ইসলাম

ইসলাম ও আমাদের জীবন

Share this

হযরত আদম (আ) পৃথিবীতে আগমন করে নিজের অপরাধের জন্যে যখন অনুতপ্ত হলেন তখন তিনি মহান আল্লাহর ক্ষমা লাভ করলেন। তারপর তিনি আল্লাহর নিকট হতে এ ওয়াদাও লাভ করলেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে পথ প্রদর্শন করা হবে মানবজাতীকে।

মানুষ পৃথিবীতে যেন পথহারা হয়ে না পড়ে, উদ্‌ভ্রান্ত না হয়, শয়তান কর্তৃক প্রদর্শিত পথের অনুসারী হয়ে না পড়ে, সে কারণেই নবীদের মাধ্যমে হেদায়েত আসতে থাকবে।

এ সমস্ত হেদায়েত অনুসরণ করলেই কেবল মানুষ প্রকৃত অর্থে মনুষত্বের গুণাবলী অর্জন করতে পারবে। ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে কি ধরনের চারিত্রিক গুণাবলী সৃষ্টি করতে চায় সে সম্পর্কে কোরআন বলছে, “আল্লাহর অনুগত পুরুষ ও স্ত্রীলোক, ঈমানদার পুরুষ ও স্ত্রীলোক,

আল্লাহর দিকে মনোযোগকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক, সত্য ন্যায়বাদী পুরুষ ও স্ত্রীলোক, সত্যের পথে দৃঢ়তা প্রদর্শনকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক, আল্লাহর নিকট বিনীত নম্র পুরুষ ও স্ত্রীলোক, দানশীল পুরুষ ও স্ত্রীলোক, রোযাদার পুরুষ ও স্ত্রীলোক, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক, আল্লাহকে অধিক মাত্রায় স্মরণকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক-আল্লাহ্ তা’আলা এদের জন্যে স্বীয় ক্ষমা ও বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন ।

কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার স্ত্রীলোকের জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন বিষয়ে চূড়ান্তভাবে ফয়সালা করে দেন, তখন সেই ব্যাপারে তার বিপরীত কিছুর ইখতিয়ার ও স্বাধীন ইচ্ছা প্রয়োগ করার কোন অধিকার নেই । আর যেলোক আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী করে, সে সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে লিপ্ত হয়।” এই দীর্ঘ আয়াত থেকে যে গুণাবলী প্রমাণিত হচ্ছে৷ সেসব গুণাবলী নর-নারীর মধ্যে বর্তমান থাকলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হতে পারে এখানে খানিকটা ব্যাখ্যাসহ সংখ্যানুক্রমে উল্লেখ করা যাচ্ছে,

যেন পাঠকগণ সহজেই সে গুণাবলী সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হতে পারেন। মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম স্ত্রীলোক । ‘মুসলিম’ শব্দের আভিধানিক অর্থ আত্মসমর্পণকারী, আনুগত্য, বাধ্য। আর কুরাআনী পরিভাষায় এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী, আল্লাহর অনুগত ও বাধ্য। ব্যবহারিকভাবে আল্লাহর আইন পালনকারী। মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন মহিলা ।

‘মু’মিন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ঈমানদার । ঈমান অর্থ কোন অদৃশ্য সত্যে বিশ্বাস স্থাপন, আর কুরআনী পরিভাষায় কুরআনের উপস্থাপিত অদৃশ্য বিষয়সমূহকে সত্য বলে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করে নেওয়াই হচ্ছে ঈমান। এই অনুযায়ী মু’মিন হচ্ছে সে পুরুষ ও স্ত্রী, যারা কুরআনের উপস্থাপিত অদৃশ্য বিষয়সমূহের প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাসী।

মুসলিম-এর পরে মু’মিন বলার তাৎপর্য এই যে, দুনিয়ার মানুষকে কেবল আল্লাহর বাহ্যিক আইন পালনকারী হলেই চলবে না, তাকে হতে হবে তাঁর প্রতি মন ও অন্তর দিয়ে ঐকান্তিক বিশ্বাসী। আল্লাহর বিধান পালনে সতত মশগুল।

সত্য ও ন্যায়বাদী পুরুষ ও স্ত্রীলোক। এর অর্থ সেসব লোক, যারা সর্বপ্রকার মিথ্যাকে পরিহার করে আন্তরিক নিষ্ঠাসহকারে আল্লাহর হুকুম পালন করে চলে। ফলে তাদের আমলে কোন প্রকার রিয়াকারী বা দেখানোপনা থাকে না। সত্যের পথে দৃঢ়তা প্রদর্শনকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক ।

মূল শব্দ সব্বর। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নিজেকে বেঁধে রাখা, ধৈর্য ধারণ করা। এখানে সেসব পুরুষ-স্ত্রীলোককে বোঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর দ্বীন পালন ও তাঁর বন্দেগী অবলম্বন করতে গিয়ে সকল প্রকার দুঃখ-কষ্ট অকাতরে সহ্য করে, তার উপর দঢ় হয়ে অচল অটল হয়ে থাকেন।

শত বাধা-প্রতিকুলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেও দ্বীনের উপর মজবুত থাকে এবং কোনক্রমেই আদর্শ বিচ্যুত হয় না । আল্লাহর নিকট বিনীত নম্র পুরুষ ও স্ত্রীলোক অর্থাৎ যারা অন্তর, মন ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সব কিছু দিয়ে আল্লাহর বিনীত বন্দেগী করে।

মূল শব্দটি হচ্ছে ‘খুশূয়ূন’ অর্থ প্রশান্তি, স্থিতি, প্রীতি, শদ্ধা-ভক্তি, বিনয়, ভয়মিশ্রিত ভালবাসা এবং আল্লাহর প্রতি আগ্রহ-উৎসাহ। দানশীল পুরুষ ও স্ত্রীলোক অর্থাৎ যারা গরীব ও অভাবগ্রস্তদের প্রতি অন্তরে দয়া অনুভব করে উদ্বৃত্ত মাপ ও অর্থ কেবলমাত্র স্ত্রীলোক অর্থাৎ যারা আল্লাহর হুকুম মুতাবিক রোযা রাখে,

যে রোযার ফ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অভাবগ্রস্ত লোকদের দেয়। রোযাদার পুরুষ ও তাকওয়া পরহেযগারী লাভ এবং যার মাধ্যমে ক্ষুৎপিপাসার জ্বালা ও যন্ত্রণা অনুভ করা যায় প্রত্যক্ষভাবে ও তার জন্যে ধৈর্য ধারণের শক্তি অর্জন করতে পারেন।

লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক অর্থাৎ যারা নিজেদের লজ্জাস্থান অন্য লোকদের সামনে প্রকাশ করে না। তাতে লজ্জাবোধ করে এবং নিজেদের লিঙ্গস্থানকে হারামভাবে ও হারাম পথে ব্যবহার করে না। ঢেকে রাখার যোগ্য দেহে৷ দেহের কোন অঙ্গকে ভিন্ন পুরুষ-স্ত্রীর সামনে উন্মুক্ত করে না।

আল্লাহকে অধিক মাত্রায় স্মরণকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহকে কস্মিনকালেও এবং মুহূর্তের তরেও ভুলে যায় না, আর মুখ ও কল্‌ব উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহকে চিরস্মরণীয় রাখে। মৌলিক গুণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হোক এবং এ গুণধারী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সমাজ গঠিত হোক, কুরআনের এ ভাষণের মূল লক্ষ্য তাই। এ মৌলিক গুণাবলী নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই কাম্য।

কেবল পুরুষদেরই নয়, নারীদেরও এই গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। আর তা হতে পারলেই এই পুরুষ ও নারী সমন্বয়ে গঠিত হবে আদর্শ সমাজ যা কুরআন গড়ে তুলতে চায়।

কুরআনের অপর একটি ছোট্ট আয়াতে বিশেষভাবে মুসলিম মহিলার গুণ বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ “অতএব যারা নেককার স্ত্রীলোক, তারা তাদের স্বামীদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম পালকারী এবং স্বামীদের অনুপস্থিতিতে গোপনীয় বা রক্ষণীয় বিষয়গুলোর হেফাযতকারী হয়ে থাকে;

কেননা আল্লাহ নিজেই তার হেফাযত করেছেন। (যদি কেউ সে সবের হেফাযত করতে চায়, তবে তার পক্ষে তা সম্ভব ও সহজ হবে।” এ আয়াতের তাফসীরে লেখা হয়েছেঃ “অর্থাৎ নারীদের জন্যে কর্তব্য করে দেয়া হয়েছে যে, তারা তাদের স্বামীদের অধিকার রক্ষা করবে এর বিনিময়ে যে,

আল্লাহ নিজেই তাদের অধিকার তাদের স্বামীদের উপর সংস্থাপন ও তার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এজন্যেই তিনি স্ত্রীদের প্রতি ন্যায়নীতি ও সুবিচার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন পুরুষদের। তাদেরকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে বলেছেন এবং আদেশ দিয়েছেন পুরুষদেরকে তাদের মোহরানা আদায় করতে।”

 কুরআন মজীদে মহিলাদের দুটো আদর্শ নারীর চরিত্র পেশ করা হয়েছে এবং দুনিয়ার ঈমানদার নারীদেরকে তাদের আদর্শ চরিত্রের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। তার মধ্যে একটি আদর্শ হচ্ছে ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম। ফিরাউন ছিল আল্লাহ ও আল্লাহর দ্বীনের প্রকাশ্য দুশমন।

কিন্তু তার স্ত্রী ছিলেন আল্লাহ ও আল্লাহর দ্বীনের প্রতি পূর্ণ ও মজবুত ঈমানদার। ফিরাউনের ন্যায় প্রচণ্ড প্রতাপশালী সম্রাটের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এবং অত্যন্ত কুফরী পরিবেশে থেকেও তিনি আন্তরিক নিষ্ঠা সহকারে আল্লাহকে ভয় করতেন,

তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন করে চলতেন। এত বড় সম্রাটের স্ত্রী হওয়াকে তিনি নিজের জন্যে সামান্য গৌরবের বিষয় বলেও মনে করতেন না। বরং রাতদিন আল্লাহর নিকট এই আল্লাহ বিরোধী সম্রাটের আধিপত্য থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্যে কাতর কণ্ঠে দোয়া করতে থাকতেন।

ফিরাউনের নাফরমানীর কারণে গোটা জাতির উপর আল্লাহর যে গজব ও অভিশাপ বর্ষিত হওয়া অভিশ্যম্ভাবী ছিল, তা থেকেও তাঁর নিকট পানাহ চাইতেন। কুরআন মজীদে এই আল্লাহ বিশ্বাসী মহিলাকে দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছেঃ “আল্লাহ তা’আলা ঈমানদার লোকদের জন্য ফিরাউনের স্ত্রীকে দৃষ্টান্তস্বরূপ পেশ করেছেন।”

সে (স্ত্রী) দোয়া করলঃ “হে আল্লাহ! আমার জন্যে তোমার নিকট জান্নাতে একখানি ঘর নির্মাণ কর এবং ফিরাউন ও তার কার্যকলাপ থেকে আমাকে মুক্তি দাও, মুক্তি দাও জালিম লোকদের নির্যাতন থেকে।”

এ দৃষ্টান্ত সম্পর্কে আল্লামা শাওখানী লিখেছেনঃ মু’মিন লোকদের প্রকৃত অবস্থা কি হতে পারে তা দেখার ও তার সাথে সঙ্গতি রক্ষা করবার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা ফিরাউনের স্ত্রীকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করেছেন। সেই সঙ্গে আনুগত্য দৃঢ়তা দেখানো, দ্বীন ইসলামকে সর্বাবস্থায় আঁকড়ে ধরে থাকার এবং কঠোর দুর্বিষহ অবস্থায়ও ধৈর্য ধারণ করার উৎসাহ দান করা হয়েছে এ উপমা বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

পরন্তু দেখানো হয়েছে যে,কুফরী শক্তির যতই দাপট ও প্রতাপ হোক, তা ঈমানদার লোকদের একবিন্দু ক্ষতি করতে পারবে না, যেমন ফিরাউনের মত একজন বড় কাফিরের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সে তার স্ত্রীর একবিন্দু ক্ষতি করতে পারেনি, বরং তিনি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান সহকারেই নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে চলে যেতে পেরেছেন।”

দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত হচ্ছে, হযরত মরিয়মের চরিত্র। তিনি ছিলেন পবিত্রতা, সতীত্ব এবং আল্লাহ-ভীরুতার জ্বলন্ত প্রতীক ।

আল্লাহ নিজেই বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইমরান-কন্যা মরিয়মের কথা। সে তার সব শংকাপূর্ণ স্থান (যৌন অঙ্গ) সমূহের পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করেছে।

তখন আমি (আল্লাহ) তার মধ্যে আমার থেকে রূহ ফুকে দিলাম এবং সে তার আল্লাহর সব কথা ও তাঁর কিতাবসমূহের সত্যতা মেনে নিয়েছে। বস্তুত সে ছিল তার আল্লাহর আদেশ পালনকারী বিনয়ী লোকদের অন্তর্ভুক্ত।”

আল্লাহর হুকুম পালন, বিনয় ও আল্লাহ-ভীরুতার বাস্তব প্রতীক হিসেবে উপরের আয়াতদ্বয়ের যেমন দুটো দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে, অনুরূপভাবে উপদেশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে দুটো খারাপ চরিত্রের নারীর দৃষ্টান্তও উল্লেখ করা হয়েছে অপর আয়াতে। তাদের এক দৃষ্টান্ত প্রসঙ্গে হযরত নূহ ও হযরত লুত নবীর স্ত্রীদ্বয়ের উল্লেখ হয়েছে।

দুজনের প্রতিই আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহ ছিল, দুজনকেই আল্লাহর বিধান মুতাবিক জীবন যাপন করতে এবং তাদের স্বামীদ্বয় যে সহযোগিতা করত৷ সব রকমের দুঃখ-কষ্টে তাঁদের অকৃত্রিম সহচরী ও সঙ্গিনী দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাতে যদি তারা তাদের সাহায্য ও হত, তাহলে তাদের স্বামীদ্বয়ের মত আল্লাহর নিকট তাদেরও মর্যাদা হত ।

কিন্তু তারা তা করেনি। তারা বরং এ ব্যাপারে নিজ নিজ স্বামীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাদের সে কাজকে তারা অতি হীন ও নগণ্য মনে করেছে। তাদের দুশমনদের সাথে তারা গোপনে হাত মিলিয়েছে।

ফলে নবীদ্বয়ের দুঃখ ও বেদনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই কারণে জাতির ফাসিকফাজির লোকেরা আল্লাহর যে আযাবে নিমজ্জিত হয়েছে, তারাও সেই আযাবে নিক্ষিপ্ত হয়েছ।

কুরআন মজীদের আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ আল্লাহ কাফিরদের অবস্থা বোঝাবার জন্যে নূহ ও লুতের স্ত্রীদ্বয়ের দৃষ্টান্তের উল্লেখ করেছেন । এই দুজন মেয়েলোক ছিল আমার দুই নেক বান্দার স্ত্রী । তারা দুজনই নিজ নিজ স্বামীর সাথে খিয়নতের অপরাধ করেছে। কিন্তু নেক স্বামীদ্বয় তাদের জন্যে আল্লাহর আযাবের মুকাবিলায় কোন উপকারে আসেনি।

বরং তাদের দুজন (স্ত্রীদ্বয়)কেও আদেশ করা হলঃ তোমরা অন্যান্যদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ কর।” কুরআন মজীদে এ পর্যায়ে তৃতীয় যে দৃষ্টান্তের উল্লেখ করা হয়েছে তা হল আবূ লাহাবের স্ত্রীর কথা। আবূ লাহাব ছিল ইসলাম বিরোধী কুফরী আদর্শের একজন বড় নেতা । আর শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর ইসলামী দাওয়াত ও আন্দোলনের সে ছিল অতি বড় দুশমন ।

তার স্ত্রী ছিল বড় খবীস প্রকৃতির, হীন ও নিকৃষ্ট চরিত্রের এক দুর্দান্ত মেয়েলোক। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে রাসূলে করীম (স) এর বিরোধিতা করত প্রাণপণে। তাদের এ বিরোধীতা কোন যুক্তিসঙ্গত কারণের উপর ভিত্তিশীল ছিল না, ছিল না কোন নীতির ভিত্তিতে। বরং এ বিরোধীতা ছিল অনেকটা ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ও আক্রোশ পর্যায়ে।

অপরদিকে আবৃ লাহাবের স্ত্রী ছিল অত্যন্ত আধুনিক। তার বিলাস-ব্যসনের জন্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে দেয়ার জন্যে সে স্বামীর উপর প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করত ।

আবূ লাহাব নিতান্ত বোকার মত স্ত্রীর যাবতীয় দাবি-দাওয়া পূরণের জন্যে ন্যায়-অন্যায় নির্বিচারে নানাবিধ উপায় অবলম্বন করত।

এতবড় একজন সমাজপতি হওয়া সত্ত্বেও হাজীদের পরিচর্যার জন্যে সংগৃহিত অর্থ বিনষ্ট ও আত্মসাত করত। এমনকি আল্লাহর ঘরে রক্ষিত স্বর্ণ চুরি করত বলে অনেকেই তার প্রতি সন্দেহ পোষণ করত। তার এসব অসদাচরণের একমাত্র কারণ ছিল তার প্রিয়তমা স্ত্রীর অবাঞ্ছিত বিলাস-ব্যসনের আবদার রক্ষা।

এ ধরনের একটি নারী গোটা জাতির পক্ষেও বিপজ্জনক হতে পারে। এ কারণে কুরআন মজীদে বিশেষ গুরুত্বসহকারে এ নারীর উল্লেখ করা হয়েছে। আর তার দুষ্কৃতকারী স্বামীর মর্মান্তিক পরিণতির ব্যাপারে তাকেও সমানভাবে অংশীদার বানান হয়েছে।

কুরআনে তার নির্মম পরিণতির যে চিত্র অংকন করা হয়েছে, তা হচ্ছে এমন একটি নারী, যে গলায় রশি ঝুলিয়ে বনে জঙ্গলে কাষ্ঠ আহরণ করে বেড়াচ্ছে এবং সে ইন্ধন সংগ্রহ করে আগুনকে দ্বিগুণভাবে তেজস্বী করে জ্বালিয়েছে। এ আগুনেই জ্বলছে তার নিজের স্বামী। কেননা আবূ লাহাবের জাহান্নামে যাওয়ার যাবতীয় কারণ এ দুনিয়ায় সেই উদ্ভাবন করেছিল ।

কুরআনে বলা হয়েছেঃ “আবূ লাহাব ধ্বংস হোক,- আর তার সব ক্ষমতা প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হল, সে নিজে ধ্বংস হল। না তার ধন-সম্পদ তাকে রক্ষা করতে পারলো, না তার হারাম-হালাল উপার্জন। সে শীঘ্রই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করবে। তার ঝুলতে থাকবে মোটা পাকানো রশি।”

স্ত্রীও তারই সঙ্গে- যার কাজ ছিল কেবল ইন্ধন সংগ্রহ করা তার গলদেশেপবিত্র কোরআন শরীফে বহু নারী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এক শ্রেণীর নারীর কদর্যতা যেমন ফুটে উঠেছে এসব আলোচনায় আবার আরেক শ্রেণীর নারীর চারিত্রিক মাধুর্যতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে আল কোরআনে।

স্বামীর আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে স্বামীর নিকট নিজের দাবী দাওয়া পেশ করা উচিত দিনরাত স্বামীর কানের কাছে যদি কোন স্ত্রী নানা ধরনের বিলাস সামগ্রীর জন্যে ঘ্যানর ঘ্যানর করে, তাহলে বেচারা স্বামী হয় সংসার ত্যাগ করবে আর না হয় অবৈধ পথের দিকে সে ধাবিত হবে অর্থোপার্জনের জন্যে ।

স্বামী যদি অত্যাচারী হয়, ইসলামের দুশমন হয়, সে স্বামীর সাথে থেকেও ইসলামের পথে যে চলা সম্ভব, যে সমস্ত স্ত্রীগণ চলেছেন তাদের দৃষ্টান্তও উল্লেখ রয়েছে কোরআন ও হাদীসে।

আবার স্ত্রী যদি ইসলামের দুশমন হয়, তাদের পাশে থেকেও দ্বীনের পথে স্বামীগণ যে চলতে পারে তার উদাহরণ রয়েছে পবিত্র কোরআনে। কোরআন ও হাদীস স্বামী ও স্ত্রীর ভেতর যে সমস্ত গুণাবলি সৃষ্টি করতে চায়, তারা যদি তা সৃষ্টি করে, তাহলে তাদের পৃথিবীর জীবন যেমন হবে মধুময়, তেমনি পরকালের জিন্দেগীও হবে কল্যাণময়।

আরো পড়ুন:- ইসলামে বিয়ের নিয়ম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *