস্থায় খোদা আকামুল হাকেমিনের দরবারে দণ্ডায়মান ভেবে কাশবে । খুব জোরে লা-পরোয়া অবস্থায় কাশবে না এবং গলা ঝাড়া দিবে না ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *